বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক কষ্টে ফেসবুকে লগইন করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন-
ষোল কোটি বাঙ্গালীর হে মুগ্ধ রমণী,
রেখেছো ফেসবুক বন্ধ করে-
স্ট্যাটাস না দেয়ার যন্ত্রণা বুঝোনি।
কবিগুরুর এই স্ট্যাটাস মিনিটেই কয়েক হাজার শেয়ার। প্রথম আলো পত্রিকার হেড লাইন। কবি জীবনানন্দ দাশের হাত তখন নিশিপিশ করছে। কেমনে লগইন করা যায়। ভাইবারে কবি নজরুলকে পাওয়া যাচ্ছেনা। অন্যদিকে কবি মাইকেল বিদেশ থেকে ছুটিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েই যাচ্ছেন। পকেটের অবস্থাও ভালো না। ইস!!। মাইকেলটা যদি একবার ফোন দিতো। এমন সময় ক্রিং ক্রিং।জীবনানন্দের বিরাগ মনের হাহাকার শুণে মাইকেল হাসতে হাসতে শেষ। আরে বেকবু ! ফেসবুক বন্ধ । তাইবলে কি স্ট্যাটাস দিবানা। পক্সি, ভিপিএন এগুলো দিয়ে কি আন্ডা পারবা? এখনো ডিজিটাল হতে পারলানা মিয়া, এনালগে পইড়া রইলা।
কবি জীবনানন্দের সাথে সাথেই স্ট্যাটাস--
"আবার আসিব ফিরে,নানা স্ট্যাটাসের ভীড়ে-এই ফেবুর নেশায়
হয়তো কমেন্ট নয়, হয়তোবা কবিগুরুর একখানা লাইকের আশে,
হয়তোবা জসীমউদ্দীন ,নজরুল অকারণে যাবে শুধু দূর থেকে হেসে-
নিরাশার শোক শেষে একদিন আসিবো এ ফেসবুকের পাতায়।"
সাথে সাথে বেশ কয়েকখানা লাইক। আর মাইকেলের কমেন্ট-
সতত , হে কবি তুমি পড় মোর মনে,
ভিপিএনে লিখছো স্ট্যাটাস রাখো গোপনে।
জাতীয় কবি নজরুল তখন সবেমাত্র দমদম বিমান বন্দরে নেমে পকেট থেকে আইফোন সিক্স বের করে একখান স্টাটাস দেয়ার কথা। কিন্তু দেখেন- কবি জীবনানন্দের স্ট্যাটাসে মাইকেলের কমেন্ট। সাথে সাথেই বিদ্রোহী কবির সেই জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস-
"ফেসবুক ওপেন করবি কিনা বল,
না করিলে কিলের চোটে হাড় করিবো জল"
কবির স্ট্যাটাসে সাথে সাথেই কয়েক হাজার শেয়ার।শুধু তাইনা, অনেক পেজ লিখাটি চুরি করে নিজেদের নামে ঝেড়েও দিয়েছে।
অন্যদিকে, কবি আলমাহমুদের অবস্থা তখন আরো কাহিল। কোনো অবস্থাতেই লগইন করতে পারছেন না। আপনমনে হাঁটছেন আর বিড়বিড় করে বলছেন-
আমার প্রাণের স্ট্যাটাসগুলো হারিয়ে গেলো শেষে,
ফেসবুক হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো সারা বাংলাদেশে।
কবি শামসুর রাহমান ঘুম থেকে ওঠে শীতের ঠান্ডা সকালে ধূমায়িত গরম চা নিয়ে বসেছেন। ফেসবুকে লগইন করেছেন কিন্তু কিছুই লিখতে পারছেন না। নিজের কভার ফটোতে লিখাটি পড়ছেন-
ফেসবুক তুমি
রবি ঠাকুরের হাজার হাজার লাইক আর লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার,
ফেসবুক তুমি
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী সব পোস্টের চমকানো কথা,
ফেসবুক তুমি
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার স্ট্যাটাসের খাতা।
অন্যদিকে - শত শত ফেসবুকারের দল এই প্রথম ফেসবুকিং করতে না পেরে বিকেলে ঘর থেকে বের হয়েছে। আহা! বাইরের এই বিকেলটাওতো কত সুন্দর।মনোরম বিকেলের চন্চল শরের সুগন্ধি বাতাস সব ক্লান্তি বিহ্বলতা যেন মুহুর্তেই দূর করে দিয়েছে ।
দূর থেকে কুদ্দুস বয়াতীর মন বাউল করা গান ভেসে আসছে-
এই ফেসবুক সব কিছু নয়- আরো কত কিছু আছে,
এই ফেসবুকেরে নিয়ে যাবো সেই হারানো দিনের কাছে...............
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩১