somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া ইভেন্ট

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চকলেট আর কিস, প্রণয় আর পুলিশ -এসবেই কি ভালোবাসা দিবস? আসলে ভালোবাসা দিবস বলে পৃথিবীর কোথাও কিছুই নেই।কি চমকে গেলেন? এমনকি পাশ্চাত্যরাও "ভালোবাসা দিবস" বলে কোনো কিছুই পালন করেনা। ইংরেজী Love হলো ভালোবাসা। কই ওরাতো Love Day বলে কিছুই পালন করেনা। ওরা পালন করে- Valentine's day। রোমান পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মর্মন্তুদ ঘটনার স্মরণে এদিনটি পালিত হয়। বড় অদ্ভূত !!এই ভ্যালেন্টাইনস দিনটিকে সবকিছুতেই গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেয়া জাতি ভালোবাসা দিবসে রুপান্তরিত করেছে। এবার আরো একধাপ এগিয়ে পালন করার ইভেন্ট খুলেছে পুলিশ প্রহরায় চুমু। কারণ হলো এটা নাকি প্রগতিবাদ।
আপনি আপনার প্রিয়তম/প্রিয়তমাকে দিনভর চুমুখান তাতে কারো কিছু আসে যায়না। কিন্তু পুলিশ প্রহরা কেন? ভয় হচ্ছে-কোনো উশৃঙখল যুবক যদি তেড়ে এসে রাস্তায় বেলেল্লাপনা করার জন্য জুতোর বাড়ি দেয়- সেই ভয়!

আরে ভাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসার জন্য চাবুকের আঘাত সহ্য করলেন। শুধু তাই না। নিজের মাথা দ্বিখণ্ডিত করে প্রিয়তমার জন্য জীবন দিলেন। আর একটা প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য জুতোর বাড়ি খেতে পারবেন না। এই আপনাদের ভালোবাসা? এই আপনাদের ত্যাগ!

আপনারা বিরিয়ানী খাবেন - পুলিশ লাগবে। প্রেমিকার বাসায় যাবেন-পুলিশ লাগবে। ফ্লাটে যাবেন-পুলিশ লাগবে।আজ বলছেন- প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য পুলিশ লাগবে। কাল আরেকজন বলবে- পতিতা বাড়ি যাচ্ছি। প্রাণের ভয় আছে। বিছানার পাশে পুলিশ লাগবে। পরশু বলবেন- আপনাদের বাসরঘরেও পুলিশ লাগবে।আর পুলিশ লাগবেই বা কি জন্যে? পুলিশ কি গুটিকয়েক কুলাঙ্গারদের রাজস্বের টাকায় চলে? নাকি আপনাদের বাপ-দাদার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি। যেভাবে চাইলেন-সেভাবে ব্যবহার করলেন।

মুক্ত সংস্কৃতির চর্চা করেন তাই না? তবে পুলিশকে বাদ দিয়ে এই মুক্ত চর্চা নিজ পরিবার থেকে শুরু করেন না কেন? বাবা-মাকে বলুন। মা-বাবা এতো তারিখ ইভেন্টে আসো। প্রকাশ্যে চুমু খাবো। তোমাদের পাহারা দিতে হবে। একবার দেখতে চাই- আপনাদের বাবা মায়েরা কি বলেন? নাকি উনারাও এসে আপনাদের সাথে লালাবন্দী হন।

আরেকটা কথা প্রগতিবাদ আর পতিতাবাদ, মুক্তবাদ আর ফূর্তিবাদ, মুক্তমনা আর বেলেল্লাপনা এসবকে আপনারা একেবারে একাকার করে ফেলেছেন। । গায়ে পাণ্জাবী, গলায় চাদর, বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় কয়েকবার হাঁটাহাঁটি, কয়েকটি কবিতা আবৃতি করলেই প্রগতিবাদী হওয়া যায়না। এরজন্য সাধনা করতে হয়। অধরে অধর লাগানো আর শরীর উদোম করে চলাফেরার নামই প্রগতিবাদ হলে - নিজের জীবনবিকিয়ে যে বারবনিতারা রোজ রাত পার করে তারাই হতো সবচেয়ে বড় প্রগতিবাদ।

এই ছদ্মবেশী প্রগতিওয়ালারা এইতো কিছুদিন আগে বলেছিলেন- হিজাব বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে যায়না? বাহঃ খুবই ভালো কথা।
তবে রাজপথে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া কি খুব যায়? আপনাদের পূর্বপুরুষরা কবে, কোথায় , কোনখানে এসব বেহায়াপনা করেছিলেন-একটু জানাবেন কি?

তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা শারমিনকে দেখেছিলাম। আমেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান।ঠিক মাগরিবের আগে এক অনুষ্ঠানে আসলেন। এখানে নামাজ পড়ার সব জায়গায় তেমন ব্যবস্থা থাকেনা। তারপরও একটু জায়গার ব্যবস্থা করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নামাজটা পড়লেন। এরপর প্রায় ঘন্টাখানেক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো বক্তৃতা করলেন।

টিউলিপ সিদ্দীকী , রোশনারা, রোপা হক বৃটিশ পার্লামেন্টে পুরো বাঙালী জাতির প্রতিনিধিত্ব করছেন।নিশাত মজুমদার এভারেস্টে ওয়াশফিয়া পৃথিবীর উঁচু সাত পাহাড়ের উপর বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন, এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে ভারোত্তলনে স্বর্ণ জিতে জাতীয় সংগীতের সাথে গৌরবে, ভালোবাসা আর দেশের জন্য মমতায় ফুঁপিয়ে কাঁদলেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। কই কেউতো এদেরকে বাঁধা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি। পুলিশ পাহারা দেয়নি, তবে পুলিশ দাঁড়িয়ে স্যালুট জানিয়েছে। মাবিয়া আনন্দে আর আবেগে কেঁদেছে।দেশের গৌরবে মাবিয়ার সাথে আরো অনেকে কেঁদেছে।

এরাইতো মুক্তমনা, এরাইতো আমাদের অহঙ্কার, এরাইতো আমাদের প্রগতিবাদের বলিষ্ঠতম উদাহরণ। আর এসব করতে দরকার হয় অধ্যাবসায়,সাধনার,পরিশ্রমের। দরকার হয় দেশের প্রতি, পরিবারের প্রতি, জাতিরপ্রতি ,সমাজের প্রতি সত্যিকারের ভালোাবাসার। এরা জানে- দুইনাম্বারি করে -নগ্ন হয়ে, অধরে অধরে লাগিয়ে, দুচারটা উল্টাপাল্টা, অশ্লীল, বিকৃত রুচির কথা লিখে , রাস্তায় নেড়ি কুকুরের মতো বেলেল্লাপনা করে জার্মানের বেকার ভাতার টাকায় তাদের চলতে হবেনা। দেশের প্রতি , দেশের মানুষের প্রতি মিথ্যা অপবাদ তৈরী করে রিফিউজির কাগজও বানাতে হবেনা।

এর পাশাপাশি এই বিষয়টাও খেয়াল করা খুবই জরুরি। অনেকেই বলছেন- ইসলামে এসব কালচার নাই। এগুলো ইসলামের সাথে যায়না। আরে ভাই। সবকিছুতেই ইসলাম লাগান কেন? ইসলামের সাথেতো আরো অনেক কিছুই যায়না।
ঘুষ খাওয়াও তো ইসলামের সাথে যায়না।ঘুষের টাকা দিয়ে হজ্ব করাও তো ইসলামের সাথে যায়না, মদ আর শুকর বেচার টাকা দিয়ে মসজিদ বানান এগুলোতো ইসলামের সাথে যায়না। রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করেন- এটাওতো ইসলামের সাথে যায়না। সারারাত মানুষকে, হাসপাতালের রোগীদের বিরক্ত করে নানা কিচ্ছাকাহিনী বানিয়ে ওয়াজ করেন-এগুলোও তো ইসলামের সাথে যায়না। ওয়াজ শুণতে যারা এসেছে তারাইতো শুণলে হয়। জোর করে অন্যকে শুনানোর দরকারই বা কি? আর দূর থেকেতো কেউ শুণেও না। মূল কথা হলো- মানুষের শান্তি বিনষ্ট করে, মানুষ বিরক্তবোধ করে এমন কোনো কিছুইতো ইসলামের সাথে যায়না।

এসব চিল্লাপা্ল্লা করে ইবাদত করা- কোরআনের সম্পূর্ন রুপে পরিপন্থি।বিশ্বাস হয়না। নিজের আয়াতগুলো দেখেন-
"তোমরা বিনীতভাবে এবং গোপনে তোমাদের প্রভুপালককে ডাক।"— সুরা আ’রাফ, আয়াত ৫৫
"যখন সে তাহার প্রভুপালককে আহবান করিয়াছিল নিভৃতে।" — সুরা মার্‌য়াম, আয়াত ৩
হাসান বসরী র. বলেছেন, উচ্চঃস্বরের দোয়া ও নিম্নস্বরের দোয়ার মধ্যে সত্তর হাজার গুণ পার্থক্য রয়েছে। প্রথম যুগের মুসলমানগণ দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করতেন। তাঁদের ওই দোয়ার সামান্য আওয়াজও শোনা যেতো না। শুধু দেখা যেতো চোখে অশ্রু আর শোনা যেতো ওষ্ঠ সঞ্চালনের শব্দ। নবী সাঃ এর বলা নীচে আরেকটি অতি উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেয়া হলো-

হজরত আবু মুসা আশআরী বর্ণনা করেছেন, খয়বর যুদ্ধের সময় একটি প্রান্তর অতিক্রমকালে মুসলিম সৈন্যরা উচ্চঃস্বরে তক্‌বীর উচ্চারণ করেছিলেন। রসুলেপাক স. তখন বলেছিলেন, শান্ত হও। তোমরা কোনো অনুপস্থিত স্বত্বা তো আহবান করছো না। তোমরা ওই সত্তাকে ডাকছো - যিনি সর্বশ্রোতা এবং নিকটতম।

কিন্তু এখনতো সব লোক দেখানো।এমনকি ইবাদত করাটাও। কে কাকে কী কিভাবে দেখাতে পারবে। কার চেয়ে কে জোরে,চীৎকার চেচামেচি করে নিজেকে জাহির করতে পারবে। এই প্রকাশ্যে চুমু খাওয়াটাও কিন্তু জাহির করা, স্রেফ লোক দেখানো। না হলে যে কোনো মজা নেই, কোনো চার্ম নেই।প্রেমিক -প্রেমিকার ভালোবাসা শুধুমাত্র দুজনে জানলেইতো হয়। তোমাদের অধরের লালা কুকুরের মতো রাস্তায় ফেলার দরকার কি।নিজের ঘরে বসে ধুমাইয়া চুমু খেলেতো কেউ কাউকে কিছু বলার না। তোর চুমু তুই খা , না হয় গু খা। আপনি আর আমিতো বলার কিছু না।

নাকি বলবেন- আপনি আমার স্কুলগামী ছোট ভাইবোনের সামনে প্রকাশ্যে রাষ্ট্রীয় পুলিশের প্রহরায়- চুমু খাবেন-এটা দোষের কিছুনা। শুধু আমি বললেই-সেটা হবে প্রগতির বিরোধীতা। ছিঃ আপনাদের দ্বিচারিতা।










সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯
৩৫টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×