somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : অপদার্থ

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তাটা অচেনা মানুষে গিজ গিজ করছে। সবাই যে যার মত ব্যস্ত, কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। কিন্তু রাশেদ অনেক সময় নিয়ে ব্যস্ত মানুষগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। মানুষগুলোকে আজ খুব পরিচিত লাগছে ওর। যাকে দেখতে ইচ্ছে করছে আশে পাশে একটু চোখ বোলালেই তার মত কাউকে না কাউকে খুঁজে পাচ্ছে সে। খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা একটা লোক নীল রঙয়ের একটা বাইক নিয়ে সোঁ করে চলে গেল। লোকটার সাথে ছোট চাচার অনেক মিল আছে। ছোট চাচারও এমন একটা নীল বাইক আছে। নিজে কিনেননি, শ্বশুর দিয়েছেন। রাস্তার পাশে আট-দশ বছরের একটা মেয়ে আইসক্রিম হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ছোট বোনটাও এভাবে আইসক্রিম হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে এ মেয়েটার চেয়ে রিমিকে অনেক সুন্দর দেখায়। রিমি নিশ্চয় এতদিনে আরো সুন্দর হয়েছে, মেয়েটার মতই লম্বা লম্বা চুল রেখেছে। আজ অনেকদিন পর রিমির মুখে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনতে ইচ্ছে করছে রাশেদের। ঔষুধের দোকেন সামনে সাদা পাঞ্জাবী পড়া ভুঁড়িওয়ালা লোকটাকে অবিকল ইয়াকুব মন্ডলের মত দেখাচ্ছে। ইয়াকুব মন্ডল রাশেদের বাবার বন্ধু!... বাবা! বাবা কোথায়? বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করে রাশেদের। লোকটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে সে। খুব মনযোগ দিয়ে বাবার মত কাউকে খোঁজে রাশেদ। ফারুকের বাবার মত মানুষ আছে, নিওনের বাবার মত মানুষ আছে কিন্তু রাশেদের বাবার মত কেউ নেই কেন?

- লতিফ মিয়ার ছেলেটা প্রাইমারী স্কুলের টিচার হইছে। জানো?
- না।
- তা জানবা কেন? তোমার বাবার তো টাকার গাছ আছে। নাড়া দিলেই টাকা পরে
- ...
- চুপ করে আছ কেন? আমি আর একটা কানা কড়িও তোমাকে দিতে পারব না। আমার আরো ছেলে মেয়ে আছে।
- লেখা পড়া না শেখালেই পারতেন।
- মুখের উপর কথা বল? আমার দায়িত্ব ছিল তাই পড়িয়েছি। এখন চাকরী করবা না ভিক্ষা করবা সেটা তোমার ব্যাপার।
- ভিক্ষা করব
- তাহলে তাই কর। আমি আর তোমার মত অপদার্থের মুখ দেখতে চাই না


কথপোকথনটা চার বছর আগের। যেদিন রাশেদ বাড়ি থেকে চুপিচুপি বেড়িয়ে আসে সেদিনের। অনেক কষ্ট হয়েছিল রাশেদের। অপদার্থ থেকে পদার্থ হতে চাইলে কষ্টকে গুরুত্ব দিতে নেই। পদার্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরবে না রাশেদ। বাবা অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছে ওকে। রাশেদও কষ্ট কম করেনি। ভালো রেজাল্ট করেছিল সে। কিন্তু রাশেদের ভালো রেজাল্ট ওর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারছে না। যাদের খালু-মামা নেই, যারা সাধারণ, যারা অনভিজ্ঞ ভালো রেজাল্ট তাদের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার ছাড়া কিছুই নয়। প্রতিমাসেই দাতা হাতেম তায়ীর মত শুধু ভাইভা দিয়েই যাচ্ছে রাশেদ। দান স্বত্ত ত্যাগ করে করতে হয়। রাশেদও প্রতিদানের আশা করে না। ভাইভা ভালো দিলেও না। রাস্তার এই অচেনা মানুষ গুলোর মত শুধু কিছু চিরচেনা ডায়ালগ রাশেদের মাথায় সারাদিন গিজগিজ করে-

‘আপনার তো রেজাল্ট ভালো। কিন্তু এতদিন ধরে বসে আছেন কেন?’

‘আপনি তো এখানে থাকবেন না’

‘সরি মিস্টার রাশেদ। আমরা অভিজ্ঞ কাউকে খুঁজছিলাম’

‘আপনার তো অভিজ্ঞতা নেই। মাসে ৬ হাজার দিলে চলবে?’

‘ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং! ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বলে কিছু আছে নাকি?’

... ... ...

রাস্তাটা অচেনা মানুষে গিজ গিজ করছে। সবাই যে যার মত ব্যস্ত, কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। কিন্তু রাশেদ অনেক সময় নিয়ে ব্যস্ত মানুষদের দিকে তাকাচ্ছে। মানুষ চলছে, গাড়ি চলছে, রিক্সা-ভ্যান সবি চলছে। শুধু রাশেদের জীবনটা আটকে আছে। আটকে থাকা মানুষদের কোন ইচ্ছা থাকতে নেই। কিন্তু রাশেদের আজ বাবাকে দেখতে ইচ্ছা করছে, ছোট বোনটাকে কানমলা দিতে ইচ্ছে করছে, মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে-

‘মা... ও মা... জীবনটা এত কঠিন কেন?’
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:৫৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×