somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা হিমালয় কন্যার রাজধানী কাঠমান্ডু –(ভূমিকম্পের পূর্বে)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাঠমান্ডু যাবার জন্য বাংলাদেশ বিমানের টিকেট কেটেছি। একাই যাচ্ছি আমি। টিকেট, পাসপোর্ট নিয়ে ব্যাংকে গেলাম ডলার এন্ডোর্স করতে, বলেছি দুই হাজার ডলার চাই আমার। সাথে সাথে জবাব, “না, নেপাল যাবার জন্য আমরা দুই হাজার ডলার দেব না।“ দু’দিন পরেই ফ্লাইট আমার! ফিরে যাব ভাবছি, মানি চেঞ্জার থেকে ডলার কিনে নেব। তবুও বললাম,” ভাই আমার এফ সি একাউন্ট।“ তখন যাদুর মত কাজ শুরু হলো। “ম্যাডাম আগে বলবেনতো।“ একজন গ্রাহককে নিজের সম্মন্ধে বক্তৃতা দিতে হবে প্রথমে, তারপরে তারা কাজে হাত দেবেন!

নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা বিমানবন্দরে হাজির আমি। চেকইনের লাইনে দাঁড়িয়ে। একসময় এল আমার পালা। ওনারা নিজেরা মন্তব্য করছেন,” আজ দেখছি হিমালয়ের দেশে যাচ্ছে সবাই।“ বোর্ডিং নিয়ে, ইমিগ্রেশন পার করে, একরাশ অপেক্ষার পালা শেষ করে একসময় প্লেনে উঠলাম। যার যার নির্দিষ্ট আসনে সবার বসা শেষ। চট করে উঠে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা তাক করেছি, ওমনি ধমক,” ছবি তুলবেন না”। ধমক খেয়ে লক্ষী মেয়ের মত বসে পড়লাম, এর মধ্যেই দুটো ছবি তুলে নিয়েছি। এক সময় প্লেন উড়াল দিল, আকাশের ছবি, মেঘের ছবি তুলতে তুলতে ল্যান্ড করবার সময় হয়ে এল, এর মধ্যেই আকাশে দেখা দিল চিরবিস্ময় হিমালয়ের সব চুড়াগুলো। দু’একটা ছবি তুলতেই প্লেন অনেক নিচে নেমে এল। একসময় নেমে পড়লাম ত্রীভূবন এয়ারপোর্টে, সেও আবার ট্যাক্সী ওয়েতে। প্লেন থেকে নেমে, বাসে চড়ে এলাম টার্মিনাল-এ। একমাসের ভিসা নিয়ে, আর সব ফর্মালিটি সেরে বেরিয়ে এলাম এয়ারপোর্ট থেকে। আমার হাসবেন্ড এসেছেন আমাকে রিসিভ করতে, উনি তখন নেপালের পূর্বাঞ্চলের একটি শহরে কর্মরত। কাঠমান্ডুর থামেল এলাকার একটা হোটেলে উঠলাম আমরা। ফ্রেশ হয়ে, খাওয়া –দাওয়া সেরে, সেদিন দূরে কোন প্রোগ্রাম করলাম না। আশেপাশেই দোকানে ঘুরলাম, টুকটাক কিছু কেনাকাটা করলাম। পরদিন থেকেই কাঠমান্ডুর ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখবার প্রোগ্রাম করে নিলাম।



বাংলাদেশ বিমানের ভিতরে তোলা ছবিটি


মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে প্লেন উপরে উঠছে


এক সময় মেঘ ফুঁড়ে আরো উপরে উঠে গেলাম




মেঘ পেরিয়ে দেখা গেল হিমালয়ের সুউচ্চ চুড়াগুলো।




নেমে এলাম রানওয়েতে, আমাদের জন্য এগিয়ে আসছে সিড়ি আর বাস।


শুধু বাংলাদেশ বিমানই নয় , অনেক বিখ্যাত এয়ার লাইন্সের প্লেনই থেমে আছে ট্যাক্সী ওয়েতে।


নেপাল, হিমালয় অধ্যুষিত একটি দক্ষিণ এশিয় দেশ। সবুজ অরণ্য পাহাড়ে ঘেরা তুষার আবৃত হিমালীয় গিরিশৃঙ্গের পটভূমিকায় প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতায় ৫০৩ বর্গ কিলোমিটার –এর কাঠমান্ডু উপত্যকা। আর কাঠমান্ডু উপত্যকার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান রাজধানী কাঠমান্ডু। প্রাকৃতিক দৃশ্য অনিন্দ্য সুন্দর। নেপালের উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে ভারত। সরকারীভাবে একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপাল। এর শতকরা ৮০ ভাগ জনগণই হিন্দু ধর্মের অনুসারী। নেপাল এবং চীনের সীমান্ত জুড়ে যে অঞ্চল, সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০ টি পর্বতের ৮ টিই অবস্থিত। এখানেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত। বাগমতী, বিষ্ণূমতী আর ধোবি এই তিন পাহাড়ি নদি বয়ে চলেছে উপত্যকা দিয়ে।


কাঠমান্ডু উপত্যকা তিনটি ইতিহাসখ্যাত শহর নিয়ে গঠিত।

১) কাঠমান্ডু
২) পাটান (লোলিতপুর)
৩) ভক্তপুর।



আধুনিক আর প্রাচীনের সমন্বয়ে শহরটি। আধুনিক প্রান্তের বাড়ীঘর, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। প্রশস্ত সব মসৃন রাজপথ দিয়ে ছুটে চলেছে ঝকঝকে চকচকে বর্ণময় সব বিদেশী গাড়ির বহর। আর পুরোনো কাঠমান্ডু ঘিঞ্জি, সংকীর্ণ ভিড়ভাট্টা পরিবেশে রিকশা, সাইকেল, মোটর সাইকেল চলছে কান ঝালাপালা করা শব্দ তুলে। দু’ইয়ে মিলে হিমালয়ের কোলে বিশ্ববন্দিত পর্যটন নগরী কাঠমান্ডু পর্যটনে আনন্দ রোমাঞ্চ দুইই আছে!সব রকমের আধুনিক সুযোগ সুবিধা মেলে রাজধানী নগরীতে।

কাঠমান্ডু শহরটিতে মধ্যযুগের নির্মিত মন্দির, রাজবাড়ী, প্যাগোডা আর পাশাপাশি বহূতল বিশিষ্ট ভবনের সমারোহও দেখা যায়।প্যাগোডাধর্মী রঙচঙে অসংখ্য সুন্দর মন্দিরগুলো কাঠমান্ডুর প্রধান আকর্ষণ। কাঠমান্ডু নিয়ে অসংখ্য লোক গাঁথা প্রচলিত আছে। কাঠমান্ডুর পূর্ব নাম কান্তিপুর। কথিত আছে কোন এক সময় কাঠমান্ডু ছিলে একটি লেক। লেকজুরে পদ্মফুল ফুটে থাকত। মহাজ্ঞানী বৌদ্ধ ভিক্ষু মঞ্জুশ্রী দেখতে পেলেন একটি পদ্মফুল থেকে স্বর্গীয় আলো বের হচ্ছে। স্বর্গীয় আলো থেকে তিনি তার কাজের নির্দেশ পেলেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী তিনি কাঠমান্ডু শহর থেকে নয় কিলমিটার দূরে চৌবাব পাহাড় কেটে লেকের পানি বের করে দেন। লেকের সব পানি বেরিয়ে একটি সমতল ভূমীর সৃষ্টি হয়। সেটাই কাঠমান্ডু উপত্যকা। সেই স্বর্গীয় আলো ও পদ্ম ফুলের স্থানই বর্তমানের স্বয়ম্ভুনাথ বৌদ্ধ স্তুপা, যা এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ।

আবার অন্য লোকগাঁথায় আছে হিন্দু দেবতা কৃষ্ণা তার কারিশমার আলো দিয়ে পাহাড় কেটে লেকের পানি বের করে দেন। সেখানেই কাঠমান্ডু ভ্যালীর উৎপত্তি।

সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকগাঁথা যেটি, স্বর্গ থেকে কল্পবৃক্ষ মর্তে আসে মানুষের সেবার জন্য। সেই সময় একজন তান্ত্রিক সাধু কল্পবৃক্ষকে আবেদন করলেন কিছু কাঠ দান করার জন্য। তা দিয়ে তিনি একটি বহুতল বিশিষ্ট কাঠের ভবন তৈরী করবেন। কল্পবৃক্ষ রাজী হয় এবং একমাত্র সেই কল্পবৃক্ষের কাঠ দিয়ে একটি বহুতলা মন্দির তৈরী করা হয় যার নাম গৌরাক্ষনাথ মন্দির। পরে আবার সেই মন্দিরটি কাষ্ঠমন্ডপ নামেও পরিচিত হয়। কাঠমান্ডু নামকরণ সেখান থেকেই আসে।

কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারঃ- কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার যা হনুমান ধোকা দরবার স্কয়ার নামেও পরিচিত। কাঠমান্ডুর অন্যতম দর্শনীয় স্থান এটি। কাঠমান্ডু শহরের প্রাণকেন্দ্রে মল্ল রাজা ও শাহ রাজাদের কৃত্তিগাঁথা, রাজবাড়ীর স্থাপত্যশৈলী দেখার মত!! ইতিহাসে বর্ণীত আছে, কাঠমান্ডুর নেয়ারী সম্প্রদায়- যারা নিজেদেরকে অভিজাত সম্প্রদায় ভাবে; তাদের সৃষ্টিশৈলী ফুটিয়ে তুলেছে বিভিন্ন মন্দির ও স্থাপত্তে। বিশেষ করে কাঠের কারুকাজ যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে সাড়া জাগায়, তাদের ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করে।

পুরোনো কাঠমান্ডুর বিশাল এলাকা জুরে চত্বর। প্রবেশ পথের বাম পাশেই কুমারী মন্দির। তিনতলা মন্দির ভবনের কাঠের কারুকার্য করা বারান্দা ও জানালার নেটের কাজ দেখার মত। দেবী এখানে কুমারী কন্যা। ৪/৫ বছর বয়সে নানা ধর্মীয় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয় এরা। আর প্রস্থান করে কৈশরের অবসানে। প্রবাদ আছে যে, দেবীদূর্গার অবতার এরা। দর্শন মেলে কুমারী দেবীর চত্বর থেকে। ভবনে প্রবেশ করা এবং ছবি তোলা নিষেধ।

এর অদূরেই কাষ্ঠমন্ডপ, কারুকার্য ও স্থাপত্যশৈলী চমৎকার। কাষ্ঠমন্ডপের ডানে দরবার স্কয়ারের মূল আকর্ষণ হনুমান ধোকা অর্থাৎ রাজাদের পুরোনো বাসভবন। গেট দিয়ে প্রবেশ, দ্বাররক্ষী বীর হনুমান। দর্শনী (টাকা) লাগে প্রাসাদ দেখতে। প্রবেশ করেই নাসাল চক, অতীতে নেপালরাজের অভিষেক হতো এখানে।পাশেই রাজপরিবারের ছবির ভবন। ভবনে ত্রিভুবন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও মুদ্রার সংগ্রহশালা আছে। এছাড়া হনুমান ধোকায় আরো আছে বিশাল নেপালি ঘন্টা, বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য মন্দির। আবার নানা পণ্য দ্রব্যের দোকানপাটও বসে দরবার স্কয়ারে।



এটাই মূল কাঠমান্ডূ দরবার স্কয়ার


এটাই সেই কাষ্ঠমন্ডপ যা সেই কল্পবৃক্ষের কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল


হনুমান ধোকা দরবার স্কয়ার বা কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার-এর প্রস্তর-ফলক


রাজাদের পুরোনো বাসভবন


দ্বাররক্ষী বীর হনুমান


বিশাল নেপালি ঘন্টা






হনুমান ধোকায় এমন আরো বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য মন্দির রয়েছে


মন্দির চত্বরে অবশেষে এক সাধু বাবা তার সঙ্গীকে নিয়ে পোজ দিলেন।


পাটান দরবার স্কয়ারঃ- কাঠমান্ডু উপত্যকার সবচেয়ে পুরোনো এবং সমৃদ্ধ শহর পাটান। পাটান শহর মূলতঃ শিল্পীর শহর। মনে করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শহর এইটি। শহরটি বাগমতি নদির তীরে অবস্থিত এবং লোলিতপুর নামেও পরিচিত। পাটান শহরের চার কোণায় চারটি বৌদ্ধ স্তুপা আছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইতিহাস প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ রাজা অশোক স্তুপাগুলো তৈরী করেন। পাটান দরবার স্কয়ার, হিন্দু মন্দির এবং বৌদ্ধ স্তুপার অনন্য সমন্বয়। এটা যেন বিদেশী পর্যটকদের কাছে স্বর্গরাজ্য। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যেঃ- (১)পাটান যাদুঘর (২)হরিশংকর মন্দির (৩)সোনার জানালা (৪)মহাবুদ্ধা স্তুপা (৫)কৃষ্ণা মন্দির (৬)তালাজু মন্দির বিখ্যাত।



এটাই পাটান দরবার স্কয়ার-এর মূল অংশ


পাটান দরবার স্কয়ার-এর প্রস্তর-ফলক


ভক্তের ভিড়


কৃষ্ণা মন্দির




পাটান যাদুঘর (দু'টোই )


বুদ্ধাস্তুপাঃ কাঠমান্ডু থেকে ৮ কিলোমিটার আর পশুপতিনাথ থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ৫ শতকে রাজা মানাদে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে নির্মান করেন এই বৌদ্ধস্তুপ।সারা স্তুপের শিখরদেশ ঝলমলে সাজে সাজানো। চুড়ার নিচের অংশের চারধারে সাদা, লাল আর নীল রঙ দিয়ে চারজোড়া চোখ আঁকা আছে। অর্থাৎ অনিমেষ নেত্রে বুদ্ধদেব জগৎ সংসারের সবকিছুই নজরে রাখছেন। আর ১০০টির বেশী বুদ্ধমূর্তি স্তুপের কুলুঙ্গিতে। স্তুপ প্রদক্ষিণ ও প্রার্থনাচক্র ঘুরিয়ে অতীতের পাপের বোঝা হালকা করা যায়।







বুদ্ধাস্তুপাঃ অনিমেষ নেত্রে বুদ্ধদেব জগৎ সংসারের সবকিছুই নজরে রাখছেন।


প্রার্থনাচক্র ঘুরিয়ে অতীতের পাপের বোঝা হালকা করা


আরো কিছু ছোট ছোট মুর্তি।


ভক্তপুর দরবার স্কয়ারঃ- ভক্তপুর শহরটি কাঠমান্ডু থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শহরটি মধ্যযুগীয় শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকাজ, ধাতুর তৈরী মূর্তি ও আসবাবপত্রের যাদুঘর বলে পরিচিত। শহরটিতে বৌদ্ধ মন্দির ও হিন্দু মন্দিরের অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়। ৫৫ জানালা সমৃদ্ধ রাজপ্রাসাদ ও তার অপূর্ব কারুকাজ নেপালের ঐতিহ্য বহন করে।

দর্শনীয় স্থানঃ- (১)৫৫ জানালা বিশিষ্ট রাজপ্রাসাদ (২)সোনার দরজা (৩)সিংহ দরজা (৪)পশুপতিনাথ মন্দির (৫)ভাটসালা দূর্গা মন্দির (৬)তিন মহাদেব নারায়ন মন্দির।



ভক্তপুরের মুল মন্দির। পর্বতশৃঙ্গের পরে এটাকেই নেপালের আইকন হিসাবে ধরা হয়।




সোনার দরজা


ভক্তপুরে পানির হাউজের পাশে কোবরার মূর্তি


পানির হাউজের পাশে নাগা পোখারী নামে এমন একটি মূর্তি

** নিচে ভক্তপুর দরবার স্কয়ারের বিভিন্ন অংশে আরো অনেক মন্দির














স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপাঃ- কাঠমান্ডুর ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অনুচ্চ পাহাড়ি টিলার উপরে ২০০০ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ চৈত এটি। মাটি আর ইটের তৈরী স্তুপার রঙ শ্বেতশুভ্র। চুড়ার অংশ ঝলমলে সাজানো ও বুদ্ধদেব-এর চোখ অংকিত। অদূরেই তিব্বতী বৌদ্ধ বিহারে অনেক উঁচু বিশাল বৌদ্ধমূর্তি দর্শনীয়। এই স্থানটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। এটি বৌদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো এবং কাঠমান্ডুর সবচেয়ে পুরোনো ও প্রসিদ্ধ স্থান। সমগ্র স্তুপা প্রাঙ্গন জুড়ে চৈতা মন্দির, মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন চিত্র, দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত স্থাপনায় পরিপূর্ণ। স্তুপার আশেপাশে আরো আছে মিউজিয়াম, হিন্দু মন্দির ও তিব্বতী বসতী। স্বয়ম্ভুনাথ থেকে হিমালয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখায় খুবই সুন্দর! তবে বানরের উৎপাত আছে স্বয়ম্ভুনাথ-এ!! অনেকে একে বানর মন্দিরও বলে। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বলে এখান থেকে পুরো কাঠমান্ডু উপত্যকাই ছবির মত দেখা যায়।



স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপা-র বিশাল কমপ্লেক্সের একাংশ


বিশাল বৌদ্ধমূর্তি দর্শনীয়


সমগ্র স্তুপা প্রাঙ্গন জুড়ে চৈতা মন্দির


স্তুপায় প্রার্থনাচক্র ঘুরিয়ে অতীতের পাপের বোঝা হালকা করা হয়




স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপা জুড়ে রয়েছে এমনই অনেক মন্দির ও মূর্তি


বানরের উৎপাত


স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপায় বুদ্ধমূর্তি স্থাপনার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে একাংশে


পশুপতিনাথ মন্দিরঃ- কাঠমান্ডুর পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে পবিত্র বাগমতি নদীর তীরে প্রসিদ্ধ হিন্দুতীর্থ পশুপতিনাথ মন্দির অবস্থিত। নেপাল তথা সমগ্র হিন্দু তীর্থযাত্রীদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবার এই শেষ ইচ্ছে থাকে, তার শেষকৃত্য যেন পশুপতিনাথ মন্দিরে করা হয়।

মন্দিরটি ভগবান পশুপতিনাথের জন্য স্থাপিত। এটি ইউনেসকোর একটি “বিশ্ব ঐতিহ্য” (ওয়ার্ড হেরিটেজ)।
পশুপতিনাথ মন্দিরের উৎপত্তি নিয়ে বহুবিধ কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি কাহিনী এরকমঃ- শিব এবং পার্বতী তাদের মর্তে সফরকালে কাঠমান্ডু ভ্যালীতে এসেছিলেন এবং বাগমতি নদীর তীরে বিশ্রাম করছিলেন। শিব কাঠমান্ডু ভ্যালীর সৌন্দর্যে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তারা (শিব এবং পার্বতী) হরিণের রুপ ধারন করে বনের মাঝে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। কিছু সময় পর অন্য দেবতারা তাদেরকে খুঁজতে থাকেন। অনেক সমস্যার পরে তারা বনের মাঝে শিবকে খুঁজে পান। কিন্তু শিব ফিরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি ঘোষণা দেন যে, যেহেতু তিনি একটি হরিনের রূপ নিয়ে বাগমতি নদীর তীরে অবস্থান করেছেন, তিনি এর পর থেকে বনের সম্রাট পশুপতিনাথ নামে পরিচিত হবেন।

সেই বাগমতির তীরেই পশুপতিনাথ মন্দির স্থাপিত হয়। বলা হয়, ওই মন্দিরে যে শিবলিঙ্গ রয়েছে, সেটি স্পর্শ করলে পরবর্তি জীবনে কেউ কোন পশুর রূপে জন্মগ্রহন করবে না।

রুপার তৈরি কারুকার্য করা দরজা আর গিলটি করা প্যাগোডাধর্মী মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরের পঞ্চমুখী লিঙ্গ রূপী মহাদেব পূজিত হন। গর্ভগৃহে সাধারনের প্রবেশ নিষেধ, তাই চারদিকের চার দরজা দিয়ে লিঙ্গমুর্তির চতুর্মুখ দেখা গেলেও পঞ্চম মুখের দেখা মেলে না ভক্তদের। প্রতিমাসের একাদশীতে যাত্রী সমাগম হয় অন্য দিনের চেয়ে বেশী। আর শিবরাত্রিতে জমকালো উৎসব হয়। পবিত্র বাগমতির জলে পুণ্যস্নান সেরে পূজা দেয় ভক্তরা শিব/মহাদেবের উদ্দেশ্যে। ভক্তরা বিশ্বাস করে, পশুপতিনাথ দর্শনার্থীদের রুদ্রাক্ষের জপমালা কিনতে হয়, না হলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় দর্শন। নন্দী, ভৃঙ্গী, ভৈরব, বীরভব, গনেশ প্রভৃতি মহাদেবের পার্শ্বচরেরাও আছেন এ চত্বরে। এই মন্দিরে অদূরেই মহাশ্মশান।

অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ। তাই আমরা "দাহ করা" দেখেছি বাগমতি নদীর অপর তীর থেকে। নদীর উপরে ব্রীজ। মূল মন্দির আর শ্মশান নদীর এক পাড়ে। বাগমতি নদীটি এখন প্রায় খালের আকার ধারন করেছে। আমাদের সাথে অনেক দেশ বিদেশের পর্যটক ছিলেন।

একপাশে সারি সারি ছোট ছোট মন্দির। এখানে সম্ভ্রান্ত পরিবার/রাজ পরিবারের মৃতদের দাহ করা হয়েছে। সেখানে ছোট করে মন্দির তৈরি করা হয়েছে। এই মন্দিরগুলোকে চৈতা মন্দির বলা হয়। চিতার উপরের মন্দির, তাই এর নাম চৈতা মন্দির।

নদীর এপারে (মূল মন্দিরের বিপরীতে) আরো অনেক মন্দির আছে যা আমরা দেখলাম, ঢোকার অনুমতি আছে। তার মধ্যে রাম মন্দির উল্লেখযোগ্য। রাম মন্দিরের পাশে একজন ‘রামভক্ত হনুমান’ সেজে আছেন। ভক্তরা অনেকে তার কাছে আশীর্বাদ নিচ্ছে্ন, সাথে ছবিও তুলছেন। কিছু সাধুবাবা পুরোদস্তুর সাধু-সন্নাসী সেজে বসে আছেন। ছবি তোলার অনুমতি চাইলাম, সুন্দর পোজ দিলেন। ছবি তোলার পরে তাদের বকশিশও দিতে হলো।





মূল পশুপতিনাথ মন্দির


মন্দিরের সামনে অনেক চিতার বেদী


চৈতা মন্দির


সেতুর এপার থেকেই দেখেছি আর ছবি তুলেছি


এপারের রাম মন্দিরে রামভক্ত হনুমান


রাম মন্দিরের সাধু বাবা

কাঠমান্ডুকে আমরা পুরো তিনদিন ঘুরের ঘুরে দেখেছি। তবুও আমাদের অনেক দেখা বাকি।

*** লেখাটি
**ব্লগের দশম বর্ষপুর্তি এবং সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবস উপলক্ষে পোষ্ট করা হয়েছে।


ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১০
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×