somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: 'মেয়েটা'

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক দুই তিন

চার
ময়মনসিংহ শহরে একটা স্বল্পমাত্রার জরুরী কাজ সেরে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। বাহন যথারীতি অটোরিক্সা। আমি বসেছিলাম চালকের সহযোগীর আসনে! রাতের অন্ধকারকে ঢাল বানিয়ে দুই একবার হেল্পারের মত সুরকরে চিৎকারও করেছি – ‘এই ভার্সিটি – কেওয়াটখালি - ভার্সিটি!’ আমার চিৎকার শুনে চালক মহোদয় পুরো দুই সেকেন্ড আমার দিকে স্থির নয়নে তাকিয়ে ছিলেন! অবশ্য তখন পেছনের যাত্রীগুলোর কেউই ছিলো না!

পেছনের যাত্রীগুলো বলতে গোটা পাঁচেক ছেলেমেয়ে! প্রায় পনের মিনিট হয়ে গেল ওরা উঠেছে। এই পনের মিনিটে আমার কানের সাড়ে বারোটা বেজে গেছে! বলতে গেলে মাঝারী ধরনের একটা উদ্দেশ্যহীন রাজনৈতিক টকশো চলছে আমার পেছনে। কয়েকবার চেষ্টা করেও টকশোর টপিকসটা উদ্ধার পারিনি। তবে একটু পর পরই বিজ্ঞাপন বিরতি হচ্ছে। হুটহাট করে মোবাইল বেজে উঠছে আর নিমিষের মধ্যেই মাছের বাজারটা তেপান্তরের নির্জন মাঠ হয়ে যাচ্ছে!

একটা ফোন ভোঁ ভোঁ করে ভাইব্রেট করছে।

‘বাবা আমি এক ফ্রেন্ড এর রুমে এসেছি। একটু পর কথা বলি তোমার সাথে?’

বাবা কি বললেন শুনতে পেলাম না। তবে ফোন টা কেটে দিয়েই সেকেন্ডের মধ্যেই টকশোতে মেতে উঠলো মেয়ে! অটোরিক্সার গ্লাসটাকে হঠাৎ জানালার কাঁচ মনে হলো। একটা তিন চাকার ভ্রাম্যমান ঘর কাঁপতে কাঁপতে রাতের ঝাঁপসা অন্ধকার ভেদ করে মৃদু গতিতে ছুটে চলছে।

টকশো চলছে। আলোচনা চলছে খাবার নিয়ে। ভাবে বুঝলাম তারা বড় ধনের একটা ভোজন পর্ব সেরে এসেছে!

মেয়ে-১: ‘ডান মাখানি’ টা না পঁচা হইছে...
মেয়ে-২: একদম ঠিক বলেছিস! আমারও ভাল্লাগে নি
ছেলে-১: ‘কার পেটে যেন ঘী হজম হয় না?’
ছেলে-১ ও ছেলে-২: হা হা হা ...
ছেলে-২: আচ্ছা বলো ‘বিফ পাঞ্জাবী’ টা কেমন লেগেছে?
মেয়ে-১: ভালই। তবে আরো ভালো কিছু এক্সপেক্ট করছিলাম।

ওদের ‘পোস্ট ইটিং’ পর্যালোচনা আমার ‘প্রি-ইটিং’ স্ট্রাটিজিতে ব্যপক প্রভাব ফেলছিল। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। ওদের ডান-বাম মাখানি আর বিফ পাঞ্জাবী-গেঞ্জি-ফতুয়া সব অমৃত ভেবে মনে মনে গলাধঃকরণ করছিলাম। হঠাৎ বিজ্ঞাপন বিরতির সময় এসে গেলো। কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ হয়ে গেল কথিত ঘরখানা। এবার একটা ছেলের ফোন এসেছে..

ছেলে-১ : ‘ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?’

অপরপ্রান্ত : ‘... ... ... ... ... ... ... ... ... ...’

ছেলে-১ : ‘খাইছি। ঐ ডাইনিং এর খাবার! মিষ্টিকুমড়া আর ডিম সেদ্ধ!’
... ... ...

মিষ্টি কুমড়ার কথা শুনেই কেমন যেন একটা অরুচি ভাব চলে এল। ছোট বেলায় লাখ টাকা দিলেও যে জিনিসিটা খেতামনা এখন বাধ্য হয়েই অখাদ্যটা গলাধঃকরণ করতে হয়। তবে আজ খেতে হবেনা বলে নিজেকে একটু হলেও সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ছেলেটার জন্য আফসোস হচ্ছে। তাহলে কি বাকীরা ছেলেটাকে ছাড়াই গরুর পাঞ্জাবী খেয়েছে? আহা বেচারা!

অটোরিক্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেড়িয়ে বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছে। পেছন থেকে এক ছেলে বলে উঠলো- ‘তোমাদের ভার্সিটিটা এত বড় ক্যান? কোথায় শুরু কোথায় শেষ কিচ্ছু বুঝিনা!’

সঙ্গে সঙ্গে রেডিমেড উত্তর দিয়ে দিলেন ক্যাম্পাসের এক মেয়ে!

মেয়ে-৩: ‘মি. আসাদ! এটা কবুতরের খোঁপ না, ভার্সিটি!’


চমকে উঠলাম! প্রশ্নের উত্তর শুনে না, মেয়েটার কন্ঠ শুনে! মেয়েটা মানে সেই বাঁশ কন্ঠী মেয়েটা!

কালো চাঁদরটা শক্ত করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। অকারণেই বুকটা কাঁপছিলো। নির্ধারিত গন্তব্যের আগেই নেমে পড়লাম।

লাল বাতি দেখাতে দেখাতে মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো অটোরিক্সাটা। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দূরত্বও মাঝে মাঝে মানুষকে স্বস্তি দেয়।

চলবে
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×