somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ফলিং ওয়াটার" স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম সৃষ্টি।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিয়ার রান উপত্যাকার ছোট ছিমছাম এক পাহাড়ী ঝর্ণা কলকল শব্দে আপনমনে বয়ে চলছে। চারপাশে ঘন সবুজ বনের আধিক্য। নিশ্চিন্তে বন্য প্রানীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাছপালা চারদিক ঘিরে রেখেছে। পাতা আর ডালের আড়াল কেটে চোখে পড়ে বিশাল এক খোলা বারান্দা।
খোলা বারান্দায় দাড়ালেই চোখে পড়বে পানির ধারা আর কানে আসবে পড়ন্ত পানির সুরেলা ধ্বনি। ঝর্নার উৎস খুজতে গেল চমকে উঠবে যে কেউই কারন এ যে একদম বারান্দার নিচ দিয়েই বয়ে চলছে। পায়ের কাছে জমা হয়ে আছে বিভিন্ন বর্নের নুড়ি পাথর। সবমিলিয়ে পাহাড় কেটে তৈরী করা একটি বাড়ি বলেই ধরে নেবেন যে কেউ। প্রকৃতিকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে স্থপতি যেন একদম প্রকৃতির মাঝেই বিলীন হয়ে গিয়েছেন। চোখের দেখায় যা মনে আসবে বাড়িটির নাম আসলে তাইই ‘ফলিং ওয়াটার’।


(বসন্তে ফলিং ওয়াটার)

এটি স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের একটি অমর সৃস্টি যা তাকে বিশ্বব্যাপী মাস্টার আর্কিটেক্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দক্ষিন পশ্চিম পেনিসেলভেনিয়ার একটি গ্রামীন এলাকায় ১৯৩৫ সালে স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের ডিজাইন এবং তত্বাবধানে নির্মিত হয় এই ছোট্ট পাহাড়ী কুটির। বাড়িটি স্থপতির দেয়া নাম “ফলিং ওয়াটার” হিসেবে পরিচিত হলেও বাড়ির সৌখীন মালিক ব্যবসায়ী কফম্যানের নামে এর নামে এটি “কফম্যান হাউজ” হিসেবেও পরিচিত।


(শীতকালে ফলিং ওয়াটার)

স্থপতি রাইট বিশ্বাস করতেন, মানুষ প্রকৃতির স্রস্টা না হলেও প্রকৃতিকে পূনর্জন্ম দেয়ার ক্ষমতা তার আছে। এজন্য তার প্রাথমিক আইডিয়া ছিলে, “তিনি প্রকৃতিকে কোন বিরক্ত করবেন না বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আরো কাছে নিয়ে আসবেন। প্রকৃতি চিরন্তন কিন্তু মানুষ স্বল্পস্থায়ী, একসময় হারিয়ে যাবে। সুতরাং মানুষের জন্য তৈরী স্থাপনাও হবে তেমনই।“


(বাড়ির অভ্যন্তরের দৃশ্য, লিভিং রুম)

যদিও বাড়িটি চতুর্দিকে খোলা তবে উচ্চতা কম হবার কারনে বাড়িটিতে ঢুকলে এটিকে এক ধরনের গুহার মত মনে হয়। বাড়ির মুল অংশটি মি কফম্যানের ব্যক্তিগত বাসভবন হিসেবে।এছাড়া নিজেদের প্রয়োজনীয় বেডরুম, ফ্যামিলি লিভিং, ডাইনিং স্টাডি রুম ইত্যাদির পাশাপাশি অতিথিদের জন্য একটি গেস্ট জোন তৈরী করা হয়। যার অবস্থান বাড়িতে প্রবেশের সামনের দিকে। বিশাল ড্রয়িং রুমের পুরোটাই ঝুলন্ত।

মুলত ভ্যাকেশন হাউজ হিসেবে বাড়িটির জন্ম।মিঃ কফম্যান চাইতেন তার বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজন নিয়ে প্রান্বন্ত অবসর কাটাতে। সুতরাং তার বড়সড় লিভিংরুম দরকার ছিলো। তাই লিভিংরুম থেকে একটি ঝুলন্ত সিরি নিচের ঝর্ণার দিকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। শীতের সময় যেখানে পানি জমে বরফের লেয়ার তৈরী হয়ে একটি ভিন্ন অনুভুতির তৈরী হয়(৩নং ছবি)।


(লিভিং রুম থেকে সরাসরি ঝর্ণার পানিতে নেমে আসা ঝুলন্ত সিঁড়ি)

শীত শেষে বসন্ত আসা মাত্রই উল্টো চিত্র(২নং ছবি)। ঝুলন্ত বারান্দা, নিচে নেমে আসা সিড়ি, ঝির ঝির পানি আর চারপাশে হাসতে থাকা রং বেরংয়ের ফুলের মিতালী দশর্নার্থীদের জন্য প্রাকৃতিক অভ্যর্থনা দিয়ে স্বাগত জানাতে থাকে। মুল বাড়ির উল্টোদিকে পাহাড়ের ঢালে কারপার্কিং এবং সারভেন্ট কোয়ার্টার। কফম্যান হাউজের অন্তর্গত বিন্যাস মোটামোটি এমনই।


(উপর থেকে সোজাসুজিভাবে ফলিং ওয়াটারের দৃশ্য)

১৯৩৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে ফলিং ওয়াটার এবং ফ্রান্ক লয়েড রাইটকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর দর্শনার্থীর ঢল নামে এখানে। টাইম ম্যাগাজিন এটিকে অভিহিত করে স্থপতি রাইটের শ্রেস্ট সৃস্টি হিসেবে।
১৯৩৭ সালে কাজ সম্পন্ন হবার পর থেকে ১৯৬৩ সাল পযর্ন্ত কফম্যান পরিবারের নিজস্ব আবাস হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
১৯৬৩ সালে কফম্যান জুনিয়র এটিকে দিয়ে দেন ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়া কনজারভেন্সী নামক রাস্ট্রীয় সংস্থার হাতে। ততদিনে এটি খ্যাতি অজর্ন করেছে।
১৯৬৬ সালে এটি জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেব গৃহিত হয়।
১৯৯১ সালে আমেরিকান স্থপতি ইন্সটিটিউট এটিকে সবর্কালের সবর্শ্রেস্ট আমেরিকান স্থাপত্য হিসেবে ঘোষনা করে।
প্রয়োজনীয় পরিবধর্ন এবং সংস্কার শেষে পরের বছরই এটিকে উম্মুক্ত করে দেয়া হয় মিউজিয়াম হিসেবে।

[তথ্যসুত্রঃ খালিদ মাহমুদ নামের একজনের আর্কিটেক্টের লিখা থেকে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং পরিমার্জিত করে লিখা।
এবং ছবি গুলো গুগলের স্থাপত্য বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো থেকে সংগ্রহ করা। ]

আর, লিখাটি পূর্বে শুধুমাত্র ফেসবুকের পাঠশালা গ্রুপে প্রকাশ করা হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×