somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"সই" বন্ধুত্বের আদি এক নাম

কালক্রমে বাঙ্গালী সমাজে বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বিষয় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মধ্যকার সম্পর্কেরও পরিবর্তন হচ্ছে। ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী স্যারের একটা প্রবন্ধে পড়েছিলাম-বাঙ্গালী সমাজে কিছু ঐতিহ্যগত সম্পর্কের মধ্যে "সই" পাতানো ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল একটি ব্যাপার। তখন গ্রামে মেয়েরা তেমন স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ পেতনা। নিজেকে শেয়ার করার জন্য তাই তারা কোন না কোনভাবে কারো সাথে "সই" পাতাতো। একটি মেয়ের জন্য সই ছিল খুবই জরুরী। কোন মেয়ের যদি সই না থাকত তবে তার মন-মানসিকতা ভাল থাকত না। শরের মেয়েরাও কিন্তু সই পাতানোয় পিছিয়েছিলনা। তবে শহরের মেয়েরা সইকে সই সম্বোধন নাকরে ফ্রেন্ড সম্বোধন করতো। এই সই/ ফ্রেন্ড পাতানোতে শুধু সই-এ সই কিম্বা ফ্রেন্ড-এ ফ্রেন্ড-এ এই সম্পর্ক হতো না। দুইটি পরিবারের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হতো। সাথে সাথে কিছু ঐতিহ্যগত নিয়ম-কানুনও পালন করা হতো। কে কার সই হবে সেটা নির্দিষ্ট করা ছিল খুবই কঠিন। চাইলেই যে কেউ কারো সই হতে পারত না, গ্রামে পারিবারিক অনুমতি নিয়ে সবাইকে জানিয়ে সই পাতানো হত। কিন্তু শহরে পাশাপাশি থাকার কারনে বা একসাথে পড়ার কারনেই কিম্বা এমনি এমনিই ফ্রেন্ড হয়ে যেত, হয়ে যায়! তবে তখনকার দিনে গ্রামের একটি মেয়ের ১০/১১ বছর হলেই যে একটি মেয়ের সই হতেই হবে এটি নিশ্চিত ছিল। সই-এ সই-এ এত ভাব হয় যে, নিজের বোনের সাথেও এতো ভাব হয় না। ঘটা করে এক সই'র বাড়িতে অন্য সই/ফ্রেন্ড তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে আসতো, থাকতো। সই-সহ পরিবারের সবাইকে মূল্যবান জিনিসপত্র উপহার দেয়া হতো। এক সই'র বাড়ি থেকে রান্না করে পিঠা, মিস্টি, চিড়া, বিশেষ বিশেষ খাবার পাঠানো হত। সই সইকে রেখে কোন বিশেষ কিছু খেতেই পারত না। সই'র বাড়িতে এসে বেড়ানো একটা রেওয়াজ ছিল।

পরিবারের সবাই তাকে বিশেষভাবে আদর-যত্ন করত। এক সই'র বিয়ে হলে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে তার সই'ই থাকত সব। বাবা-মা তাদের সন্তানকে কোন মূল্যবান জিনিস উপহার দিলে তার সইকেও সেই জিনিসটি দিতে হত। মোট কথা, বাবা-মাও এ বিষয়ে জড়িত থাকেন খুব নিবিড় ভাবে। সামাজিক বন্ধন, রক্তের বন্ধন ছাড়াও এক নিবিড় সম্পর্ক হচ্ছে সই পাতানো। কিন্তু এখন আর সেই সই পাতানো লক্ষ্য করা যায় না। আমার স্ত্রীর স্কুল জীবন কেটেছে দর্শনায়। প্রায় ৩০/৩৫ বছর পুর্বে ওখানে তারও এমন সই ছিল। কিন্তু এখন সেই সইকে আর খুঁজে পাচ্ছেন না-তার জন্য এখনো তাঁকে হা-হুতাশ করতে দেখি!

এখন স্কুল, কলেজে গেলে স্রেফ বান্ধবী হয়-অনেক অনেক বান্ধবী হয়। সেই গ্রাম্য ঐতিহ্যগত সই পাতানো হয় না। আগে প্রায় সব গ্রামেই প্রতিটি ঘরে মেয়েদের মেয়েদের মধ্যে এরকম সই পাতানো হত। শহরে এখন প্রতিজন মানুষের অনেক অনেক ফ্রেন্ড থাকে। এইসব "ফ্রেন্ড"দের মধ্যে কি খুঁজে পাওয়া যায় সেই আদি বন্ধুত্বের 'সই'র স্বাদ! যে সইয়ের স্বাদ এখনো আমার "ইভানা বুজী" অন্তরে লালন করে প্রায় ৩৮ বছর পরেও সইয়ের ছোট ভাইকে একটু স্নেহের পরশ দিয়ে তাঁর সইয়ের সৃতিকে সজীব করতে ছুটে আসেন সুদুর লন্ডন থেকে!

(ডাক নাম ইভানা। ইভানা আমার প্রয়াত বুবুর "সই" ছিলেন। আমি তাঁকে ডাকতাম "বু্জী"। ১৯৫৬ সনে ওয়ারীর র‌্যংকিং স্ট্রীট এর বাড়ি ছেড়ে আমরা ধানমন্ডি চলে আসার পুর্ব পর্যন্ত দুই পরিবার পাশাপাশি থাকত-যখন আমার জন্মও হয়নি। বুবুর "সই" হিসেবে ইভানা বুজী এবং তাঁর পরিবারের অন্য সকলেই আমাদের পরিবারের একাত্মা বন্ধু ছিলেন, আপন জন ছিলেন। ঐ পরিবারের সকলেই আমাকে ছোটবেলায় খুব আদর করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বুজীর প্রতিবন্ধী বড় ভাইকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। বুজীর বাবা ঢাবি'র শিক্ষক ডঃ কামরুদ্দীন খাঁন বাড়িঘর বিক্রি করে স্বপরিবারে চলে যান ইংল্যান্ড। অকালে বুবু মারা যাবার পরেও বুজী'র পরিবার মাঝে মাঝেই আমাদের খোঁজ খবর নিতেন। ইভানা বুজীর প্রানপ্রিয় সই এর ছোট ভাই হিমু এখনো বেঁচে আছে-তাই সই এর ভাইকে একটু দেখার জন্য সুদুর ইংল্যান্ড থেকে মাত্র ২ দিনের জন্য তিনি হিমুদের বাড়ি এসেছিলেন! ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন প্রফেসর ইভানা বুজির বয়স এখন প্রায় ষাট বছর। এতো বছর পরেও বর্তমান পঞ্চাশোর্ধ হিমুকে সেই ছোট্ট হিমুই ভেবে আছেন.....! বুজী'র সই এর প্রতি সই'র বন্ধুত্ব, ভালোবাসা কতইনা প্রবল-তা দেখেই এই লেখার পটভুমি)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৪৯
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×