somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতৃগর্ভেই শিশু ইয়াসীনের ওপর নৃশংস, পৈশাচিক বার্বারিজম (নিরাপরাধ শিশু ইয়াসীন খুনের বিচার চাই।)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক-আমাকে বললেন , ঘটনাটি সবার নজরে আনার জন্য। আমি একলাইন পড়ি আর চোখের জলে মর্মরিত হই। বললাম, ভাই, আমিতো অশ্রু ধরে রাখতে পারছিনা। লিখবো কেমন করে?
উনি বললেন- বিবেক কি বলে?
বিবেকের চোখতো ভাই অন্ধ হয়ে গেছে, বিবেক আজ এই চারমাস বয়সী শিশুটির মতো বাকহীন যাকে মাতৃগর্ভেই প্রথমবার খুন করা হয়েছে।

ইয়াসীনের নিঃস্ব , অসহায়, হতদরিদ্র মা রাতের আকাশে চাঁদ দেখেন। আর পেটের ওপর হাত রেখে এক মাংস পিন্ড চাঁদের স্পর্শ অনুভব করেন। ইয়াসীন চাঁদ হয়ে মায়ের গর্ভে ধীরে ধীর বড় হয়।

ঘটনার দিন সন্ধ্যা। ইয়াসীনের মা সারাদিন মহল্লায় কাজ করে নিজ বস্তিতে ফিরেন। ঠিক এমন সময় হানা দেয় মানুষরুপী জানোয়ারের দল।

ইয়াসীনের মা সহ একই ঘরের ছয়জন মহিলাকে সম্পূর্ন বস্ত্রহীন করে হায়েনার দল প্রথমে অমানষিক নির্যাতন করে। তারপর ক্রিকেট ব্যাট আর স্ট্যাম্প দিয়ে ইয়াসীনের মা'কে পিটাতে থাকে বড় নির্মমভাবে।

অপরাধ ইয়াসীনের মা একটি ছয়তোলা স্বর্ণের চেন চুরি করছে।

ইয়াসীনের মা বলে- তোমরা আমার পিটে যতপারো মারো, কিন্তু আমার পেটে মারোনা। তোমরা আমার বাপ হও, আমার সোনা মানিকের কান্না আমি শুনতে পারছি। বাবারা, পেটের ভিতর চাঁদকণার হাড় ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। খোদার দোহাই তোমার আমার পেটে মেরোনা।

কিন্তু হিংস্র জানোয়ারের দল সেকথায় ভ্রক্ষেপ করেনি। পেটের ওপর লাত্থি মারতে থাকে,ক্রিকেট স্ট্যাম্প আর মেটাল স্ট্রিং দিয়ে পেটাতে থাকে অনবরত। একসময় হায়েনার দল ক্ষান্ত হয়।

এই ঘটনার ১ মাস পরে ভাষানটেক বস্তিতে মায়ের পেটের ভিতরেই নির্মম অত্যচারের স্বীকার চাঁদশিশু ইয়াসীনের জন্ম ।

জন্মের পর থেকেই ইয়াসীনের অসহায় চোখ। যে চোখ শুধু জল। সে ছিলো একেবারে বাকহীন। হাত-পা সব নিস্তেজ, অবশ। ইয়াসীন শুধু বোবা চোখে চেয়ে থাকতো এই বর্বর, পাষন্ড, নির্মম, নিষ্ঠুর, খুনী মানুষের পৃথিবীর দিকে।

ইয়াসীনেের দাদী বলেন- আমরা বুঝতে পেরেছি , ও মায়ের গর্ভে থাকাকালীন খুন হয়ে গেছে। কিন্তু আশ্চর্য্য এ ছেলে প্রাণ নিয়ে জন্ম নিলো কেমন করে?

ডাক্তার দেখাননি কেন- এর জবাবে দাদীমা বলেন-
আমরা বস্তির মানুষ। দিনে আনি দিনে খাই। বস্তিতে জন্ম , বস্তিতেই মৃত্যু। ডাক্তার দেখাবার অতো টাকা কই?

জন্মের ঠিক চারমাস পর। ইয়াসীন কাউকে কোনো অভিশাপ দেয়নি। কারো বিরুদ্ধে কোর্টে কোনো মামলা দায়ের করেনি। কে জয় বাংলা আর কে জয় পাকিস্তান বলেছেন এর ও কোনো খবর রাখেনি। ইয়াসীন শুধু দু চোখ চিরতের বন্ধ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।

ইয়াসীনের চারমাস জীবনের মূল্য হলো মাত্র ছয় তোলা সোনা। বর্তমান বাজার মুল্যে দুই লক্ষ সতেরো হাজার তিনশ ছয় টাকা মুল্যের সম্পদ । চুরির কথিত অপরাধে যদি সোনার মালিক পক্ষ প্রসুতি মাতা এবং মাতৃগর্ভে অবস্থান কালীন একটা শিশুর জীবননাশের আয়োজন করতে পারে, তবে যাদের কথিত দুর্নীতির কারনে $1.2 billion (বর্তমান বিনিময় হারে নয় হাজার ছয়শত কোটি চব্বিশ লক্ষ টাকা) এর চেয়েও অনেক বেশী মুল্যের পদ্মা সেতু প্রকল্পে সবচেয়ে কম সুদের হারে অর্থ লগ্নীতে সম্মত প্রধান বিনিয়োগকারীকে হারাতে হলো, তাদের কি হবে?

সেই প্রশ্নের উত্তর জানি কোনোদিনও পাবোনা। তবে মৃত্যুর আগে ইয়াসীন শেষবার মুতেছিলো। না প্রস্রাব করেনি, হিসু করেনি। বস্তির ছেলেদের যা বের হয় তা প্রসাব না, হিসু না। এটা সরাসরি মুত।

ইয়াসীনের মা সন্তানের বুকের কাছে কান রাখলেন ।সোনা মানিক চাঁদের কণার শেষ নিঃশ্বাস কি বন্ধ হয়ে গেলো তা বুঝার জন্য।

ইয়াসীন মা' কে বললো-
জন্মের পরই পা অবশ লাথ্থি দিতে পারিনা, হাত অবশ চড় দিতে পারিনা। কিন্তু এই বিচার, এই আদালত, এই ন্যায়পরায়ণতা, এই সভ্যতা আর এই মানবতায় মুতে দিয়ে গেলাম।

ঘটনাটি ঘটেছিলো ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালে ভাষানটেক বস্তিতে, জয়বাংলা আর জিন্দাবাদের শ্লোগানের মাঝে ইয়াসিনের মুত শুকিয়ে গেছে, ইয়াসীনের লাশ কবরে পচে গেছে। কিন্তু কোনো মানবতাবাদী, কোনো টিভি মিডিয়া, কোন টক শো সে খবর রাখেনি।

ইয়াসীন যদি কোনো নেতা হতো , অথবা কোনো নেতার পুত্র হতো, কোনো দলীয় ক্যাডার হতো, কোনো সংবাদকর্মী হতো, কোনো লেখক হতো, কোনো কবি হতো, কোনো নাস্তিক হতো, কোনো আস্তিক হতো, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজের শিক্ষার্থী হতো, কোনো মিছিলের বজ্রাক্রোশের শ্লোগানকর্মী হতো তবে ইয়াসীনের মৃত্যু পত্রিকা, সংবাদ, টিভি মিডিয়া, ব্লগে , ফেসবুকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক চড়ামূল্যেই বিক্রি হতো। কিন্তু ইয়াসীন কোনো মানবশিশু না। সামান্য এক বস্তির পোলা। এর সামাজিক প্রচার মূল্য জিরো।

জোয়ারের জলে ভেসে এসে একবার এক সমূদ্রচরে অনেক কাঁকড়া আটকা পড়েছে। আর ঝাঁকে ঝাঁকে শকুনচিল হানা দিয়েছে । একজন লোক হেঁটে হেঁটে একটা করে কাঁকড়া ধরে আর সমূদ্রের জলে নিক্ষেপ করে। লোকটির কান্ড দেখে -পাশ থেকে একজন বললো - ভাই আপনি কয়টা কাঁকড়া বাঁচাবেন। আর এতে তো তেমন কোনো পার্থক্য দেখছিনা। সবগুলোইতো শকুনের পেটে যাবে।

লোকটি ঠিক তখন আরেকটি কাঁকড়া হাতে নিয়ে সমূদ্রের পানিতে ছেড়ে দিয়ে বললো- এই যে আরেকটাকে বাঁচালাম। আর অন্ততঃ এতটুকু পার্থক্য তৈরী করলাম।

আজ এসব অসহায় মানুষের মৃত্যু ও দেখতে দেখতে হয়তোবা আমাদের জন্য একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।এর কয়টার প্রতিবাদ হবে?

একজন অসহায় নিরাপরাধ শিশু ইয়াসীনের জন্য প্রতিবাদ করে অন্ততঃ ধূলোপরিমাণ দায় শোধ করলাম। জানিনা তোমার এ চোখের অসহায় আকুলতা ক'জনের নজরে আসবে। ক্ষমা করো ইয়াসীন।



ছবিসূত্রঃ ডেইলি স্টার।ইয়াসীনের অসহায় চোখ দুটির দিকে তাকান।
আপনার বিবেক কি বলে?



(বিভিন্ন ফেসবুক পেজে, ব্লগে , গ্রুপে যে যেভাবে পারেন শেয়ার করেন। নিরাপরাধ শিশু ইয়াসীন খুনের বিচার চাই।)

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ খানকে ধন্যবাদ-খবরটি আমার সাথে শেয়ার করার জন্য।
প্রবাসী পাঠক ভাইয়ের প্রতি কৃতগ্গতা ছবিটি সংযুক্তিতে সহায়তা করার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১০
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×