রঙ্গদেশ, ২০৩০ সাল। রঙ্গদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে স্বীকৃত। খুব অল্প কয়েক বছরেই এমন শান্ত, সুখী দেশ হয়ে যাওয়া আসলেই অবাক করার মত।
এই সুখের মূল কারণ, এই দেশের কারো কোন বিষয়ে অভিযোগ নেই।
১৫ বছর আগেও এমনটা ছিল না। বোকা কিছু মানুষ মনে করত তাদের অনেক অনেক অধিকার। তাই যেকোন ছোটখাটো প্রশ্ন ফাঁসের মত ব্যাপারেও আন্দোলন করত। প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দেয়া যে সাধারণ একটা ব্যাপার তা সেই বোকারা বুঝতে চাইল না। এরপর সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে দিল সব পরিবর্তন করে।
এরপর থেকে নতুন নিয়ম হল, আর কোন পরীক্ষাই নেয়া হবে না রঙ্গদেশে। এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে। ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে একদম উচ্চতর ডিগ্রী নেয়া পর্যন্ত। প্রতি বছর শেষে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সকলের কাছে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে টাকা চাওয়া হয়। যারা যত বেশি টাকা দিবে সেই অনু্যায়ী তাদের মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হয়। যারা সর্বনিম্ন পরিমাণ টাকা দেয়, তারা অকৃতকার্য বলে গৃহীত হয়। পরীক্ষা বাবদ সরকারের সব খরচ বেচে যায়, আবার কোন পরীক্ষা না হওয়ায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ারও আর কোন সম্ভাবনা রইল না।
সবাই এখন সচেতন, কাউকে আর কষ্ট করে পড়তে হয় না, শুধু টাকা জমানো ছাড়া আর কারো কোন কাজ নেই। এর চেয়ে সুখের সংবাদ আর কি হতে পারে!
কিছু বোকা মানুষ শুরুতে হালকা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলো রাস্তায় নেমে। তাদের জেলে নিয়ে গিয়ে ভেঙে দেয়া হল তাদের ভুল। যারা ফেসবুকে হালকা সুরে আওয়াজ তুলছিলেন তাদের কি এক অদ্ভুত আইনে চুপ করে দেয়া হল। এরপর থেকে আর কেউ কিছু বলল না।
শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সবাই সার্টিফিকেট পেতে থাকলো।
সবচেয়ে মজার কথা, এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী ফল আসলো পরে। টাকা দিয়ে বড় বড় মেডিকেলে পড়াশুনা করা ছাত্র-ছাত্রীরা যেদিন আবারো টাকা দিয়ে ডাক্তার হলেন, তারা শুরু করলেন ভুল চিকিৎসা। ফলে দেশের সিংহভাগ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ যারা সিঙ্গাপুর যেতে পারলেন না চিকিৎসার জন্য সবাই বেঘোরে মারা পড়তে লাগলেন। গত বছরের শেষ নাগাদ পরিসংখ্যান এ দেখা গেছে দেশে কোন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র নেই। দেশের বর্তমান জীবিত মানুষের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৪০০০০ মার্কিন ডলার। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র এক কোটির কাছাকাছি।
এককথায় এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সব বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
আজ রঙ্গদেশের জন্য এক গর্বের দিন। যেই মহান চিন্তাবিদ শান্তিকামী ব্যাক্তিদ্বয়ের সিদ্ধান্তে আজ এত সুখ এদেশে, শান্তির ফোয়ারা চারিদিকে, তারা আজ হবেন সম্মানিত। বিশ্ব নোবেল শান্তি কমিটি ২০৩০ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই রঙ্গদেশ থেকে। দেশের জন্য যৌথভাবে এই সম্মান বয়ে এনেছেন তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আমি টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নেয়া ডাক্তারদের একজন। আমার মত এতবড় গাধা ছাত্রকে সামান্য কটা টাকার বিনিময়ে ডাক্তার হতে দেয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ এই দুজনের কাছে। আপনারা দীর্ঘজীবি হোন। রঙ্গদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমি নিজেও সম্মানিত আজ। আহা!!! এত আনন্দ কেন আজ আকাশে বাতাশে!!!!