somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

শহীদ মতিউর এবং নবকুমার ইনস্টিটিউটঃ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহীদ মতিউর এবং নবকুমার ইনস্টিটিউটঃ

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ মতিউর রহমানের স্কুল ঢাকার বকশি বাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউশন। যদিও প্রায় ৯২ বছর আগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তবু "মতিউরের স্কুল" বলেই অনেকের নিকট এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচিত। মতিউরের স্মৃতি নিয়েই স্কুলটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা "নবকুমার" স্কুলের পরিচয় দেয়ার চেয়ে "মতিউর" এর স্কুল বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জানা যায়, ১৯১৬ সালে বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজের জায়গায় নবকুমার ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওটিই ছিল স্কুলের মূল ভিত্তি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ইডেন কলেজের শাখা খোলার প্রয়োজনে নবকুমার ইনস্টিটিউশন-এর জায়গা এবং ভবনাদি রিকুইজিশন করা হয়। পরবর্তীকালে ৫০-এর দশকে স্কুলটি ১৬ উমেশ দত্ত রোড, বকশি বাজারে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই অবাধি নবকুমার ইনস্টিটিউটটি এখানেই অবস্থিত।

স্কুলটির জায়গা এবং সম্পত্তি জোর করে রিকুইজিশন করার ঘটনায় নবকুমার ইনস্টিটিউটি ঐ সময় বদরুন্নেসা কলেজের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়। সেই মামলা এখনও চলছে। নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নাম নিয়ে অনেকে অনেক সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। অনেকে খ্যাতিমান সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস "কপালকুন্ডলা"র নায়ক নবকুমারের নামানুসারে স্কুলটি নামকরণ করা হয়েছে বলে মনে করে। কিন্তু আসলে তা নয়। জমিদার এবং সমাজসেবী নবকুমারের নামানুসারে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায়, পাকিস্তান আমলে নবকুমার ইনস্টিটিউশনে বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলা কলেজ মীরপুরে স্থানান্তরিত হয় এবং সরকারী কলেজে রূপান্তরিত হয়।

শহীদ মতিউর সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় সে এই স্কুলের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিল। সেই থেকে নবকুমার ইনস্টিটিউট প্রতিবছর ২৪ জানুয়ারী গণঅভ্যুত্থান দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্যে দিয়ে শহীদ মতিউরকে স্মরণ করে। আজও স্কুলের দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে মতিউরের কয়েকটি পোট্রেট। মতিউরের মৃত্যুর ৩৮ বছর পরেও তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজহার উদ্দিন মল্লিক প্রায়শই এ স্কুলটিতে আসেন। খুঁজে ফিরেন তার অকালপ্রয়াণ সন্তানের স্মৃতি। জানা যায়, স্কুলটিতে এসে তিনি মতিউর যে ক্লাশে বসে ক্লাস করতেন সেখানেও মাঝে মাঝে যান। এছাড়া মতিউরের বাবা যখনই স্কুলটিতে আসেন তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। স্কুলের শিক্ষকরা জানান, শোকে কাতর মতিউরের বাবা অসহায়ভাবে এবং আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন।

১৯৭৩ সালে নবকুমার ইনস্টিটিউটের কলেজ শাখা খোলা হয়। যা বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত ড. শহীদুল্লাহ কলেজ নামে পরিচিত। দুটি প্রতিষ্ঠানই একই গভর্নিং বডির দ্বারা পরিচালিত হয়।

লেখাপড়ায় নবকুমার ইনস্টিটিউশন অতীতে খুব উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। ৮০'র দশক পর্যন্ত স্কুলটি এসএসসি পরীক্ষায় বরাবরই ভালো ফলাফল করেছে। প্রাক্তন আইন বিচার ও সংসদগ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ খান, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনি, সাবেকমন্ত্রী মরহুম মশিউর রহমান যাদু মিয়া, এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) সদরুদ্দীন, সাবেক সচিব শামসুর রহমান, ডেসার সাবেক চেয়ারম্যান মুয়িদ হোসেন, খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী নিয়াজ মোহাম্মদ, নীলু বিল্লাহ, টিভি প্রযোজক রিয়াজ উদ্দীন বাদশাহ, অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদ প্রমুখ এই বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও স্কুলটি রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ফুটবল এবং ক্রিকেটে জাতীয় পর্যায়ে অনেকে খেলেছেন যারা এ স্কুলের ছাত্র। ফুটবলে খেলেছেন মালা, ইউসুফ, বড় নাজির, ছোট নাজির, ক্রিকেটে জাভেদ ওমর, পোল ভল্টে মিরাজ উদ্দীন। স্বাধীনতার পর আন্তঃস্কুল ফুটবলে নবকুমার ইনস্টিটিউশন কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

শুরু থেকে নবকুমার ইনস্টিটিউশনে কত ছাত্র ছিল তা জানা যায়নি। তবে বর্তমানে শিশুশ্রেণী থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত ছাত্রের সংখ্যা ১৭ শত। ৩৫ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে চারতলা এবং ছয়তলা দুটি ভবন। মোট শিক্ষক সংখ্যা ৬৫। স্কুলটি খুব অল্প জায়গায় হওয়ায় এখানে নেই কোন খেলার মাঠ। স্কুলটিতে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৭০ শতাংশ। অতীতে এখান থেকে প্রায় প্রতিবছরই দু'একজন ছাত্র মেধা তালিকায় থাকতো।

নবকুমার ইনস্টিটিউশনের প্রিন্সিপাল চৌধুরী সাহিদ হোসেন স্কুলটি সম্পর্কে বলেন, আগে স্কুল ছিল কম। এখন বেশী স্কুল হওয়াতে আশানুরূপ মেধাবী ছাত্র পাওয়া যায় না। এছাড়া এ অঞ্চলের অভিভাবকরা সেভাবে সচেতন নয়। অধিকাংশই নিম্নবিত্ত অভিভাবকদের ছেলেরা এখানে পড়াশুনা করে। অভিভাবকদের ডাকলেও সাড়া দেয় না। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে স্কুলটি অতীতের চেয়ে ভালো ফলাফল করছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:২২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×