somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের ‘রাজি’ চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ছিনতাই

০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি যদি মনে করেন নাটক-সিনেমা কেবল বিনোদনের জন্য তাহলে এই লেখা আপনার জন্য ভিন্ন কিছু বলতে চাইছে। বাস্তবতা হলো, ভিজ্যুয়াল’র প্রভাব মানব মস্তিষ্কে সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। যেটা টেক্সট বা রচিত বই’র ক্ষেত্রে এভাবে হয় না। এই বাস্তবতা মেনে নিলে ভারতের চলচ্চিত্র মাধ্যম বর্তমানে তাদের মিডিয়ায় ইতিহাস বিকৃতির যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে এটার বিরুদ্ধে আমাদের নূন্যতম প্রতিবাদ থাকা দরকার।


যারা ক্ষমতায় আছেন। সেই সব রাজনৈতিক এলিটদের সরকারি ভাবে এসব প্রবণতাকে কনডেম করার দরকার ছিলো কিন্তু এখনও দেখি এইসব নিয়ে আমাদের কারো হুঁশ নেই।

যে সিনেমার সূত্র ধরে কথা বলছি সেই ‘রাজি’ চলচ্চিত্র।ইতোপূর্বে ভারতের গুন্ডে, গাজি অ্যাটাক চলচ্চিত্র দু’টিতে তারা মুক্তিযুদ্ধকে তাদের নিরঙ্কুশ বিজয় বলে চালিয়ে দিয়েছে। এবার ‘রাজি’তেও একই কাজ করেছে। এই সিনেমায় বিষয়গুলা আরো খোলাখুলি বলেছে যেটা এর আগে আর কোনটাতে এমনভাবে করেনি । এমনকি মুক্তিবাহিনীর হাতে পকিস্তান আর্মির আত্মসমর্পণকে এরা দেখাচ্ছে ভারতের হাতে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ হিসেবে। এখানে নাই কোন মুক্তিযোদ্ধার ক্রেডিট, আমাদের জনগনের আত্মদানের কোন চিত্রও নেই। বরং পুরো ব্যাপারটা তারা উপস্থাপন করেছে এমন ভাবে যে, বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের জন্ম ভারতীয়দের আত্মদান বা অবদান হিসেবেই।

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক হিসেবেই আছে। কিন্তু কোন নাগরিক যদি খালি প্রকাশ্যে এই দলটির অবদানকে একটু সমালোচনা করে তা হলে তাকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়ার জন্য দলীয় লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়েন। আইন-আদালত পর্যন্ত তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। অথচ ভারত একের পর এক এই অতি আবেগের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ছেলে খেলায় মেতে আছে কিন্তু এটা নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদতো দূরের কথা। ভারত সরকারের সম্মতি না থাকলে এই রকম অবমাননাকর প্রোপাগান্ডা সিনেমা চলতে পারত না সেই দেশে।

এটা সত্য যে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় অবদান রয়েছে। সেটা আমরা কেউ অস্বীকার করি না। কিন্তু এটা তো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধছিল না কোন ভাবেই। আবার এটাও সত্য এটা ভারত একদম মানবতার খাতিরে করেছে এমনও না তার নিজস্ব ফায়দার কথা চিন্তা করে তারা এটা করেছে।

সুতরাং বর্তমানে বারবার তাদের চলচ্চিত্রে যেভাবে ৭১’ কে তাদের সেনাবাহিনীর বিজয় বলে হাইলাইট করা হচ্ছে (এটা আগে তেমন চোখে পড়েনি, লাস্ট কয়েকবছর ধরে বিজেপি আসার পর থেকে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে) এটার তো সরকারি পর্যায়ে প্রতিবাদ করা দরকার।

এটাতো এই দেশের গণমানুষের মুক্তির সংগ্রাম ছিলো, ত্রিশ লাখ প্রাণ আমরা বিসর্জন দিয়েছি। তাহলে এখন এই ইতিহাসে ভারত আমাদের নাই করে দিচ্ছে এবং এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল কোন প্রতিবাদও আমরা করছিনা। তাহলে আর এতো এতো যুদ্ধের চেতনার গল্প আমাদের শুনিয়ে লাভ কি? ভারতের সাথে আমাদের এইসব বিতর্কিত বিষয়ে এবার একটা বোঝাপড়ায় যাওয়ার সময় হয়েছে। এখন যদি এগুলো বন্ধ করা না যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তাদের পুরো একটি প্রজন্ম এই দেশের মুক্তিসংগ্রামকে ভারতীয় দান বলে জানবে।যা আমাদের জন্য এর চাইতে বেদনা ছাড়া আর কিছুই না।

এখানে আরো একটি ব্যাপার যেটা আমার খারাপ লেগেছে তা হলো এই ছবি পরিচালনা করেছেন মেঘনা গুলজার, তিনি নিজে খুবই মেধাবী মানুষ। উনার প্রতিভার প্রতি কোন অসম্মান আমার নাই। প্রখ্যাত কবি গুলজার এর কন্যা তিনি। তিনি এটার লিরিক লিখেছেন, তার মতো একজন সিনিয়র ব্যক্তি এই প্রোপাগান্ডার অংশ হয়েছে এটা তার ভক্তদের জন্য বিরক্তিকর। তারতো অন্তত আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা থাকার কথা। আবার তার বাংলাদেশী ভক্তের সংখ্যাও কম না।

বন্ধুরাষ্ট্র হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এমন বিকৃতি আমাদের হতাশ করে। তাদের এই ইতিহাস ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×