বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবির অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে মেঘনাদবধ কাব্য অন্যতম। মেঘনাদবধ কাব্য থেকে কয়েকটি চরণ বা একটি স্তবক নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলে অমিত্রাক্ষর ছন্দ সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন, শুরু করি-
"জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক
অগণ্য। দেখিলা রাজা নগর বাহিরে,
রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ সিন্ধুতীরে যথা,
নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা আকাশ-মণ্ডলে।"
লক্ষণীয়ঃ স্তবকের প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুটি পর্ব মিলে মোট ১৪টি মাত্রা আছে।
[ জাগে রথ, রথী, গজ, (৮) অশ্ব, পদাতিক (৬)
অগণ্য। দেখিলা রাজা (৮) নগর বাহিরে,(৬)
রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ(৮) সিন্ধুতীরে যথা, (৬)
নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা (৮) আকাশ-মণ্ডলে।(৬) ]
চরণের শেষে অন্ত্যমিল নেই। প্রথম বাক্যটি চরণের শেষে সমাপ্ত না হয়ে নতুন চরণের শুরুতেই সমাপ্ত হয়েছে। এবং যথাস্থানে যতিচিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। ( জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক অগণ্য।)
স্তবকের শুরু থেকে শেষ চরণ পর্যন্ত ভাবের প্রবাহমানতা বিদ্যমান ছিলো। উল্লিখিত স্তবকের বিন্যাস মাথায় রেখে আমরা অমিত্রাক্ষর ছন্দের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারি-
ক) মাত্রাসংখ্যা নির্দিষ্ট। অর্থাৎ প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুটি পর্ব মিলে ১৪টি মাত্রা থাকে।
খ) চরণের শেষে মিত্রাক্ষর, মিল বা অন্ত্যমিল থাকে না।
গ) ভাব প্রবাহমান। অর্থাৎ একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতে হবে এমন কিছু নেই।
ঘ) চরণের শুরুতে, মাঝখানে বা শেষে বাক্যের শেষ বা শুরু হতে পারে।
ঙ) প্রয়োজন মতো যতিচিহ্নের ব্যবহার করা যায়।
উপরের বৈশিষ্ট্য যথাসম্ভব মেনে (অমিত্রাক্ষর ছন্দে) লিখা আমার একটি কবিতা। কবিতাবোদ্ধা ব্লগার ও পাঠকদের গঠনমূলক মন্তব্য আশাকরছি।
কবিতা: শূন্য পরিশেষ
রাত্রির অভ্রে অজস্র তারা ঝলমল
জ্বলে। জেগে জেগে ভাবে ভাবুক নিভৃতে
চক্ষুদ্বয় ভারী হয়, অশ্রু টলমল!
কেউ নেই, কিছু নেই! শূন্য পরিশেষ।
ক্ষণিকের ধারয়িত্রী ধরণী বিশাল।
কতো রূপ, রঙচঙ! কতো বৈচিত্রতা
সময়ের পরিক্রমে রূপান্তর ঘটে
অবলীলায়। যৌবনা গঙ্গা বুড়ি হয়!
নতজানু বক্ষঃস্থল হয় প্রলম্বিত।
ঘুণধরা দেহমন, ক্ষয়িত জীবন,
ক্ষয়েক্ষয়ে হয় সারা, মিশে কাদাজলে!
ধন,জন,বাড়িঘর সবকিছু ছেড়ে
যেতে হবে অবশেষে- অজানা পথে!
নিশি জেগে ভাবুক ভাবে একা একা
কেউ নেই! কিছু নেই! শূন্য পরিশেষ।
________________________
পর্ব ও মাত্রা বিন্যাসঃ ৮++৬=১৪
২৯/১২/১৫, সকাল।
ছবিঃ কালেক্টেড
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৫