somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: 'মেয়েটা'

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

দুই

তিন

ব্যস্ত মানুষরা সুখ দুঃখের হিসেব কষার সময় পায়না। তাদের পুরো মাথা জুড়ে সর্বদা কাজের জীবাণুগুলো গিজগিজ করতে থাকে। সূর্য উঠলো কি উঠলো না, প্রীয় দল হারল না জিতলো, কে খেলো, কে খেলোনা, কার কষ্টের গভীরতা কত হলো... এসব খবর রাখার কোন ফুরসতই তারা পায়না। তারপর আস্তে আস্তে যখন ব্যস্ততার মেঘ কেটে গিয়ে মনের আকাশে শরতের সাদা মেঘ উঁকি দেয়, তখন ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো এক এক করে সেই সাদা মেঘের পর্দায় প্রদর্শিত হতে থাকে। যার আবেশে আবিষ্ট হয়ে চিরচেনা ব্যস্ত মানুষটি হঠাৎ অচেনা হয়ে যায়।

গত সপ্তাহের পুরোটা জুড়েই ব্যস্ত ছিলাম। মহান প্রজেক্ট ওয়ার্ক সম্পন্ন করার নিমিত্তে প্রতিদিন ঘুম ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে ল্যাবে ঢুকতাম আবার সেই ঘুম ঢুলুঢুলু চোখ নিয়েই রুমে ফিরতাম। মাঝের সময়টা যে কি করে কেটে যেত সেটা বুঝতামই না। পেটের মধ্যে যখন খাবাবের টান পড়ত শুধু তখন বুঝতাম যে লাঞ্চ করার সময় হয়েছে। রাতটাও কেটে যেত মহা ব্যস্ততায়। ডাটা এনালাইসিসে গোঁজামিল দিতে দিতে মাঝ রাত পেড়িয়ে যেত। তারপর লম্বা লম্বা হাই তুলে ঘুমকে আলিঙ্গন করতাম। পরদিনটাও ঠিক এভাবেই কেটে যেত। কাজেই দেশ ও দশের খবর শত চেষ্টা করেও এ কয়দিনে আমার মাথার ত্রি-সীমানায় ভীড়তে পারেনি।

প্রজেক্ট ওয়ার্কের কয়েক টনি বোঝাটা যখন মাথা থেকে নামিয়ে স্যারের রুমে দিয়ে আসলাম তখন মনে হলো – “পৃথিবী এত সুন্দর কেন? আহা! কী সুন্দর আকাশ! কী সুন্দর বাতাস! কী সুন্দর চারিপাশ!” ফুরফুরে মন নিয়ে চলে গেলাম নদীর পাড়ে।

নদী আমার বরাবরই ভালো লাগে। কিচ্ছু না, নদীতে শুধু সাধারণ একটা ডিঙি নৌকা থাকলেই চলবে। নদীর মৃদু স্রোতে ভাসমান নৌকা দেখলেই মনটা কেমন যেন হয়ে যায়। সাধ জাগে নৌকাটার মত ঢেউয়ের তালে তালে ভাসতে। স্রোতের সাথে তুমুল যুদ্ধ হবে। স্রোত আমাকে দক্ষিণে টানবে আর আমি স্রোতকে ঠেলবো উত্তরে। তারপর শরীরের সবটুকু শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেলে স্বেচ্ছায় স্রোতের অধীনে চলে যাব...

ঐযে বলছিলাম হাতে কাজ না থাকলে মানুষ কল্পনাপ্রবণ হয়ে যায়, আমিও নদী পাড়ে বেকার বসে কল্পণার জাল বুনছিলাম। ভাবনায় ছেঁদ ফেলালো নীল রঙা একটা মেয়ে। মেয়েটা নীল না, মেয়ের শাড়িটা নীল। সুপ্ত স্মৃতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। এতো সেই মেয়েটা!

মেয়েটার অবস্থান আমার থেকে খুব বেশী দূরে না। বড়জোর পনের ফিট। আমি বড় একটা পাথরে বসা আর মেয়েটা আরো কয়েকজন শাড়ি পড়া রমণী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নৌকার অপেক্ষায়। আমি মেয়েটার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। মেয়েদের দিকে এক দৃষ্টে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে নেই। গুণীজনরা বলেন এতে নাকী প্রেমে পরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া বিষয়টা দেখতেও দৃষ্টিকটু। পূর্বপরিচিত হিসেবে কথা বলা যেতেই পারে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে সাজুগুজু করা একটা সুশ্রী রমণীর সাথে কথা বলতে যাওয়াটা তাকিয়ে থাকার চেয়েও খারাপ জিনিস। নদীর অবাধ্য ঢেউগুলোর মত মনটা দুলছিল। মেয়েটার দিকে তাকাবো কি তাকাবো না? উঠে গিয়ে কথা বলবো নাকি উঠবোই না? এভাবে মিনিট পাঁচেক মনের সাথে তুমুল যুদ্ধ সেরে যখন মেয়েটার দিকে তাকালাম তখন নৌকা মেয়েটিকে মাঝ নদীতে নিয়ে গেছে!

বুকের ভেতর থেকে একটা বড় পাথর নেমে গেল। এবার নিঃসংকোচে তাকিয়ে থাকলাম নদীর দিকে। নিজের আচরণে নিজেই অবাক হলাম! এ কী করছি আমি?

আমি কি মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি? এমন তো কথা ছিল না। প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনই অবশ্য হুট করে আপনি থেকে তুমিতে নেমেছিলাম সত্য, তবে সেটা নিছক কৌতুক করেই। পরে যেদিন দেখা হল সেদিন তো আবার আপনিতেই ফিরে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিকই তো ছিলাম! তবে আজ এমন করলাম কেন?

নৌকাটা অনেক দূরে চলে গেছে। আমি পাথরটায় পাথর হয়ে বসে আছি। চাইলেই উঠে যেতে পারি... তবুও উঠছি না। মানুষের উদাসীনতা, বৈরাগ্য, ভালো লাগা সবকিছুতেই পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রত্যক্ষ একটা প্রভাব থাকে। যে মেয়েটার কথা গত এক সপ্তাহে একটিবারের জন্যও আমার মনে হয়নি, সেই মেয়েটাকে হুট করে দেখে আমি বিনাকারণে অবশ হয়ে পড়ে আছি।

মনকে স্থির করলাম। মনের ভেতরে যত আত্নঘাতী বিক্রিয়াই চলুক না কেন আমাকে স্থির হতে হবে। মেয়েটা ফিরলে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে হবে। তার নীল শাড়ির রহস্য উৎঘাটন করতে হবে। মলিন ঠোঁট দুটো ডানে বামে প্রসারিত করে গুটিকয়েক মিষ্টি কথা বলতে হবে। এগুলোকে দূর্বলতা বলেনা, এগুলো সামাজিক রীতি; ভদ্রতা!

নৌকা তীরে ভিড়েছে। দেহের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে উঠে দাড়ালাম। এবড়ো থেবড়ো পা ফেলে মেয়েটার সামনে চলে এলাম। তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম, ‘কেমন আছেন?’

মেয়েটা একটা মুচকী হাসি দিয়ে বলল, - ‘তখন থেকে এখানেই আছেন?’

তখন থেকে মানে? মেয়েটা তখনও আমাকে লক্ষ্য করেছে! কি উত্তর দেব আমি? কাচুমাচু করে শুধু বললাম, - ‘হুম!’

পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ ও শক্তি কোনটাই পেলাম না। মেয়েটা তার দলবল সহ চলে গেল। আমি ফের গিয়ে ঐ পাথরটায় বসলাম। মনের ভেতরের আত্নঘাতী বিক্রিয়া চলছে। তীব্র গতিতে!

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×