somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন বঙ্গবন্ধুর জানাজায় বেশী মানুষ হয়নি????

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্গবন্ধু যদি এত বড়ই নেতা হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর জানাযা হই নি কেন??? কেন তাঁর লাশ দেখতে বাংলার মানুষ সেদিন গোপালগঞ্জে উপস্থিত হই নি? জিয়া সাহেবের জানাযায় তো হাজার হাজার মানুষ আসছিল উনার জানাযায় কেন মানুষ আসে নি?

উপরের কথা গুলো কারা, কেন কি উদ্দেশ্য নিয়ে বলে এটা আমাদের সবারই জানা। স্বাধীনতা বিরুধিরা এই প্রশ্ন জনগণের মনে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল ফলাফল স্বরুপ এই কথা গুলো আমাদের এখনো শুনতে হচ্ছে।
যে লোক নিজের মৃত্যুপথের সঙ্গী হওয়া পর্যন্ত "জয় বাংলার " মানুষের কথা বলে গিয়েছে , যার জন্য আমরা মুক্তির স্বাদ পাই তার বিরুদ্ধে এইসব কথা বলতে ঐ পশুদের মন কাঁদে নি।
সত্যিই আজও আমাদের প্রমাণ করতে হয় "জয় বাংলা " বাঙলার হৃদপিন্ড থেকে গঠিত এক স্লোগান, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন স্রষ্টা।

বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে খুনিরা সেদিন কি করেছিল, কিভাবে তাঁর লাশ দাফন হয়েছিল এই ব্যাপারে স্বাধীনতা বিরুধিরা বিভিন্ন ধরণের নোংরা মতবাদ আজও বলে যাচ্ছে এর জবার হিসেবে সেদিন কি হয়েছিল, দেখে নিন :

বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরে বরফ দিয়ে রাখা হয়। সাধারণ দুশ্চিন্তা নিয়ে কঠোর সতকর্তায় পাহারায় থাকে একদল সৈন্য। লে: ক: হামিদুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করে চলে আসতে। সকালে লাশ মুড়ে একটা বাক্সে তাতে বরফ দিয়ে বাক্স বন্ধী করে সৈন্যরা ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যায়। টুঙ্গিপাড়ায় ওসি বাড়ির মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হালিমের কাছে খবর নিয়ে আসলেন বললেন, লাশ আসছে।
সুতরাং কবর যেন খুঁড়ে রাখা হয়।
ইমাম সাহেব এক নিষ্ঠুর সত্য জেনে খুবই শোকাবহ ছিলেন ,
বঙ্গবন্ধু শেষ সাক্ষাতের সময় তাকে বলেছিলেন 'আমার জানাজা আপনাকে পড়াতে হবে '।
ইমাম সাহেব মিস্ত্রী আলী আসগর মিয়ার সাহায্য নিয়ে দুটো কবর করলেন।
১২ টা বেজে গেলে ইমাম সাহেব ঘরে গিয়ে গোসল করে নামায পরলেন।

বেলা তখন দেড়টা, হেলিকপ্টার এলো। কর্ণেল হামিদের নেতৃত্ব দিয়ে ১২ জন সৈন্য লাশ বয়ে আনলো। পুরো টুঙ্গিপাড়ায় কারফিউ জারি। পুলিশ বঙ্গবন্ধুর বাসা ঘিরে রাখা হয়ে ছিল। জনগণকে একবারো আসতে দেওয়া হয় নি। বঙ্গবন্ধুর ২ মামা শ্বশুর শেখ মনসুর হক ও শেখ মনজুরুল হক কফিন বুঝে নিলেন। বাড়ির লোকজন আগেই সরে পরেছিল।
বঙ্গবন্ধুর মেজ চাচী ও ছোট চাচী লাশ দেখার অনুমতি পেলেন।
রক্তমাখা লাশ থেকে বরফ সরানো হল, বরফ গলা পানির সাথে রক্ত গড়িয়ে পরছে। বরফে ভিজে যাওয়া রক্তাক্ত সাদা পাঞ্জাবি, গেঞ্জী ও সাদা কালো লুঙ্গি এবং নিথর দেহ। পকেটে চশমাটা তখনো ছিল।
যে মাটির জন্য লড়ে গেছেন সেই মাটিই তাকে আবার নিয়ে যাচ্ছে।

কর্ণেল হামিদ ইমাম সাহেবকে বললেন, দ্রুত লাশ দাফন করেন। লাশ দেখার পর ইমাম সাহেব বললেন ২ ঘন্টা সময় লাগবে। কর্ণেল জিজ্ঞাস করলেন কেন? উত্তরে ইমাম সাহেব বললেন, একজন মুসলমানের গোসল ও জানাযা পড়াতে সময় লাগে। কর্ণেল হামিদ বললেন, এসব ছাড়া করা যাই না??
ইমাম সাহেব বললেন করা যায়, যদি সে শহীদ হয়।
হামিদ উগ্র কণ্ঠে বললেন, " আপনি দাফন করবেন কিনা?? " না পারব না, । যদি লিখে দেন শহীদ করে এনেছেন তাহলে পারি।
ইমাম সাহেবের বুক জুড়ে যে শোকাবহ কান্না, তা তাকে শক্তিশালী করেছিল।
হামিদ বলল, সেটা সে লিখতে পারবে না। ঠিক আছে গোসল করান , তবে দেরি করতে পারবেন না।
কর্ণেল খুবই টেনশনে ছিলেন, খুব সতর্ক অবস্থায় পুলিশ ও সৈন্যদের থাকার নির্দেশ দেন।

৫৭০ সাবান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গোসল করানো হয়। রেডক্রস থেকেচার ইজি পাড়ের সাদা শাড়ি এনে পাড় ছিড়ে কাফনের কাপড় বানানো হয়।
যে মানুষ বাংলার বাঙলির মৌলিক চাহিদার জন্য আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন মাটি চাপার আগে কাফনের কাপড় পেয়েছে একটি ছিড়া সাদা শাড়ির অংশ। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!!!
একটা গুলি মাথার পিছনে করা হয়েছিল, আরেকটা আঙুলে। বাকি নয়টা গুলি বুকের নিচের চক্রাকারে করা হয়েছিল।
খুব দ্রুত লাশ দাফন হলো। উপরে মাটি চাপা দিয়ে, উঠোনের বরই গাছের কাঁটভরা ডাল চাপানো হলো। হেলিকপ্টার চলে যাবার পূর্বে বাইবার নদীর পানিতে রক্ত ধুয়ে টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে ফেলে যায়।

ইউটিউবে ১৫'ই আগষ্টের রেডিও বার্তা আছে, সেখানে বলাই আছে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর‌্যন্ত কার্ফু চলতে থাকবে, যাতে কোন অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। সবাই তখন ঘরের লাইট বন্ধ করে রাখত, সন্ধ্যা থেকেই! কার্ফু জারি থাকলে মানুষ জানাজায় অংশ গ্রহন করবে কিভাবে?!

আর এভাবে খুনিরা বাংলার মাটিতে "জয় বাংলার "স্লোগান মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

১। রেডিও বার্তা-১: https://www.youtube.com/watch?v=tb87sFrHL10
২। রেডিও বার্তা-২:https://www.youtube.com/watch?v=MMTc4GY0MF8
৩। রেডিও বার্তা-৩: https://www.youtube.com/watch?v=y0fU8CHGo6U
৪। রেডিও বার্তা-৪: https://www.youtube.com/watch?v=k0rYCy4OVs8

কৃতজ্ঞতায়- এরফানুল ইসলাম ইফতু ভাইয়া ও মেহেজাবিন বাঁধন আপু
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×