somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

খোরশেদ খোকন
আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

অনুগল্পঃ ঝরাপাতার দিন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল পাঁচটা, শীতের বিকেল তাই একটু বিবর্ণ লাগছে চারপাশ, শেজানের গাড়িটা দোয়েল চত্তর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে এসে এখন চারুকলা অনুষদের সামনে। শেজান চারুকলার দিকে তাকিয়ে দেখল, পড়ন্ত বিকেলের নির্জনতা বুকে নিয়ে একটি বড় বিজ্ঞাপন দাড়িয়ে আছে, তাতে লেখা, “ঝরাপাতার দিন” – সোহানা’র একক চিত্র প্রদর্শনী।
গাড়ীতে ব্রেক কষে চারুকলার দ্বিতীয় গেইট দিয়ে ঢুকে গাড়ী পার্ক করল সে, তারপর হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেলো জয়নুল গ্যালারীর দিকে, দেখা হয়ে গেলো...পনেরো বছর পরে, সেজান আর সোহানার...

শেজান- এই তুমি দেশে এসেছ আমাকে তো জানালে না...
সোহানা- আমি গতকালই ঢাকায় এসেছি। এসে হোটেলে উঠেছি। যারা আমার প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে তাদের সাথে কাজগুলো গোছাতেই একটু সময় লেগে গেলো...
শেজান- তার মানে তুমি প্যারিস থেকে এসেছ গতকাল...
সোহানা- হ্যা। আমার পরিকল্পনা ছিল আজ রাতে তোমাকে জানাবো...
শেজান- চলো একটু কুয়াতলার গিয়ে বসি...
সোহানা- চলো... মানুষ তোমার সম্পর্কে বলে, তুমি নাকি দাম্ভিক আর খুব মেজাজি...
শেজান- মানুষ যা বলে তাই বিশ্বাস করতে চাও, নাকি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেও দেখেছ?
সোহানা- মানুষ যা বলে সবটা না হলেও, তুমি তো তোমার মতোই, নাকি?
শেজান- হ্যা, আমার মতোই আমি। কারো সাথে কাজ ছাড়া দেখা করিনা, তাই দাম্ভিক। আর কাজের কথা ছাড়া কথা বলি না, তাই মেজাজি...
সোহানা- তবুও আমার মনে হয়, তুমি দেখতে যা। আসলে সেটা না; তবে হলে খুশি হতাম...
শেজান- যে আমার চেয়ে কোমল স্বভাবের সে আমাকে ভাবে কঠোর মানুষ। এখানে দেখার সমস্যা না, বোঝার সমস্যা...
সোহানা- মানুষ যা বলে, সেটা তুমি? নাকি মানুষ যা বলে, তুমি সেটাই হতে চাও?
শেজান- তুমি বলতে কি চাও?
সোহানা- তুমি শুনতে কি চাও? যদি তুমি যা শুনতে চাও, সেটা বলি; তাহলে সে কথা আমি বলে লাভ কি? সেটা তো তোমারই কথা, তাই না!
শেজান- মানে?
সোহানা- শোন তুমি যা শুনতে চাও না; সেটা বললে ভাল লাগবে না। কেননা সবাই নিজের বিরুদ্ধে কথা নিতে পারেনা, কেউ কেউ নেয় কিন্তু তারা আবার মানতে পারে না। তুমিতো আবার এক ড্রিগ্রি উপরে, কথা মনে নাও কিন্তু মেনে নাও না! আসলে, একজনের স্বাধীনতা কিন্তু অন্যজনের জন্য স্পর্ধার বিষয়।
শেজান- তুমি তোমার কথার পাশে - একটা নিজস্ব যুক্তি তৈরিই রাখো, তাই না?
সোহানা- ভেবে দেখো, তোমাকে নিয়ে অন্যদের ভাবনা কিংবা অন্যদের নিয়ে তোমার ভাবনা, দেখবে মিলে গেছে...
শেজান- এভাবে কথা বলতে ভাল লাগছে না, একটু সহজ করে কথা বল...
সোহানা - একটু সময় নাও, দেখবে... কথা বলার জন্য অনেক কথা জমা আছে। কথা আগে নিজের সাথে বলতে হয় তারপর সেটা অন্যের জন্য নির্বাচন করতে হয়। মুখের কথা কানের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা খুব সহজ কাজ নিশ্চয়ই না, কি বলো?
শেজান- হ্যা, হয়তো। তবে তুমি চাইলে আমরা নতুন একটা শহরে চলে যেতে পারতাম!
সোহানা– সেই দিনগুলো কতটা সহজ সরল ছিল... ভাবতে খুবই ভাল লাগে...
শেজান- হ্যা, আমারও ভাল লাগে।
সোহানা– কেন বলছ নতুন একটা শহরের কথা? আমি কি নতুন একটা শহরে চলে যাই নি?
শেজান- হ্যা, নতুন একটা শহরে, নতুন সংসারে তুমি চলে গেছো। তবুও আমিতো সেই সময় তোমাকে বলেছি, আমি কতটা পাগল ছিলাম...
সোহানা- তুমি বলোনি।
শেজান- আমি বলেছি, তুমি বোঝনি।
সোহানা- দেখো, তুমি যদি বল, তুমি হাত ধরে ছিলে, চোখে-চোখ রেখেছিলে, একই রিক্সায় ঘুড়েছ, একই ঠোঙ্গায় বাতাম খেয়েছ... এতে কিন্তু কিছুই বুঝায় না!
শেজান- তাহলে কি করে? কি করলে এতো সব বোঝায়?
সোহানা- তুমি জানো বোধ হয়, তবুও বলি; তুমি যেটা করেছে সেটা মেয়েরা করবে...। মানে ইশারায় কথা বলবে। কিন্তু একটা মেয়ে সব-সময়ই চাইবে ছেলেটা তার জন্য ভাংচুর একটা কিছু করুক। মুখ ফুটে বলুন, ভালবাসি...
শেজান- হ্যা, সেই বলাটা হয়তো আমি বলতে পারিনি। এটা একটা সত্যি...
সোহানা- কথা লুকাচ্ছ?
শেজান- কি লুকাবো? আর কার কাছে নিজেকে লুকাবো, বলো? লুকিয়ে থেকে নিজেকে নিজে কি কম শাস্তি দিয়েছি!
সোহানা- সত্য মিথ্যা জানিনা, তুমি আসলে পারো নাই...!
শেজান- কি পারি নাই?
সোহানা- একটা ঝড় কিংবা সাইক্লোন যেমন সবকিছু চুরমার করে দেয়, তেমনি একটা মেয়ে চায় তার ভালবাসার মানুষটি একদিন ঝড় হয়ে আসুক, আর নতুন একটা দিন উপহার দিক...সেটা পার নাই...
শেজান- আমি কি একটি দিনের জন্যও তোমার ভাবনার বিষয় ছিলাম না?
সোহানা- হ্যা ছিলে...সে থাকাটা বাস্তব ছিল, কিন্তু তুমি স্বপ্ন ভালবাস... তাই নিজেকে নিজেই হারিয়ে ফেলেছ!
শেজান– আমি আসলে আমাকেই হারিয়ে ফেলেছি, একমাত্র মানুষই পারে নিজেকে হারিয়ে আবার খোঁজ করার চেষ্টা করতে, তাইনা?
সোহানা- হ্যা, বিষয়টা ধরতে পেড়েছ। আগেতো কবিতা লিখতে; ইদানীং শুনেছি গল্পও লিখছ...?
শেজান- হ্যা, চেষ্টা করছি...
সোহানা- তোমার গল্পগুলো পড়তে চাই, প্যারিসে তো পাবো না। একদিন আজিজ মার্কেটে খোঁজ নিবো। তোমার নাম বললে চিনতে পাড়বে?
শেজান- কেন পাড়বে না?
সোহানা- গল্প পড়ে পড়ে তোমাকে আর আমাকে খুঁজে দেখতে ইচ্ছা করছে, তুমি আমার সম্পর্কে কিছু কি লিখেছ?
শেজান- তোমাকে পাওয়া অসম্ভব না। তবে আমাকে কিভাবে পাবে? গল্পে তো আমি নেই, আমি লিখছি...
সোহানা- গল্পে তুমি যাই লেখো, সেখানে কথাটাতো তুমিই বলছো, তাই তোমাকে পাবো। চাইলে মিথ্যে বলতে পারো, কিন্তু যা লিখছ তা কিন্তু গল্প হলেও তোমার সত্য অনুভূতি; অন্তত আমার কাছে কল্পনা কিংবা স্বপ্ন না...।
শেজান- আমি অবশ্য এভাবে ভেবে দেখিনি।
সোহানা- তুমি কি আমার সাথে আজ রাতে ডিনার করবে? রাত ১০.০০ টায় রেডিসনে চলে আসতে পারো।
শেজান- না, আমি আজ রাতে তোমার ডিনারে আসবো না। এখন ৬.০০টা বাজে, চলো তোমার ছবিগুলো দেখবো... ডিনার হবে অন্যদিন...
সোহানা- আচ্ছা চলো...অন্যদিনই ভালো। তুমি সময় বের করতে থাকো এদিকে আমি ঢাকা শহরকে একটু নতুন করে দেখে নেই...

...শেজান আর সোহানা চলে গেলো জয়নুল গ্যালারীর ভেতরে; যেখানে সাদা-ক্যানভাসে রঙ-তুলির আঁচড়ে হাসছে “ঝরাপাতার দিন” – একটি ছবিতে চারুকলার কুয়াতলার নির্জন বিকেলে দুইবন্ধু পাশাপাশি বসে আছে; কি এমন কথা বলছে ছেলেটা? আর মেয়েটা এতোটা মনোযোগ দিয়ে শুনছে...!

...শেজান আর সোহানা কি এই ছবিটাতেই বন্ধি হয়ে আছে আর তাদের দিনগুলি পাতার মতোই ঝরে গেছে...!?
...
© খোরশেদ খোকন। ২৫/১২/২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×