somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিই দস্যু বনহুর ...

২০ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেকদিন আগে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক একটা ঘটনা । প্রাইভেট প্লেনে করে যাচ্ছিলাম অস্ট্রেলিয়া । বিশেষ কোন কাজ না । ইচ্ছা হল ক্যাঙ্গারুর সাথে কয়েকটা ছবি তুলে ফেসবুকে আপ করব ।

যাই হোক, আমার প্লেনের পাইলট আবার মহা গাধা প্রকৃতির । ক্লাস ফাইভ পাশ করেই সে প্লেন চালানোর লাইসেন্স পেয়ে গেছে । এখন নাকি একটু আকার ইঙ্গিত বুঝলেই লাইসেন্স পাওয়া যায় । যাই হোক গাধাটা জানেনা অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে কোন দিকে যেতে হয় । আফ্রিকা মহাদেশে প্রবেশ করার পর সে আবিস্কার করল আমরা উল্টো চলে এসেছি । গাধাটাকে আমার প্লেনের পাইলট করাটাই মস্ত ভুল হয়েছে !

আমার সময় ও তেল নষ্ট করার জন্য আমি গাধাটার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকালাম । গাধাটা ভয় পেয়ে প্লেন ঘোরাতে লাগল , কিন্তু বাঁধল বিপত্তি । ইউটারন নিতে গিয়ে প্লেনটা একটা উচু গাছের সাথে ধাক্কা খেল । অবশ্য গাছ উচুতে ছিল, না আমরা নিচে ছিলাম সেইটা একটা তদন্তের বিষয় ।:-*:-*

গাছের সাথে ধাক্কা খেলে যাই হয় , তাই হল । ডিগবাজি খেয়ে আমাদের প্লেনটা মাটিতে আছড়ে পড়তে লাগল । সাহায্যের আশায় আমি পাশে তাকিয়ে দেখি এক্সিডেন্ট টের পেয়ে গাধাটা অনেক আগেই লাফ দিয়েছে । একেই বলে বিপদে পাইলটের পরিচয় ! আমিও দেরী না করে লাফ দিলাম । সাধারনত সিনেমার নায়করা অনেক উচু থেকে লাফ দিলে তাদের কিছু হয়না । আমি সিনেমার নায়ক না হলেও দেখতে অনেক সুন্দর (!!) সম্ভবত সে কারনে খুব একটা ব্যাথা পেলাম না । (??!!) :P:P

কতক্ষন জ্ঞ্যান ছিলোনা জানিনা । জ্ঞ্যান ফিরল হিপ হপ মিউজিকের চোটে । তবে চোখ মেলে আমার ভুল ভাংলো, সেটা হিপ হপ মিউজিক না । অনেকগুলো আফ্রিকান জংলী আমাকে ঘিরে অদ্ভুত সুরে বাদ্য-বাজনা বাজাচ্ছে । তাদের মুখে রঙ করা । মাথায় পালক । পড়নে ...সবকিছু কি আমার বলে দেওয়া লাগে নাকি ? সিনেমায় দেখেন না জংলীরা কি রকম থাকে ?? X(X(


ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম এদের মধ্যে সর্দারনী টাইপের একজন মহিলাও আছেন । উনাকে দেখে অবশ্য আমার বাংলাদেশের একজনের কথা মনে হল । তবে কার কথা মনে হল সেটা আমি বলতে পারবনা । বললে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে !! ;);)

যাই হোক , আমি বুঝতে পারলাম , আমার সামনে অনেক বড় বিপদ । আফ্রিকান জংলীরা আমাকে ঘিরে ধরে আছে । আমার এখন কি করা উচিত আমি জানিনা । মেয়ে মানুষ হলে ‘বাচাও বাচাও’ বলে চিৎকার করতাম । কিন্তু পুরুষ মানুষ বলে পারছিনা । :|:|

জংলীদের একজন এসে আমার কাধে ধরে বলল ‘হুরুচ্চাতি, উলা কুবুরা মিকুচিরি হুলা’ । আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম । বাংলা মেটাল ব্যান্ডের লিরিক্সই আমি বুঝিনা আর এই ভাষা কি করে বুঝব ? অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এত তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আমি সাথে থাকা ল্যাপটপটা বের করে গুগল অনুবাদে ঢুকলাম (বিঃদ্র – সেই জঙ্গল আবার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ভেতরেই ছিল) । আমি অনুবাদ দেখে ঘাবড়ে গেলাম । আফ্রিকান ভাইয়েরা আমাকে বলেছেন ‘ভ্রাতা, আমরা আপনাকে ভক্ষন করিতে ইচ্ছুক’! :-*:-*

তারা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তুলে নিয়ে গেল । আমার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিলনা । তবে আফ্রিকান জংলী হলেও তাদের চলার পথ অনেক ভাল । আমাদের ঢাকা- ময়মনসিংহ সড়কের মত না ! :):)

রাতে আমাকে একটা গাছের সাথে বাঁধা হল । সামনে আগুন জালানো । সম্ভবত একটু পরে আমাকে পুড়িয়ে খাওয়া হবে । সারাজিবন বন্ধুদের নিয়ে বার-বি-কিউ পার্টি করেছি । প্রকৃতির নির্মম খেয়ালে আজ নিজেই বার-বি-কিউ হতে যাচ্ছি । ভাবতেই খারাপ লাগছে । অতীতে যে সকল মুরগী-ছাগল পুড়িয়ে পার্টি করেছিলাম তাদেরও নিশ্চয়ই আমার মত প্রিয়জনদের কথা খুব মনে পড়ছিল । :((:((

কিছুক্ষন পর এলেন ভুরিয়ালা এক জংলী ভদ্রলোক । আন্দাজ করলাম তিনি জংলীদের খাদ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব টাইপের কেউ । তিনি আমাকে ভাল করে দেখতে লাগলেন । আমরা যেমন কোরবানির আগে গরু দেখি ঠিক তেমনি তিনিও আমাকে আঙ্গুল দিয়ে গুতা দিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নিতে লাগলেন। বুঝে নিচ্ছেন রানের মাংস কেমন হবে । সিনার হাড় গুলো কুড়কুড়ে হবে কি না এইগুলো । আমার লেজ থাকলে লেজও তুলা দিয়ে দেখতেন । তখন বুঝতে পেড়েছি কোরবানির গরুরা কেন মানুষ কে লাত্থি গুতা দিতে এত পছন্দ করে ! :P:P


জংলীদের খাদ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব

আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে সচিব সাহেবের চোখে মুখে গভীর হতাশার ছাপ দেখতে পেলাম । এইটুকুন মাংস দিয়ে কয়জনে খাবে ? সম্ভবত সে কারনেই আমাকে ফিটনেস সারটফিকেট দেওয়া গেলনা । B-)B-)

তবে তাদের হতাশা ধরতে পেরে আমার মাথায় আরেকটা বুদ্ধি খেলে গেল । আমি তৎক্ষণাৎ ইন্টারনেটে ঢুকে বাংলা সিনেমার কিছু নায়িকার ছবি ডাউনলড করে উনাদের দেখালাম । বললাম ‘টু মাচ মাংস , নেভার এন্ড’ ! ওহ তারা তো ইংরেজি বোঝেনা । আবারো তাদের ভাষায় অনুবাদ করে বিষয়টা জানিয়ে দিলাম । ;);)

বুদ্ধি কাজে এল । আমাকে মুক্তি দেওয়া হল । সর্দারনী বিপুল উৎসাহে আমার সাথে একটা চুক্তিপত্রে সাক্ষর করলেন । চুক্তির বিষয় হচ্ছে প্রতি মাসে দুইটা সিনেমার নায়িকা তাদের এনে দিতে হবে । আর বিয়ে শাদী পড়লে এক্সট্রা পাঠাতে হবে । আমি হাসতে হাসতে রাজি হলাম । :D:D

আমাকে রাষ্ট্রীয় অথিতির মর্যাদা দেওয়া হল । আমি স্থানীয় স্মৃতিসৌধ দেখতে গেলাম । বিরোধী দলীয় সর্দারনীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকার করলাম । মুখে গভীর হতাশার ছাপ নিয়ে বিশিষ্ট জংলী ব্যাক্তিত্তদের মাজার ফুল দিয়ে এলাম । স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলে এলাম ‘জংলী সমাজের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে এক নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে । বিশেষ করে জংলী সর্দারনী আমাদের দেশের কয়েকটি ‘পন্যের’ যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ দিয়েছেন এতে উভয় সমাজই উপকৃত হবে।‘ :P:P

ভালই কাটল দু তিন দিন । অনেক ছবি-টবি তুললাম । আমার আগমন উপলক্ষে মিউজিক পার্টি দেওয়া হল । তাদের গান শুনে আমার আবার দেশের একজন গায়িকার কথা মনে হচ্ছিল ! থাক... এই নামটাও আমি বলবনা , তাকে নিয়ে অনেক মজা হয়েছে , আর না ! :P:P

পাইলট গাধাকে যত গাধা মনে করেছিলাম সে আসলে তত গাধা না । আমাকে খুজে বের করতে সে আরকেটা প্লেন নিয়ে এসেছে । আমি সব জংলী বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম । কথা দিলাম আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে খুব শিগ্রই বিপুল পরিমান সিনেমার নায়িকা আফ্রিকায় রপ্তানী করা হবে । :D:D

কিছু ছবিঃ


সর্দারনীর পরিবারের সাথে আমার ছবি


আমাকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ রাখছেন একজন অভিনেত্রী


বিরোধীদলিও নেত্রী ( আমি যাওার পর তিনি দাবি করেছেন আমার সাথে নাকি সরকারের গোপন ট্রানজিটের চুক্তি হয়েছে)


সেখানে আমি যে মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১০
২৯টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×