somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ক্ষণজন্মা জাফর ইকবালের অকালে চলে যাওয়া এবং তাকে নিয়ে আমার দু চারটা কথা।(স্মৃতিকাতরমুলক পোষ্ট):((

০৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাফর ইকবাল নিঃসন্দেহে আলোচিত একটি নাম একটি ইতিহাস। গত দু তিনদিনে শুধু এক জাফর ইকবালের নাম যতবার উচ্চারিত হয়েছে, হয়েছে আলোচিত তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কিংবা হালের ক্রেজ নাম্বার ওয়ান, অনলি ওয়ান নায়ক চাকিবা খানমেরও হয়নি। কারন একটাই তার অবদান। জাফর ইকবালের অবদান লেখতে গেলে হয়ত ব্লগের পৃষ্ঠা হ্যাং করবে, হয়ত ব্লগের সার্ভার ক্রাশো করতে পারে। তবুও আমি থামবোনা, ক্ষান্ত হবোনা এই কীর্তিমান বাঙ্গালীর কির্তি প্রকাশে। আসুন একে একে জেনে নেয়া যাক জাফর ইকবালের সুমহান কির্তি সুমহ।


আজো লাখো তরুণী বুকে এই ছবি নিয়ে ঘুমায়

মূলত জাফর ইকবালের যদি কির্তি খুজতে হয় আমাদের চলে যেতে হবে ৮০ এর দশকে। মূলত সেই সময়েই এই কীর্তিমান বাঙ্গালীর আবির্ভাব। মিঃ জাফর ১৯৭২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তার যে কীর্তি স্থাপন করেছেন সেটা অবাক করার মতোই ব্যাপার। একসময় এই আলোচিত জাফর ইকবালকে বলা হতো ‘রাজপুত্তুর’। কেউবা বলত রোমিও। কিন্তু কেন? আসুন সেটাও জেনে নেয়া যাক


জাফর ইকবালের সেই আলোচিত গানের এল্ব্যামের সিডি

জাফর ইকবালের জন্ম ঢাকাতে। শৈশবে গান-বাজনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এসএসসি পাস করার আগেই তিনি গিটার বাজাতেন। গিটারে ইংরেজি গান তুলতেন। এলভিস প্রিসলি ছিল তার বড়ই প্রিয় তারকা। স্কুলে কোনো ফাংশন হলে তিনি গিটার বাজিয়ে এলভিস প্রিসলির গান গাইতেন। অভিনয়ের চেয়ে তিনি প্রেমিক-পুরুষ হিসেবে নামধাম করেছিলেন ১৯৭২ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে। জাফর ইকবাল আর ববিতা জুটি হিসেবে ঝড় তুলতে না তুলতেই এদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। মন দেয়া-নেয়ার কথাও তখনকার সিনে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।


অনেকে এখনো জাফরের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নিজেকে হিট খাওয়াতে চাই।

কিন্তু ক্ষণজন্মা প্রতিভাধর এই মানুষটি শুধু একটি প্রতিভায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। তাই জাফর ইকবাল ভাবতেন, কি করে সংগীত তারকা হওয়া যায়। তখন তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ সুরকার হিসেবে খ্যাতির তুঙ্গে। ওদিকে তার বোন শাহনাজ বেগম (বর্তমানে শাহনাজ রহমতউল্লাহ) সিনেমায় গান করে বেশ নাম করতে শুরু করেছেন। ওদের বাবা-মা ছিলেন গান-বাজনার প্রতি বড্ড দুর্বল। এক অনুষ্ঠানে জাফর ইকবালকে স্টেজে গান করতে দেখলেন চিত্র পরিচালক খান আতাউর রহমান। জাফরের চেহারাটা তার চোখে ভালো লেগে যায়। অনুষ্ঠান শেষে খান আতা জাফরের হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললেন, ফিল্মে অভিনয় করবে কিনা! কথা শুনে জাফর ইকবাল একটু ভাবলেন। নম্রভাবে জানালেন, ‘ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলে অভিনয় করব।’ সেটা ছিল ১৯৬৯ সালের কথা। জাফর ইকবাল ১৯৬৯ সালেই ‘আপন পর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন কবরী।

সাধারণ মেয়ে, একই অঙ্গে এত রূপ, ফকির মজনু শাহ ছবি তিনটি রিলিজ হতেই তার ব্যাপক পরিচিতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ‘ফকির মজনু শাহ’ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি গানও গেয়েছিলেন। তার গাওয়া গানগুলো সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়, যা কি না ছিল তরুণ-তরুণীর মুখে মুখে। এর পরে জাফর ইকবাল দিনের পর দিন, সূর্য সংগ্রাম, বেদ্বীন, অংশীদার, আশীর্বাদ, অপমান, পরিবর্তন, সি আইডি, গৃহলক্ষ্মী, ওগো বিদেশিনী, ফুলের মালা, মর্যাদা, সন্ধি, ছোবল, প্রেম বিরহ, বন্ধু আমার প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেন। জাফর ইকবাল কবরী, শাবানা, ববিতার বিপরীতে বেশি অভিনয় করেছেন।


জাফরের সুরে সেই অমর গান, যা এখনো আমাদের মনে তার প্রতিভাকে স্মরন করিয়ে দেয়।

জাফর ইকবালের মৃত্যু হয় ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি। সে দিন তার মৃত্যু সংবাদ শুনে কিংবা দীর্ঘ ১৯ বছর পরেও চলচ্চিত্র জগতে তার মতো রোমান্টিক নায়কের শূন্য আসন কিন্তু পূরণ হয়নি। একদা বাংলা ফিল্মে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন (১৯৩০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত) জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তিনিও জনপ্রিয় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বড়ই রোমান্টিক নায়ক, জাফর ইকবালও তদ্রূপ। কতই না মিল এই দুই নায়কের মধ্যে।

অবশেষে বলতেই হয়, ক্ষণজন্মা অসাধারণ রোমান্টিক এই নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল মরেও অমর হয়ে রইলেন ঢাকার ফিল্মে তথা পুরো বাঙ্গালীর হৃদয়ে।

*** কাকতালীয় ভাবে কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী থাকবেনা।
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×