somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

তৃতীয় বিশ্ব

০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা ডায়েরি লেখার খুব শখ ছিল মায়িশার। জন্মদিনে ছোট মামার দেওয়া ডায়েরির সাইজটাও ছিল তার মতো পিচ্ছি। তবে মলাটটি ছিল খুব সুন্দর নীল ও সবুজে ঘেরা। ডায়েরিতে লেখা অনুভূতিগুলো ছিল ছোট ছোট অভিমান মিশ্রিত। অনুভূতিগুলো ছিল এমন; "আজ স্কুলে যেতে একদম ইচ্ছে ছিলো না, তবুও আম্মু জোর করে ঘুম থেকে তুলেছেন।" দুধ না খেতে চাইলে মায়িশা লিখতো, "মা আচ্ছা করে বকা দিয়ে ভয় দেখিয়ে পুরো একগ্লাস দুধ খাওয়ালো আজ, আমি দুধের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারি না।" না খেতে চাইলে মা জোর খাটাতেন, আব্বুর কাছে নালিশ করতেন।

মায়ের এমন বাড়াবাড়ি মায়িশার একদম পছন্দ ছিল না। ডায়েরিতে অভিমান করে লেখতো- "মা একটা দুষ্টু মহিলা, খু-উ-ব পঁচা। শুধু শুধু জোর করে খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়, গোসল করায়, কথা না শুনলে চোখ রাঙায়; সারাদিন কার্টুন দেখতে দেয় না, শুধু শুধু বকা দেয়। বাবা তো এমন করে না; বাবা গল্প শোনায়, দোকান থেকে চকলেট কিনে দেয়, বার্গার খাওয়ায়, চিপস কিনে দেয়। আর ছুটির দিনে বেড়াতে নিয়ে যায়। কত্তো ভাল একটা বাবা আমার।"

একদিন বাবাকে নিয়ে লিখলো, "আব্বু, আম্মু কেন তোমার মতো হয় না? বড় হয়ে তোমার জন্য একটা ভালো আম্মু এনে দেবো। তোমাকে অনেক চকলেট কিনে দেবো। নতুন জামা কিনে দেবো। পার্কে নিয়ে ঘোড়ায় চড়াবো। বিরিয়ানি খাওয়াবো। ঈদ আসলে নতুন পাঞ্জাবি কিনে দেব। আর মা তোমাকে বকা দিলে আচ্ছা করে শাসন করবো। আই লাভ ইউ, আব্বু।"

স্কুল নিয়ে লিখলো, "স্কুলটা যদি তুফানে উড়ে যেত তাহলে কত মজাই না হতো, হা-হা- আর স্কুলে যেতে হতো না।" স্কুল থেকে ফিরে আরেকদিন লিখলো, "মহুয়া মিস একটা পঁচা; শুধু শুধু হোমওয়ার্ক দেয় আর পড়া না পারলে চোখ রাঙায়। পপি মিস কত্তো ভালো; চকলেট দেয়, গল্প করে, হাসি মুখে কথা বলে; একদম চোখে রাঙায় না। মাম্মী যদি ঐ মিস-টার মত ভাল হতো!"

************************************************************************************
যতদূর চোখ যায় শুধু ঢেউ আর ঢেউ। বর্ষার এই সময়ে ইলিশ মারার ধুম পড়লেও আজ নৌকা কম।


বিলাসবহুল প্রমোদতরীটি যখন ডাঙায় ভিড়লো তখন সূর্য ডুবুডুবু। লোকালয় থেকে একটু দূরে ছোট্ট একটি দ্বীপে একজন সেলিব্রিটির জন্মদিনের পার্টি ছিলো দিনব্যাপী। ঝিরঝির বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া আর রোদ-মেঘের লুকোচুরি ছিল সারাদিন। ঘাট থেকে উপরে উঠার সরু পাথর বিছানো রাস্তাটি ততক্ষণে কাদায় লেপটে আছে। দুপুর থেকে প্রায় শ'খানেক সাংবাদিক, টিভি ক্যামেরা আর দূর দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ এসে জড়ো হয়েছে প্রমোদতরী সচক্ষে দেখতে সাথে সেলিব্রিটি পরিবার।

তরীটি ডাঙায় ভিড়লো। সুঠাম দেহের সাতজন কালো কোট পরা সিকিউরিটির সাথে 'তৃতীয়' পরিবার তিন সদস্য। সামনে মা-মেয়ে আর পেছনে তিনি; যার জন্য আম জনতার এই দিনভর অপেক্ষা। অধীর আগ্রহে ডাঙায় অপেক্ষা করতে থাকা উৎসক চোখগুলো ততক্ষণে প্রমোদতরীকে ডিঙিয়ে মা-মেয়ের হাইহিল, সাদা হট প্যান্ট, ফর্সা উম্মুক্ত উরু, প্রায় উম্মুক্ত উন্নত বক্ষ এবং টাইট আউটফিটে আবদ্ধ। পেছনে, ক্লান্ত বদনে পা টেনে টেনে স্যুট-টাই পরে বার্থডে জেন্টেলম্যান হাঁটছেন।

সাংবাদিকরা পনেরো বছরের জাইকার ছবি তুলছে নানান ভঙ্গিতে, এঙ্গেলে আর ক্লোজ একশনে। একটি টিভি লাইভ করছে, বেশ ক'টি ফেইসবুক থেকে লাইভ চলছে। যাদের ক্যামেরা-মোবাইল নেই তারা যতটুকু সম্ভব চোখের লেন্স ছোট্ট করে ক্যামেরা করছে আর মস্তিষ্কের ম্যামোরিতে তা জমা করছে।

"জাইকা ম্যাডাম একটা সর্ট প্লীজ, একটা সেলফি প্লীজ, স্মাইল প্লীজ।"

কাদায় লেপটে যাওয়া হাই-হিলকে সামনে রেখে একটু দূরে রেঞ্জ রোভার
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ রাত ২:৪১
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×