কোরআন ও হাদিসের আলোকে শবেবরাত
শবেবরাত শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাতের আলোচনা সিহা সিত্তার সহি মুসলিম, সহি ইবনে দাউদ, সহি নাসাই, শুনানে ইবনে মাজা সহ অন্যান্য অনেক অনেক হাদিস গ্রন্থে পবিত্র শবে বরাতের মহিমা আর এর ফজিলত এসেছে। নব্য ফিতনা আহলে হাদিস সম্প্রদায় অপপ্রচার এর কারনে কোন কোন নও মুসলিম আজ শবে বরাত নিয়ে কটাক্ষ করছে। যা তাদের সল্প জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এখানে খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে দলিল পেশ করা হল। ।
আল কোরআন ও হাদীছ শরীফেই শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফে বরাতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে।
অনেকে বলে থাকে যে, সূরা দুখানের উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “নিশ্চই আমি সেটাকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি''। অপরদিকে কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘সূরায়ে ক্বদরেও’ উল্লেখ আছে। মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। প্রশ্ন হল - সুরা দুখানে সে বরকতময় রাতকে সরাসরি ''লাইলাতুল কদর'' না বলে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ বলা হলো কেন ? যদি উত্তর হয়, আল্লাহ ভালো জানেন । এখন আমার প্রশ্ন তাদের কাছে- ''আললাহ পাক সুবহানই যদি ভাল জানবেন তাহলে সুরা দুখানে উললেখিত ‘লাইলাতুম মুবারকাহ' কে ''লাইলাতুল কদর'' হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার আপনি কে ? অধিকাংশ জগত বিখ্যাত মুসাসফির, ইমাম,উলামারা সুরা দুখানে উললেখিত ‘লাইলাতুম মুবারকাহ' কে ''লাইলাতুল কদর'' হিসাবে ঘোষণা করেছেন কি না ? এখন তাদের উততর যদি হয়- জগত বিখ্যাত মুসাসফির ও ইমামগণের আর কি দরকার আমরা তো উনাদের চেয়ে কম বুঝি না ।
আসুন এবার আমরা জগত বিখ্যাত মুসাসসিরগণ কি বলেছে জেনে নেই ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর শিস্য ও স্বাধীনকৃত গোলাম হযরত ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (আয়াতে বর্ণিত) লাইলাতুম মুবারাকা” হল শা’বান মাসের মধ্য রাত্রি।এ রাতে আল্লাহ পাক হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে প্রথম আকাশে (দুনিয়া সংলগ্ন আকাশ) প্রেরণ করেন।তিনি প্রথম আকাশের ফেরেশতাদের কাছে পূর্ণ কোরআন একেবারে লিপিব্ধ করে দিয়েছেন।এই রাতকে মুবারক রাত নামকরণনের কারণ হল-এ রাতে অনেক কল্যাণ ও বরকত রয়েছে।এ রাতে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় এবং দোয়া কবুল হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন -আল্লাহ তায়ালা শাবানের পনেরতম রাতে সিদ্ধান্তসমুহ চুড়ান্ত করেন এবং শবে ক্বদরে তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের সোপর্দ করেন। (তাফসীরে খাজিন ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠাঃ১১২)
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত,তিনি বলেন: এক রাতে আমি রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে উনার খোজে বের হলাম । অতঃপর আমি উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। আমি দেখলাম সেখানে প্রিয় নবী মাথা মোবারক আসমানের দিকে উততোলন করে আছেন । আমাকে দেখামাত্র প্রিয় নবীজী বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি এই আশংকা করছো যে, আল্লাহ ও তার রাসুল তোমার প্রতি আমানতের খিয়ানত (অবিচার) করবে ? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা তো আদোও আমার জন্য সমীচীন নয়। আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অপর কোন স্ত্রীর হুজরায় তাশরীফ নিয়েছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শা’বানের পনেরতম রাত্রিতে (শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি কালব গোত্রের বকরীর (মেষের) গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (১. ইবনে মাজাহ, ১ম খনড, হাদীস নং-১৩৮৯, ইসমালিক ফাউনডেশন বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত । ২. তিরমিযী । ৩. মেশকাত )
(সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৩৬, দারুল ফিক্র, বৈরুত)
উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়িশা সিদ্দিকা বর্ণনা করেন: হুযুর আকরাম, নূরে মুজাস্সম, শাহে বনী আদম, রাসুলে মুহতাশাম, শফিয়ে উমাম কে আমি শাবান মাসের চেয়ে বেশী রোযা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি। তিনি কিছু দিন ব্যতীত সম্পূর্ণ মাসই রোযা রাখতেন।
(সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৩৬, দারুল ফিক্র, বৈরুত)
হযরত আলী হে বর্ণিত - হুযুর(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ফরমালেন- যখন তোমাদের সামনে শাবান মাসের ১৫ই রাত্রির আগমন হয়, তাহলে তোমরা এই মাসে অনেক অনেক ইবাদত কর, রোজা রাখ।কারন আল্লাহ এই রাতে বিশেষ নজর দিয়ে থাকেন এবং বলে থাকেন কেউ কি আছো যে ক্ষমা চাচ্ছো তাকে আমি ক্ষমা করব, যে রিযিক চাও তার রিজিকে বরকত দান করব, কেউ মসিবতে থাকলে তার মুসিবত দুর করব..................
(সুনান-ই-ইবনে মাজাহ, খন্ড-০২,পৃষ্ঠা-১৬০, হাদিস-১৩৮৮ এবং মিশকাত শরিফ-১১৫)
(গুনইয়াতুত্ব ত্বালিবীন, ১ম খন্ড, , বড় পীর আব্দুল কাদির জীলানী রহ
হযরত সয়্যিদুনা আনাস বিন মালিক বলেন: শাবান মাসের চাঁদ দৃষ্টি গোচর হতেই সাহাবায়ে কিরাম কুরআনে পাকের তিলাওয়াতের প্রতি খুব বেশী মনোযোগী হতেন, নিজেদের ধন-সম্পদের যাকাত বের করে নিতেন (আদায় করতেন) যাতে অক্ষম ও মিসকীন লোকেরা রমযান মাসে রোযা রাখার জন্য
প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। শাসকগণ বন্দীদের তলব করে যার উপর শাস্তি কার্যকর করা প্রয়োজন তার উপর শাস্তি কার্যকর করতেন আর অন্যান্যদেরকে মুক্তি দিয়ে দিতেন। ব্যবসায়ীগণ তাদের কর্জ পরিশোধ
করতেন, অন্যান্যদের থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে নিতেন (এভাবে রমযান মাসের চাঁদ উদিত হবার পূর্বেই নিজেকে অবসর করে নিতেন) আর রমযান এর চাঁদ দৃষ্টিগোচর হতেই গোসল করে (অনেকে) ইতিকাফে বসে যেতেন।
(গুনইয়াতুত্ব ত্বালিবীন, ১ম খন্ড, বড় পীর আব্দুল কাদির জীলানী রহ
এছাড়া পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীসটি যেসব গ্রন্থে এসেছে।
- ইমাম বায়হাকী ‘শুবুল ইমান,৩য়খন্ড, পৃ-৩৮০, ৩৮২, ৩৭৯, হাদিস-৩৮২২, ৩৮২৭)
- মুসনাদে আহমাদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮তম খন্ড-, পৃস্ঠা- ২৩৮, ১১৪, হাদিস-২৫৯৬, ১৬৮২ (২১টি হাদিস রয়েছে)
- ‘ফাজায়েলুল আওকাত পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদিস- ২৫
- ‘মিসবাহুজ জুজযাহ, ১ম খন্ড, পৃ-৪৪২, হাদিস-৪৮৭, ৪৮৬
- ‘আত তারগীব ওয়াত তারহীব’ তৃতীয় খন্ড, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা-২৪০ হাদিস-২৭১৮, ২৪, ২৭৬৯
- আহলে হাদিসদের গুরু নাসির উদ্দিন আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা’ ৩য় খন্ড, পৃ-১৩১, ১৩৫
- মাছাবাতাবিচ্ছুন্নাহ, পৃ-৩৫৪
- মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৬৫
- মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা- ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৪৩৮, হাদিস- ৯৯০৭।
- শরহুসসুন্নাহ ৪র্থ খন্ড- পৃষ্ঠা-১২৬, হাদিস- ৯৯২,
- আল মুনতাখাব মিনাল
- ইবনে হিব্বান, খন্ড-১৩, পৃস্ঠা-৩৫৫, হাদিস-১৯৮০
- শুয়াবুল ঈমান- ৩য় খন্ড, পৃ-৩৭৯, ৩৮০ হাদিস- ৩৮২২, ৩৮২৭
আহলে হাদিস , অহাবি, সালাফি ফেতনা থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করুন। নবীর যুগেও শবে বরাত ছিল, সাহাবা দের যুগেও ছিল, তাবেয়ি দের যুগেও ছিল, তাবে তাবেয়িদের যুগেও ছিল, অলি, গাউছ, কুতুব, আবদাল , হক্কানি আলেম রা সবায় শবে বরাত পালন করেছেন এমন দলিল আগনিত- অসংখ্য রয়েছে। কেবল নব্য ফিতনা জাকির নায়েক এর অনুসারী অহাবি, আহলে হাদিস, সালাফি রা নতুন ভাবে খুজে পেল শবে বরাত নাই যা হাস্যকর একটি দাবি

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




