somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাইকিং রুপকথা - পর্ব ১

১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীক রুপকথা আমরা সবাই কম বেশি জানি, অথচ ভাইকিং বা মিশরিও পুরাণ সম্পর্কে আমাদের ধারনা অনেক কম। তাই এবার আমি নিয়ে এসেছি ভাইকিং/ নর্স পুরাণ। ভাইকিং রুপকথা জানার আগে প্রথমে আমাদের ভাইকিংদের সম্পর্কে খানিকটা জানা উচিৎ। তাই প্রথম পর্বে ভাইকিংদের সম্পর্কে, তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা উপস্থাপন করা হয়েছে।

ভাইকিং কারা? :


ভাইকিংরা হচ্ছে উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার (Scandinavia) মানুষ অর্থাৎ- নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের প্রাচীন অধিবাসী। তাদের কে ইউরোপের লোকজন ‘উত্তরের’ অধিবাসী বলে চিনত, কারন তারা উত্তরাঞ্চলে বসবাস করত। তাদেরকে নর্সও (Norse) বলা হত, কারন তাদের উৎপত্তি ছিল North থেকে।
ভাইকিং শুনলেই আমাদের মাঝে ভেসে উঠে একদল বন্য মানব, যারা দীর্ঘদেহি, স্বাস্থ্যবান এবং মারমুখো। “ভাইকিং” শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে “আক্রমণ/ হামলা”, একারনেও তাদেরকে আক্রমণাত্মক, হিংস্র হিসেবে দেখা হয়। তাদেরকে এভাবে দেখার পিছনেও অবশ্য যথেষ্ট কারনও রয়েছে।

যাই হোক, ভাইকিংদের সবাই যে যোদ্ধা ছিল সেটা কিন্তু সঠিক না। তাদের মধ্যে কৃষক, ব্যবসায়ী, কারিগর, জেলে ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার মানুষজন ছিল। সত্যি বলতে কি প্রথম থেকেই তারা অন্য ভূখণ্ডের অদিবাসিদের উপর সেরকম আক্রমণাত্মক ছিল না। সময়ের সাথে সাথে যখন তাদের লোকসংখ্যা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়, তখনই তারা আশেপাশের ভূখণ্ড দখল করতে শুরু করে। ভাইকিংদের সময়কাল ছিল 793-1066 AD পর্যন্ত, কিন্তু এই স্বল্প সময়েই তারা আশেপাশের সমস্ত সাম্রাজ্য দখল করে নেয়।

ভাইকিংদের শাসিত এলাকাঃ (793-1066 AD)



"ডেনিস" নামে পরিচিত ডেনমার্কের ভাইকিংরা, ইংল্যান্ড পূর্ব উপকূল ও ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে তাদের দখলে নিয়েছিলো । এর পাশাপাশি তারা ভূমধ্য অঞ্চল, স্পেনে অভিযান চালিয়ে ওই এলাকা এবং সমস্ত উত্তর আফ্রিকা দখলে নিয়ে নেয়।

সুইডিশ ভাইকিংরা বাণিজ্য অন্বেষণে পূর্ব ইউরোপ এবং রাশিয়াতে অভিযান চালায়। তারা পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় পর্যন্ত আক্রমনে গিয়েছিল। তারা খুবই শক্তিশালী ছিল এবং তারা তাদের দখলকৃত সব এলাকায় একটা শক্তিশালি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলে। ধীরে ধীরে এইসব এলাকা দখল করে তারা অর্থনৈতিকভাবে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে তারা নিজেরাই একটা রাজবংশ (Dynasty) প্রতিষ্ঠা করে ফেলে! বর্বর ভাইকিংদের রাজবংশীয় পরিচয় তখন থেকেই শুরু।

সর্বশেষে রয়েছে নরওয়েজিয়ান ভাইকিং । অন্য ভাইকিংদের দুটি গ্রুপ ইউরোপের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল অভিযান করলেও নরওয়েজিয়ান ভাইকিংরা, ভাইকিং আইসল্যান্ড থেকে ইউরোপের পশ্চিম এলাকায় দখলে ব্যস্ত ছিল এবং বাণিজ্য ও জমি দখলের জন্য গ্রীনল্যান্ড পর্যন্ত গিয়েছিল। বিখ্যাত নরওয়েজিয়ান ভাইকিং এর উদাহরণ হচ্ছে এরিক দি রেড (Eric the Red) এবং লিফ এরিকসন (Leif Ericson)। এই দুজনকে নিয়ে অনেক চলচিত্র এবং কম্পিউটার গেমস বানান হয়েছে। Microsoft এর এজ অফ এম্পায়ারস ২ (Age of Empires 2)এর মত বিখ্যাত কম্পিউটার গেমসে এদের নিয়ে একটি পর্ব আছে।

যাই হোক, এরিক দি রেড (Eric the Red) এর পূর্ব-বংশধর নরওয়ের অদিবাসি ছিলেন। একসময় এরিকের বাবা আইন নিজের হাতে তুলে নেন, যেকারনে তাদের পুরো পরিবারকে নরওয়ে থেকে নির্বাসিত হতে হয়। এরিক হচ্ছে প্রথম ভাইকিং যে গ্রিনল্যান্ডে (Greenland) প্রথম নর্স (Norse) উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন। তার আগে কেউই এই কাজে সফলতা পায়নি।

ভাইকিংদের অস্ত্র-শস্ত্র এবং শক্তিমত্তা :





ভাইকিংরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নৌকা/ ছোট জাহাজ নির্মাতা এবং নৌচালনবিদ্যায় পারদর্শী ছিল। সেইসময় তাদের নৌচালনার দক্ষতার সমতুল্য কেউ ছিলনা। আমরা বিভিন্ন চলচিত্রে যে ভাইকিং নৌকা দেখতে পাই, তাদের নির্মিত নৌকাগুলো তার চেয়েও অনেক সুন্দর ছিল। ভাইকিংরা একটি সাধারণ অস্ত্র এবং সরঞ্জাম হিসাবে কুঠার (Axe) ব্যবহার করতো যেগুলো ছিল আকারে বর্তমান সময়ের কুঠারের চেয়ে অনেক ভারি এবং শক্তিশালী। তারা তৎকালীন অন্য জাতিদের মত তলোয়ারে এতটা পারদর্শী ছিলনা, কিন্ত তা সত্ত্বেও তাদের অনেকেই তলোয়ার বাবহার করতো। কুঠারের পাশাপাশি বর্শা এবং চাপাতি ব্যাবহারে তারা অনেক দক্ষ ছিল।

ভাইকিংরা বৃত্তাকার এবং ঘুড়ি আকৃতির ঢাল প্রতিরক্ষার সাধারণ উপায় হিসেবে ব্যাবহার করতো। তাদের ব্যবহৃত কাঠের ঢাল ছিল দেবদারূ জাতীয় বৃক্ষবিশেষ এবং উঁচু ও সরু গাছবিশেষ দ্বারা বিশেষভাবে নির্মিত। মানুষ আজ যে ধরনের হেলমেট/ শিরস্ত্রাণ (helmets) ব্যাবহার করছে, ভাইকিংরা একই ধরনের হেলমেট ব্যবহার করতো যা ছিল খাঁটি পুরু লোহার তৈরি এবং অনেক ভারি। তাদের হেলমেটে চোখের এবং নাকের চারপাশে 'প্রদর্শনী' গার্ড ছিল যাতে তাদের নিশ্বাস নিতে বা কোনকিছু দেখতে সমস্যা না হয়।

ভাইকিংদের ধর্মঃ

তারা ছিল পৌত্তলিক, তাদের ধর্মের নাম ছিল ‘অসাত্রু’ (Asatru)। তারা বিশ্বাস করতো যে যুদ্ধে মারা যাওয়া মহান যোদ্ধাদের আত্মারা ভালহারা (Valhalla) নামের এক স্বর্গে পুনরায় দেহধারণ করে। ভাইকিংদের দেবদেবীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিলঃ

আইসার (Aesir) ছিল প্রধান দেবতাদের নাম। তারা আসগার্ডের (Asgard) বাসিন্দা ছিলেন। তারা পৃথিবীতে আইনের শাসন, মানুষদের রক্ষাকর্তা ছিলেন। থর, ওডিনদের মত নামকরা দেবতারা আইসার ছিলেন।

ভানিররা (Vanir) ছিলেন ভানাহিম (Vanaheim) পৃথিবীর বাসিন্দা। তারা মানুষের জন্ম, জাদুবিদ্যা, এবং উৎপাদনশীলতার দেব-দেবী ছিলেন।

জতুনরা হচ্ছে দৈত্যদেবতা (Giants). তারা জতুনহিম (Jotunheim) নামের পৃথিবীর বাসিন্দা ছিলেন। তারা হচ্ছে ঝড় ও ঝগড়ার দেবতা!

এদের সম্পর্কে পরবর্তীতে আর বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

তাদের প্রধান তিন দেবতাঃ
ওডিন (Odin) হচ্ছে প্রধান দেবতা। উনি হলেন জ্ঞানের দেবতা (God of Knowledge)।



থর (Thor) হচ্ছে ধাতুবিদ্যা, শক্তি এবং বজ্রপাতের ঈশ্বর।



ফ্রে (Frey) হচ্ছেন উর্বরতা দেবী


পরবর্তী পর্বে ভাইকিং রুপকথা অনুযায়ী সৃষ্টির রহস্য এবং মানব সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরা হবে।
উৎস ঃ
1. wikipedia
2. viking-mythology.com
3. norse-mythology.org
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×