somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে--------- ভুটান ভ্রমণ - (১)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পাহাড়ি দেশ নেপাল দেখেছি, দার্জিলিং দেখেছি, শুনেছি ভুটান আরো আরো সুন্দর। যাবো যাবো ভাবছি অনেকদিন থেকেই। সুযোগের অভাবে হয়ে ওঠে না। শীত আসি আসি করছে, তাই এখনই সময় ভূটান যাবার।
প্রতিদিন একটা এয়ারক্রাফটই আসে ভূটান থেকে, সেটাই ফিরে যায়। Drukair এ টিকেট কাটা হয়েছে, আমরা চার জন যাচ্ছি। সকাল ৮.৩০ এ ফ্লাইট। ছ’টায় বাসা থেকে বেরোবো। খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। নামাজ, গোসল সেরে রেডি হয়ে সময়মতই বেরোলাম। আমাদের সাথে দু’জন যাবেন উত্তরা থেকে। ওনারা আগেই পৌছে গেছেন এয়ারপোর্টে, ফোনে জানালেন এয়ারপোর্টে ঢোকার মুখে প্রচন্ড জ্যাম, এই সাত সকালে------- উফফ! দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আধা ঘন্টার রাস্তা এক ঘন্টায় পৌছুলাম। যাক, তবুও ফ্লাইট মিস হয়নি। সব ফর্মালিটি শেষ করে প্লেনে উঠে পড়লাম। ও হ্যা, ওঠার আগে সেল ফোনে দু’চারটা ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে দোয়া চাইলাম সবার কাছে।

ড্রুক এয়ারের ছোট একটা প্রোপেলার এয়ারক্রাফট প্রায় চল্লিশ জন যাত্রী নিয়ে ঠিক সময়েই উড়াল দিলো। প্লেন ছাড়ার দশ মিনিটের মধ্যেই নাশতার প্যাকেট চলে এলো। একটা স্যান্ডউইচ, একটা পেটিস, একটা জুস, এক প্যাকেট বাদাম সাথে এক কাপ চা। নাশতা সেরে ক্যামেরা খুলে ছবি তুলতে চাইলাম, দেখি জানালায় ভেতরের রিফ্লেকশন! অগত্যা জানালা দিয়েই দেখলাম ছোট বড় সাদা, কালো পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। বরফে ঢাকা হিমালয়ের প্রায় সবগুলো পর্বতশৃঙ্গই দৃশ্যমান! এবার নামার সময় হয়ে এলো। ছেলে বলেছিলো,” আম্মু প্লেন ল্যান্ড করার সময় খুব দোলে। দোয়া দরূদ যা জানো পড়তে থেকো!” ছেলে আমাকে যতটা ভীতু মনে করে, দেখলাম আমি অতটা ভীতু নই! নিচের দিকে নেমে প্লেন ডানে কাত হলে পাহাড় দেখছিলাম, বামে কাত হলে আকাশ দেখছিলাম! এভাবেই নেমে এলাম রানওয়েতে। এক ঘন্টা দশ মিনিটে পৌছে গেলাম ভুটান এয়ারপোর্টে।

ভুটানের একমাত্র এয়ারপোর্ট পারো শহরে। পুরো দেশটাই পাহাড়ি, তাই তাদের এয়ারপোর্টটাও আলাদা, বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক এয়ারপোর্টের একটি। তাই ফ্লাই করার আগে সবার দোয়া চেয়েছিলাম! এখানে অন্য দেশের প্লেন আসে না, ড্রুক এয়ার আর ভুটান এয়ারলাইন্স যায় বিভিন্ন দেশে! এয়ারপোর্টটা খুব ছোট, তবে বেশ ছিমছাম। on arrival visa নিয়ে খুব তাড়াতাড়িই আমরা বের হয়ে এলাম। আমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে অপেক্ষায় ছিল ‘উগান’ নামের ছেলেটি। সে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ওর বাবাও। ওর বাবা ‘কার্মা জিম্বা’ আমাদের সাথের দুই ইঞ্জিনিয়ারের সাথে (আমার হাসবেন্ড এবং তার কলিগ) আফগানিস্থানে জাতিসংঘের একটা রোড প্রজেক্টে চাকুরী করতেন। এখন দেশে ফিরে তিনি বিশাল ব্যবসায়ী। কনসাল্ট্যান্ট ফার্ম সহ আরো অনেক ব্যবসার সাথে হোটেলের ব্যবসাও (ট্রাভেল এজেন্সি) আছে ওনার। আমরা ওনার হোটেলেই উঠব।


--------------প্রথম ভুটানের মাটিতে নেমে এলাম।






---------চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট এয়ারপোর্টটি।


--------------------এয়ারপোর্টে রাজপরিবারের ছবি।
পারো থেকে সরাসরি থিম্পুর দিকে চললাম আমরা। চারিদিকের সৌন্দর্য্য কোনটা রেখে কোনটা দেখি! আকাশ যেমন নীল, পাহাড় তেমনই সবুজ। গাঢ় নীল আকাশে মেঘগুলো যেন তুষারের চেয়েও শুভ্র। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চলেছি আমরা, রাস্তাটিও চমৎকার! পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে পাথুরে নদী, পারো নদী নামেই পরিচিত। সে নদীর পাশে থেমে নদীতে নামলাম। উগানের নিষেধ মেনে আর বেশী এগিয়ে যাইনি। ও বলছিলো ভেজা পাথরগুলো খুব পিচ্ছিল। তাই শুধু পা ভিজিয়েই ফিরে এলাম।



------------রাস্তা থেকে নেমে এলাম নদীর পাড়ে।





পথে আরো এক জায়গায় বিরতি দিলাম। নদীটির উপরে একটি ঝুলন্ত সেতু আছে। দেখতে নামলাম সবাই। রাস্তা থেকে অনেকটাই নামতে হলো পাহাড়ি পথ ধরে। সেতুর নীচে নদীটায় বেশ স্রোত, অনেক শব্দ করে বয়ে চলেছে। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে নদীকে দেখতে যেন কষ্টই হচ্ছিল। চারিদিকে শুধু প্রেয়ার ফ্লাগ বাঁধা। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে, মৃত আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এসব ফ্লাগ লাগানো!! ওপাড়ে ছোটবড় দু’টো মন্দির দেখে ফিরে চললাম আমরা থিম্পুর পথে। পৌছে গেলাম দুপুরের খাবারের আগেই। সেদিন আর কোন দূরের প্রোগ্রাম নয়, শহরটাই একটু ঘুরে দেখব!! -------




------------ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে, মৃত আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এসব ফ্লাগ লাগানো!


----------------------------------নদীর ওপাড়ের মন্দির।


-----------------------------------চলে এলাম থিম্পুতে!

ভুটানে তোলা কিছু ছবি নিয়ে ছবিব্লগঃ পাইন বনের দেশে ---------------!!


ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৯
৩০টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×