somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্র জীবনের গল্প (কেউ আমাদের বুঝে না)-২

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
লিখছিলাম আমাদের সাথে অন্য সবার ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে। এর আগের অংশটি যারা পড়েন নি।


জলের মানুষরাও আমাদের ভুল বুঝে। জেলেদের কথা বলছি। আপনি যখন কোন দেশের কোস্ট অতিক্রম করবেন তখন দেখতে পাবেন হাজার হাজার জেলে নৌকা। এরা জাল ফেলে মাছ ধরতে থাকে ইতস্তত এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে।


যখন রাতের বেলা ন্যাভিগেশন করবেন তখন মনে হবে যেন এক ঝাক তারা আকাশ থেকে নেমে এসেছে। দেখার মত দৃশ্য। কিন্তু ন্যাভিগেটরের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এদের জাল এবং ছোট নৌকা বাঁচিয়ে চলতে হবে। একটু পর পর কোর্স চেঞ্জ করতে হয়। এখানে ভুলের কোন সুযোগ নেই। একটা নৌকার কিছু হলে আপনাকে এরেস্ট করা হবে। তাই ওই সময়ের ন্যাভিগেশন দুঃস্বপ্নের মত।


ফিশিং বোট গুলো আশা করে আমরা তাদের জাল বাঁচিয়ে চলব। কিন্তু সমস্যা হল জাল আছে তা বুঝার সাথে সাথেই এত বড় জাহাজ টার্ন করা সব সময় সম্ভব হয় না। লোডেড জাহাজের মোমেন্টাম অনেক বেশি থাকে। তাই স্টিয়ার করার অনেক পর তা কার্যকর হয়। ফলাফল জালের উপর দিয়ে জাহাজ চলে যায় এবং তা প্রপেলারে কাটা পড়ে। জেলেরা অনেক সময় আলো দিয়ে অনবরত জাহাজ কে সংকেত দিতে থাকে যা প্রায় ক্ষেত্রেই দুর্বোধ্য যে আসলে কোনদিকে তার জাল ছড়ানো আছে।


এবার আরেকটি ভুল বুঝাবুঝির গল্প। এটা হয়েছিল বাংলাদেশি একটা নেভি শিপের সাথে। আমাদের জাহাজ বঙ্গোপসাগর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসছিল। বন্দর থেকে প্রায় ৪৫ নটিক্যাল মাইল দূরে আমরা। এর মধ্যে VHF এ শোনা গেল এক নেভি শিপ আমাদের ডাকছে। রিপ্লাই করার পর তারা জাহাজের নাম, জাতীয়তা, গন্তব্য সহ আরও অনেক ইনফরমেশন নিলো। তারপর হুট করে বলছে যে আপনারা আমাদের ফায়ারিং এক্সারসাইজ এরিয়ায় ঢুকে গেছেন। অনুগ্রহ করে কোর্স চেঞ্জ করে অন্য পথে চট্টগ্রাম বন্দরে এপ্রোচ করেন।
আমরা তখন সত্যিকার অর্থেই হতভম্ব।
-আপনাদের কী কেউ ইনফরম করে নি?
-আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরছি। কিভাবে জানবো যে আজ আপনাদের ফায়ারিং প্র্যাকটিস।
-ওকে। আপনাদের একটা রুট সাজেস্ট করছি ওই মত চলে যান।
তাদের সাজেস্ট করা রুট অনুযায়ী জাহাজ ঘুরানো হল। হিসেব করে দেখা গেল নতুন রুট আমাদের আরও প্রায় ২ ঘণ্টা দেরীতে বন্দরে নিবে। এই কোর্স সম্পর্কে ক্যাপ্টেন কে জানানো হল। স্যার ব্রিজে এসে আবার ওই নেভিশিপটিকে ডাকলেন ফায়ারিং এরিয়ার সঠিক কো অর্ডিনেট নিতে। কিন্তু কোন রিপ্লাই নেই। এরমধ্যে আরেকটি শিপ এর মেসেজ আসছিল। বাধ্য হয়ে তাই ওটাকে ডাকা হল। কিন্তু ওই জাহাজ থেকে জানানো হল যে আমাদের ফায়ারিং এক্সারসাইজ আগামীকাল।
-মানে কী? আপনাদের একটি জাহাজ ই একটু আগে আমাদের বলল যে আমরা ফায়ারিং এক্সারসাইজ এরিয়াতে আছি। নতুন কোর্স ও দিল।
- ও। তাহলে মনে হয় উনি বুঝতে পারেননি। আপনারা আপনাদের আগের কোর্সে এসে চট্টগ্রাম চলে যান।


এই হল দূরবস্থা। জার্মান একটা কন্ট্রোল টাওয়ারে একটা দুর্দশাগ্রস্থ জাহাজ থেকে মেসেজ আসছিল।
: sir. We are in Distress. We are sinking……
: ok. What you are sinking?
: sir. We are sinking….
: yes. But what you are sinking?
: please send assistance. We are sinking……..
: please tell what are you sinking??
তারপর আর নো রেসপন্স। ইতোমধ্যে বিপদগ্রস্থ জাহাজটি ডুবে গেছে। জার্মান রা T এর উচ্চারণ করে s দিয়ে। থিঙ্কিং রে বলে সিঙ্কিং। এটাই হল এই ভুল বুঝাবুঝির কারণ। আসলে খালি জার্মান না। চীন, কোরিয়া সহ আরও অনেক দেশেই এই ব্যাপারটা দেখেছি।
(সমাপ্ত)

ছবিঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১৬
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×