somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যান্টাসি: গণজাগরনে ভাষা (গত বছর ভাষা দিবসে লেখা গল্পটি আবার পোস্ট করলাম)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হয় আমেরিকা যাওয়ার মতো লোভনীয় অফার, নয়তো নীরা।

পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে এরকম সমস্যায় পড়ব ভাবিনি কখনো।

সরকারের আদেশে আমাকে আমেরিকায় যেতে হবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মেয়ে যে স্কুলে পড়ে সে স্কুলের জন্য সবচাইতে ভাল একজন শিক্ষক চেয়েছে আমেরিকা। আমেরিকার রিকোয়েস্ট বলে কথা। কিছুতেই অমান্য করা যাবে না। তাই সরকার আমাকেই সিলেক্ট করেছে, আমেরিকা গিয়ে এক বছরের একটি কোর্স করানোর জন্য।

দীর্ঘদিন চেষ্টার পর মাত্র প্রেম শুরু করলাম নীরার সাথে। এমন অবস্থায় দূর পরবাসে একা একা চলে যেতে কি ইচ্ছে করে, আপনারাই বলেন? এখন কোথায় তার পাশে থাকব, তার সাথে ঘুরব ফিরব, এক বছরের মধ্যে বিয়ে করে ফেলারও পরিকল্পনা। তা না, সরকারের কথায় নাকি চলে যেতে হবে কোথাকার কোন আমেরিকা নামের দেশে!

বুঝতেই পারছেন, আমেরিকার চাইতে এই মুহুর্তে নীরাই আমাকে বেশী টানছে। কী যে করি! নীরাকে জিজ্ঞেস করলেই একটা বুদ্ধি পাওয়া যেত। তার অনেক বুদ্ধি। কিন্তু ব্যাপারটা কিছুতেই তাকে জানানো যাবে না। তবে সে নিজেই আমাকে জোর করে আমেরিকা পাঠাবে। এর চেয়ে নিজে নিজেই একট বুদ্ধি বের করা যাক।

অনেক ভেবে চিন্তে একটা বুদ্ধি পাওয়া গেল। এলাকার এক ডাক্তারের কাছে গেলাম। তাকে রিকোয়েস্ট করলাম এক মাস বেড রেস্টের কথা বলে একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে। বিনিময়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা অফার করলাম।

ডাক্তার বেশ বয়স্ক। ষাটের কম হবে না বয়েস। তিনি জানতে চাইলেন, কেন আমাকে স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট শিক্ষক হিসেবে চাইলেন।

আসল ঘটনা জানালাম তাকে। প্রেসিডেন্টের মেয়ের খায়েশ হয়েছে বাংলা ভাষা শিখে নাকি কী সব হাবিজাবি বাংলা সিরিয়্যাল দেখবে।

বল কী, বল কী? অনেক দিন হয় ডাক্তারি নিয়ে এতটা ব্যস্ত আছি যে বাইরের পৃথিবীর কোন খবর রাখতে পারি না। আজ থেকে দশ বছর আগেও তো আমাদের দেশেই কেউ বাংলা নাটক দেখতো না। সবার ঘরে ঘরে চলত হিন্দী সিরিয়্যাল, হিন্দী কার্টুন।
না ডাক্তার সাহেব। ব্লগারস চ্যানেল নামে কি একটা চ্যানেল হইসে। ঐ চ্যানেলে এমন সব নাটক সিনেমা বানায় যে এইগুলা এখন ইন্ডিয়াতে তো চলেই, ইউরোপ আমেরকিাতেও নাকি লোকে দেখতেসে।
কি চ্যানেল বললা? ব্লগারস চ্যানেল। ওকে দেখুমনে।
তা দেখেন। কিন্তু আমার সার্টিফিকেট?
না বাবা। আমি বলি কি, তুমি আমেরিকা যাও। আমি মিথ্যা কোন সার্টিফিকেট তোমাকে দিতে পারব না। বলা যায় না। তুমি ব্লগারস চ্যানেলের কেউ হতে পার। পরে আমাকে ফাঁসাবে।
অগত্যা ভোল পাল্টাতেই হল। পকেটে রাখা খেলনা পিস্তলটা ডাক্তারের কপালে ঠেকালাম। কাজ হল। একটা সার্টিফিকেট পেয়ে গেলাম। বাসায় ফিরে সার্টিফিকেট স্ক্যান করে মেইল করলাম ভার্সিটিতে। আহ! কী শান্তি। কী শান্তি! নীরার সাথে সময় কাটানো ঠেকায় কে আর?
কিন্তু না, পরদিন থেকেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ডাক্তার ডেকে আনা হল। প্রেসক্রিপশন- এক সপ্তাহের বেড রেস্ট। কি আর করা। নীরাকে অসুস্থতার কথা জানালাম। বল্লাম ঠিক এক সপ্তাহ পর দেখা করব।

দুদিন পর ফেসবুকে একটা মেসেজ পেলাম। নীরার।

প্রিয় রাকিব,

তোমাকে একটা তথ্য দেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। যেহেতু আমরা একে অপরকে ভালবাসি এবং বিয়ে করব, তথ্যটা তোমার জানা প্রয়োজন। আমি একজন ব্লগার। পুষ্পকুমারী ছদ্মনামে ব্লগিং করি। তুমি খুব ভালভাবে জানো ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনে বিজয়ের পর আমরা সবাই রক্ত শপথ নিয়েছিলাম এ বলে যে আমাদের এই দুখিনি দেশটাকে সারা পৃথিবীতে সব দিক থেকে একটা উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আমরা আমাদের পথে এগিয়ে চলেছি। আমাদের ব্লগস্ফিয়ারের মেধাবী সব ব্লগাররা যার যার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের। আমরা স্বপ্ন দেখি একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্যে আমাদের অকুতোভয় সাংবাদিক ব্লগার যারা আছেন তারা যেখানে যেখানে দুর্নীতির আভাস পাচ্ছেন সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন। তুলে ধরছেন, প্রমান করে দিচ্ছেন তা জনতার সামনে। একদল ব্লগার পুলিশে ঢুকেছেন। তারা চুরি-ডাকাতি খুন-রাহাজানি এসব ঠেকাতে তাদের সর্বোচ্চ করছেন। খেয়াল করলে দেখবে পত্রিকায় খুন-খারাবীর ঘটনার খবর খুব কম আসে এখন। ড. ইমরানের মতো একদল ব্লগার ডাক্তার কাজ করছেন নিজেদের আরো দক্ষ ডাক্তারে পরিণত করার জন্য। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন দিন খুব বেশি দুরে না যেদিন বাইরের লোকজন বাংলাদেশে আসবে চিকিৎসা নিতে। ইভ টিজিং এর বিরূদ্ধে আমরা ফেসবুক ভিত্তিক একটা পেজ খুলেছি, যেখানে আক্রান্তরা তুলে ধরছেন চিহ্নিত ইভ টিজারদের ছবি ও ঠিকানা। এইসব বখাটেদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি সেদিন আর বেশি দূরে না যেদিন এই পেজটি বন্ধ করে দিতে পারব। তুমি জানো, আমাদের একটা টিভি চ্যানেল আছে। নাম ব্লগারস চ্যানেল। হাসান মাহবুব, নুশেরা, বাপী হাসান, নয়ন, মাক্স, মামুন রশীদ, ফ্রাস্টেটেড, বাতিঘর, শায়মা, সোনাবীজদের মতো সব মেধাবী লেখক এখানে এক সাথে নাটক সিনেমা বানায়। সেগুলা এতোটাই জনপ্রিয় এখন যে অন্যান্য দেশের লোকজনও ধীরে ধীরে বাংলা নাটক দেখা শুরু করেছে। এভাবে আমরা আমাদের ভাষাটাকে একটা গ্লোবাল ভাষায় পরিণত করার পরিকল্পনা করেছি। শুনে খুশী হবে, আমাদের বাংলা ভাষাটা একসময় ইংরেজীর জায়গা দখল করে নেবে। এ কাজে অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছি আমরা। তুমি শুনে অবাক হবে, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মেয়ে বাংলা নাটক দেখার জন্য বাংলা ভাষা শিখতে চাচ্ছে। তারা আমাদের দেশ থেকে একজন শিক্ষক চেয়েছে। আমাদের ভার্সিটি থেকে গতকাল আমাকে মেইল করে বলেছে, যাকে সিলেক্ট করা হয়েছিল সে অসুস্থ থাকায় সুযোগটা তারা আমাকে দিতে চাচ্ছে।
ব্যাপারটা তোমাকে প্লেনে উঠার আগে জানাইনি। তবে তুমি আমাকে যেতে দিতে না। বাংলা ভাষা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার কাজে আমি তোমার সাহায্য চাইছি। মাত্র একটা বছর তুমি অপেক্ষা কর, প্লিজ। ভেবে নিয়ো আমাদের এ অপেক্ষাটাও আমাদের বিপ্লবেরই একটা অংশ।

ইতি
তোমার নীরা।


বি.দ্র: গল্পের শিরোনামে ফ্যান্টাসি কথাটা উল্লেখ করেছি। তবু বিশ্বাস করি, আমরা ব্লগাররা যে গণজাগরনের সৃষ্টি করেছি সেই গণজাগরন দিয়েই একসময় আমার এই গল্পটা সত্যি ঘটনায় পরিণত করতে পারব। জয়তু সহব্লগারবৃন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×