গত পর্বে অংশগ্রহণকারী সুপ্রিয় ব্লগারদের আমার বিনীত ধন্যবাদ এবং নিরন্তর শুভকামনা। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই আমার পরবর্তী পর্ব লিখার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
না পারভীন
এস এম কায়েস
ঢাকাবাসী
মামুন রশিদ
ইমরাজ কবির মুন
অজানা পথের দিশারি
বোধহীন স্বপ্ন
বৃতি
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা
মোঃ আনারুল ইসলাম
আম্মানসুরা
আদনান শাহ্িরয়ার
আিম এক যাযাবর
অন্যমনস্ক শরৎ
মৌমিতা আহমেদ মৌ
হাসান মাহবুব
ভোরের সূর্য
বোকা মানুষ বলতে চায়
সকাল রয়
সবুজ০০৭০০৭
জুন
অশ্রু কারিগড়
স্বপ্নবাজ অভি
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়
নীল ভোমরা
এন এফ এস
মাহমুদ০০৭
স্নিগ্ধ শোভন
ম্যাভেরিক
হৃদয় রিয়াজ
সাদা আকাশ
সুমন কর
এবার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছি।যারা মোটামুটি কাছাকাছি এবং সঠিক জবাব দিয়েছেন, সবার জন্য অনেক অভিনন্দন।
অশ্রু কারিগড়
এন এফ এস
স্নিগ্ধ শোভন
ম্যাভেরিক
আদনান শাহ্িরয়ার
সাদা আকাশ
সুমন কর
পর্বঃ পাঁচ- রহস্য গল্প-তিনটি নরখুলি
এসএসসি'র টেস্ট পরীক্ষার পর আমাদের স্পেশাল ক্লাস নেয়া হতো। আর আমার শৈশবের বন্ধু শুম্ব স্বর্ণ সব সময় ক্লাসে ঠিক আমার পিছনের সীটে বসে ঝিমাতো। এই ঘুমের জন্য শুম্ব স্বর্ণের নাম হলো কুম্বকর্ণ।
একদিন গণিতের ক্লাস হচ্ছে। বোর্ড থেকে দেখে দেখে খাতায় অঙক লিখছি। বাইরে ছেলেরা টেনিস বল নিয়ে তুমুল ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠেছে।
হঠাৎ আমার পিছনের বেন্চে শুনি নাসিকার মৃদু আওয়াজ। বুঝলাম কুম্ভ নিশ্চিন্তে তার আয়েশের জগতে চলে গেছে।
নাসিকার মৃদু শব্দ ধীরে ধীরে গর্জনে পরিণত হলো। এই গর্জনধ্বনি স্যারের কানেও পৌঁছালো। স্যারের হাতে ছিলো ডাস্টার। স্যার দ্রুত গতিতে ডাস্টার ওর দিকে ছুঁড়ে মারলেন। ঠিক এমন সময় একটি টেনিস বলও বাইরে থেকে ধুমকেতুর গতিতে ছুটে আসছে। শুনতে পাচ্ছি ছেলেদের চীৎকার "ছক্কা"।
এ এক অবাক ব্যাপার- নিমিষেই আমার চোখ বন্ধ। পরক্ষণেই চোখ খুললাম। দেখি সবাই আমার দিকে হা করে চেয়ে আছে। আমি নিজেও বুঝলাম না কী হয়েছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম-আমার কলমটি বেন্চের ওপর।আর বাম হাতে স্যারের নিক্ষিপ্ত ডাস্টার ,অন্য হাতে ধরা টেনিস বল।
ক্যানো'য় (Canoe) বসে বসে লাবণ্যক শৈশবের গল্প শুনাচ্ছিলাম। রাবিন্দ্রিক মেয়ে নীল আকাশের নীচে, নীল শাড়ি পরে, নীল জলের ওপর নীল রঙের ক্যানোয় আমার সামনে বসা। এ যেন এক জীবন্ত প্রেমময়ী জলপরী এইমাত্র নদী থেকে ওঠে এসে বিকেলের স্নিগ্ধ পৃথিবীর রুপ দেখতে ক্যানোয় এসে বসেছে।
ও আমার কাছ থেকে বৈঠা পানি কেটে কেটে ওর হাতে নিতে নিতে বললো- তারপর। তারপর কী হলো। তোমার স্যার নিশ্চয় খুব রাগ করলেন?
হুমম।খুব রাগী স্যার। কিন্তু হো হো করে হেসে ওঠলেন।কুম্ভ'র নাকের আওয়াজ অল্পক্ষণের জন্য বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে। স্যার আমাকে বললেন- অঙকে তুই যা পাস না কেন, তবে মনে হচ্ছে তুই একটা বড় বাজিকর হবিরে। সত্যিই আমি বাজিকর হলাম। নাহলে জলের জলপরী মানবি হয়ে আমার ক্যানোয় বসবে কেন? স্যারদের ভবিষ্যৎ বাণী বিফল হয়না।
দীঘীর জলের মতো শান্ত এই অজানা নদীর ওপর দিয়ে আমি আর লাবন্য ক্যানোতে চড়ে আমাজানের ইয়োনোমামি গোত্রের এক গোত্রঅধিপতির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। মিসির আলি চাচা আমাদেরকেই খুবই বিশ্বস্ত ভেবে কাজটি'র জন্য পাঠিয়েছেন।
ক্যানোটি ঘাটের সাথে বেঁধে আমরা গোত্রপতি শ্যাভোনের ঘরের দিকে রওয়ানা হলাম। আমার কাছে পুরো অর্থহীন লিখা চাচার চিরকুটটি শ্যাভোনের হাতে দিলাম।
মিসির আলী চাচার লিখা চিরকুটটির একটা কপি ফোনে রেখেদিয়েছিলাম। কারণ যদি খোয়া যায় কোনো কারণে তবে এই ছবিটিই ভরসা।
লিখাটি পড়ে শ্যাভোন আমাদেরকে কাপড়ের একটা থলে বের করে দিলেন। থলে খুললাম। চাচা যেমন বলেছিলেন-ঠিক তেমনি। একবারে অবিকল দেখতে একই আকৃতির তিনটি মানুষের মাথার খুলি।
চাচার কথায় বুঝেছিলাম। বড় রহস্যময় এ মাথার খুলি । এর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য অনেক। বিশাল একটা হারিয়ে যাওয়া গোত্রের ইতিহাস এর সাথে জড়িয়ে আছে।
সন্ধ্যার আগে আগেই খুব বেশী প্রশস্ত না সরু নদীটা পার হয়ে আমাদের ক্সিডেয়ে তে পৌছাতে হবে। একটি ইয়োনোমামি ছেলে আমাদের সাথে এলো । তারপর ঘাট থেকে নিজের ক্যানোটি চালিয়ে বাড়ির পথ ধরলো।
ক্যানো বেয়ে বাড়ি'র পথে ইয়োনোমামি ছেলেটিঃ
আমার পিঠে ঝুলানো খুলির থলি। লাবন্যকে আলতো করে ধরে ক্যানোয় বসিয়ে দিলাম। ও ক্যানোর একপাশে বসে আছে। পিঠ থেকে নামিয়ে থলিটি ক্যানোতে রাখলাম। তারপর আমি ক্যানোতে ওঠে বৈঠা হাতে নিলাম। আর অমনি ক্যানোটি যেন ধীরে ধীরে পানিতে ডুবতে লাগলো।
লাফ দিয়ে তাড়াতাড়ি ডাঙগায় নামলাম। লাবন্যর চেহারা যেন একটু ভয়ার্ত মনে হলো। অশরীরি কিছু নাতো। কিন্তু অশরীরি বলতে কি কিছু আছে?
হয়তোবা থাকতেও পারে-
"There are more things in Heaven and Earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy.”
― William Shakespeare, Hamlet
লাবন্যও লাফ দিয়ে নীচে নামতে চাইলো। কিন্তু শাড়ীর আঁচল বেঁধে গেলো ছোট একটা পেরেকে। লাবন্য ভয়ার্ত কন্ঠে বললো-ইস জিন্স পরে আসলেই ভালো হতো।
আমি বললাম- রাবিন্দ্রিক মেয়েরা কখনো জিন্স আর টি শার্ট পরেনা। পরলে যে ওদের বড্ড বেমানান লাগে।
তাড়াতাড়ি চাচার কথা মনে পড়লো। ক্যানোর চেয়ে আমাদের ওজন বেশী হয়ে গেছে। এই ক্যানোগুলো এমনভাবে তৈরি ধারণ ক্ষমতার একটু এদিক ওদিক হলেই ডুবে যায়। কিন্তু কী এমন বেশী ওজন হলো? আসার সময়তো ঠিকই আসলাম। কিন্তু ফিরার সময় জলে ডুবে যাচ্ছে কেন?
বুঝলাম থলের ভিতর রাখা খুলি গুলিই এই বাড়তি ওজনের কারণ।
তিনটার ওজন হবে মিনিমাম ২৪ পাউন্ড। আমি, লাবন্য, বৈঠা আর আমাদের পরিধেয় সব মিলে ২৯০ পাউন্ড।অত্যন্ত হালকা এই ক্যানোটি ২৮০ পাউন্ডের বেশী এক পাউন্ডেরও ওজন সইবেনা। আসার সময় ২৮ পাউন্ড ওজনের হালকা বৈঠা পানিতে ছিলো বলেই কোনো সমস্যা হয়নি।
সমস্যা আরো ঘনীভূত হলো যখন চাচার কথা মনে হলো - খুলিগুলো সবসময় একসাথেই রাখতে হবে। তিনটি সহোদরার খুলি। কোনো এক রহস্যময় কারণে এখুলিগুলোর পারষ্পরিক দূরত্ব ৬ফুটের বেশী রাখা যাবেনা। কারণ- নাকি তিনভাই-এক ডাইনিকে তাড়া করতে গিয়ে পরষ্পর ৬ ফুট দূরত্বেই মারা যায়। তিনভাই মারা গেলেও ডাইনীর হাত থেকে সেই জাতিটি রক্ষা পায়। যতক্ষণ এখুলিগুলো পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় একসাথে থাকবে ততদিন এ সম্প্রদায় রক্ষা পাবে ডাইনীর অভিশাপ থেকে। ইয়োনোমামি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা সানোমা বইয়ে চাচা এসব পড়েই রাজী হয়েছেন -খুলিগুলো কোনোদিন তিনি বিচ্ছিন্ন করবেন না।
লাবন্য মরে গেলেও এ থলিটি স্পর্শ করবেনা । আর একা একা থলিটি নিয়ে সরু প্রশস্ত নদীটাও পার হবেনা। অথবা এই অজানা জায়গায় নির্জন নদীপারে একা বসেও থাকবেনা। আমাকে এক মুহুর্তের জন্যও আলাদা হতে দিবেনা। আর সবাই মিলে ক্যানোতে ওঠলেই অতিরিক্ত ওজনে এটা ডুবে যাবে।আমাদের সব পরিধেয় বস্ত্র খুলে ক্যানোর সাথে বেঁধে যদি পারও হই তাহলেও ওজন বেশী হয়ে যায়। তবে কি কোনোদিনও জানা যাবেনা হারিয়ে যাওয়া এক জাতির রোমান্চকর রহস্য?
মনে মনে ভাবলাম, একটা উপায় আছে। লাবন্য বৈঠা নিয়ে ক্যানোতে থাকবে আর আমি সাঁতের পিঠে নরখুলির থলি নিয়ে পার হবো। কিন্তু হঠাৎ করে মনে হলো- আরে এ নদীটি যে রাক্ষুসে পিরানহার আবাসস্থল। মিনিটেই পুরো দেহকে রক্তাক্ত করে দেবে। আর তাছাড়া কোনোরকম জলের সংস্পর্শে আসলেই খুলিগুলো থেকে বিশেষ কিছু উদ্ধার করা যাবেনা। তখন এগুলো নিয়ে যাওয়া আর না নিয়ে যাওয়া সমান কথা।
এদিকে সুর্য ডুবি ডুবি করছে।দূর বন থেকে ভেসে আসছে হায়েনার ভয়ঙকর চীৎকার। আর আমাদেরও ওপারে পৌঁছাতে হবে সূর্য ডোবার আগে আগেই। না হয় আরো নানা রকমের বিপদ । আশে পাশে আর কোনো জনমানব নেই। ইয়োনোমামি ছেলেটিও ফিরে গেছে, সূর্যাস্তের কত আগে। এদিকে আজ আর কেউ আসবেনা। কারো সাহায্যের জন্য যে আবার গ্রামে ফিরে যাবো , তারও উপায় নেই। সূর্য ডোবার পর এ ভুতুড়ে গ্রামে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
এ অবস্থায় তিনটি মাথার খুলি সহ আমরা একসাথে নদীটি পার হই কীভাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৪