somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাপ্তাই লেক-এ নৌভ্রমণ --------

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কাপ্তাই হ্রদ, নাম শুনেছেন অনেকেই কিন্তু দেখা হয়নি এখনও অথবা যাব যাব করে যেতে পারেন নি অনেকেই। আমাদের দেশটি যে সত্যি অনেক সুন্দর ঘরে বসে থেকে তা’ আপনি কোন দিন বুঝতে পারবেন না। একবার বেড়িয়ে দেখুন এখানে শুধু ফসলের ক্ষেতই নয় পাহাড় ঝর্ণাও আছে, আছে কৃত্রিম অনেক স্থাপনা। যা দেখে আপনার অজান্তেই মন থেকে বেরিয়ে আসবে “সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভুমি…।“ আজ আমরা দেখব কাপ্তাই লেক-এর সৌন্দর্য! এ লেক-এর স্বচ্ছ জলরাশি আর সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই কাছে টানে আর লেক-এ নৌ-ভ্রমণ, যে কারো মন-প্রাণ জুড়িয়ে দেয় প্রকৃতির আপন শোভায়। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ হাতে তার কতটা রূপ-সুধা ঢেলে দিয়েছে তা’ দূর থেকে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।

কাপ্তাই লেক বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ। কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হলে রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে যায় এবং এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। কৃত্রিম এ হ্রদের আয়তন ২৯২ বর্গমাইল। এ হ্রদের সাথে কর্ণফুলী, কাচালং আর মাইনী নদীর রয়েছে নিবিড় সংযোগ।

নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। কাপ্তাই লেককে ঘিরেই মূলত রাঙামাটি জেলার পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। এই লেকের উপর রয়েছে বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজটি। লেকের দুই ধারই পাহাড়-টিলা দিয়ে ঘেরা। ট্রলার ভাড়া করে লেকে ভ্রমণ করা যায়, যাওয়া যায় শুভলং জলপ্রপাতে। ছোট ছোট কিছু দ্বীপ ও কাপ্তাই লেক এ রয়েছে, যাদের আছে মজার মজার কিছু নাম, যেমন পেদা টিং টিং, টুক টুক ইকো, চাং পাং ইত্যাদি। পেদা টিং টিং দ্বীপে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, এখানে বসে পূর্ণিমা রাতের অসাধরণ রূপ উপভোগ করা যায়, টুক টুক এ আছে ইকো পার্ক। এছাড়া শুভলং পাহাড়ি ঝর্ণার মন মাতানো রুপের পরশ আর সাথে সবুজের অবারিত দ্বারতো উন্মুক্ত রইলোই। এদের সবগুলোই উঁচু টিলা। আর এখান থেকে দেখলে, লেক-এর সৌন্দর্য আরো মনোরম, চোখ ফেরানো যায় না।

৪৪ জনের এক দলের সাথে প্রোগ্রাম হলো আমাদের রাঙামাটি, কাপ্তাই বেড়ানো। রাঙামাটিতে শুধু লেকেই ঘোরা। প্রোগ্রামটি এমন ছিল, বৃহস্পতিবার সারারাত বাস জার্নি করে ভোরে পৌছে যাব রাঙামাটি। হোটেল ঠিক করা ছিল। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা সেরে, ট্রলারে সারাদিন ঘুরব কাপ্তাই লেক। রাতে রাঙামাটির হোটেলেই ফিরে আসব। পরদিন সকালে আবার ট্রলারে চলে যাব কাপ্তাই। সারাদিন কাপ্তাই ঘুরে, রাতের বাসে ফিরে আসব ঢাকায়।

চড়ে বসলাম বাসে, অবশ্যই সবাই এক বাসেই। জীবনে কখনও জার্নিতে আমি ঘুমাতে পারি না, সে নিজের গাড়ী, বাস, ট্রেন এমনকি প্লেনেও। তবে ঝিমাতে পারি! সারারাত কারো কারো গল্প, কারো কারো নাক ডাকা শুনতে শুনতে ঝিমাচ্ছিলাম। ভোর হওয়াটা খুব উপভোগ করেছি। রাঙামাটি পৌছুতে আমাদের সকাল হয়ে গেল। সারারাত না ঘুমিয়ে, বিচ্ছিরিভাবে মাথা ধরে গেছে আমার। হোটেলে পৌছেই লম্বা সময় নিয়ে গোসল করলাম। এর মধ্যে সবাই চলে গেছে নাশতা করতে আর ফোনে আমাকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। আমি যখন গেলাম নাশতার টেবিলে, সবারই প্রায় নাশতা করা শেষ। একে একে সবাই যার যার রুমে ফেরত ঘন্টাখানেক রেষ্ট টাইম।

লেকের পাড়েই আমাদের হোটেল, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঘাটে বাঁধা। রেষ্ট টাইম পার করে একে একে সবাই কাঠের সিড়ি বেয়ে নেমে নৌকায় উঠলাম। এখন আর একটা নয় দুই নৌকায় আমরা সবাই। চলতে শুরু করল নৌকা, ইঞ্জিনের শব্দে কথা জোরে জোরে বলতে হচ্ছিল, কিন্তু এই অবাক করা প্রকৃতি দেখে সারারতের ঘুমজাগা, মাথাব্যাথা আর কিচ্ছু রইল না। সেদিনের ট্যুর প্রোগ্রামে ছিলঃ প্রথমে ঝুলন্ত সেতু, ওখান থেকে শুভলং ঝর্ণা দেখা, দুপুরে লেকের দ্বীপ রেস্টুরেন্টে খেয়ে, রাজবনবিহার দেখে হোটেলে ফেরা, রাতে আড্ডা। পরদিন ভোরে নৌকায় কাপ্তাই যাওয়া।



হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়েই লেক-এর সৌন্দর্য দেখা যায়।


হোটেল থেকে বেরিয়ে এমন কাঠের সিড়ি বেয়ে নেমে এলাম--


ঘাটে অপেক্ষমান ইঞ্জিন বোট/ ট্রলার



চলতে শুরু করল দুই নৌকা, সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল ক্যামেরার ক্লিকবাজী!





চার দেয়ালের বন্দি মানুষ আমি! কী রেখে কী দেখি! লেক, উন্মুক্ত আকাশ না মেঘরাজি!



চলেছি আমরা--- চারপাশে সবুজ টিলা, দ্বীপ পেরিয়ে।





দূর থেকে ঝুলন্ত সেতু দেখা যাওয়ার সাথে সাথেই ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক। চলে এলাম সেতুর কাছাকাছি। সেতুটি মূলত দু'টো দ্বীপকে সংযুক্ত করেছে। একটি দ্বীপে নোঙর করে, সেতু পেরিয়ে আরেকটা দ্বীপে এলাম। এ দু'টো দ্বীপই পর্যটকদের জন্য সাজানো-গোছানো।


একটি দ্বীপ থেকে তোলা সেতুটি, কী অপূর্ব!!




ওখান থেকে তোলা আরো ছবি। ছবি তুলে আর মন ভরছেই না যেন!



এবার চলেছি শুভলং ঝর্ণা দেখতে


তখন বর্ষাকাল, এমন ছোট ছোট ঝর্ণা চলেছে সাথে!



পথে এমন পাথুরে কিন্তু সবুজ পাহাড়, গোল্ডেন বুদ্ধা পেরিয়ে এলাম।


আমাদের স্বাগত জানালো বরকল উপজেলা।

কিন্তু আমাদের বিরস বদনে ফিরতে হলো, নিরাপত্তার খাতিরে শুভলং ঝর্ণার কাছাকাছি যেয়ে আমরা ফিরে এলাম!
ফেরার পথে ছোট শুভলং ঝর্ণায় এলাম আমরা।





এই ঝর্ণার পানিতেই সবার লাফালাফি, ঝাপাঝাপি।


ঝর্ণার ঝাপাঝাপি শেষে চলে এলাম মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য চাং পাং দ্বীপে। পূর্ব পরিকল্পনা ছিল পেদা টিং টিং এ খাব আমরা। কিন্তু আমরা যে দুর্ভাগা! সেদিন কোন এক অজ্ঞাত কারণে পেদা টিং টিং বন্ধ। ঝাপাঝাপি পার্টি এখানে চেঞ্জ করার সুযোগ পেল। আমরাও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নিলাম। এখানে আরো কিছুক্ষণ যাত্রা বিরতি, যদিও আমাদের তাড়া ছিল। কিন্তু এখান থেকে লেক কে যেন আরেক রূপে আবিষ্কার করলাম। এর পরের স্পট রাজবন বিহার বৌদ্ধ মন্দির।



বাইরে থেকে যতটুকু দেখা গেল রাজবন বিহার। নিরাপত্তার কারণে এখানেও ঢুকতে পারলাম না আমরা।


শুনেছি এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধ্যান করেন।



রাজবনবিহারের আশে পাশে বানরের অভয়ারণ্য।





এ পথেই আবার আমরা ফিরে এলাম নৌকায়। গন্তব্য সোজা হোটেল। শেষ হলো একটি আনন্দঘন দিনের!!

*** প্রথম ছবিটা আমাদের গ্রুপের অভিজ্ঞ ক্যামেরাম্যানের তোলা।
*** কিছু তথ্য গুগল থেকে নেয়া।



ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৩৬
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×