somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

খোরশেদ খোকন
আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

স্মৃতির জোনাকিরা..(পার্বতীপুর)

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনেপড়ে, সেই দিনটা ছিল ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখ!

সন্ধ্যায় নামার আগেই সম্ভবত ৬টায় বাবা-মা আর ভাই-বোনদের কাছ থেকে আমরা বিদায় নিয়েছিলাম। সেদিন সেই ট্রেনটার নাম ছিল দ্রুতযান এক্সপ্রেস। সেটা সন্ধ্যা ৭.৫০টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে দিনাজপরের পার্বতীপুর যাবার কথা ছিল...।

আমরা একটি ট্যাক্সি-ক্যাব নিয়ে কমলাপুরে পৌছেছিলাম সন্ধ্যা ৭টায়; কিন্তু পৌঁছে দেখি সেই ট্রেনের কোন দেখা নেই। চারপাশে মানুষের কোলাহল, হকারের চিৎকার, ট্রেনের হুইসেল সবকিছু মিলিয়ে একাকার লম্বা একটা প্লাটফর্ম...।

হ্যা, অবশেষে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটা ৮টার দিকে কমলাপুরে এসেছিলো, যাত্রীরা একে একে নেমে যাবার পর শুরু হয়েছিল ধোয়া মোছার কাজ। ক্লান্ত ট্রেনটা সেদিন ঘণ্টা খানেক চোখের সামনেই জিরিয়ে নিয়েছিল...।

তারপর সেই ট্রেনটার হুইসেল শুনে, আমরা ট্রেনে উঠেছিলাম। মুখোমুখি বসবার ভাল দুই জোড়া সীট পেয়েছিলাম। আমার পাশে দিনাজপুরের মধ্যবয়সী একলোক বসেছিলো, আর আমার সামনের সীটে মুখোমুখী বসেছিলো শিখা (স্ত্রী) আর কণিকা (একমাত্র শ্যালিকা)। আমার মেয়েটা বিস্ময় নিয়ে একবার মায়ের কোলে, একবার খালামনির কোলে আর একবার আমার কোলে উঠে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল...।

সেদিন সন্ধ্যা ৭.৫০ টার ট্রেনটি রাত ৯.০০টার দিকে পার্বতীপুরের উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছিলো। আমরা চারনজন মিলে একটি দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণ শুরু করেছিলাম। বিয়ের দুই বছর পর জীবনে প্রথম বার শশুর বাড়ীতে যাবার ট্রেন ভ্রমণের গল্পটা এভাবেই শুরু হয়েছিল...।
...
আমাদের বিয়ে হয়েছিল মিরপুর-১০ এর একটি চাইনিজে রেস্তরাঁয় যার নাম ছিল চায়না টাউন; সেখানে বিয়ের দিন শিখার দিনাজপুরের আত্মীয়-স্বজনরা এসেছিল আশীর্বাদ করতে। ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব বেশী; তাই আমি এবং আমাদের কোন আত্মীয়-স্বজন কখনই দিনাজপুর যাইনি।

ট্রেনটি কমলাপুর থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে জয়দেবপুর ছাড়িয়ে আমার জেলা টাঙ্গাইল পৌছালো। আমার মেয়ের জন্য সেটাই ছিল জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমণ। রাত জেগে জেগে মেয়েটাকে একবার আমার কোলে, তারপর শিখার কোলে, তারপর কনিকার কোলে রেখে রেখে আমরা গল্প করতে লাগলাম...।

রাত ১১.০০ দিকে আমার গ্রামের বাড়ীর পাশের ইব্রাহিমাবাদ রেলষ্টেশনে ট্রেনটি ৩০ মিনিটের একটা বিরতি দিলো। আমি আমার চেনা গ্রামটাকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখালাম, গ্রামটা নির্জন রাতের বুকে নির্মল একাকী ঘুমিয়ে ছিল...।

যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফর্মে হাঁটাহাঁটি করলাম, দেখলাম আমার গ্রামের খেটে খাওয়া কিছু রাত জাগা মানুষ
মাঝরাতে গরম ডিম বেচাকেনা করছে। গ্রাম্য মানুষের আঞ্চলিক কথার টানে সে রাতে আমার মনটা ভরে গিয়েছিলো; আমরা তিনজন ধোয়া ওঠা গরম ডিম খুব আয়েশ করে ঝাল মরিচের গুরা আর লবণ মেখে খেয়ে ছিলাম...।

শিখা আর কনিকার গল্প মানেই ছিল পার্বতীপুরের পুরান বাজার, স্কুলের মাঠ, মেঠো পথ,সবুজ ধানের ক্ষেত, বাড়ীর পাশ দিয়ে বসে যাওয়া তিলাই নদী আর মাঝ রাতে বাড়ীর পেছেন দিয়ে চলে যাওয়া দ্রুতগামী ট্রেনের হুইসেল; জেনো এক একটা গল্প নয় এক একটা রূপকথা...।

ট্রেনের সীটে বসে ঘুমানো আমার স্বভাবে নেই; তাই প্রত্যেকটা ষ্টেশনে ট্রেন থামলেই সেই ষ্টেশনের নামটা খুঁজে খুঁজে দেখছিলাম, আরও দেখছিলাম রাত জাগা অপেক্ষমাণ যাত্রীদের উদ্বেগ, আর যাত্রীদের চোখে মুখে লেগে থাকা ক্লান্তি...।

এভাবেই রাত বেড়ে গেলো, এক সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটা স্টেশনে ট্রেন আসলো। হ্যা, হিলি ষ্টেশনে এসে তাকিয়ে দেখলাম, হাতের একপাশে বাংলাদেশ আর অন্যপাশে ভারত। দুই দেশের সীমানা বরাবর একটা লাইন ধরে এগিয়ে গেলো আমাদের ট্রেন। আমরা রাত পারি দিয়ে দিনের আলোর খোঁজে আরও এগিয়েই গেলাম...।

তারপর সামনে এলো বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, কয়লার বিদ্যুৎ প্রকল্পের বুকের ভেতর দিয়ে একটা ঝলমলে আলোর শহরের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলো ট্রেন পার্বতীপুরের দিকে...।

সেই লম্বা রাতটা পারি দিয়ে অবশেষে সকাল ৬.০০টায় আমাদের ট্রেন পার্বতীপুর রেলস্টেশনে পোঁছে গেলো। ট্রেন থেকে নেমেই দেখি, আমার শশুর সাহেব, মোনেম (একমাত্র শ্যালক) আরও বাড়ীর অন্য মানুষ রাত জেগে জেগে বসে আছে প্ল্যাটফর্মে আমাদের অপেক্ষায়...।
রিক্সায় অচেনা রাস্তায় শিখার পাশে বসে, মেয়েকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেলাম; রাতের ক্লান্তি চোখে মুখে লেগে ছিল...। আঁধার পেড়িয়ে যাচ্ছিলাম আর গাঁয়ে নরম শীতল বাতাসের দমকা এসে লাগছিল।

দেখছিলাম মাথার উপরে দাড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল কড়ই গাছের ছায়া এসে পড়ছে কালো রাস্তার বুকের সীমানায়। মফসলের নির্জন রাস্তায় ধোয়া ধোয়া আকাশে একটা নতুন সূর্য আস্তে আস্তে উকি দিচ্ছিল...।

কি যে একটা ঘোর লাগা অনুভূতি লেগেছিল চারপাশে, যেন রুপকথার দেশে স্বপ্নের মতো এগিয়ে আসছে নতুন ভোর...!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×