somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদাকালো

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জুম্মার নামাজ শেষ হতেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে একটি দল যার যার বাড়িতে না গিয়ে বসে পড়ল মাদ্রাসা ঘরের বারান্দায়। যেখানে হেফজ বিভাগের ছোটছোট বাচ্চারা টুপি মাথায় উদোম গাত্রে বসে দুলে দুলে কোরান মশ্‌ক করবার দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু সদ্য নামাজ সমাপ্তির কারণেই হয়তো বাচ্চারা ধীরে সুস্থে এসে বসবার আগে আগেই গ্রামের মাতব্বর আর মুরুব্বি স্থানীয় লোকগুলো বসে পড়েছে। সে দৃশ্য দেখেও হয়তো বাচ্চাদের পক্ষে এখানে এসে বসবার অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ বা সাহস কোনোটাই ছিল না। তা ছাড়া দলটির কয়েকজনকে দেখলে লোকজন যতটা না সমীহ করে তার চেয়ে ভয় পায় আরো বেশি।

এদের মাঝে হাবিল ওস্তাগরকে সব দিক দিয়েই বলা যায় জীবন্ত ত্রাস। গ্রাম এলাকার হিসেবে কী নাই তার, কে নাই তার হাতে? জমি-ব্যবসা-ক্ষমতা এমন কি থানা থেকে জেলা সদর পর্যন্ত মোটামুটি এক নামে চেনে লোকজন। তাকে দেখলে প্রথম দর্শনেই কুৎসিত আর ভয়ঙ্কর মনে হয়। তবু মানুষ জন তার পেছনে কেন যে, ভিড় করে তা যেন এক রহস্যের আঁধার ঘেরা। বয়সের কারণে চুল দাড়ি পেকে গেলেও চেহারায় বার্ধক্য জনিত সৌম্যতার বদলে একটি জান্তব ছায়ার উল্লাস চোখে পড়ে। বাজখাঁই কণ্ঠে কথা বললে প্রতিপক্ষের স্বর ফোটে না। আর ধমক দিলে অনেক বয়স্ক লোকও কাপড় ভিজিয়ে না ফেললেও কারো কারো পেশাবের বেগ হয়। দীর্ঘদিন ধরে হাবিল ওস্তাগর খুব শক্ত হাতে বেশ দক্ষতার সঙ্গেই বজায় রেখেছে তার দাপট।

দলটির রহমান খলিফা মূল কথায় আসবার আগে দীর্ঘ ভূমিকার কারণে অনেক সময় কথা শুনবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে হাবিল ওস্তাগর। কিন্তু বাধ্য হয়েই তাকে শুনতে হয় রহমান খলিফার কথা। খলিফা লোকটিকে দেখতে খুবই ধার্মিক আর সম্ভ্রান্ত মনে হলেও তার পেছনের ইতিহাস খুব ভালো কিছুর সাক্ষ্য দেয় না। যুবতী, তরুণী, মধ্যবয়স্কা যারাই তার কাছে জামা বা ব্লাউজের মাপ দিতে গেছে, সবাইকেই দ্বিতীয়বার না যাবার প্রতিজ্ঞা করে ফিরে আসতে হয়েছে একই অভিজ্ঞতা নিয়ে। যদিও মেয়ে মহলের কথা, তবু তা কবে যে আস্তে ধীরে পুরুষদের কানেও চলে আসে দিনক্ষণ হয়তো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। যেহেতু ব্যাপারটা মেয়েদের হলেও এ পর্যন্ত কোনো মেয়ে এ সম্পর্কিত অভিযোগ কারো কাছে উত্থাপন করেনি বা মেয়েদের পক্ষে কোনো পুরুষও কেউ এ পর্যন্ত সরব হয়নি। এমন কি কোনো কারণে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে কথাগুলো কেউ উচ্চারণও করেনি। তাই গ্রামীণ জনপদে আবহমান কাল ধরে বিরাজিত অলিখিত নিয়মানুসারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। যতক্ষণ না কেউ তার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ বা বিচার দাবি করছে, ততক্ষণ ঘটনা বা অপরাধ প্রকাশিত হয়ে সবার মুখে মুখে ফিরলেও তাকে দোষী বলাটা অন্যায্য বলে পরিগণিত হবে। তার ওপর আছে গ্রাম্য শালিস দরবার বিচার-আচারের মতো বেশ কিছু স্বচ্ছ ধাপ। সে সব ধাপ পার হওয়া সব সময় সম্ভব হয় না সবার পক্ষে।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, শালিস বা বিচারের জন্যে দরবার বসলে ওস্তাগর আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে বাহাস বা বিতর্কে কুলিয়ে উঠতে পারে খুব কম লোকই আছে। তাদের কথার ফাঁদে পড়ে মিথ্যেটাকে সত্য বা সত্যটাকে মিথ্যে স্বীকার করে অনেককেই নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে। ন্যায়ত বিচার প্রার্থী হয়েও উলটো প্রকাশ্যে অপমান আর লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে অনেককেই। কাজেই যখন বোঝা যায় তাদের সঙ্গে কথায় আর যুক্তি-তর্কে পেরে ওঠা যাবে না অথবা তাদের সবাইকে বিচার প্রার্থীর দলে ভেড়ানো যাবে না, তখনই বাধ্য হয়ে কাউকে কাউকে মামলা বা থানা-পুলিশের র আশ্রয় নিতে হয়। তারপরও কত হাঙ্গামা হুজ্জত এসে তাদের ভাগ্যে জুড়ে বসে। কোর্ট-কাছারি আর থানা-পুলিশ সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের আভ্যন্তরীণ ছোটখাটো ঝামেলার মুখেও পড়তে হয় তাদের। গ্রাম এবং শহর বা থানা এ দু ধরনের আতঙ্কেই ভুগতে হয় তাদের।
রহমান খলিফা তার দীর্ঘ ভূমিকা শেষ করে বলল, নিজামের বউ-মাইয়ারে তো দেখলাম আইজগা তাগো পুষ্কুনীর পাড়!

তাইলে আমরার কথা অমান্য করলো তারা? বলতে বলতে সন্দিহান দৃষ্টিতে রহমান খলিফার মুখের দিকে তাকায় হাবিল ওস্তাগর। তারপর আবার বলল, তুই ঠিক দেখছস, নিজের চোখে?

-না দেইখ্যা কথা কইলে মরলে সীসা গলাইয়া চোখে ঢালবো না?

-এত্ত বাড় বাড়ছে নিজামের পোলা মাইয়ারা! দরবারের রায় উলটায়, এই সাবাস পাইলো কই?

-হুনছি বরকতউল্লা তারার লগে পাছে আছে।

-বলদের ছাও কোন বুঝে খাড়াইল তারার পিছে? বিয়া-শাদি ছাড়া প্যাডে ছাও, বাপেরও নাম-গন্ধ নাই। এমন বে-শরা কাজ-কারবারের সাহস তাইলে ওই কাফেরডায় দিতাছে গ্যারামের মানষ্যেরে।

-আমিও এইডাই কই। এই সুযোগে একটা ডলা দিতে পারলেই সব ঠাণ্ডা হইয়া যাইবো কইলাম!

তারপর আরো নিচু কণ্ঠে বলে রহমান খলিফা, গ্যারামের ভিতরে আগের মতন মান্যতা আমরার নাই, হেইডা কি টের পাও?

-এইডা কিছু না!

মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলে উঠে নড়েচড়ে বসে হাবিল ওস্তাগর। ফের অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সুরে প্রায় চিবানোর মতো করে বলে, এমন কত চারাই বাইড়া উঠতে দেখছি। লকলক কইরা যেমন বাড়ে, অল্প-স্বল্প বাতাসেও তেমন কাইত হইয়া পইড়া যাইতেও দেখছি।

-কথা ঠিক কইছ।

পাশ থেকে সরব হতে চেষ্টা করে মইনুদ্দিন। বলে, জরুন খনকারের পোলাডাও এমনে কয়দিন মাইত্তা উঠছিল। অহন চৈদ্দ-শিকের ভিতরে পাত্থর ভাঙ্গে।

-ঠিক! রহমান খলিফা মইনুদ্দিনের কথায় সায় দিয়ে বলে, বরকতুল্লা সাইজ না করতে পারলে কয়দিন বাদে চায়ের দোকান আর মসজিদ ছাড়া আমরার জাগা পাওন মুশকিলের হইব যা বুঝি।

হাবিল ওস্তাগর খানিকটা অনিশ্চিত কণ্ঠে বলল, নিজামের মাইয়া কার ছাও প্যাডে লইছে হেইডা তো প্রমাণ হইলই।

ওস্তাগরের কথা না ফুরাতেই কানা মন্নাফ বলে ওঠে, বরকতুল্লা মানুষ খারাপ না। তাও দোষটা চাপাইলেন তার কান্ধে। ব্যাডায় জানলে না জানি আবার কোন শনি লাগায়। আবার এইডাও হুনতাছি যে, কামডা শিকদারের ছোড পোলা কামাইল্যার।

-চুপ, চুপ!

হাবিল ওস্তাগর পারলে সঙ্গে সঙ্গেই গলা চেপে ধরতো কানা মন্নাফের। তার প্রতি চোখ পাকিয়ে বলল, শিকদারের নাম লওন মানা। মাগিরে গ্যারাম ছাড়া করতে পারলে নগদে পঞ্চাশ হাজার, কথাডা ভুইল্যা যাস ক্যান হারামজাদা?

-তাও আমার মন জানি কেরুম করে। শেষ পর্যন্ত আমরা না শরমের ভাগীদার হই।
রইসুদ্দিন মতামত জানাতে কোনো রকম দ্বিধা করে না। এমনিতেও সে কারো মঙ্গল অমঙ্গলের সঙ্গে নেই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে সখ্যের কারণে ছোটখাটো ব্যবসা করে অল্প কদিনেই ভালো কিছু টাকা-পয়সার মালিক হয়েছে। বাজারে দোকান করেছে। বাড়িতে নতুন পাকা ঘর দিয়েছে। উঠতি ধনী বলেই তাকে যাতে বিপদে আপদে পাওয়া যায়, সেই ভরসা থেকেই সঙ্গে রাখা। নয়তো এই রইসুদ্দিনই এক সময় দরবারের আশপাশে দাঁড়িয়ে থেকেছে বা মাটিতে বিছানো খড় বা পাটিতে বসে কথা শুনেছে।

-কাজটা আর ফালাইয়া রাখন ঠিক হইবো না। দুই একদিনের ভিতরেই যা করনের কর।
রহমান খলিফা যেন উসকে দিতে চেষ্টা করে হাবিল ওস্তাগরকে।

কিন্তু হাবিল ওস্তাগরের হুট হাট কিছু করে ফেলার ধাত নয়। বুঝে শুনে চারদিক দিয়ে আটঘাট বেঁধেই তবে সে আগাতে চায়। মাঝখানে রণে ভঙ্গ দিয়ে লোকের কাছে হাস্যাস্পদ হতে চায় না। তবু বেশ জোরের সঙ্গেই বলে ওঠে সে, দরকারে তাগো ঘর-দুয়ার ভাঙমু। আগুন দেওনও বাদ রাখমু না।

রহমান খলিফা ঝুঁকে পড়ে বলল, তাইলে তোমার পোলাগোরে খবর পাঠাও না ক্যান? দুই চাইর দিনের ভিতরে শিকদারও আইবো হুনতাছি।

কিন্তু হাবিল ওস্তাগর যেন খুব একটা খেয়াল করেনি খলিফার কথাগুলো। ছেলেদের নিয়ে এমনিতেই সে দুর্ভাবনায় আছে অনেক। চারদিক থেকে নানা ধরনের কথাবার্তা ভেসে আসছে তাদের সম্পর্কে। চলতে থাকা খুনের মামলারও তেমন একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। হাসিনা সরকার আসবার পর টুপিধারী দলটা আগের মতো ততটা সক্রিয় নয়। তা ছাড়া থানা পর্যায়ে অনেক নেতা গোছের মোল্লা-মাওলানা পারলে তাদের লেবাস পালটে সাহেব হয়ে যায়। কেবল পারছে না কিছু লোক লজ্জার ভয়ে। না হলে এতদিনে কোথাকার খুনের মামলা কোথায় গিয়ে কার গলায় ফাঁস হয়ে যেতো। তার বা তার ছেলেদের টিকির নাগাল পাওয়া কেবল স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াত। প্রতি মাসে থানায় আর কোর্ট-কাছারিতে হাজিরা দিয়ে দিয়ে তাদেরও তেজ কমে আসছে দিন দিন। ছেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলেই আর নতুন সরকারের আইনের কারণে মমিনার বিচারে শরিয়তের বিধান মানতে পারেনি। আগের সরকার থাকলে এতদিনে দোররা মেরে মেরে পুরো পরিবারটাকেই ন্যাড়া বানিয়ে ফেলতে পারতো। সময়টা খারাপ বলেই পাথর মারা বা দোররা মারার মতো উত্তেজক আর ভীতিকর ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে সবখানেই। কিন্তু এ সরকার যতদিন আছে ততদিন বিড়ালের মাথায় ইঁদুরের লাফ ঝাঁপ সহ্য করবার মতো সমাজের মান হানিকর বিষয়গুলোকেও মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হবে।



মমিনাকে সঙ্গে করে থানায় গিয়ে জিডি করে এসেছে বরকতুল্লা। তবু ওসির বলা কথাটা যেন তখনও তার গায়ে হুল ফোটাচ্ছিল একটু পরপর। বিমর্ষ বরকতুল্লার দিকে তাকিয়ে মমিনা বলল, তুই অহনও অই হারামজাদা ব্যাডার কথা মনের ভিতরে বোঝা বইতাছস?

রোদের উত্তাপ আর পথ চলার শ্রমের কারণেই হয়তো দুজনের মুখই লালচে হয়ে উঠেছে। কানের পাশ দিয়ে ঘামের ফোঁটা বেয়ে বেয়ে পড়ছে। মমিনার জিজ্ঞাসার উত্তরে কী বলবে ভেবে পায় না বরকতুল্লা। তাই দেখেই আবার মমিনা বলে, এইডা নিয়া মন খারাপের কী আছে?

-ব্যাডায় পুলিশ না হইলে মনে হয় তখনই গলার মইধ্যে থাবড়া দিয়া ধরতাম।

চলতে চলতে একবার আশপাশে তাকায় মমিনা। ঘরবাড়িগুলো অনেকটা দূরে। কাছাকাছি দু একটা গাছও দেখা যায় না যে, ছায়ায় বসে জিরিয়ে নেবে খানিকটা। পথের এক পাশে কাত হয়ে সে নাক ঝাড়ে ফত ফত শব্দে। তারপর ওড়নার প্রান্ত দিয়ে নাক মুখ মুছে নিয়ে বলে, ওইডি হইল গিয়া ট্যাকার ভুক্কা। পয়সা ছাড়া কিছুই করবো না। তা ছাড়া হারামি কামাইল্যার বজ্জাত বাপটা থানা-পুলিশ কিনতে কতক্ষণ?

-তুই হুদাই প্যাঁচের কথা কইস না। সব পুলিশ আর দারোগা এক না। ওসি খারাপ হইলে দারোগা ভালা হয়। দারোগা খারাপ হইলে আর কেউ। এমনেই তো দুনিয়া চলে। সব ভালো নাইলে খারাপ হইয়া গেলে দুনিয়া কি এমন থাকতো? তর বুদ্ধিশুদ্ধি যে দিনদিন কই যাইতাছে বুঝি না।

-ভালো পুলিশ থাকলে ওস্তাগরের পোলারা কেমনে হাওয়া-বাতাস খাইয়া বেড়ায়?

-হেইডা আরেক কেইস। শিয়া-সুন্নির মাইরপিট। তাও তো চাইর মাস জেল খাইট্যা আইছে তিন পোলায়।

-তাইলে কী এমন হইল? বিচার হইয়া গেছে? আর শিয়ারা মানুষ না? তার লাইগ্যা তাগো বিচারে ঢিলামি করন যায়? করিমুন্নেসার বাপ কত ভালো মানুষটা। জীবনে মিছা-বাটপারিতে কেউ তারে পায় নাই। কোনো কাইজ্যা-ফাসাদেও আছিল না। অথচ ব্যাডারে জানে মাইরা ফালাইলো কাফের কইয়া! আরব দেশে শিয়া নাই? তারা হজ করে না? রোজা রাখে না?

মমিনা যেন তার মনের ভেতরে উথলে ওঠা রাগটাকে দমন করতে পারছে না কিছুতেই। তাই বরকতুল্লা সাড়া না দিলেও সে নিজে নিজেই আবার বলতে আরম্ভ করে, আসলে সুন্নিগোরে দেখছি বেশিরভাগ মাথা গরম। জ্বালাও-পোড়াও-ভাইঙ্গা ফালাও কামে সবের আগে আগে। কয়েক বছর আগে খবরের কাগজে পড়ছিলাম, কাদিয়ানীরা কাফের কইয়া তাগো মসজিদ কিতাব জ্বালাইয়া ফালাইছে। আরে পাগলের দল, আল্লায় কি তগোরে কইছেন এমন মাতব্বরি করতে? নাকি কইছেন সীমা না ছাড়াইতে? খোদার উপরে খোদগারি এই দলের মানুষেই বেশি করে!

বরকতুল্লা এ বিষয়ে মোটামুটি জানলেও বৃথা তর্কে সময় আর শক্তি খোয়াতে আগ্রহ বোধ করে না। শোনা যাচ্ছে বড় শিকদার দু একদিনের মাঝেই গ্রামে আসবে। হতে পারে থানার লোকজনকে টাকা-পয়সা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইবে। আর সেই সুযোগে দিনে বা রাতে হামলা করাবে নিজের পোষা লোকজন দিয়ে। মমিনা যদি না বাঁচে। তার পেটের সন্তান যদি না বাঁচে, তাহলে কারা আর কথা বলতে সাহস পাবে কামালের অপরাধ নিয়ে? কিন্তু এরই মাঝে কি তারা কেউ থানায় যোগাযোগ করেনি? নয়তো ওসি কী করে বলতে পারল বাচ্চার বাপ বরকতুল্লা কেন নয়? দিনরাত তাকেই তো দেখা যায় মমিনাদের বাড়িতে, বাড়ির আশপাশে। মনে মনে তীব্র রোষে ওসির উদ্দেশ্যে সে বলে ওঠে, গু খাওরা কোহানকার!

বরকতুল্লাকে বিড়বিড় করে কিছু বলতে শুনে মমিনা বলল, একটা দারুণ খবর আছে।
বরকতুল্লা চমকে উঠে ফিরে তাকায় মমিনার দিকে। বলে, দারুণ খবর হইলে থানায় যাওনের সময় কইলি না?

-হেই সময় তো একটা নয়া টেনশনে আছিলাম। জীবনের প্রথম থানায় যাইতাছি। কী না কী হয়, আরো কত আজে বাজে চিন্তা আছিল। আসল কথা ভুইল্যা গেছিলাম!

-তুই ভুইল্যাই থাকিস। কামের জিনিস ভুইল্যা থাকিস আর আকামের জিনিস লইয়া পাড়া মাতাইস!

-মজার কথা হইল, কামাইল্যায় কাইল রাইত দুইটার দিকে ফোন দিছে। কইলাম, কীরে চোরের জাত, সামনে আইতে তর সমস্যা কী? কয় ভালা কথা আছে। কইলাম, হুনি দেখি তর ভালা খবর! শেষে কতক্ষণ মিনমিন কইরা কইল, হাজার বিশেক ট্যাকা দেই, ওইডা তুই সাফ কইরা ফালা। তার বাদে মাস তিনেক গেলেই ধুমধাম কইরা বিয়া করমু।
-আর করছে! আঙ্গুল সিধা থাকতে ওই হালার পুতের নাগার পাবি না তুই।

মমিনা বরকতুল্লার কথা শুনে হেসে ওঠে। বলে, হেইডা তো হেইদিনই বুঝছি, যেদিন মাসিক বন্ধের খবর শুইন্যা নিজের গরজে ওষুধ আইন্যা দিল।

থো-থো করে একবার থুতু ফেলে চরম বিরক্তি নিয়ে বরকতুল্লা বলল, তর মতন মাইয়ারা যে, কত বড় ব্যাক্কল বিপদে না পড়লে বুঝস না। এমন চালাক চতুর একটা মাইয়া তুই, এই ছাগলামীটা কেমনে করলি বিয়ার আগে? জানস না মায়ের পেটের ভাই বইন চোখ উলটাইতে দেরি করে না?

-আমি তো তারে বিশ্বাস করছিলাম।

-থো ফালাইয়া ত্যানা প্যাঁচানি আলাপ!

-তার বইন সুমাইয়া তো অমত করে নাই। কলেজে সবের সামনেই ভাবি ভাবি কইয়া কথাটা ছড়াইছে আরো।

-সুমাইয়া কি ভালা মাইয়া নাকি? বিয়া করে একজনরে আর রঙ-রস করে আরেকজনরে নিয়া! কিন্তু তর লাভটা কী হইল? সময়ে কোনো সাক্ষী পাইলি, না মুখ ফুইট্যা একবার কামাইল্যার নাম লইতে পারলি?

-লইলাম না, সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়া সুবিধা হইব না। উলটা নাকে কানে খত।

বরকতুল্লা যেন মমিনার এ কথায় সত্যি সত্যিই ক্ষেপে গেল। সরোষে বলে উঠল, এখন যে আমার নাম কইতাছে তাও তো জোর কইরা না করতে পারলি না! সময় মতন গ্যারাম না ছাড়লে ঘর-বাড়ি ভাঙন থাইক্যা আগুন দিতেও চিন্তা-ভাবনা করবো না। বলে একবার থেমে যেন দম নেয় সে। তারপর আবার বলে, কামাইল্লার বড় ভাই শীল বাড়ির রাধারে কী অবস্থা করছিল ভুইল্যা গেছস? খুব তো বেশিদিনের কথা না। ভাগ্য ভালো যে, তাগো যাওনের জাগা আছিল, গেছেগা ইন্ডিয়া। তুই আমি কই যামু? আছে কোনো জাগা?

-অখন আর হেই দিন নাই। দেশে অনেক শক্ত আইন আছে।

-হ, আছে!

প্রবল তাচ্ছিল্য ঝরে পড়ে বরকতুল্লার কণ্ঠে। বলে, দেখলি না ওসি কী কইল? আইন থাকলেও লাভ নাই। দিনে রাইতে আইন বেচা-কিনি হইতাছে। থানা-জজ-ব্যারিস্টার কিননের মতন ট্যাকা আছে তর? পারবি কিনতে?

-তুই ডরাইস না। আমার বিপদে কি তরে মাইরা নিজের জান বাঁচামু? তেমন মায়ের প্যাটে পয়দা হই নাই। গ্যারামের সবতেই জানে, আমার ভাই বইনেগো কারো কোনো বাচ্চা-কাচ্চা নাই। বংশের বাতি জ্বালানের লাইগ্যাও তো একজন চাই নাকি? আমার প্যাটেরটা যেমনেই পারি বাঁচামু! বাপের পরিচয়ও আদায় কইরা ছাড়মু।

-হেইডাই তো ডরের কথা। বংশের বাতি বাঁচাবি, তাইলে কোনোখানে পলাইয়া গেলেই পারতি! বাপের পরিচয় আবার কোন পাগলামী। তুই তো জানসই কে?

-আমার জানা থাকলেও দশজনে জানন দরকার। আমরা মা-পোলারে পালবো, খরচ-পাতি দিবো তা আশা করি না। ভাইয়েরা বইনেরা কইছে বাচ্চার পালন-পোষনের চিন্তা না করতে। সুস্থ মতন পয়দা জানি হয়। বিয়া না হয় হইল না। জন্মডা কি মিছা? কোনো পুরুষ ছাড়া আমার প্যাট হইছে, এই যুগে কে বিশ্বাস করবো? ফেসবুকের ওয়ালে, বন্ধুগোরে সবই জানাইয়া রাখছি। কামাইল্যা আর আমার ছবিও আছে। অনিমা তো সবই জানে। বাড়িত হামলা হইলে ভিড্যু কইরা আমার ওয়ালে দিমু। দুনিয়া এখন আর অত সোজা না।

মমিনার কণ্ঠে যেন খানিকটা আত্মতৃপ্তির ছাপও ফুটে ওঠে।

মমিনার কথা শুনে হাসে বরকতুল্লা। বুদ্ধি আর সাহসের প্রশংসা করতে ইচ্ছে হলেও গ্রাম্য কৌশল আর দলাদলির ব্যাপারটা ভেবে চুক থাকে সে। নাজিমের ভাগ্নি ড্যাফোডিলও এমন একটা কেসে নাকানি চুবানি খেয়েছিল। বাচ্চাটা মরে যাওয়াতে আদালতে আর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। কিন্তু মমিনার বাচ্চাও যে বাঁচবে তারই বা নিশ্চয়তা কী? তবে আজকাল ব্যাপারগুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে। আদালতে যাওয়ার আগে বা পরেও ডাক্তারি পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে সন্তানের পিতৃ-পরিচয়। তার বিশ্বাস মমিনা জানে ব্যাপারটা। যে মেয়ে ফেসবুকে বিচরণ করে সে মেয়েকে আজকাল অবোলা ভাববার কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু তারপরও কেন এমন বোকামির ফাঁদে পা দিতে গেল সে? নাকি ভাই বোনের সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা নেই ভেবে নিজেকেও সে দলের ভেবে এমন কু কাজে গা ভাসিয়ে দিতে সাহস পেয়েছিল? আরে বজ্জাতি করবি তো আড়ালে আবডালে কর, তাই বলে দশ গ্রামের মানুষকে হাসাতে হবে?

হঠাৎ কেন যেন মমিনার ওপর এতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সহানুভূতি আর সহযোগী মানসিকতা মুহূর্তেই কেমন একটা ঘৃণার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ইচ্ছে হচ্ছিল এই নষ্টা আর চরিত্রহীন মেয়েটাকে ফেলেই সে চলে যায় নিজের মতো। জেনে বুঝে যারা নোংরা পাঁকে নামতে সাহস করে, নিশ্চিত ডুবে যাবে জেনেও যারা অথৈ জলে ঝাঁপ দেয়, তারা ডুবে যেতে থাকলে উদ্ধারের হাত বাড়ানোটাও অমানবিকতা।



সন্ধ্যার খানিকটা আগে দিয়েই মনটা হঠাৎ কেমন দুরু দুরু করতে আরম্ভ করে মমিনার। কিছুক্ষণ পরই মাগরিবের আজান হবে। কামালের সন্তান পেটে আসবার লক্ষণ টের পেতেই আস্তে ধীরে তার মনটাও ঝুঁকে পড়েছে অদৃশ্য স্রষ্টার পদপ্রান্তে। পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ে স্রষ্টার কাছে এ নিবেদনই করে, তার যাই হোক না কেন সন্তান যেন নিরাপদে সুস্থ সবল অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হতে পারে। সমাজে নিজের পরিচয় নিয়ে সসম্মানে যেন দাঁড়াতে পারে। কিন্তু তার এমন ধর্মভীরুতাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে তার মা শবেজা বেগম। তার কথা হচ্ছে যে, ইচ্ছে করে পাপে ডুবে গিয়ে খোদাকে নামিয়ে ফেললেও পাপের স্খলন ঘটবে না। একবার না একবার প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে। মমিনা জানে জানে পাপ-পুণ্যের ব্যাপার। জানে কোন পাপের কেমন শাস্তি। তাই অজ্ঞাত পাপের শাস্তি নিয়ে অযথা ভীতির মাঝে কাল কাটাতে চায় না সে।

পাশে চাপকল থেকে অজু করে এসে ঘরের দরজা জানালা ভালো মতো লাগিয়ে দেয় সে। বাড়িটা বলতে গেলে আজ এক রকম খালিই। তার মা শবেজা বেগম ফিরতে আরো বেশ কিছুটা দেরি হয়ে যাবে। হয়তো পার হয়ে যাবে এশার নামাজের অক্তও। ততক্ষণ খানিকটা ভয়ের ভেতর দিয়ে পার করতে হবে সময়। গ্রামে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, হাবিল ওস্তাগর আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা সব দিক দিয়ে তাদের পথ বন্ধ করে দিতে ঘোট পাকাচ্ছে। এমন কি ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া বা আগুন লাগানোর মতো নিষ্ঠুরতার দিক দিয়েও পিছিয়ে থাকবে না। শিয়া-সুন্নি বিবাদের সময় বোঝা গেছে স্বার্থের জন্যে এরা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে। ঠিক তখনই উঠানের দিকে বেশ কয়েকজনের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর শোনা যায়। উঁচু কণ্ঠে কেউ বলল, জিগাও বাইত্যে আছে নি?

আরেকজন বলল, দুয়ার তো বন্ধ দেখা যায়।

কাউকে আবার বলতে শোনা যায়, সিগল লাইড়া দেখ। ভিতরে মানুষ থাকলে আওয়াজ দিবো।

এমনিতেই কিছুটা ভয়ে ভয়ে ছিল। হঠাৎ করে অনেক মানুষের উপস্থিতিতে তার পুরো শরীর কাঁপতে আরম্ভ করছিল বলে, কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। যদি সত্যিই বাইরে থেকে দরজার শিকল টেনে দিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়? তাহলে বের হওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে। এমন কত সংবাদই তো পত্রিকার পাতায় আসছে অহরহ। প্রাণে বাঁচতে হলে আগে নিরাপদে বের হবার পথ খোলা রাখতে হবে। আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে পাট কাটার বড় কাস্তেটা এক হাতে নিয়ে শরীরের পেছনে আড়াল করে। তারপর ফোনের ভয়েজ রেকর্ডার অন করে দিয়ে তা ঠেলে দেয় বুকের খাঁজে। সব প্রস্তুতি শেষ করে দরজার একটি পাল্লা খুলে সে জানতে চায়, অহন নমাজের সময়, আপনেরা আইলেন আরো কিছুডা আগেই আইতেন।

-বিচারের রায় হইছিল তোমরা গ্যারাম ছাইড়া যাইবা। সময়ও দিছিলাম।
যেন ধমক আর গলার জোরেই সব সমাধান করে ফেলবে রহমান খলিফা।

-সময় কি শেষ?

মমিনার কণ্ঠে যেন প্রচ্ছন্ন কৌতুক পাক খায়।

রহমান খলিফার গরজ দেখে মমিনার ইচ্ছে হয় হাতের কাস্তেটার সদ্ব্যবহার করে ফেলে এখনই। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে শান্ত স্বরে বলে, থানায় জিডি করছি। চেয়ারম্যানের কাছেও সেই কাগজ আছে একটা। থানার ওসি আর চেয়ারম্যান দুইজনেই গ্রাম ছাইড়া যাইতে মানা করছে। আরো কইছে কেউ বিরক্ত করলে কাগজে লেইখ্যা জানাইতে।

প্রচণ্ড চড়ের ঝাপটায় যেন স্তব্ধ হয়ে যায় রহমান খলিফা। তাই তার নীরবতা দেখেই হয়তো হাবিল ওস্তাগর এগিয়ে এসে খানিকটা নরম স্বরে বলে, আম্মার, আমরা তো সমাজ লইয়া চলি। আরো আট-দশটা গ্যারেমের মানুষের আনা-যানা আছে এই গ্যারামে। তো এহানে আল্লা বিরুধী, সমাজ বিরুধী কিছু হইলে কি আমরা মুখ দেখাইতে পারমু?

হাবিল ওস্তাগরের মিষ্টি কথায় মনটা আর্দ্র হয়ে ওঠে মমিনার। বুকের ভেতর কান্নার স্রোত উথাল পাথাল করে। তবু নিজেকে সংযত করে বলে, সমাজ বিরোধী আর আল্লা বিরোধী কাজ কোনটা প্রমাণ না কইরা তো শাস্তি দিতে পারেন না। আপনেরাই বিচার করলেন, আপনেরাই সাক্ষী হইলেন। রায়ও আপনেরাই দিলেন। আমারে তো কিছু জিগানের দরকার মনে করলেন না।

মমিনার কথায় দলটি যেন ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে ওঠে। তাদের ভেতর থেকে আঁটকুড়া মান্নান চিৎকার দিয়ে উঠে বলে, তর প্যাডে কার ছাও হেইডা পরমাণ করস না ক্যান?

-আগে সুস্থ মতন বাচ্চা পয়দা হউক। প্রমাণ করমু আমি এইডা কার জন্ম।

আঁটকুড়া মান্নান যেন আরো ক্ষেপে উঠে বলে, জাউড়া খালাস দিতে হইলে গ্যারামের বাইরে যা তুই!

হঠাৎ করেই যেন মন থেকে ভয় ডর দূর হয়ে গেল মমিনার। মান্নানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, আঁটকুড়া হইয়াও বুঝস না একটা বাচ্চার কী দাম? জাউড়া জাউড়া করতাসস, কোনোখানে একটা জাউড়াও তো বানাইতে পারলি না। ব্যাডা মানুষ ছাড়া কোনো বেডি পোয়াতি হইতে দেখছস? আগে বাচ্চাডা পয়দা হইতে দে, তার বাদে তার বাপ কে প্রমাণ হইব। না পারলে আমার মাথা ন্যাড়া করিস। মুখে কালি মাখিস। ন্যাংটা কইরা গ্যারাম থাইক্যা বাইর করিস। আরো আট-দশটা গ্যারামে তগো সুনাম হইব। সম্মান বাড়বো।

হাবিল ওস্তাগর এতক্ষণ চুপচাপ তাদের বাদানুবাদ শুনছিল অথবা কিছু একটা ভাবছিল। হঠাৎ মুখ তুলে বলল, মাইন্যা নিলাম তর কথা। কিন্তু এই গ্যারামে তুই তর বেওয়ারিশ ছাও পয়দা দিতে পারবি না। গ্যারামের বাইরে যা!

-থানারে না জানাইয়া আমি গ্যারামের বাইরে যামু না। আপনেরা কেউ থানা থাইক্যা আমারে কাগজ আইন্যা দেন তাইলে।

মমিনার কথা শেষ না হতেই দলটির মাঝে কিছু একটা নিয়ে শলা-পরামর্শ শুরু হয়। হাবিল ওস্তাগরকেও দেখা যায় আরো দুজনের সঙ্গে ফিসফাস করতে। সে হঠাৎ সরব হয়ে বলল, দুই একদিনের মইধ্যে আমরা ব্যবস্থা করতাছি।

দলটা চলে গেলেও মমিনার ভয় দূর হয় না। দরজা বন্ধ করে দিয়ে সে হাতের কাস্তে ফেলে বুকের কাছ থেকে ফোনটা বের করে ভয়েজ রেকর্ডার অফ করে দিয়ে আবার চালিয়ে শোনে। খানিকটা বাজতেই খুশি মনে সে আবার বন্ধ করে দেয় তা। রাতে সময় সুযোগে তা আপলোড করে দেবে অনিমার ওয়ালে। মাগরিবের আজান শুরু হতেই সে ফোন বন্ধ করে দিয়ে ভাবে আবার অজু করতে হবে কি না। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে আবার অজু করবার সিদ্ধান্ত নেয় সে। ঘরের পেছনকার দরজা খুলে সে ফের কলের কাছে আসে। কিন্তু হঠাৎ তার মনে হলো যে, কলের খানিকটা দূরে ঝোপটা যেন দুলে উঠল একবার। ভালো মতো দেখার জন্য নিরাপদ দূরত্বে থেকে দৃষ্টির চিরুনি চালায় ঝোপের ওপর। সতর্কতা হিসেবে মেজ ভাই মহরতের স্ত্রী কমলাকে ডেকে বলে, অজু করবা না ভাবি? ঠিক তখনই তার চোখে পড়ে মাথায় গামছা বাঁধা কেউ দাঁড়িয়ে আছে ঝোপের ওপাশে।

মহিতের স্ত্রী কমলা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসতে দেখলে কিছুটা সাহস যেন ফিরে আসে মমিনার। মাথায় গামছা বেঁধে রাখবার অভ্যাস আছে তার নোয়াব আলি চাচার ছেলে হাতেমের। পড়ালেখা বিশেষ করেনি। সঙ্গ দোষে বিপথগামী হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু এমন একটা সময় সে কী করছে ওখানে? নিশ্চয় খারাপ কোনো উদ্দেশ্য আছে। হতে পারে শিকদারের দলে সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

অজু শেষে ঘরে ফেরার সময় কমলাকে বলল, হাতে কাজ না থাকলে নমাজ শেষে আইও তো। কথা আছে।

কমলা বলল, তর ভাই তো ঘরেই আছে। তুই আইয়া পড়। কী কইলি তর ভাইয়েও হুনতে পারলো।

কমলা এমনিতে বেশ সাহসী মেয়ে। তাই তাকে কলের কাছে একা রেখে আসতে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না তাকে। ভেতর থেকে ঘরের দরজা ভালো মতো বন্ধ করে দিয়ে সে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ায়। নিয়ত বাঁধবার আগে দিয়ে তার মনে খচ খচ করে ওঠে যে, ঘরে আগুন না দিলেও, তাকে খুন না করলেও তার পেটের ভেতর বেড়ে ওঠা পরিপূর্ণ প্রমাণটাকে নিশ্চিহ্ন করতে খুব বেশি কিছু করতে হবে না শত্রু পক্ষকে। একটি ওজন মতো ঘুষি বা লাথিই যথেষ্ট। আর এ ভাবনাটি তার মাথা বিস্তার লাভের সঙ্গে সঙ্গেই পুরো দেহ কেঁপে ওঠে থরথর করে। আর শত্রু পক্ষ এমন কিছুই করবে সব দিক দিয়ে নিজেদের বাঁচাতে। তাহলে কি হাতেমের এমন কোনো পরিকল্পনা আছে?

ভয় তাড়াতে সে বুকে থুতু দেয়। নামাজের নিয়ত করে। কিন্তু সুরা পড়তে গিয়ে বারবার ভুল হয়ে যায়। নামাজ বাদ দিয়ে জায়নামাজে কিছুক্ষণ বসে থাকে সে। পেটের ওপর হাত রেখে আয়াতুল কুরসি পড়ে। আর মাস খানেকের মতো নিরাপত্তা আর পরিচর্যা দিতে পারলেই শিশুটি সুস্থ সবল ভাবে ভূমিষ্ঠ হতে পারে। আরো আগেই আলট্রাসনোগ্রাম করে ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে তার গর্ভে বেড়ে উঠছে ছেলে সন্তান।



হাতেম যে তার পেছনে লেগেছে তা নিশ্চিত হয়ে গেছে মমিনা। আগে সপ্তাহে এক দুদিনের বেশি তাকে বাড়ি দেখা যেতো না। আর বাড়ি এলেও খুব বেশিক্ষণ সে থাকতো না। কিন্তু সেদিনের ঝোপের আড়ালে তাকে দেখবার পরদিন থেকেই লক্ষ্য করেছে যে, সারাদিন বাড়িতেই ঘুর ঘুর করছে হাতেম। আগে খুব স্বাভাবিক ভাবেই এমন কি তাকে নিয়ে বিচার শালিস হবার পরও উঠোনে দাঁড়িয়ে কুশল বার্তা জানতে চাইতো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে এদিকে তাকে আসতে দেখা যায় না। দেখা হলেও কেমন যেন দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। তার ক্ষতি করে হাতেমের কী এমন স্বার্থ উদ্ধার হবে? নাকি গোপনে গোপনে মনের ভেতর পুরুষোচিত বিকৃতি লালন করেছে এতকাল। সুযোগ করতে পারেনি বলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছে? নাকি শিকদারের কয়েকটা টাকার কাছে বিকিয়ে দিয়েছে মানবিক সত্ত্বা?

হাতে খুব বেশি সময় নেই। তা ছাড়া ঘরের পাশে নতুন শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখা কঠিন। হঠাৎ কখন সে শিকার ধরতে মরীয়া হয়ে উঠবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই পরিবারের সবার সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে ঠিক করা হয়েছে যে, মমিনার এমন অবস্থায় অজ্ঞাতবাসই নিরাপদ। শত্রুর সঙ্গে লড়তে হলে সুকৌশলের বিকল্প নেই। নিরাপত্তার কারণে বরকতুল্লার কাছেও গোপন করা হবে তার অবস্থান। কেউ যাতে কিছুই বুঝতে না পারে তেমন পরিকল্পনা মতো সে প্রথম যায় বড় খালার বাড়ি। সেখানে সপ্তাহ খানেক থেকে ছোট খালার বাড়ি যাবে বলে অজ্ঞাত স্থানে চলে এসেছে। বাস, রেল, নৌকা আর রিকশার জটিল এক যাত্রাপথ মাড়িয়ে কেউ তাকে খুঁজে বের করার মতো উৎসাহ ধরে রাখতে পারবে না। আর খোঁজাখুঁজি করলেও দু খালার বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যে সে থাকতে পারে তা কারো ভাবনায় ধরা দেবে না অত সহজে। কেবল খানিকটা অনুমান করতে পারতো বরকতুল্লা। কিন্তু সেও শেষ পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে ভরসা এটুকুই যে, আর যাই করুক সে কিছুতেই হাত মেলাবে না শিকদারের সঙ্গে।

কিন্তু গ্রাম এলাকার মানুষ যারা সহজ সরল বলে স্বীকৃত, তারাও একটা ব্যাপার বুঝতে পারে যে, সন্তান নিখোঁজ হলে কোনো পিতা-মাতাই নির্ভাবনায় কাল কাটাতে পারে না। আর এ ব্যাপারটিই গ্রামের মানুষদের নতুন করে কৌতূহলী করে তুলবার সঙ্গে সঙ্গে শিকদার আর তার দলের লোকেদের নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে অনুপ্রাণিত করে হয়তো। আর মমিনার নিখোঁজ হবার সংবাদে গ্রামের লোকজনের দৃষ্টি নিজামের পরিবারের ওপরই নিবদ্ধ থাকবে ভেবে কামাল শিকদার মালয়েশিয়া যাবার সব পরিকল্পনা পাকা করে ফেলে। কিন্তু খবর কি আর চাপা থাকে? থাকে না। কামালকে ঘন ঘন ঢাকায় আসা যাওয়া করতে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই লোকজনের সন্দেহের জন্ম হয়। আর তা থেকেই বেরিয়ে আসে তার মালয়েশিয়া যাবার প্রস্তুতির খবর। অন্যদিকে সংবাদটি বরকতুল্লার কানে আসবার সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো মমিনার কথা ভেবেই সে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় এ বিষয়ে।

ট্যাগ করবার কারণে যথা সময়ে তা মমিনার চোখেও পড়ে। আর সে কথা জানিয়ে সে ইনবক্স করে অনিমা সহ অন্যান্য ঘনিষ্ঠ যারা আছে তাদেরকে। অনিমা তার সেই বন্ধু , যে প্রথম তাকে ডিএনএ সম্পর্কে জানায়। ভরসা দিয়ে মমিনাকে বলেছিল দুশ্চিন্তা না করতে।

অনিমা তাকে জানায় যে, ব্যাপারটা একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। ভিসা কনফার্ম করবার আগে কামালের মেডিক্যাল টেস্ট অবশ্যই হবে। আর কোথায় কোথায় মালয়েশিয়া গামী যাত্রীদের মেডিক্যাল চেকআপ করানো হয় তা জানা আছে তার। ঢাকার এমন কয়েকটি সেন্টারেই তার ইয়ার মেটরা আছে। তাদের কারো মাধ্যমেই কামালের ডিএনএর জন্য নমুনা সংগ্রহ করে নেবে। প্রয়োজনে সে নিজে উপস্থিত থাকবে সেদিন।

তবু ভরসা পায় না মমিনা। ফিরতি বার্তায় জানায় যে, পাসপোর্টে ঠিকানা বদল করা কোনো কঠিন ব্যাপার না। টাকা দিয়ে আইডিও বদল করে ফেলা যায়। সে ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। কিন্তু তারও সমাধান বের করে ফেলে অনিমা। কামাল শিকদার যাই করুক, ছবি বদল করতে পারবে না। কসমেটিকস সার্জারি করালেও অনেক সময়ের প্রয়োজন। কামালের বেশ কটি ছবিই আছে তার ফেসবুক ওয়ালে। সেগুলো সে তার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবে। যাতে তাদের চিনতে অসুবিধা না হয়। কামালের অজ্ঞাতেই ডিএনএর জন্য নমুনা তারা হাতিয়ে নিতে পারবে কোনো অন্যায় না করেই। তা ছাড়া এ পরীক্ষা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়া পরীক্ষা অসম্ভব। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজে ঘুষ দিয়েও কাজ উদ্ধারের আশা দেখছে না সে।
মমিনা আশ্বস্ত করতে অনিমাকে জানালো, যে সরকারি হাসপাতালে সে ভর্তি হবে, সেখানে সে জানিয়েছে সিজারিয়ান বেবি চায়। সে হাসপাতালের সার্জনকে দিয়ে সুপারিশ লিখিয়ে নেবে যাতে শিশুর পরিচয় সুরক্ষার জন্যে এ পরীক্ষা অপরিহার্য।

অনিমা খুশি হয়ে লিখল, ওরে বদমাশ মেয়ে, তোর চিন্তাভাবনা তো অতটা ফ্রেশ ছিল না। অত কুটিল ভাবনাও তোর ছিল না। এর সবই পেয়েছিস ভারতীয় সিরিয়াল দেখে। দিন যত যাচ্ছে আমাদের মেয়েগুলো এসব সিরিয়াল দেখে আরো বদমাশ হয়ে উঠছে। যাই হোক, কামাল কোনদিন ঢাকা যাচ্ছে তারিখটা জানতে পারলে কাজটা আরো নিখুঁত হতো।

বরকতুল্লা যাতে সেদিন এ নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেয় সে আশায় না থেকে নিজেই তাকে ফেসবুকে একটা বার্তা পাঠাবে। স্ট্যাটাসও দেবে। বার্তা নয়তো মন্তব্যে ব্যাপারটা জানা যাবে অবশ্যই।

পরদিন হাসপাতালে যাবার পথে নিরুদ্বিগ্ন মমিনা মোহিতের স্ত্রী কমলাকে ফোন করে বলে, ভাইরে কও আমারে ত্রিশ হাজার টাকা বিকাশ করতে। কালকে সকাল দশটায় অপারেশন।
- তর ভাই তো বাজারে। আইচ্ছা সিজারের কোন কাম লাগলো? লক্ষণ তো ভালোই আছিল কইলি!

-আমার সুবিধা আছে তার লাইগ্যাই সিজার। ভাইরে ফোন কইরা বল ব্যাঙ্কে যায় জানি। কিছুক্ষণের মইধ্যেই বিকাশ নাম্বার পাঠাইতাছি।

মমিনা আস্তে আস্তে হেঁটে চলে বাজারের মাঝখান দিয়ে আর নেকাবের ফাঁকে খুঁজতে থাকে বিকাশের বিজ্ঞাপন। আজকাল বিজ্ঞাপন সব কিছুতেই আছে। এমন কি দান খয়রাত করতেও মানুষ বিজ্ঞাপন দিতে ভোলে না। রঙিন পোস্টার না হোক, কম্পিউটার আর প্রিন্টারের কল্যাণে অন্তত এ ফোর সাইজের একটি কাগজে সাদাকালোয় ছাপিয়ে নিতে খুব বেশি খরচ করতে হয় না।

একটি বইয়ের দোকানেই ঝুলছে লেমিনেটেড বিজ্ঞাপন- “এখানে বিকাশ করা হয়।“
মমিনা একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গজেন্দ্র গমনে দোকানটির সামনে দাঁড়িয়ে দুহাতে কোমর চেপে ধরে।

বোরখাবৃত একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে শ্রান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়াতে দেখেই দোকানের মালিক অথবা কর্মচারী, পিতাপুত্র, চাচা-ভাতিজা, যাই হোক বার্ধক্য আর যৌবনের দু প্রতিনিধি ব্যস্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়ে। বৃদ্ধ লোকটি বলল, কিছু লাগবে আম্মা? ভেতরে এসে একটু বিশ্রাম নেন!

যুবক ছেলেটি একটি প্লাস্টিকের লাল রঙের চেয়ার মাথার ওপর উঁচিয়ে ধরে বাইরে নিয়ে এসে মমিনার সামনে পেতে দিয়ে বলে, এখানে বসেন আপু! ভেতরে গরমটা বেশি লাগবে।

মমিনা চেয়ারটাতে বসেই একটা নিরাপত্তা আর স্বস্তির ছোঁয়া পেয়ে বলল, থ্যাঙ্কু আংকেল, থ্যাঙ্কু ভাইয়া!

বৃদ্ধ লোকটি দোকানের ভেতরকার একমাত্র টেবিল ফ্যানটি এগিয়ে এনে মমিনার বরাবর রাখে যাতে তার ওপর বাতাসের পুরোটাই লাগে। ফ্যানের গতি বাড়িয়ে দিয়ে লোকটি বলল, যা গরম! ঠাণ্ডা কিছু খাবেন আম্মা, কোক-ফানটা না হলেও একটা ফ্রেশ মিনারেল পানি? ভালো লাগবে!

তারপরই কেমন বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, এ অবস্থায় একা একা...। সঙ্গে কেউ থাকা উচিত ছিল!

মমিনা আড় চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। লোকটিকে কেমন উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। ততক্ষণে ছেলেটি একটি ঠাণ্ডা পানির বোতল নিয়ে এসে বাড়িয়ে ধরেছে মমিনার সামনে। সে যে এক ছুটে গেছে আর ফিরে এসেছে বুকের ওঠা-নামা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিন্দু বিন্দু স্ফটিকের মতো পানি লেগে থাকা ঠাণ্ডা বোতলটা হাতে নিতে নিতে সে বলল, এত কষ্ট করতে গেলেন কেন ভাইয়া?

ছেলেটি হাসিমুখে বলে, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

মমিনা পানির বোতলের ঢাকনা খুলতে খুলতে বলল, বলেন।

-আপা আপনার এখন যে অবস্থা, দেখলেই মনটা গলে যায়। মনে পড়ে যায় আমার মায়ের কথা।

মমিনার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। এমন মানুষও বাংলাদেশে আছে? অথচ হাতেম এ অবস্থায় পেছনে লাগে। হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে বের করে দেবার সচিত্র সংবাদ ছাপে দৈনিক পত্রিকা। বাড়তি টাকা আদায় করতে মৃত মানুষকে মিছেমিছি আইসিইইউতে রাখে। বিল পরিশোধ করতে না পেরে ক্লিনিক থেকে বাবার মৃত দেহ ছাড়াতে পারে না সন্তান। অনাগত সন্তানকে অস্বীকার করে স্বার্থান্বেষী জন্মদাতা। তেমন জান্তব মানসিকতার ভিড়ে দু বয়সের মানুষ দুটি কি খুব বেশি বেমানান না? তবু সে বুঝতে পারে না যে, সে কি সত্যিই খুশি হবে নাকি ক্ষয়িষ্ণু মানবতাকে করুণা করবে?

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২১
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×