শান্ত, সৌম্য, শুভ্র হিমালয়-
যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে রয়-
তার প্রবাহের দিকে- স্থবির অবিচল,
পদ্মা, মেঘনা, ভাগীরথী, কালিন্দী, গঙ্গার জল-
কত হাজার বছর ধরে- শুদ্ধ করে চলেছে এই বর্বর অঞ্চল।
হিমালয় তার কোল থেকে তবু দিয়েছিল-
শুদ্ধোধন, মহামায়া,
পৃথিবীতে এনেছিল তারা- শুভ্রতার- সৌম্যতায়-
মানবিক মুক্তির- অহিংস্র ছায়া।
সক্রেটিস- কনফুসিয়াসের চেয়েও সেই ছেলে-
কোনদিকে ছিলনা কিছু কম,
সে একদিন বুদ্ধ হয়েছিল-
তার আগে সে ছিল কুমার,- সিদ্ধার্থ গৌতম।
হিমালয় জানতো- সে মুছবে একদিন অশনির ক্ষত-
লুম্বিনির শালবনে- বোধীবৃক্ষের নিচে-
আধুনিক তথাগত।
মানুষের দুঃখ- কষ্ট- যাতনায়- সে ছেড়েছিল সংসার-
বঁধু- শিশু- রাজ্য সে ছেড়ে এসেছিল, সে রাজকুমার-
হিমালয়ের ভার বুকে নিয়ে নেমেছিল রাস্তায়,
কপিলাবস্তুর প্রাসাদ থেকে- এক কুহেলী পূর্ণিমায়-
মানুষের কল্যানে- সে ভেঙ্গেছিল স্বর্গের হাতছানি-
দিয়েছিল তিন ঝুড়ি-
মুক্তির নিব্বানার বাণী।
মানুষের চেয়েও উঁচু ঘাসের নিবিড় বনে-
সে হেঁটেছিল প্রখর রৌদ্রে-
প্রাচুর্য, বিলাসিতা রেখে-মানুষের প্রয়োজনে।
তার বাণী- বিম্বিসা, সিংহল থেকে এই গৌড়ে বঙ্গে-
তীব্বতে উঠেছিল- অতীশের মতো এক দীপঙ্করের সঙ্গে,
অস্ট্রিক, ভেড্ডিড, আর্য সভ্যতার পরে-
তার বড় প্রয়োজন ছিল- মানুষের ঘরে।
হিমালয় শুনেছে বেদ আর গীতা-
হাজার হাজার বছর- রামায়ন- মহাভারত- মনুসংহিতা-
হিমালয়ের পাদদেশে ঢেলেছে সে পানি-
তারপর বুদ্ধের বাণী,
দিয়েগেছে এই দেশে - সভ্যতা,
মানবিক মুক্তির এক- চরম উৎকর্ষখানি।
তার প্রায় হাজার বছর পরে- সুফিয়ানা-
বাউল পাখির পাশে এসে-
মেলেছিল ইসলামের ডানা।
তারপর মিথ নেই, - সব ইতিহাস-
বল্লাল সেনের অগ্নিকুপে-
জ্বলেছে পরিবার তার আর রাজার দীর্ঘশ্বাস।
শ্যামল কান্তি ভক্ত যখন- অবাক হয়ে কানে ধরে-
বল্লালের কবুতর তখন হয়তবা- ছটফট করে-
হয়তো বা হাহাকার করে ওঠে-
সেই পুরাতন বিক্রম্পুরে-
সুপ্রাচীন সত্যির অগ্নি গর্ভে পুড়ে।
বল্লাল বাড়ির সেই পোড়া কালো মাটি-
ইতিহাস রেখেছে ঢেকে বুকে- নিবিড় গভীড় ভাবে-
খুব পরিপাটি।
কিছুদিন আগেই হিমালয় দেখেছে একাত্তুর,
শেয়াল শকুন ছিলনা তত'সেদিন এই দেশে-
তারচেয়েও ঢের ছিল লাশ আর মানুষের মাংস প্রচুর-
এদেশের আনাচে কানাচে করেছে- তারা ধর্মের নিকুচি,
শেয়াল শকুনের পেটে আর ক্ষিদে নেই এখন-
মানুষের মাংসেও তাদের ধরেছে অরুচি-
এত মাংস খাওয়া যায় না- এবার অন্যকিছু চাই-
মগজ খেতে এসেছে এখন তাই-
সেইসব শেয়াল আর শকুনের- ধার্মিক সব ভাই।
হিমালয় চেয়ে থাকে- কেঁদে ওঠা নদী তার বহে বারোমাস,
মানুষ আতঙ্কিত- ঘাড়ে তার হায়নার উষ্ণ নিঃস্বাস।
এই ভেবেই বোধহয় একদিন- বুদ্ধও কেঁদেছিল -
আর তার সাথে কেঁদেছিল- মানুষের বাংলার প্রাচীন আকাশ।
- জান্নাতুল ফেরদৌস
০৭/০৮/১৬
রাত:১২:০০