somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা কে নিয়ে গল্প

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১
-মা এখন যাই।
-যাই বলেনা বাবা, বল আসি।
-আচ্ছা মা আসি।
এই বলে স্টেশনের দিকে হাঁটা ধরল রেহান। সে আজ ঢাকা যাচ্ছে। এইচ.এস.সি পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কঠিন ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম দিকে কোথাও চান্স হচ্ছেনা দেখে সে হতাস বোধ করে। মাকে হতাসার কথা জানায় না। শুধু বলে পরীক্ষা দিচ্ছি। মা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। ছেলেকে শান্তনা দেন। বলেন- 'আল্লাহর উপর ধৈর্য্য রাখ বাবা। তিনি তোর দিকে মুখ ফিরে চাইবেনই'। রেহান কিছু বলেনা। শুধু হাসে।

-ভাল করে একটু দোয়া করবে তো মা। তোমার দোয়া থাকলে সব হবে।
-না বাবা। শুধু আমার দোয়া থাকলেই হবেনা। তুইও একটু নামাজ পড়িস। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে যা চাবি তিনি তাই দেবেন। তিনি কারো চাওয়া অপূর্ণ রাখেন না।

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। রেহানের জন্য দিনটি স্মরণীয় হতে পারে আবার দু:স্বপ্নও হতে পারে। কারন এরপর আর কোথাও পরীক্ষা নেই। যদি এখানে চান্স না হয় তবে মাকে আর মুখ দেখাতে পারবেনা। অভাবের সংসারে কত কষ্ট করে মা সংসার চালাচ্ছেন তা শুধু রেহানই জানে। সম্পদ বলতে সামান্য কিছু ধানী জমি ছাড়া আর যে তাদের কিছুই নেই। নিজে না খেয়ে থেকে রেহানের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন তারপরো কারো কাছে হাত পাতেন নি। সেই মাকে সে কষ্ট দিতে পারবেনা। কখনোই না।


০২
যথা সময়ে রেহানের পরীক্ষা শেষ হয়। অপেক্ষা শুধু ফলাফলের জন্য। এক সময় সেই দিনটি আসে। আল্লাহর নাম জপতে জপতে রেজাল্ট বোর্ডে যায় সে। বেশিক্ষণ রোল নম্বর খুঁজতে হয়না। মেধা তালিকায় তার রোল রয়েছে। রেহানের বিশ্বাস হয়না। এডমিট কার্ডের সাথে মিলিয়ে দেখে। একই রোল। তার মানে সে চান্স পেয়েছে। দু'চোখে কিছুটা অশ্রু জমে। মাকে খবরটি দেয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে ওঠে। চান্স পাওয়ার সংবাদ শুনলে মা যে কি পরিমান খুশি হবে! রাতেই ট্রেনেই বাড়ি চলে যায়। দেখে মা উঠোনে ভাত রাঁধছে। রেহান মনে মনে ঠিক করে মাকে খবরটি একটু অন্যভাবে দেবে। প্রচন্ড মন খারাপ করার ভান করে মায়ের পিছনে গিয়ে মাকে ডাকে। মা পিছনে ফিরে তাকায়। ছেলের হতাস মুখ দেখে। বুকটা আঁতকে ওঠে তার। তার মানে এখানেও চান্স হলনা! রেহান কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে 'মা আমি চান্স পেয়েছি ই ই ই......'। মা-ছেলের আনন্দের দৃশ্যটুকু আর নাই বা বললাম।

আজ যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। সন্ধ্যার দিকে সে ঢাকা পৌছাঁয়।

সৃষ্টিকর্তা যখন কাউকে কোন কিছু দিতে চায় তখন উজাড় করে দেয়। রেহানও যে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কিছু পাবে তা যেন আগেই লেখা ছিল। ভর্তি হতে না হতেই এস.এম হলে থাকার জায়গা হলো, পরিচিত এক ভাইয়ের সহযোগীতায় দুটি টিউশনিও যোগার করে ফেলল। মাকে চিঠিতে সব বিস্তারিত জানাল সে। এখন নিজেকে মেলে ধরবার পালা।


০৩
আর এক সপ্তাহ পরেই ক্লাস শুরু হবে। দুদিন পরই টিউশনি। ভেতরে ভেতরে খুব টেনশন হচ্ছে। পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি চালাতে হবে। সবকিছু ঠিকভাবে চালাতে পারবে তো সে? এই সময় মাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে তাকে না দেখা পর্যন্ত মনে শান্তি আসবেনা। গতবারও এরকম হয়েছিল। টেস্ট পরীক্ষার আরমাত্র চারদিন বাকি, হঠাত্‍ মাকে দেখার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠল। বাড়ি যাওয়ার জন্য স্যারের কাছে অনুমতি নিতে গেল; পরীক্ষার আগে স্যার কিছুতেই যেতে দিলেন না। অস্থিরতার ভিতর দিয়ে পরীক্ষাগুলো দিল সে। রেজাল্টও খুব একটা ভাল হলনা। এবারো মাকে দেখার জন্য মন ছটফট করছে। যে পরিমান টাকা আছে তা দিয়ে বাড়ি যাওয়া আসা করা যাবে কিন্তু পুরো মাস চলবে কি করে? গ্রামের মাতবর চাচার কথাটি বারবার মনে পড়ছে। একদিন মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন- 'কোন কিছুতে ভয় পাবিনা। উপরে একজন দেখনেঅলা আছেন। তার নজর সবার দিকে আছে'। রেহানও মনে মনে বলে 'দেখনেঅলার নজরটা যেন তার উপর থেকে কখনো সরে না যায়'।

রেহান জানে মা তার জন্য অনেক চিন্তা করে। কিন্তু মা কি জানে রেহান মাকে নিয়ে কতটা চিন্তা করে? অনেক কিছুই ভাবে সে মাকে নিয়। একদিন পড়ালেখা শেষ করে বড় একটা চাকুরী করবে, তারপর মাকে আর গ্রামে থাকতে দেবেনা। সুন্দর দেখে দুটো রুম ভাড়া নেবে। মা নির্জনতা পছন্দ করেন। তাই বেছে বেছে এমন রুম ভাড়া নেবে যেখানে শহরের কোলাহল কম থাকে। আর হ্যাঁ, রুমের জানালা হতে হবে পূর্ব দিকে। মা ফজরের সালাত শেষে জানালা খুলে দেন। জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলোয় কুরআন শরিফ পড়েন। তিনি কোথায় যেন শুনেছেন সকালের সূর্যের আলোয় কুরআন শরিফ পড়ার মধ্যে বরকত বেশি। কথা সত্য হোক আর মিথ্যা হোক মা'র যেটা পছন্দ রেহান সেটাই করবে।


(আগামী পর্বে সমাপ্য)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×