somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেঁদেছিল

২০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই লেখাটির আগে,এই পান্ডুলিপিটি ভালো লাগলেও লাগতে পারে।



লিখতে গিয়ে কবি মুজিব মেহেদীর বিড়ালটি'র কথা মনে পড়ে গেল। “এক জীবনে মানুষের কতবার যে বাড়িবদল জরুরি হতে পারে, মানুষও বুঝি তা জানে না............সব মায়া কাটিয়ে বাধ্য হয়ে তোমরা শহরান্তরে যাচ্ছ, পেছনে কাজলা বিড়ালটি দৌড়াচ্ছে... দৌড়াচ্ছে... দৌ...ড়া...চ্ছে “। বাড়ি বদলের এমন করুণ বিষন্ন মুহুর্ত গুলো পার করতে হয়েছে কতবার! যেই না একটা বাড়ির উপর মায়া পড়ে গিয়েছে অমনি সময় এসেছে নতুন আর এক জায়গায় যাবার। আবার সব ভাংগো। বাঁধ। বোঝাই কর ট্রাকে। চল নতুন ঠিকানায়। আবার নামাও। তোল। সাজাও। তাতে ছোটবেলা সুলভ রোমাঞ্চ অবশ্যি কম ছিল না। সম্পূর্ণ নতুন এক জায়গায় যাওয়া। দেখা। সে আর এক মোহাবিষ্টতা। নকলা থেকে আমরা গিয়েছি ইসলামপুর, ইসলামপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ, সেখান থেকে পীরগাছা, পীরগাছা থেকে বোনার-পাড়া ( জংশন), অতঃপর রংপুর। রংপুরে এসে অবশেষে থেমে গিয়েছিল ট্রাকের চাকা।
দেওয়ানগঞ্জের সেই আখ খেত, দুরের লাল রঙের কোর্ট বিল্ডিং, উপজেলা কোয়ার্টার গুলো আজ ভাসা ভাসা মনে পড়ে। মনে পড়ে আমরা কোয়ার্টারের দোতলায় থাকতাম। সেই দোতলা ঘরটা যেন আমার কল্পনার একমাত্র দোতলা ঘর হয়ে গেঁথে গেছে। সেই বারান্দা, জালনা দিয়ে রোদ আসা। আমি যত বার কোন কবিতা পড়ি, যে কবিতায় জানালা দিয়ে রোদ আসার কথা লেখা আছে, ততবারই মনের অজান্তে তৈরী হওয়া চিত্রকল্পটা ঐ জানালাটাকেই পেয়ে বসে। বারান্দায় অফুরন্ত রোদ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকত। দুই কোনায় ছিল দুটো টব। গোলাপ ফুলের। আমাদের দুই ভাইয়ের নাম লেখা ছিল দুটোতে। আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম এই বাড়িতে থাকতেই। অবশ্য ও হয়েছিল নানির বাড়িতে। জন্মের পর এটাই ছিল তার প্রথম বাসা, যখনকার কথা তার স্মৃতিতে থাকার কথা নয়। মা ও কে নিয়ে মাঝে মাঝে উপজেলার হাসপাতালে যেতেন। আমিও সাথে। যাওয়ার পথটা মনে আছে। রিক্সা দিয়ে যাওয়া যেত কিনা ঠিক মনে পড়ছে না। শুধু মনে পড়ছে একটা মটরশুটির জমির পাশ দিয়ে আমি, মা আর আমার ছোটভাইকে মায়ের কোলে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এই যাওয়াটুকু মনে পড়ে। আর মনে পড়ে মায়ের কেমন যেন কষ্ট-ক্লীষ্ট মুখটা। মার বোধয় হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছিল!!
বাবা আমাকে একটা লাল রঙের ফুটবল কিনে দিয়েছিলেন মনে আছে। ওটাই ছিল আমার প্রিয় খেলার বস্তু। আর একটা ছিল স্প্রিং অপারেটেড ছোট্ট খেলনা কার গাড়ি, যেটা বার কয়েক পিছন দিকে টেনে দিলে সামনের দিকে এগোত। সে সময় লাল বলটা এত বড় মনে হত যে আমি ঠিক মত শট ও মারতে পারতাম না। সেই বলটা নিয়ে নেমে যেতাম বিকাল বেলা। মনে আছে ঐ মাঠের আইলের দিকে কিছু গুল্ম জাতীয় আগাছা জন্মাত- যেগুলোর পাতা গুলো ছিল মরিচের পাতার মত আর ফুল্গুলো ছিল ছোট্ট সাদা নাক-ফুলের মত। গাছটার নামটা যেন কি, ভুলে গেছি কিন্তু স্বাদটা মনে আছে। এই গাছের পাতা কিংবা ফুল নিয়ে একটু হাতে ঘসলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আর ভুল ক্রমে যদি সেই হাত চোখে লাগে বা ঠোটেও লাগে তাহলে জ্বলতে জ্বলতে লাল হয়ে যায় সেই জায়গা। কি জানি আজ ফুটবল মাঠের কথা মনে করতে গিয়ে মাঠের পাশের মরিচ গুল্মের কথা মনে পড়ে গেল কেন। খুব সম্ভব মনের ভিতর এমন একটা মায়া কাজ করছে- যে মায়ায় অতীতের তুচ্ছতম ঘটনা গুলোও মনি মুক্তোর মত মনে হচ্ছে। তা নাহলে কেন বার বার মনে হচ্ছে ঐ যে আমাদের কোয়ার্টারের পিছন দিকের দিগন্ত জোড়া চাষাবাদের জমিন গুলো, জমিন গুলোতে আখের চাষ, শীতকালে চাষ করা মাটি থেকে প্রায় এক আধ ফুট উপরে পর্যন্ত বড় হয়ে ওঠা লাল কিংবা সাদা রঙের মুলো’র জমির কিছুটা পিছনেই আদিগন্ত স্ফটিক স্বচ্ছ নীল আকাশ আর এ দুয়ের মাঝা মাঝি তে- নীলচে আভার হালকা হালকা কুয়াশাময় শুন্য অংশটুকু কেন বারংবার মনে মনে আকুলি বিকুলি করে উঠছে? কেন মনে হচ্ছে –চলোনা একবার যাই সেখানে। ঘুরে আসি কোন অবকাশে। দেখে আসি কেমন আছে সেই জায়গাটি? কতটাই বা বদলে গেল?
আমার পড়াশুনার পাট তখনো শুরু হয়নি। তবে আমার স্কুল টিচার ছোট ফুপু, ক্লাস ওয়ানের এক সেট বই এনে দিয়েছিলেন। আমি স্কুলে যাওয়া ছাড়াই ওগুলো পড়তাম। বাবা শেখাতেন ধারাপাত। মা শেখাতেন ছড়া। বড় হয়ে বুঝেছিলাম মার প্রিয় বিষয় ছিল বোধয় বাংলা। কারন আরো পড়ে দেখতাম মা পত্রিকার যাবতীয় গল্প, কবিতা, খুব মনযোগ দিয়ে পড়তেন এবং আমাদের পড়ে শোনাতেন। গল্পের বই পড়তেন হাতের কাছে পেলেই। আমার গল্পের বই পড়ার অভ্যেসটাও বোধয় মা’র কাছ থেকেই পাওয়া। মা বোধয় অংকে অত ভালোও ছিলেন না। যাই হোক দেওয়ান গঞ্জ পর্যন্তই ছিল আমার পড়াশুনা বিহীন সুখের ছোটবেলা। শুধু সক্কাল বেলা কয়েক দিন মসজিদে যেতাম মনে আছে। ছোট্ট একটা সবুজ মলাটের কায়দা বই নিয়ে। আলিফ, বা, তা, ছা শেখার জন্য।
ও আচ্ছা শেষ করতে যেয়ে হঠাৎ একটা নাম মনে পড়ে গেল। জেনি। জেনিরা থাকত আমাদের এক বাসা পড়েই আর একটা বাসায়। মেয়েটার মুখ তো আমার মনেই নেই। তার কোন স্মৃতিও নেই আজ। শুধু পড়ে মা’র মুখে শুনেছি- আমি নাকি সবসময় ঐ জেনি’দের বাসায়ই পড়ে থাকতাম, খেলতাম, এমন কি জেনির মা মাঝে মাঝে আমাকে দুপুরে গোসল করিয়ে খাওয়া-দাওয়াও করাতেন। বলতে গেলে আমার খেলার সাথী বলতেই ছিল জেনি নামের ঐ মেয়েটি। আজ এতটা বছর পর মেয়েটা কোথায় আছে, কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছে করে। এমনি। কোন কারন নাই। আমরা যখন বদলি হয়ে চলে আসি দেওয়ানগঞ্জ থেকে, তখন ঐ পিচ্চি মেয়েটা নাকি বাবার হাত ধরে এসে দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের ট্রাকের পাশে। মার মুখে শুনেছিলাম - খুব কেঁদেছিলও নাকি।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:৫৫
১৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×