somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন বীর মুক্তিযুদ্ধা ক্রিকেটার শহীদ জুয়েল।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহীদ জুয়েল ছিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। ছোট বেলা থেকেই ছিলেন ক্রিকেটের প্রচন্ড ভক্ত। ছিলেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার সেরা ওপেনার।



খেলতেন সেই সময়ের বিখ্যাত ক্লাব অাজাদ বয়েসের হয়ে। অার সেই অাজাদ বয়েজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জুয়েলের অারেক বন্ধু শহীদ মুশতাক। মুশতাক এত ভালো মানুষ ছিলো যে তার শত্রুরাও তাকে ভাল বাসতো। কথা বলার সময় হাসি লেগেই থাকতো তার মুখে। জুয়েল ছাড়াও অনেক ক্রিকেটার তৈরির কারখানা ছিলো মুশতাকের অাজাদ বয়েস। সেই অাজাদ বয়েসের হয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন জুয়েল। জুয়েল ব্যাট হাতে ক্রিজে নামলে বোলারদের মুখের উপর পড়ত কালো ছায়া। পড়বেই বা না কেন? জুয়েল ব্যাট হাতে এমন নির্দয়ভাবে বোলারদের বল মাঠের বাইরে অাচড়ে ফেলতেন তা দেখে অনেকের মায়া লাগত। কে জানে সেই সময় যদি টি২০ ক্রিকেট চালু থাকতো জুয়েলই হতে পারতো সেরা ব্যাটসম্যান।




একদিন ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিল জুয়েল। তার ব্যাটিং দেখে, তার বিখ্যাত সেই স্লগ সুইপগুলো দেখে পাকিস্তানের বিখ্যাত এক ক্রিকেটার বলেই ফেলেছিলেন- "এই ছেলে এখানে কেন, এর তো পাকিস্তানের হয়ে ওপেনিং করার কথা"।হ্যা, জুয়েলই ছিলো সেই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান। তারপরও তাকে জাতীয় দলে নেয়া হয়নি, দেওয়া হয়নি প্রাপ্ত মর্যাদা। কারণ, সেই একটাই জুয়েল যে বাঙ্গালী, বাঙ্গালিকে তারা মানুষ নয় কুকুরই মনে করত। জুয়েল মনে মনে স্বপ্নন দেখত, একদিন দেশ স্বাধীন হবে, অার বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং করবে জুয়েল।

১৯৬৯ সাল। দেশজুড়ে চলছে অায়ুব বিরোধী তীব্র অান্দোলন। অার সেই সময়েই পাকিস্তান দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের ছিলো চরম ফর্মহীনতা। বাধ্য হয়েই প্রাথমিক দলে রাখা হলো বাঙ্গালি জুয়েলকে। কিন্তু জুয়েল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন পাকিদের সেই ডাক। যোগ দিলেন বাঙ্গালীর মুক্তির অান্দোলন গন অদ্ভোত্থানে।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ। জুয়েল দেখল, যে অাজাদ বয়েসের হয়ে জুয়েলসহ অসংখ্য ক্রিকেটারের হাতেখড়ি হয়েছিল, সেই অাজাদ বয়েসের প্রতিষ্ঠাতা, প্রাণ প্রিয় বন্ধু মুশতাকের নিথর দেহ গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে। অার পাশে বসে অাছেন, জুয়েলের অারেক বন্ধু সৈয়দ অাশরাফুল হক ( বর্তমান এসিসির প্রধান নির্বাহী)। প্রিয়বন্ধু মুশতাককে ছুয়ে জুয়েল শপথ করলেন জীবন দিয়ে হলেও দেশ স্বাধীন করবেন। বন্ধুর রক্তকে বৃথা যেতে দিবেন না।

৩১ শে মে ১৯৭১ বাড়িরপেছন দিকের দরজা দিয়ে মাকে কিছুনা বলেই বেরিয়ে গেলেনজুয়েল। এর কয়েকদিনআগে বলেছিলেন মাকে একটা ছবি দিয়ে– আমি যখন থাকবো না, এই ছবিটাতে তুমি আমাকে দেখতে পাব।ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিলেন জুয়েল।ট্রেনিং নিয়ে জুয়েল হয়ে উঠলেন দুর্ধর্ষ ক্রাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য। এই ক্রাক প্লাটুনেরর হয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সফল গেলিরা অভিযানে অংশ নেয় জুয়েল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ডান হাতে গুলি লাগে জুয়েলের। হাতের তিনটি অাঙ্গুল প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রিকেটকে তিনি কতটা ভালবাসতেতার একটা প্রমানপাওয়া যায় এই ঘটনার পরযখন তার বোনের সাথে তারদেখা হয়। তিনি তারবোনকে প্রচণ্ড দুঃখকরে বলেছিলেন,দেশ স্বাধীনহলে আমি আবার ক্রিকেটখেলতে পারবো তো?

১৯শে আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জপাওয়ার ষ্টেশন অপারেশনের সময়পাকবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে তিনি আহত হন। এরপরতাকে মগবাজারে প্রখ্যাতসুরকার আলতাফ মাহমুদেরবাসায় চিকিৎসার জন্যআনা হয়। আলবদরের তৎকালীনসেকেন্ড ইন কমান্ডআলী আহসান মোহাম্মদমুজাহিদ এই খবরটা পৌঁছে দেয়স্থানীয় পাকিস্তানি ক্যাম্পে।২৯শে আগস্ট পাকবাহিনী হামলা চালায়ওই বাড়িতে। আহতঅবস্থায় জুয়েলকে ধরে নিয়ে আসে ক্যাম ক্রাক প্লাটুনের তথ্য ওসকলের পরিচয় জানার জন্যপ্রচণ্ড অত্যাচার চালানো হয় তার উপর।যে হাত দিয়ে একদিনস্বাধীন বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটসম্যানহিসেবে প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন,সে হাতেরদুটো আঙ্গুল কেটে ফেলে পাকিস্তানি হানাদার নির্মম নিষ্ঠুরতায়।প্রচণ্ড নির্যাতনের মুখেও একটা শব্দও উচ্চারন করেননি তিনি। ৩১ শে আগস্টের পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আজ আমাদের শহীদ জুয়েলের ৬৬তম জন্মদিন। আজ পুরো বাঙ্গালি জাতি ও সকল টাইগার ভক্ত ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম যুদ্ধা ও ক্রিকেটার জুয়েলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। শুভ জন্মদিন জুয়েল। তুমি হয়তো স্বর্গে বসেই দেখছো টাইগারদের বিশ্বসেরা হয়ে উঠা। আজ হয়তো তোমার কোন অভিমান নেই, কারণ তুমি পারনি কিন্তু আজ পারছে সাকিব, ম্যাশরা। যতদিন টাইগাররা থাকবে, যতদিন দেশ থাকবে ততদিন তুমিও থাকবে আমাদের সবার মনে । ভালো থেকো...............
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×