প্রথমবার যখন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেই তখন বয়সটা আনুমানিক ঊনিশ-কুড়ি হবে। মনে আছে ভোটের আগের রাতে এই উত্তেজনায় ঠিকমত ঘুমাতে পারি নাই। এক্কেবারে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ভোটকেন্দ্রে হাজির হই, যদিও তখন পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শুরু হয়নি। ভোট গ্রহণ যথাসময়ে শুরু হলো কিন্তু লক্ষ্য করলাম নিজের ভেতর থেকে তাড়াহুড়ো করে ভোট দেওয়ার ইচ্ছে নেই বা ইচ্ছা হচ্ছে না। কেন যেন মনে হতে লাগলো ভোট দিলেই তো সব আবেগ-উচ্ছ্বাস শেষ হয়ে যাবে। প্রায় তিন ঘন্টার পর ভোট দিলাম। এটা ছিল এক ভাল লাগার অনুভূতি যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তখন পর্যন্ত শুধুমাত্র পার্লামেন্ট ইলেকশনে ভোট দেওয়াকে আমি 'গণতন্ত্র' মনে করতাম। তবে এখন জানি ভোট হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা পালাবদলের প্রাথমিক ধাপ মাত্র। আর এই ধাপ থেকেই শুরু হয় নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া, তথা গণতন্ত্রের যাত্রা।
এই ঊনিশ-কুড়ি বয়সে একটি ছেলে বা মেয়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার হাতে খড়ি হয়। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সাথে সাথে নিজেও আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে যত বয়স বাড়ে ততো তার শেখার ও বোঝার পরিধিও বাড়ে। একটা সময় আসবে যখন নিজে থেকেই অনুধাবন করবে সক্রিয়ভাবে সে রাজনীতি করবে কী না। এটা নির্ভর করে দেশের রাজনীতি নিয়ে তার আগ্রহের উপর। এজন্য সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক দলের অংশীদার হতে হলে কী প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হবে, কি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে তা অনুধাবন করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রচলিত গণতান্ত্রীক মডেলগুলো নিয়ে গবেষণা করবে, নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে। বিখ্যাত মণিষীদের জীবনী পড়বে।
একজন সংসদ সদস্যের দায়িত্ব, কর্তব্য ও ক্ষমতার ব্যপ্তি কতটুকু হবে তা নিয়ে পড়াশুনা করবে। আর এভাবেই গড়ে উঠবে টগবগে তরুণ এক নেতা ও নেতৃত্ব। আমরা পাব গণতান্ত্রীক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক দক্ষ কান্ডারী। গণতান্ত্রীক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদান করা প্রাথমিক ধাপ হলেও নেতৃত্বগুণ অর্জন করা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
আমাদের দেশে ছাত্ররা কী এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বগুণ অর্জন করে? একজন নেতা হতে হলে কী রাজনৈতিক কর্মী থাকা আবশ্যক? আমরা দেখতে পাই সেকন্ডারী স্কুল থেকে অনেক ছেলে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী হয়। কলেজে উঠার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হয়। এই তরুণ নেতার পেছনে থাকে অনেক কর্মী, থাকে বড় রাজনৈতিক নেতা ও গুরু। তবে সেকেন্ডারি স্কুলের গন্ডি না পেরোলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে তার বেগ পেতে হয় না। ছেলেটি বয়স আঠারোর কোঠা পার হওয়ার পূর্বেই নেতা হয়ে যায় কিছুই না বুঝেই। অথচ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রের শিক্ষা শুরু হওয়ার কথাই ছিল এই বয়সে।
একটি ছেলে এতো অল্প বয়সে পড়াশুনা বাদ দিয়ে বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, অথচ নেতা হওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা সেটির ধারে কাছেও যায় না সে। তার জুনিয়র ১০-১৫ টি ছেলে যখন তাকে বড় ভাই মানবে, সে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিলে নেতৃত্ব দেবে, অন্য দলকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করবে, ইট পাটকেল ছুড়বে তখন নিজেকে অনেক বড় নেতা মনে হবে তার। ফলে সে কাউকে হুমকি ধামকি দিতে ভয় করবে না। ভাবখানা এমন; নেতা বলে কথা! কিসের ভয় আবার? বেশি সমস্যা দেখা দিলে লিডার তো আছেনই।
ধীরে ধীরে রাজনীতি নামক মরণ নেশায় হাত পাকে ছেলেটির। এইচএসসি পরীক্ষার পর যারা পাশ করতে পারে না, তারা পুরোদমে নিজ এলাকায় ছাত্র রাজনীতি শুরু করে। ওয়ার্ড/ইউনিয়ন কমিটিতে সক্রিয় হয়, কেউ কেউ আবার উপজেলা কমিটিতেও স্থান করে নেয়। আর যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় তারা পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে পদায়য়িত হয়। নতুন কর্মীর পাশাপাশি নিজেও বড় নেতার সান্নিধ্য পায়। সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও খুন খারাবিতে হাত পাকিয়ে বড় নেতার বিশ্বস্ত ডান হাত হয়।
শহরের নামকরা রাজনৈতিক গ্রুপে নাম লেখিয়ে লিডারের স্নেহধন্য হয়ে পার্টির নির্দেশমত কাজ করে। মিছিল মিটিংয়ে নেতৃত্ব দেয়। নেতার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার চেয়ে তার নেতা ও দলের চাওয়া পাওয়াটা তার কাছে অধিক গুরুত্ব বহন করে। এত এত ব্যস্ত শিডিউলের মাঝে আসল কাজটি অর্থাৎ পড়াশুনার জন্য প্রয়োজনীয় সময়টা বের করা হয়ে উঠে না ছেলেটির। তবে এজন্য তাকে দোষ দেওয়াটাও ঠিক হবে না। রাজনীতি নিয়ে সীমাহীন ব্যস্ততার মাঝে পড়াশুনার মত কঠিন জিনিসের বাড়তি লোড নেওয়া অনেক সময় নতুন এ নেতার পক্ষে সম্ভব হয় না!
রাজনৈতিক পারফর্মেন্স ভাল হলে ছাত্র নেতাটি তর তর করে উপরে উঠে। বড় নেতাদের সুনজরে পড়ে সে। একসময় নিজেও একটি মিনি গ্রুপ তৈরী করে, যা পরবর্তী সময়ে বড় গ্রুপে রূপান্তর হয়। ছেলেটি সার্ট প্যান্ট ছেড়ে দামী পাঞ্জাবী পায়জামা পরা শুরু করে। টেন্ডারবাজিতে হাত পাকায়। জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পায়। এলাকার এমপি/মন্ত্রির স্নেহ ধন্য হয়। তাদের যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সফর সঙ্গী হয়। এমপি/মন্ত্রির নাম ভাঙ্গিয়ে ধান্দা শুরু করে। বিভিন্ন সরকারী নিয়োগে বড় অংকের টাকার কমিশন খায়। ধীরে ধীরে এলাকায় জনপ্রিয় নেতার তকমা পায়। পাশাপাশি নামে বেনামে অনেক সম্পদ হয়, ব্যাংক ব্যালেন্স হয়। নিজে চেয়ারম্যান/এমপি/মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে।
যে বয়সে পড়াশুনা করে জ্ঞান অর্জন করার কথা, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলো সম্বন্ধে জানার কথা, সরকার ও প্রশাসনের কাঠামো নিয়ে পড়াশুনা করার কথা সে বয়সে অপরাজনীতিতে ছাত্র নামধারী নেতাটি হাত পাকায়। নেতৃত্বগুণ অর্জন করার আগেই নেতা হয়ে উঠে। ফলে দেশকে সঠিক পথে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয় না তার। তবুও একটা সময় আসে যখন তার দল ত্যাগী এ নেতাকে মূল্যায়ন করে এমপি/মন্ত্রী বানায়, পরিণামে দেশ পায় আন্তঃসার শুণ্য একজন নেতা। যার না আছে মেধা, না আছে দেশ পরিচালনার যোগ্যতা, না আছে দেশকে নিয়ে নতুন কোন পরিকল্পনা।
দেশে তৈরী হয় মেধাশুণ্য নেতৃত্ব, যেটি এক বা একাধিক সিন্ডিকেট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ যারা দীর্ঘ দিন কঠোর পরিশ্রম করে ভালভাবে পড়াশুনার মাধ্যমে নেতৃত্বগুণ অর্জন করলো, ইচ্ছা থাকলেও তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশীদার হওয়ার কোন সুযোগ পায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও এদের কোন গুরুত্ব নেই। ক্লাস এইট থেকে যারা সরাসরি নেতার তকমা পেয়ে গেছে তারাই দলগুলোর মহামূল্যবান রত্ন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এদের অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্ব বহন করে।
আমাদের দেশে রাজনীতিতে কালো টাকার একটি বিশাল প্রভাব আছে। হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর এ প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। বড় নেতারা এসব কালো টাকার একটি বড় অংশ নিজেদের আখের গোছানোর জন্য, এমপি/মন্ত্রি হওয়ার জন্য ছাত্র নেতাদের পেছনে খরছ করেন। বিভিন্ন গ্রুপ লিডারকে ডোনেশন দেন যাতে প্রয়োজনের সময় তার সাপোর্ট পাওয়া যায়। যে ছাত্র নেতার পেছনে যত বেশি কর্মী থাকে রাজনীতির ময়দানে তার ফায়দা ততো বেশি হয়। শুনা যায় অনেক সিনিয়র নেতা নিজ এলাকায় পছন্দের ছাত্র নেতাকে পদায়ন করতে প্রয়োজনে লাখ লাখ টাকা খরছ করেন। মোটর সাইকেল/কার কিনে গিফট করেন। টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেন। মামলা-হামলা থেকে রক্ষা করেন।
ইদানিং দেখা যায় কোন ছাত্র নেতার বাড়িতে পুলিশ হানা দিলেও তা ফলাও করে প্রচার করেন তারা। এতে দলের কাছে কদর বাড়ে। অনেকে আছেন মিছিল/পিকেটিংয়ের ফটোসেশন করে সোসাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেন পাবলিসিটির আশায়। কেউ কেই পকেটের টাকা খরছ করে অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদপত্রেও নিজেদের বীরত্বের খবর প্রচার করেন। রাজনীতিতে কালো টাকার আধিক্যের ফলে সরকারদলীয় ছাত্র নেতারা রাতারাতি বড় নেতা হতে চান। আর বিরোধী ছাত্র নেতারা রাগে, দুঃখে নিজের চুল ছিড়েন আর স্বপ্ন দেখেন শীঘ্রই নিজের দলের বিজয় ও ক্ষমতার পুনর্বহাল।
আমাদের ছাত্র সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন --
(১) গ্রামের/পাড়ার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটি কী রাজনীতিতে সক্রিয়?
(২) নিরিবিলি, ভদ্র ও এলাকায় ভাল ছেলে হিসাবে পরিচিত ছেলেটি কী সক্রিয় রাজনীতি করে?
(৩) রাজনীতি নিয়ে এসব ছেলেদের মূল্যায়ন কী পজেটিভ?
(৪) রাজনীতি করলে বাবা-মায়েরা কী ছেলে-মেয়েদের উপর সন্তুষ্ট হন?
(৫) কোন বাবা-মা কী চান তার ছেলে বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হোক?
(৬) রাজনীতিকে সমাজের সাধারণ মানুষ ভাল চোখে দেখে?
(৭) রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কমিটিতে যারা স্থান পায় তাদেরকে কি সমাজের মানুষ ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র হিসাবে মনে করে?
(৮) বড় রাজনৈতিক নেতাদেরকে কী মানুষ সত্যি সত্যি মন থেকে সম্মান করে?
(৯) রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, পিকেটিং ও টেন্ডারবাজিকে মানুষ পছন্দ করে?
(১০) অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা/নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করা, অপমান করা কী ভাল কাজ?
সবকয়টি প্রশ্নের উত্তর যদি 'না' হয় তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন ছাত্র রাজনীতি করবেন কী না? আর উত্তরে 'হ্যা' হলে রাজনীতি আপনার জন্য। এখন ডিসিশন আপনি নেবেন। ভালমন্দ যাচাই করার ভারও আপনার উপর।
আমাদের দেশের তরুণরা পাওয়ার পলিটিক্সের স্বীকার। অনেক সময় নিজের অজান্তে, মিথ্যা আবেগের বশবর্তী হয়ে পলিটিক্সে জড়িয়ে পড়ে। পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাজনীতিকে ধ্যান-জ্ঞান মনে করে। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের উচিৎ ছিল এসব তরুনদের আগলে রাখা, রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে রাখা। ভবিষ্যতে কিভাবে দেশকে দক্ষ হাতে নেতৃত্ব দেওয়া যায় তা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া। একজন ছাত্রের নেতৃত্বগুণ অর্জন করার জন্য পড়াশুনার কোন বিকল্প নেই এই ধারণা তাদের মনে গেঁথে দেওয়া। কিন্তু আমরা কী এমন নেতা দেখতে পাই?
আসলে বড় নেতাদেরই বা দোষ দিয়ে লাভ কী? তারাও তো একই প্রক্রিয়ায় নেতা হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বগুণ অর্জনের তালিম দেওয়ার জন্য যে গুণাবলী নেতাদের মধ্যে থাকার কথা তা অধিকাংশ নেতার মধ্যেই অনুপস্থিত।
ছাত্ররা রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বেকারত্ব। বিশেষ করে একটি ছেলের বয়স যখন সতের-আঠারো বছর হয় তখন তার চলাফেরা করার ক্ষেত্রটি আগের চেয়ে বড় হয়, নিজস্ব একটি জগৎ গড়ে উঠে তার। শারিরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। বন্ধু-বান্ধবের সাথে মেলামেশা করার অবারিত সুযোগ পায়। ধীরে ধীরে পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে ছেলেটি। চোখে নতুন স্বপ্ন, নতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। এ সময় তার পকেট মানি আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পরিবারও তাকে পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারে না। একরাশ হতাশা ছেলেটিকে ঘিরে রাখে। এসময় অনেক ছেলে পলিটিক্সে নাম লেখায়, নেতার শুভদৃষ্টি পাওয়ার চেষ্টা করে। অনেকে আবার মাদক চোরাচালানীতে জড়িয়ে পড়ে, কেউ কেউ নিজেও ইয়াবা/ফেন্সিডিলে আসক্ত হয়।
উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি ষোল বছর বয়স হলেই ছেলে-মেয়েরা পার্ট টাইম কাজ করে। আবার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন হলিডে থাকে তখন ফুলটাইম কাজের সুযোগ পায়। পকেট মানির জন্য তাদেরকে বাবা-মায়ের উপর নির্ভর করতে হয় না। প্রয়োজনে বাবা-মাকেও সহযোগিতা করে তারা। সরকারও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলো এমনভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনায় গড়ে তুলেছে যাতে তরুণ সমাজ কাজের সুন্দর পরিবেশ পায়, দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পায়। ফলে তাদের শিক্ষা অর্জনটি হয় আনন্দময়। সরকার তরুণদের মানসিকভাবে চাঙা রাখতে অনেক সুযোগ-সুবিধাও গড়ে তুলেছে। এসব দেশগুলোর তরুণরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না, রাষ্ট্রকে নিয়েও তাদের হতাশা নেই।
সময় পেলে তরুণ ও যুবকরা পছন্দমতো খেলাধুলা করে, স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখে। বিভিন্ন বিনোদনমূলক ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করে। হলিডেতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ায়। সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের ইচ্ছার উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয় না। সে নিজেই বেছে নেয় কী করতে চায়? কিভাবে জীবন পরিচালনা করবে? এসব তরুণ ও যুবকরা কখনো রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজে জড়ায় না। এজন্য রাষ্ট্র ও তাদের ইচ্ছাকে, ভাললাগাকে মূল্যায়ন করে।
একটি দেশের তরুণ সমাজের উপর দেশের ভবিষ্যৎ উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে। তরুণরাই পারে নতুন নতুন আইডিয়া ও পরিকল্পনা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তরুণরা স্বপ্নবাজ, তরুণরা নির্ভীক, তরুণরা পরিবর্তনের হাতিয়ার, তরুণরা সুন্দরের প্রতীক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের তরুণরা আজ দিশেহারা। তাদের নেই কোন স্বপ্ন, নেই কোন কান্ডারী, নেই কোন পরামর্শক। এমনিতেই ধর্মের বেড়াজালে আমাদের সমাজটা বিভক্ত। তার উপর তরুণ প্রজন্ম এখন রাজনৈতিক দু'টি ধরায় ভাগ হয়ে গেছে। তারা এখন মানুষকে মূল্যায়ন করে দল ও আদর্শের ভিত্তিতে। সহজেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তারা অন্যকে অপমান করে। নেই পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ।
আছে সীমাহীন বেকারত্ব, হতাশা আর রাজনৈতিক হামলা-মামলা, পারিবারিক অসচ্ছলতা, নিজের ও পরিবারের জন্য ভাল কিছু করতে না পারার বেদনা। জানি না এ অসুস্থ ধারা থেকে তরুণ ও যুবক সমাজ কবে বেরিয়ে আসবে। যত দ্রুত তরুণরা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের মেধা ও শ্রম ঢেলে দিতে পারবে দেশের মঙ্গল ততো ত্বরান্বিত হবে। সরকারকে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। পৃথিবীব্যাপী এই তরুণরাই দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে, এরা দেশের হৃৎপিন্ড।।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৪৪