এভাবে আর কতোদিন? এবার গল্প লেখা ছেড়ে একটু থিতু হও। কিছু একটা কর।
তিথির এমন হঠাৎ প্রশ্নে সঞ্জয় অবাক হল। তিথির সাথে তার পরিচয় এবং প্রেম একটা গল্পের কারনেই। এলাকার একটা লিটল ম্যাগে সঞ্জয়ের লেখা পড়ে তিথি নিজেই আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। সেই তিথি কখনো তাকে গল্প লেখা ছাড়তে বলবে এটা সঞ্জয়ের ভাবনাতেও ছিল না।
এ কথা তুমি কি করে বললে, তিথি? তুমি খুব ভাল করে জান, গল্প লেখার কাজটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তোমাকে আগেও বলেছি, গল্প লেখাটাকেই আমার প্রফেশন হিসেবে নিতে চাই। আমি খুব বিখ্যাত একজন গল্পকার হতে চাই।
কিন্তু গল্প লিখে তুমি কয় টাকা রোজগার করতে পারবে, বলতো? এভাবে সারাদিন গল্প নিয়ে মেতে থাকলে তো কেউ তোমাকে কোন চাকরিও দিবে না। প্লিজ ওটা ছেড়ে দাও।
তিথি, আমি যেটা ভালবাসি সেটা ছাড়তে বলো না প্লিজ। আমি পারবো না। তাছাড়া বাবা আমার জন্য অনেক রেখে গেছেন। টাকা-পয়সার কোন অভাব আশা করি হবে না কখনো।
তুমি কি আমাকে ভালবাস না?
অবশ্যই বাসি। খুব ভালবাসি। কিন্তু ব্যক্তি তোমার সাথে একটা কাজের তুলনা চলে না। প্লিজ ব্যাপারটা বাদ দাও।
দেখো, ব্যাপারটা এখন আর বাদ দেয়া যাবে না। বিয়ের জন্য বাসা থেকে আমাকে চাপ দিচ্ছে। তোমার কথা মা কে বলতে চেয়েছি বারবার। কিন্তু তোমার কী পরিচয় দিবো ভেবে পাই নি। তুমি কোনকিছু না করলে আমি তোমার কথা কিভাবে বলবো?
যা সত্যি তাই বলে দাও। বলে দাও আমি একজন গল্পকার।
হু, বললেই হলো আর কি। আমার বাসার সবাই এমনিতেই কবি-সাহিত্যিক নিয়ে হাসাহাসি করে সবসময়। তাও তুমি যদি হুমায়ূন আহমেদ টাইপ কেউ হতে- একটা কথা ছিল।
হুমায়ূন আহমেদ? বলা তো যায় না, হয়েও যেতে পারি। আমার বিশ্বাস লেখালেখি চালিয়ে গেলে একসময় বাংলাদেশের সবাই আমাকে এক নামে চিনবে।
দেখো সঞ্জয়, দিবা-স্বপ্ন ছাড়ো। ওসব ছাইপাশ লেখালেখি বাদ দিয়ে সমাজের লোকের কাছে ভ্যালুয়েবল হবার মতো কিছু একটা করো।
এ আমি কখনো পারবো না তিথি। আমার দ্বারা যা হবার না, তা করার চেষ্টা আমি কখনো করতে পারব না।
তুমি আমাকে ভালবাস না তবে? আমাকে বিয়ে করতে চাও না?
অবশ্যই বাসি। তোমাকে যদি না পাই তিথি, সিঁদুর দিয়ে ছোঁবো না কারো সিঁথি!
হয়েছে, আর কাব্য করেত হবে না। আমি গেলাম।
সঞ্জয়কে বসিয়ে রেখে তিথি চলে গেল দূরে। সে রাতে সঞ্জয়ের মুঠোফোনে বার্তা এল- একজন ডাক্তার আমার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। তোমার জন্য এতোদিন আটকে রেখেছিলাম প্রস্তাবটা। আজ বিয়েতে আমার সম্মতি দিয়ে দিলাম। থাকো তুমি তোমার গল্প নিয়ে।
********************************************************************
পাঁচ বছর পর। তিথি টিভিতে চ্যানেল আই খুলে বসল।
হ্যালো ভিউয়ারস কেমন আছো সবাই। আজ আমাদের সাথে আড্ডায় যিনি আছেন তাকে তোমরা সকলেই চিনো। তিনি এ সময়ের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক। তোমরা তার সাথে কথা বলতে চাইলে কল করতে পারো ০২৮৮৫৩২৬১ এই নাম্বারে। ও মা!! বলতে না বলতেই কল!!
হ্যালো, দর্শক। গুড ইভিনিং। সঞ্জয়ের সাথে কথা বলুন।
হ্যালো, সঞ্জয়দা, আমি আপনার খুব বড় একজন ফ্যান। আপনার কাছে একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন ছিল।
জ্বি প্রশ্নটা করে ফেলুন। সঞ্জয় গলা পরিস্কার করতে করতে বললেন।
জ্বি আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
আমি যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম সে আমাকে বিয়ে করে নি বলে।
সঞ্জয়ের জবাব শুনে তিথির চোখে জল এসে গেল। সে তার হাসব্যান্ডকে ডেকে অনুষ্ঠানটি দেখতে বলল। সম্প্রতি ভুল চিকিৎসার জন্য তার হাসব্যান্ডের লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় তিনি ঘরেই আছেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



