একটা নামকরা প্রতিষ্ঠানে ১০ জন সৎ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে।
লিখিত পরীক্ষায় মোট পাশ করলেনও দশজন। এই দশজনের জন্য চিঠি পাঠানো হলো। সবাই চাকুরীত নিয়োগ পাবেন। তবে শর্ত একটাই- সবাই যেন ঠিক সময়ে মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত থাকেন।
পরীক্ষা ঠিক সময়ে শেষ হলো। দেখা গেলো নয়জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছেন। বাকী একজন বোর্ডের সামনে উপস্থিতই হতে পারেননি। বোর্ডের চেয়ারম্যান যিনি উপস্থিত হতে পারেন নি- উনাকেই চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা আশ্চর্য্য হয়ে জানতে চাইলেন- স্যার, যে উপস্থিত হতে পারেন নি। তাকেই কেন আপনি নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন।তাছাড়া, ওদের নয়জনকে জরিমানাও করলেন।
উনি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে আলাদা একটি রুমে গেলেন। টেলিভিশানের পর্দায় সিসিটিভিতে ধারণকৃত ফুটেজ প্লে করা হলো।দেখা গেলো- ভবনের মূল গেটের বাইরে দশজন প্রার্থী দাঁড়িয়ে আছেন। প্রহরী কাউকেই ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
প্রার্থীরা বুঝাবার চেষ্টা করছেন- আজকে উনাদের মৌখিক পরীক্ষা। ঠিক সময়ে উপস্থিত হতে না পারলে উনাদের চাকুরিটা হবেনা। কিন্তু , প্রহরী কোনো কথাই শুণতে চায়না।
তিনজন প্রহরীকে ম্যানেজ করে মানে ঘুষ দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন। বাকী কয়েকজন ভবনের পিছন দিক দিয়ে পাচিল টপকে ভিতরে প্রবেশ করলেন। যেখানে স্পষ্টই লিখা আছে- "পাচিল টপকে ভিতরে ঢুকা আইনত অপরাধ।"আরো কয়েকজন ঢুকলেন ভবনের পিছনের গোপন পথটি দিয়ে। কিন্তু শুধু একজন লোক ঘুষও দিলেন না, পাচিলও টপকালেন না, গোপন পথটির অনুসন্ধান করলেন না। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রহরীকে বুঝালেন। তারপর ব্যর্থ হয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে গেলেন।
এবার আপনাদের বলি। প্রহরী দিয়ে গেট আটকে রাখাটা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। যারা অসৎ তাদের জন্য মূলগেট বন্ধ করে রাখলেও ভিতরে ঢুকতে তাদের কোনো সমস্যা হবেনা।তারা ঘুষ দিয়ে, চোরা পথে, পাচিল টপকিয়ে যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে ফেলবে। শুধু আটকে যাবে সেই নিরীহ, ভদ্র, অসৎ পথে না যাওয়া লোকটি।
এই যে চোর, অসৎ , জঙ্গী, নাশতাকারীদের আটকে রাখার জন্য ভাইবার,স্কাইপ,টুইটার ইত্যাদি বন্ধ করে রাখছেন। আপনারা কি মনে করেন -এতো সহজেই অসৎ মানুষগুলোকে আটক রাখতে পারবেন। ওরা কোনো না কোনো ভাবেই - একটা না একটা উপায় বের করে ফেলবেই। যাদের অসৎ উপায়ে অর্জিত কাড়িকাড়ি টাকা আছে- এসব বন্ধ না খোলা তাতে ওদের কিছুই যায় আসেনা। ওরা প্রয়োজনে ফুরুৎ করে ওড়ে যাবে। হাগু আটকে গেলে প্রিয়তমা এলিজাবেথের কাছে ছুটে যাবে। হাঁচি আসলেই মাউন্ট এলিজাবেথের সাক্ষাৎ পাবে।
ওদের কোনো স্কলারশীপের দরকার নাই। অসৎ পিতার সম্পদের ভাণ্ডারতো রয়েই গেছে। প্রয়োজনে সাট্টিফিকেট কিনে নিয়ে নামের আগে, পিছে, পাছায় পদবী জুড়ে দিবে।
কিন্তু আটকে যাবে সেই নিরীহ ছেলেটি-যে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারের সাথে কথা বলার জন্য স্কাইপ নিয়ে বসে থাকে। কোনো মা অপেক্ষায় থাকেন কখন তার প্রবাসী ছেলেটির মুখটা দেখবেন। কোনো পিতা অপেক্ষায় থাকেন- এই বুঝি স্কাইপ খুলে দেয়া হলো। সদ্য জন্ম দেয়া সন্তানের প্রিয় মুখ এই মাত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠবে। অনেক ঘাম আর পরিশ্রমের টাকা কেউ সহজে সরাসরি লাইনে কথা বলে খরচ করতে চায়না। পরবাসে খেটে খাওয়া এই দুঃখী মানুষগুলো চায়- ভাইবারে, হোয়াটসআ্যপে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সারাদিনের ক্লান্তির পর একটু কথা বলতে। এই সহজ, সরল, হতভাগা মানুষগুলোই শুধু আটকে যাবে।
সরকার আছে , রাষ্ট্র আছে, দেশ আছে, রাজনীতি আছে। কিন্তু দুঃখী মানুষগুলোর এই দুঃখ বুঝার কেউ কি কোথাও আছেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫৭