somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অচেনা ক্ষমতা

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধানমন্ডির বাড়িগুলার মধ্যে এই বাড়িটা পুরোনই বলা যায়। চারতলা দালানের বাড়িতে আটটা পরিবার থাকে। প্রত্যেক তলায় দুই পরিবার। বাড়িটার সামনে বেশ কিছু জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর দশ ফুটের দেওয়াল। দেওয়ালের ওপারে রাস্তা। বাড়িওলা এই ছেড়ে দেওয়া জায়গাটায় বিভিন্ন ফুলগাছ লাগিয়ে বাগানের মত করতে চেয়েছেন। কিন্তু বাগানের জন্য জায়গাটা একটু ছোট হয়ে গিয়েছে। তাই যত্ন না নিতে নিতে এখন ফুল গাছের থেকে আগাছাই বেশি। বিল্লাল একটা চেয়ারে গেটের ভিতরের দিকে বাগান ঘেঁষে বসে থাকে।

বিল্লালের কাজ হল সারাদিন গেটে বসে থাকা, গেট পাহারা দেওয়া। সে এই বাড়ির দারোয়ান। পড়ালেখা বেশি দূর করেনি। গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। তারপর সংসারের অভাব দূর করতে বাবা তাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। তাদের গ্রামের আলম দাদার যে ছেলেটা ঢাকায় ডাক্তারি করে বিরাট বড়লোক হয়েছে তার বাসায় ফুট ফরমায়েশ খাটতো। দেখতে দেখতে বিল্লালের বয়স এখন চব্বিশ বছর। ডাক্তারের বাড়ি ছেড়ে সে আরো অনেক জায়গায় কাজ করেছে। এখন সে এই বাড়ির দারোয়ানের চাকরী করে।

বিল্লাল উদাস হয়ে কিছু একটা ভাবছিল এমন সময় তিনতলার কাজের মেয়ে কুলসুম সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল। তাকে দেখে বিল্লালের উদাস ভাবটা যেন আরো একটু বেড়ে গেল।
“কিরে কুলসুম, কই যাস”।
“আপনারে কইতে হইব- কই যাই? গেট খুলেন”
বিল্লালের মনটা খারাপ হয়ে যায়। কুলসুমকে তার খুবই মনে ধরে, কিন্তু কুলসুম তাকে পাত্তাই দেয়না। অথচ সামনের দোকানের মনিরের সাথে কুলসুম কি হেসে হেসেই না কথা বলে! কথা বলার সময় চুলের গোছাটা সামনে এনে হাত দিয়ে পাকাতে থাকে। এই দৃশ্য বিল্লাল যতবার দেখে ততবার রাগে তার শরীর কাঁপতে থাকে। সে গম্ভীর হয়ে গেটটা খুলে দিল। কুলসুম হেলে দুলে মনিরের দোকানেই এগিয়ে যায়। দূর থেকে বিল্লাল তা দেখতে থাকে। তার খুব হিংসা হয়। মনে মনে বলে- আল্লাহ, এত মানুষ মরে, শালা মনির মরেনা কেন? মর শালা!

পরদিন সকাল থেকে মনিরের দোকান বন্ধ। বিকালেও যখন মনিরের দোকানের সাটার লাগানো থাকে তখন বিল্লাল পাশের দোকানদারের কাছে গেল।
“কিগো আশরাফ ভাই, মনিরের দোকান বন্ধ ক্যা?”
“কেন তুমি জাননা? কাইলকা রাইতে মনির মারা গেছে”
খবরটা শুনে বিল্লাল আকাশ থেকে পড়ে।
“তাই নাকি? কেমনে? ওর তো বয়স আমার মতই। কোন অসুখও তো ছিল না”।
“সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা!”
বেচারা মনির! খবরটা শুনে বিল্লাল খুশি না হয়ে দুঃখই পেল। সে আনমনে বাড়ির গেটের দিকে হেঁটে আসতে থাকে। এমন সময় তার সামনে দিয়ে একটি হোন্ডা তীর বেগে চলে গেল। আর একটু হলেই বিল্লালের সাথে ধাক্কা খেত। সে চমকে একপাশে সরে দাঁড়ায় আর মনে মনে গালি দিয়ে উঠে- মর শালা।

বিল্লাল যখন গেটের কাছাকাছি আসলো, হোন্ডাটা তখন রাস্তার শেষ মাথায় পৌঁছে মোড় ঘুরতে থাকে। কিন্তু কিভাবে যেন হোন্ডাটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সামনের মুখোমুখি একটা বড় জীপের সাথে ধাক্কা খেয়ে চালক হোন্ডা থেকে ছিটকে পড়লো। দুর্ঘটনাটা খুব মারাত্মক ছিলনা। কিন্তু আরোহীর মাথায় হেলমেট না থাকায় তার মাথাটা যখন গাড়ির বাম্পারে জোড়ে আঘাত করলো তখন প্রচন্ড আঘাতে মাথাটা ফেঁটে গিয়ে ফাঁটা অংশটা থেকে হলুদ মগজ বেরিয়ে আসে। শব্দ শুনে বিল্লাল পিছনে ফিরে তাকাল। সে যেন তার চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারল না। সে মনে মনে চেয়েছিল একটা গালি দিতে কিন্তু সে তো সত্যি সত্যি চায়নি যে লোকটা মারা যাক! সে লাশের অবস্থা দেখে আর সেখানে থাকতে পারেনি। বাড়িতে ঢুকে সে জংলা বাগানে শরীর ঝুকিয়ে বমি করে দিল। রাতে তার প্রচন্ড জ্বর আসে এবং আগামী দুদিন সে জ্বরের ঘোরে থাকে।

আজও কুলসুম সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসলো। বিল্লাল কিছু না বলে গেট খুলে দেয়। সেদিনের পর থেকে কুলসুম বেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। বিল্লালের সাথেও তেমন তেজ দেখায় না। চুপচাপ হেঁটে সে আশরাফের দোকানে যায়। যাওয়ার সময় মনিরের বন্ধ দোকানটার দিকে এক পলক চেয়ে থাকে। পিছন থেকে বিল্লাল তা দেখে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। সেদিন সে চেয়েছিল যেন মনির মরে যায়, মনির সত্যিই মারা গিয়েছে। তার পরদিন সে চেয়েছিল যেন হোন্ডা আরোহী মারা যায়, সেও দুর্ঘটনায় মারা গেল। তাহলে কি সে যাকে চাইবে তাকেই মেরে ফেলতে পারবে! তার কি তাহলে কোন ধরনের ক্ষমতা আছে? ওইতো দেওয়ালে একটা পোকা বসে আছে। সে যদি চায় এখনই যেন পোকাটা মারা যায় তাহলে কি হবে? বিল্লাল পোকাটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে- মর শালা।

বিল্লাল অনেকক্ষন পোকাটার দিকে তাকিয়ে থাকে- কিন্তু কিছুই হলনা। এমন সময় কুলসুম দোকান থেকে ফিরে আসে। সে গেট খুলে দিলে কুলসুম বাড়ির ভিতরে ঢুকে। তার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। বিল্লাল আড় চোখে তার পিছনে তাকিয়ে থাকে। ঠিক সেই সময় একটা টিকটিকি খুব ধীরে ধীরে পোকাটার দিকে এগোতে থাকে। সুবিধাজনক জায়গায় এসে টিকটিকিটা খুব ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকে তার উলটানো জ্বিহবাটা নিখুঁত ভাবে ছুঁড়ে দিল। জ্বিহবাটা যখন ফিরে আসে তখন পোকাটাকে পেঁচিয়ে নিয়ে এসে টিকটিকিটার মুখে ঢুকে গেল। বিল্লাল অবশ্য এসবের কিছুই দেখলো না।

সেদিন বিকেলে বিল্লালের রুমের বাল্বের সুইচটা নষ্ট হয়ে যায়। সে মালিকের কাছ থেকে টাকা চেয়ে একটা নতুন সুইচ কিনে নিয়ে আসলো। সন্ধ্যার এই সময়টা খুব দ্রুত আলো হারায়। সে যখন সুইচটা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুলছিল তখন একটা স্ক্রু তার হাত থেকে পড়ে গেল। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে বিল্লাল মনে মনে নিজেকেই গালি দিয়ে উঠলো- ধুর শালা, মর।

আধো আলো আধো অন্ধকারে বিল্লাল অনেকটা আন্দাজে ২২০ ভোল্টের কালো তারটার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×