somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতি কন্যা জাফলং

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বিছানাকান্দি আর পানতুমাই ঘুরে হোটেলে পৌছুতে রাত হয়ে এল। পরদিনের প্রোগ্রাম জাফলং দেখে শ্রীমঙ্গল চলে যাব। শ্রীমঙ্গলে আরো দু’দিন থাকব আমরা।

পরদিন জাফলং-এর উদ্দেশ্যে বেরোতে একটু দেরীই হয়ে গেল। সেই গোয়াইনঘাটের রাস্তা ধরে চলেছি আমরা, আমাদের পাশে পাশেই চলছে মেঘালয়ে সবুজ পাহাড়ের সারি। মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে শ্বেতশুভ্র ঝর্ণা। কোথাও সারা মাঠ জুড়ে সবুজ ধানক্ষেত-এর মাতামাতি, মন ভোলানো সবুজ চা বাগান, সবুজ পাহাড় আর শুভ্র ঝর্ণা দেখতে দেখতে, সবুজ মুগ্ধতা নিয়ে এক সময় চলে এলাম আমরা জাফলং!







সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলায়, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত জাফলং, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। এখানে ভারতের ডাউকি নদী আর বাংলাদেশের পিয়াইন নদীর মোহনা। প্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। একসময় পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছিল আকর্ষণীয়। এখন আসলে একটা ধূ ধূ প্রান্তর ছাড়া আর কিছু না । সেই পাথুরে সৌন্দর্য্য কবেই আমরা বিলুপ্ত করে ফেলেছি , পড়ে আছে কেবল বালি!এখনও নদীতে পর্যটকের নৌকার চেয়ে পাথর তোলার নৌকাই বেশী দেখা যায়। বিছানাকান্দিতে দেখে এলাম সেই পাথুরে সৌন্দর্য্য! জানিনা এ সৌন্দর্য্য কতদিন স্থায়ী হবে!











পিয়াইন নদীর ওপারে ভারতের ডাউকি শহর দেখা যাচ্ছে। পাহাড়, টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় নেমে আসা জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ঠ করে। এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। আমি অনেক ছবি তুললাম এখানকার। প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী- এসব নামেও পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত। ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে জাফলং-এর আকর্ষণই যেন অন্য রকম। সিলেট ভ্রমনে এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণ যেন অসপূর্ণই রয়ে যায়।



দূরের পাহারের উপরেই ডাউকি শহর।




মাঝে মাঝেই এমন পাহাড়ি ঝর্ণা।


পাহাড়ি রাস্তায় চলছে এমন বড় বড় যান বাহন।




ডাউকি ব্রীজ


নৌকার মাঝির কাছে শোনা, ডাউকি পাহাড়ে এই বড় পাথরের উপরে কোন একজনের মাজার আছে।


জাফলং পৌছে, সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ীর পাশে থেকে আমরা নৌকা ঠিক করলাম সংগ্রামপুঞ্জী/মায়াবী ঝর্ণা দেখতে যাব। নদীর কূল থেকে অনেকখানি ঢালু পথ পেরিয়ে আমরা নৌকায় উঠলাম। সেদিন বৃষ্টি ছিল না বলেই এতটা ঢালু পথ পেরিয়ে আসতে পেরেছি আমরা। আমাদের সাথে ছোট দু’টো বাচ্চা ছিল, ওদের নিয়ে কোনভাবেই এপথে আসা যেত না। নৌকার মাঝির কাছেই জানলাম ছোট-বড় ১৬টি ঝর্ণা নেমে এসেছে ওই খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে। কিন্তু জাফলং-এর এই অংশের পিয়াইন নদীতে পানি এত কম কেন ভেবে পেলাম না আমি। নদী পার হয়ে আরো দশ মিনিট বালুর মধ্যে হাঁটার পরে পেলাম সেই মায়াবী ঝর্ণা। ভারতের সীমানায় এই ঝর্ণা, টহল দিচ্ছে বিজিবি। প্রচুর পর্যটকের ভীড়। বড় বড় পাথর বেয়ে নেমে আসছে এই উচ্ছল ঝর্ণাধারা। পাথর বেয়েই উপরে উঠছে সবাই, লাফালাফি ঝাপাঝাপি করছে স্বচ্ছ পানিতে। বেশী উপরে গেলেই বেজে উঠছে বিজিবি-র বাঁশি। এমনিতেই এটা ভারতের সীমানায়, তারপরে এত উপরে ওঠাও ঠিক না। আমার সাথীরাও পাথুরে পাহাড় বেয়ে কিছুটা এগিয়ে যেয়ে ঝর্ণায় ভিজলেন সাধ মিটিয়ে। বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে, অনেক অনেক ছবি তুলে ফিরে এলাম আমরা।



সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ী


এখান থেকেই আমরা নৌকায় উঠলাম।


জাফলং-এ পিয়াইন নদী।


এখানে নৌকা থেকে নেমে, আরো দশ মিনিট হেঁটে আমরা পৌছুলাম সংগ্রামপুঞ্জী ঝর্ণার ধারে।














এমন ঝর্ণার ছবি তুলেই চলেছি, তুলেই চলেছি। :D


বর্ষায় জাফলং-এর রূপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠেছে। ক্ষণে ক্ষণেই ঝুপঝাপ বৃষ্টি, ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠেছে স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মত মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন সেই মেঘ অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি হয়ে, সে যেন এক ভিন্ন শিহরণ। সেই সংগে কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে নেমে আসা ছবির মত শুভ্র ঝর্ণাধারার দৃশ্য যে কারোরই চোখ জুড়ায়, মনে আনে প্রশান্তি!




নদীতে পর্যটকের নৌকার চেয়ে পাথরবাহী নৌকাই বেশী। জাফলং-এর অতীতের সেই পাথুরে নদী দেখবার সৌভাগ্য আমার হলো না!




ফেরার পথে আরো দেখলাম তারুণ্যের চঞ্চলতা!


ফিরে এলাম আবার সেই সীমান্ত ফাঁড়ীর ঘাটে।


ঘাটের পাড়েই দেখলাম একজন ফটোগ্রাফারকে, এই সিংহাসন আর একটা ক্যামেরাই তার জীবিকার হাতিয়ার। এই সিংহাসনে বসিয়ে ছবি তুলে দিচ্ছেন নিজের ক্যামেরায় অথবা চাইলে আপনার ক্যামেরায়।




ফাঁড়ীর পাশে অনেকগুলো দোকান। খাবারের সাথে সাথে টুকিটাকি অনেক কিছুই পাওয়া যায়। একজন পাথরে ছবি আঁকছেন, নাম লিখছেন। আপনি চাইলে, আপনার প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে কিনতে পারেন, স্মৃতি হিসেবে নিয়ে আসতে পারেন একটি ফলক, জাফলং ভ্রমণের।


ইতিহাস থেকে জানা যায়, হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীন নির্জন বনভূমি। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পরে খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে। তারপরও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পতিত পড়ে ছিল। ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌ পথে জাফলং আসতে শুরু করেন। পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকায় গড়ে উঠে নতুন জনবসতিও। আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং এর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এরপর থেকে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সিনেমায় দেখতাম জাফলং-এর পাথুরে নদীর ছবি! দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি প্রকৃতি প্রেমীরাও ভীড় করতে থাকেন জাফলংয়ে। জাফলং এখন দেশের সেরা পর্যটন স্পট। নাগরিক জঞ্জাল আর কোলাহল ছেড়ে দু’দণ্ড শান্তি খুঁজে নিতে তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও দলবেঁধে জাফলংয়ে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা।

বাংলাদেশ-এর প্রায় প্রতিটি স্থানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সৌন্দর্য্যের সমাহার। তেমনই এক নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর প্রকৃতি কন্যা জাফলং।

প্রথম পর্বে ছিলঃ ভরা বর্ষায় আমার সিলেট ভ্রমণ - বিছানাকান্দি, সিলেটের আরেক বিস্ময়!!!

দ্বিতীয় পর্বে ছিলঃ পানতুমাই একটি চোখ জুড়ানো গ্রাম!!!



ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪১
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×