somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ মহাত্তা গান্ধীর জন্মদিন এবং বিশ্ব অহিংস দিবস।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার ধর্ম কোন ভোগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ নেই। আমার ধর্মের ভিত্তি হল ভালবাসা এবং অহিংসা।


আজ মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন।ভারতজুড়ে এ দিনটি গান্ধী জয়ন্তী এবং বিশ্বে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস বা International Day of Non-Violence হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ব থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি, সহিষ্ণুতা ও রক্তপাত বন্ধে বিশ্ববাসীর চেতনাকে জাগিয়ে তোলাই আন্তর্জাতিক অহিংস দিবসের মূল বাণী। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এ উপলক্ষে বিশেষ শান্তির বাণী দিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সম্প্রীতি মিছিল, শান্তি সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ আন্তর্জাতিক শান্তি ও অহিংস দিবস পালিত হচ্ছে।


মহাত্মা গান্ধী বিশ্ব মানবতার কাছে এক অবিস্মরণীয় নাম এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ‘মহাত্মা’ আর ভারতবাসী ‘বাপু’ (বাবা) নামে ডাকতেন। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের ওপর এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি, সারাবিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।



মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ সালে পোরবন্দরের হিন্দু মোধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান (প্রধান মন্ত্রী)। মা পুতলিবা করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। পুতলিবা প্রনামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর ছিলেন।
১৮৮৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে (কাস্তুবাই নামেও পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র সন্তান জন্মায় যাদের নাম হরিলাল গান্ধী, (জন্ম ১৮৮৮) মনিলাল গান্ধী, (জন্ম ১৮৯২) রামদাস গান্ধী (জন্ম ১৮৯৭) এবং দেবদাস গান্ধী (জন্ম ১৯০০) সালে।
১৮ বছর বয়সে ১৮৮৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান।


দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীর জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরবর্তন করে দেয়। এখানে তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের শিকার হন। একদিন ডারবানের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট তার পাগড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন। গান্ধী তা অগ্রাহ্য করেন এবং আদালত কক্ষ থেকে ক্ষোভে বেরিয়ে পড়েন। তাকে পিটার ম্যারিজবার্গের একটি ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামড়া থেকে তৃতীয় শ্রেণীর কামড়ায় যেতে বাধ্য করা হয়, প্রথম শ্রেণীর বৈধ টিকিট থাকা স্বত্ত্বেও। স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় একজন চালক তাকে প্রহার করে কারণ তিনি এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা করে দেয়ার জন্য ফুট বোর্ডে চড়তে রাজি হননি। যাত্রাপথে তাকে আরও কষ্ট করতে হয় এবং অনেক হোটেল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনাগুলোকে তার পরবর্তী সামাজিক কার্যকলাপের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, কুসংস্কার এবং অবিচার লক্ষ করে গান্ধী তার জনগণের মর্যাদা এবং অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেন।
১৮৯৪ সালে গান্ধী নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সেখানকার ভারতীয়দেরকে রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করেন।
১৯০৬ সালে ট্রান্সভাল সরকার উপনিবেশের ভারতীয়দের নিবন্ধনে বাধ্য করানোর জন্য একটি আইন পাশ করে। ১১ই সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে সংঘটিত এক গণ প্রতিরোধে গান্ধী সবাইকে এই আইন বর্জন করতে বলেন। তিনি বলেন, আইন না মানার কারণে তাদের উপর যে অত্যাচার করা হবে দরকার হলে তা মেনে নেবেন, কিন্তু আইন মানবেন না। এই পরিকল্পনা কাজে দেয়, এবং ৭ বছর ব্যাপী এক আন্দোলনের সূচনা ঘটে।
গান্ধীর প্রথম অর্জন আসে ১৯১৮ সালের চম্পারন বিক্ষোভ এবং খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ । পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, যা সাধারণ মানুষের উপরে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল তা জনসাধারণ ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং মারামারির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গান্ধী ব্রিটিশ রাজের কার্যাবলী এরং ভারতীয়দের প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ উভয়েরই নিন্দা করেন। তিনি একটি লিখিত বিবৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ নাগরিকদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেন। তাঁর এই পদক্ষেপ প্রাথমিক পর্যায়ে দলের ভিতরে অসন্তোষের জন্ম দিলেও গান্ধীর একটি আবেগীয় বক্তৃতার পর, যেখানে তিনি তিনি মূলনীতিগুলোর বর্ণনা দিয়ে বলেন সবরকম বিশৃঙ্খলাই অমঙ্গলজনক এবং সমর্থনযোগ্য নয়, তা গৃহীত হয়।
১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাঝে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন।
গান্ধীরর অসহযোগ আন্দোলন সারা ভারতে পালিত হয়।


১৯৩০ সালের মার্চে এই উদ্দেশ্যে তিনি ডাণ্ডির উদ্দেশ্যে লবণ হাঁটা আয়োজন করেন ও ১২ই মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার হেঁটে এলাহাবাদ থেকে ডাণ্ডিতে পৌছান। নিজের হাতে লবণ তৈরির জন্য।

হাজার হাজার ভারতীয় তাঁর সাথে হেঁটে সাগরের তীরের পৌছান। এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার আন্যতম সফল প্রয়াস। ব্রিটিশরা এর বদলা নিতে ৬০,০০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেণ্টস উইথ ট্রুথ যার অর্থ সত্যকে নিয়ে আমার নিরীক্ষার গল্প। গান্ধী বলেন তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল নিজের অন্ধকার ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে কাটিয়ে ওঠা। গান্ধী তাঁর বিশ্বাসকে প্রথম সংক্ষিপ্ত করে বলেন, ঈশ্বর হল সত্য। পরবর্তীতে তিনি তাঁর মত বদলে বলেন, সত্য হল ঈশ্বর। এর অর্থ সত্যই হল ঈশ্বরের ক্ষেত্রে গান্ধীর দর্শন।
গান্ধীর অহিংসা ও সত্যাগ্রহ অন্যায়, অবিচার ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিদ্রোহ। রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় যে কোনো সংঘাত অহিংস উপায়ে সমাধানের শিক্ষা দিয়ে গেছেন তিনি। তাঁর উদ্ভাবিত সত্যাগ্রহ নীতি যুদ্ধের বিকল্প হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত। শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য গান্ধীর আদর্শ আজও অনুসরণীয়।
মোদ্দাকথা, গান্ধী তাঁর কর্মের মধ্য দিয়েই বিশ্ববাসীর কাছে বেঁচে আছেন। মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে পেরেছিলেন গান্ধী। হিংসা দূর করতে গান্ধীর নীতি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। একদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটছে, অন্যদিকে সহিংসতা বাড়ছে। এ কারণেই গান্ধী অহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সহিংসতার বিরোধিতা করেছিলেন। মানবতা বিবর্জিত জ্ঞানের কোনো মূল্য নেই। নীতি ছাড়া রাজনীতি কিছুই দিতে পারে না। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় গান্ধীর অহিংস নীতিই সবচেয়ে যুগোপযোগী। তাঁর এ নীতি বাস্তবায়ন করতে পারলেই বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র :উইকিপিডিয়া, আহমদ ফিরোজের ব্লগ, গুগল।

ভাল আচরন করুন, কারন আমাদের আচরন এক সময় অভ্যাসে পরিণত হয়।
ভাল অভ্যাস করুন, কারন আমাদের অভ্যাস এক সময় মর্যাদায় পরিণত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×