৪।
সংসারে অন্য অভাব অনেক আছে কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট । তারা বলিল খাঁচাটার উন্নতি হচ্ছে কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখেনা ।
কথাটা রাজার কানে গেল । তিনি ভাগিনাকে ডাকয়া বলিলেন ভাগিনা এ কী কথা শুনি।
ভাগিনা বলিল মহারাজ সত্য কথা যোদি শুনিবেন তবে ডাকুন স্যাকরাদের পন্ডিতদের লিপিকরদের ডাকুন যারা মেরামত করে এবং মেরামত তদারক করিয়া বেড়ায় ।
নিন্দুকগুলি খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে ।
জবাব শুনিয়া রাজা অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝিলেন আর তখনি ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়িল ।
৫।
শিক্ষা যে কী ভয়ঙ্কর তেজে চলিতেছে রাজার ইচ্ছা হইল স্বয়ং দেখিবে । একদিন তাই পাত্র মিত্র অমাত্য লইয়া শিক্ষাশালায় তিনি স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত ।
দেউড়ির কাছে অমিন বাজিল শাঁখ ঘন্টা ঢাক ঢোল কাড়া নাকাড়া তুরী ভেরী দামামা কাঁসি বাঁশি কাঁসের খোল করতাল মৃদঙ্গ জগঝম্প । পন্ডিতেরা গলা ছাড়িয়া টিকি নাড়িয়া মন্ত্রপাঠে লাগিলেন । মিস্ত্রি মজুর স্যাকরা লিপিকর তদারকনবিশ আর মামাতো পিসতুতো এবং মাসতুতু ভাই জয়ধ্বনি তুলিল ।
ভাগিনা বলিলেন মহারাজ কান্ডটা দেখিতেছেন । মহারাজ বলিলেন আশ্চর্য শব্দ কম নয় ।
ভাগিনা বলিল শুধু শব্দ নয় পিছনে অর্থও কম নাই ।
রাজা খুশি হইয়া দেউড়ি পার হইয় যেই হাতিতে উঠিবেন এমন সময় নিন্দুক ছিল ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়া সে বলিয়া উঠিল মহাজ পাখিটাকে দেখিয়াছেন কী । রাজার চমক লাগিল বলিলেন ঐ যা । মনে তো ছিল না । পাখিটাকে দেখা হয় নাই । ফিরিয়া
আসিয়া পন্ডিতকে বলিলেন পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই ।
দেখা হইল। দেখিয়া বড়ো খুশি । কায়দাটা পাখিটার চেয়ে এত বেশি বড়ো যে পাখিটাকে দেখাই যায় না মনে হয় তাকে না দেখিলেও চলে । রাজা বুঝলেন আয়োজনের ত্রুটি নাই । খাঁচায় দানা নাই পানি নাই কেবল রাশি রাশি পুঁথি হইতে রাশি রাশি পাতা ছিড়িয়া কলমের ডগা দিয়া পাখির মুখের মধ্যে ঠাসা হইতেছে । গান তো বন্ধই চিৎকার করিবার ফাকটুকু পর্যন্ত বোজা । দেখিলে শরীরে রোমাঞ্চ হয় ।
এবারে রাজা হাতিতেই চড়িবার সময় কানমলা সর্দারকে বলিয়া দিলেন নিন্দুকের যেন আচ্ছা করিয়া কানমলা দেওয়া হয় ।