somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাক নং ৭৯৯
লিখছি আর শিখছি , শিখছি আর লিখছি

বড়দের মীনা কার্টুন (পর্বঃ পোলা আর মাইয়াগো কাজ সমান না !)

০৬ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের খাবার খেতে বসেছে মীনা রাজু আর তাদের পরিবার । মীনা-রাজুর মা সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন । আজকের খাবারের মেনু হচ্ছে সবুজ শাক সবজি, ডিম, ডাল আর গরুর মাংস ভুনা । তবে খাদ্যবন্টন করতে গিয়ে তিনি সামান্য লিঙ্গ বৈষম্য করে ফেললেন । রাজুর পাতে দিলেন বেশী আর মীনার পাতে কম ।

তাই দেখে মীনা তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করে উঠলো ‘আমারে কম দিলা ক্যান ? আমি কি অপরাধ করছি ?’
মীনার মা তারচেয়ে জোরে জবাব দিলেন ‘তুমি কি করছ মানে? ঘরে তরকারী যাই আসে তার অর্ধেক তুমি চুলে আর মুখে ঘষাঘষি করো । তাই এইডা তোমার শাস্তি ।’


রাজু আরেক কাঠি সরেস হয়ে বলল ‘আহাহাহা , তোমার কি আর ঘরে খাওনের দরকার আছে ? তোমারে বাইরে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ানের মানুষের তো অভাব নাই...’

তবে মীনা সহজে দমবার পাত্রি না । সে খেতে খেতে হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের মত ফুসফুস করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলতে লাগলো ‘ এই দেশে মাইয়াগো কোন অধিকার নাই, আমাদের কেউ পাত্তা দেয়না , খাবারও দেয়না । বাইচা থাইকা কি লাভ ? মাইয়া হইয়া জন্মাইছি বইলা আইজ এই অবস্থা , ঘরে একটা ধামরী পোলা , কোন কাজ কাম করেনা , সারাদিন ঘুমায় সেই খাবার পায় বেশী ।‘

এটুকু শুনতেই রাজু চিৎকার দিয়ে জবাব দিল ‘কি কইলা তুমি ? আমি ঘরের কোন কাম করিনা ?’

মীনা বলল ‘ হ, ঠিকিই কইছি , সারাদিন খাস-দাস আর ঘুমাস , পারলে একটা দিন আমার কাম কইরা দেখ কত কষ্ট’

রাজু ততক্ষনাত প্রস্তাব লুফে নিল । বলল ‘আইচ্ছা কাইল তো কলেজ বন্ধ , আসো কাইল্কা আমরা দায়িত্ব পরিবর্তন করি । তুমি সারাদিন আমার কাজ করবা আর আমি তোমার কাজ করুম ।

মিনা এক সেকেন্ডও দেরী না করে রাজী হয়ে গেল আর পাশে থাকা টিয়া পাখী মিঠু উচ্চস্বরে বলে উঠলো ‘ওরে এত কথা বলেরে, শান্তিতে একটু খেতেও দিলনা’

(পরেরদিন)

সময় সকাল ৮.৩০


মাঃ ওই রাজু , রাজু । ঘরে আটা-ময়দা কিচ্ছু নাই, নাস্তা করবি কি দিয়া ? যা আটা নিয়া আয় । সাথে চা পাতা , চিনি , ডিম আর তেল লাগবো ।

রাজুঃ আমি পারুম না মা , আইজকে আমরা দায়িত্ব পরিবর্তন করছি । আমার কাজ মীনা করবো আর মীনার কাজ আমি ।

বাধ্য হয়ে মীনা দোকানে গেল আটা-ময়দা কিনতে । টুকটাক বাজার করতে করতে মিনা ভাবল ব্যাপারটা খারাপ না , বাজার থেকে সরানো টাকাগুলো মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করা যায় । আর এদিকে রাজু আরেকটু আরাম করে ঘুমিয়ে নিল... ভাবছেন চুলা ধরানো , ঘর ঝারু দেওয়া , মুরগিরে খাওন দেওয়া এগুলা কে করল ? আরে , মাস শেষে কাজের মহিলারে কি এমনি এমনি বেতন দেওয়া হয় ?


রাজুর কার্যকলাপ (সকাল ১০ টা- সন্ধ্যা ৬টা )

সকালে রাজু পাশের বাসার রহিমের মায়ের সাথে গল্প করতে গেল । এই সময়টাতে মীনা সাধারনত হবিজাবি গল্প করতে প্রতিবেশিদের বাসায় গিয়ে বসে থাকে । তারপর একটার দিকে বাসায় ফিরলো । এমনিদিন দুপুরে খাওয়ার পর মীনা বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে তার বয়ফ্রেন্ড দিপুর সাথে দীর্ঘক্ষণ ফোনে আলাপ করে । ফালতু টাইপের আলাপ । এই যেমন ‘কি খাইলা, কি করলা ? কেমনে খাইলা? কোন হাত দিয়া খাইলা? ’ এই টাইপের কথা বার্তা । রাজুর তো আর গারলফ্রেন্ড নাই , তাই সে তার বন্ধু কুদ্দুসরে ফোন দিয়া আলাপ শুরু করলো কি খাইলা, কি করলা ? কেমনে খাইলা’ কুদ্দুস বিরক্ত হয়ে বললো ‘খা****** (গালি) তোর খাওয়ার *****, তোরে ******* ।‘ এরপরে তো আর প্রেমালাপ যায়না । তাই রাজু সুন্দর করে লাইনটা কেটে দিল ।

মীনার কার্যকলাপ (সকাল ১০ টা- সন্ধ্যা ৬ টা )

সকালে নাস্তা খাওয়ার পর রাজু গলির মোরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে । রাস্তায় যে সকল মেয়ে যাওয়া আসা করে তাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে । মীনা তাই রাজুর মত করে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে রাস্তায় দুচারটা ছেলেকে ইভটিজিং করলো । মোড়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনে লুকিয়ে একটা সিগারেট খেল । দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচের কিছু অংশ দেখল । খাওয়ার পর ‘একটু আসি’ বলে আবার জানি কোথায় বের হয়ে গেল । বাসায় ফিরল সন্ধ্যার পর ।

সন্ধ্যার পর
সন্ধার পরে রাজু সবার জন্য চা বানালো । আর মীনা পড়তে বসল । এখন রাজুকে একটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে । মীনার মত করে এখন তাকে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে হবে । রাজু দাত কিরমির করে টিভিতে সিরিয়াল দেখতে বসল । আর মীনা পড়ার টেবিলে বসে পড়ার ভান করে মোবাইল দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে চার পাঁচটা ছেলেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো । দু তিন জনের ছবিতে সুন্দর সুন্দর লাইক-কমেন্ট দিল (রাজু ফেসবুকে মেয়েদের সাথে যা করে আরকি) ।

এদিকে ঘন্টাখানেক হিন্দি সিরিয়াল দেখার পর রাজু নিজেরে আর ঠিক রাখতে পারলনা । এসে মীনার পায়ে ধরে বললো ‘আমারে তুমি মাফ কইরে দ্যাও বইন । আইজ থাইকা আমার পাতের খাবারও তোমার ... তাও তুমি আমারে এই শাস্তি দিওনা ।’ মীনা মুচকি হেসে বললো ‘দেখলাতো রাজু আমরা সারাদিনে কত্ত কষ্ট করি । আগে আগে মাফ চাইয়া ভালই করছো, নয়টার সময়ে আবার ‘কিউকি সাস ভি কাভি বহু থি’ দিব আর আমি লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পারুম না ভাইবা চউক্ষে পানি চলিয়া আসছিলো ।‘ রাজু চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো ‘যাও ভইন যাও , গিয়া টিভি দেখ’ মীনা বললো ‘এইতো ভাইয়ের মত ভাই’

মিনার সাথে বসে মিঠুকেও এইসব সিরিয়াল দেখতে হয় বলে মিঠু মন খারাপের সুরে বিড়বিড় করে বলল ‘ঠাটা পড়া কপাল আমার , একটুও শান্তি নাই’

অতঃপর ব্যাকগ্রাউন্ডে গান শুরু হল ‘আমি বাবা মায়ের শত আদরের মেয়ে... আমি বড় হই সকলের...’


যাবতীয় সমালোচনার দাবীদারঃ
নাসিফ চৌধুরী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩৩
৫৪টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×