আমি তখন আরিজোনায়। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে মনে হয় নিজের শরীরকে মাংসের পুটুলি বানিয়ে ডীপ ফ্রীজের ভিতর বসে থাকি অনন্ত কাল। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। খুলে দেখি- বন্ধু জগমোহন দাঁড়িয়ে।খুবই বিচলিত। তার হবু পাত্রী আগামি রোববারের ফ্লাইটেই ইউ কে যাবে, তাই যেভাবেই হোক ওদের দীর্ঘদিনের ভালোবাসার বিয়েটা যেন রোববারের আগেই শেষ করা হয়।
এখানে বলে রাখি, আমার বন্ধু ট্যাক্সি ক্যাব চালায়। নামে জগমোহন কামে রমণীমোহন আর দেখতে তেমন সুদর্শণ। এই ছেলের প্রেমে পড়ে গেলো- এক খ্রীষ্টান শ্বেতাংগিনী এটর্নী মেয়ে। কারো কপাল এমনি ভাবে খুলে যায়।
আমি খুব দ্রুত বিয়ের কাজ শুরু করলাম। মেয়েটির একটা শর্ত, যেহেত সে মোহনকে বিয়ে করবে, তাই বিয়ের সমস্ত কিছু পুঙখানুপুংখ ভাবে হিন্দু বেদিক রীতির নিয়মানুসারে যেন সুসম্পন্ন হয়। আমার প্রতি ওর বিশ্বাস আছে, এ বিশ্বাসের যেন কোনরকমের অমর্যাদা না হয়।
আমাদের পরিচিতি এক ব্রাম্মন পুরোহিত মশাইকে পাওয়া গেলো।বেচারার বউ বাংলাদেশে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বেচারা দীর্ঘদিনের হা পিত্যেশ বেড়েই চলেছে। কিন্ত বউকে আর মার্কিনমুল্লুকে নিয়ে আসতে পারছেন না।
যাই হোক, বিয়ের যাবতীয় কাজ সুসম্পন্ন হলো। সবাই উম্মুক্ত পার্কে জড়ো হয়েছেন। গরমের বর্ণনাতীত দাবদাহ। একপাশে স্টেজ সাজানো হয়েছে। একে একে সব আনুষ্টানিকতা শেষ হচ্ছে।সাদা ললনা শাড়ী ,গহনা পড়ে একবারে যেন আবহমানকালের বাঙালি বধূ।
এবার শুরু হবে - বেদিক হিন্দু বিয়ে প্রথার প্রতিগ্গা করণ- যাকে বলা হয়-সাত পাক। মূল স্টেজের মাঝখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বরের পিছন পিছন বধু ঘুরছে আগুনের চারপাশে। পুরোহিত মশাই নিবিষ্ট মনে মন্ত্র পাঠ করছেন।
মিউজিক বাজছে, ছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি করছে। গরমে গাম ঝরছে সবার বিশেষ করে কনের।- বেচারি শাড়ী, গহনা, গরমে, গামে একেবারে হা পিত্যেস অবস্থা। কিন্তু কনের শর্ত একটাই জীবনে একবারই বিয়ে তাই কোনো প্রথা সে ভাংগবেনা। যা যা করার সব কিছু হবে।
হঠাৎ আমার খেয়াল হলো- প্রায় আধঘন্টা মতো হলো-। এখনো আগুনের চারপাশে বর আর কনে ঘুরছে ব্যাপার কি। সাত বার ঘুরতেতো বেশি হলে বড় জোর কয়েকমিনিটের বেশী হওয়ার কথা না।
আমি তাড়াতাড়ি পুরোহিতের কাছে গেলাম। জিগ্গাসা করলাম ঘটনা কি?
এতো দীর্ঘ সময় লাগছে কেন? সাতবার ঘুরতেতো এতোক্ষণ লাগার কথা না। বড় বেশী হলে সাত মিনিট।
পুরোহিত আমাকে যা বললো, তাতে আমি হাসবো না কাঁদবো ।
পুরোহিত বললো- রাখেন আপনার সাত মিনিট। এই সাদা এটর্নি মহিলা আমাকে সাত বছর ধরে গ্রীণ কার্ড পাইয়ে দিবে বলে ঘুরাচ্ছে। ওর অফিস ভবনের সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমার জীবন শেষ। আজকে পেয়েছি বাছাধনকে। ঘুরতে থাকুক -আরো ঘন্টা খানেক। শুধু মাঝখানে একবার জিগ্গাসা করে আসবো-ঘুরতে কেমন লাগে? আর ঘুরাতেও কেমন লাগে?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩১