somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ভাবী", ভাবতেই থাকি... !!!

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ভাবী-এক রহস্যময় শব্দের নাম।পৃথিবীর যাবতীয় অজানাকে আবিষ্কারের পরও যে শব্দের মোহ আপনাকে তাড়িত করবে আমৃত্যু-তাঁর নাম,"ভাবী"।সাধারনত আমরা বড় ভাইয়ের বউকে ভাবী বলে থাকি।এই রমণীর হাতেই সংসার সুখের হবার সোনার কাঠি-রুপার কাঠি গচ্ছিত এবং সেটা আমাদের প্রচলিত সমাজ বাবস্থায় প্রায় প্রতিটি পরিবারেই।আর আপনার গুণধর ভাইটি যদি নম্র-ভদ্র-উচ্চশিক্ষিত হন,তবে সেটা ষোল আনাই সঠিক।এই মহিলার দয়া-দাক্ষিণ্যে একটি পরিবার যেমন সুস্থ সবল নীরোগ দেহে শান্তির স্নিগ্ধতা ছড়ায়,তেমনি তাঁর বীভৎস বাড়াবাড়িতে একটি পরিবার হাবিয়ার অনলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।


আমরা ছিলাম নয় ভাই বোনের পরিবার।বোনেরা ছিলেন বয়সে ভাইদের চেয়ে বড়,তাই মায়ের মৃত্যুর আগেই পাঁচ বোনের তিন বোন বিয়ে হয়ে শশুর বাড়ির পথ ধরেছেন।আমাদের পরিবারের বড় ছেলে অর্থাৎ আমার বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বাবলু চট্টগ্রাম ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করে আজকের কাগজ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে সদ্য যোগদান করা সাংবাদিক।তিনিই ছিলেন বাবা-মা,ভাই বোনসহ পরিবারের আশা আকাংখার প্রতীক।আমি কেবল নটরডেম কলেজ শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছি।একই ভার্সিটিতে আমার অপর দুবোনও পড়তেন।আমার অনার্স প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার মাসখানেক আগে,হঠাৎ মায়ের মৃত্যু আমাদের সুখের স্বর্গে কালো মেঘে ঢেকে দিল।মায়ের মৃত্যুতে বোনদের স্নেহ,প্রেম ভালোবাসা আমাদের প্রতি আরও বাড়িয়ে দিল।তাই রাবিতে পড়া বড় দুই আপুর হলে আমার যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে গেলো।আমার বোনদের হল-রোকেয়াতেই থাকতেন আমাদেরই এলাকার এক আপু।নাম মরিয়ম আক্তার বেবী,সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়তেন।আপুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কালে প্রায়ই বেবী আপুর সাথে দেখা হতো।মনে মনে ভাবতাম,ইস! এমন একজন মেয়েকে যদি ভাবী করে পেতাম,যে আমাদের মা হতে পারতো ... ।এর ঠিক এক বছরের মাথায় আমার বাবাও আমাদের মায়া ত্যাগ করে-না ফেরা দেশের বাসিন্দা হলেন।আমরাতো পুরো পরিবার একেবারে অকুল সাগরে পড়ার মতো অবস্থা।একদিন রোকেয়া হলের গেটে বেবী আপুকে দেখে-সরাসরি প্রস্তাবই দিয়ে বসলাম,তুমি কি আমার ভাবী হবে,আমাদের মা?বেবী আপার বড় বোন আমার ভাইয়ের সাথে একই ভার্সিটিতে পড়ার সুবাদে তিনি আমার রাজপুত্তুর ভাইকে আগেই চিনতেন এবং এককথায় রাজী হয়ে গেলেন।শর্ত একটাই,বড় ভাই যদি তাকে অপছন্দ করে তবে বয়সে ছোট হলেও আমাকে তাকে বিয়ে করতে হবে।আমিও রাজী হয়ে গেলাম।


আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার পনের দিন আগে ধুম-ধাম আয়োজনে বেবী আপার সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেলো।পরীক্ষার কারনে আমার,ভাইয়ের বিয়েতে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়নি।এতো আশাকরে মা পাওয়ার লোভে পছন্দ করে যে ভাবীকে ভাইয়ের বউ করে আনলাম,ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস-সেই ভাবী আমাদের পরিবারে এসে বিয়ের দ্বিতীয় মাস থেকেই আমার পড়ালেখার খরচ বন্ধ করে দিলেন,ভাইয়াকে সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি এই এতিমখানার দায়িত্ব নিতে পারবেন না।আমার ভদ্র শিক্ষিত ফেরেস্তাসম ভাইও,বাধ্য বালকের মত-একদিন আমাদের এতিমখানা ছেড়ে,নিজের সুখের স্বার্থে আলাদা বাসায় উঠলেন।আমি আর আমার নাবালক দুই ছোট এতিম ভাই,আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির আমাদের পাওয়া সবটুকু বিক্রিকরে বাকী দুই বোনকে পাত্রস্থ করলাম।অথচ আরও বড় দুঃখের বিষয় হলো-আমাদের ছোট তিন ভাইয়ের সম্পত্তির ক্রেতা আমারই আদরের ফেরেস্তারুপী ভাই।সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি বিক্রির দলিলে দস্তখত করতে গিয়ে যখন দেখলাম,আমাদের তিন ভাইয়ের সম্পত্তি আমার গুণধর বড়ভাই,ভাবী ও তাঁর তিন মাসের নাবালক মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি করছে তখন আর কিছুতেই দু'চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।অবশেষে,নাবালক ছোট জমজ দু'ভাইয়ের গড়াগড়ি কান্না দেখে নিজেকে সামলে নিলাম।আজ অনেক বছর হয়ে গেলো,আমার নাবালক ভাইয়েরা একসময় সাবালক হয়ে উঠলো-দুঃখ সংগ্রাম পাড় করে ওরাও আজ আমার মতোই সংসারী হয়েছে,ভুলে গেছে না পাওয়ার বঞ্চনা।আমার বড় ভাই-ভাবী,দুজনেই কলেজের শিক্ষক।একটি এনজিওর মালিক।বিশাল কোটিপতি-রাজ প্রাসাদের বাসিন্দা।অথচ আমাদের কপালে একমুঠো ভাতও তাঁর হাত দিয়ে জোটেনি,আজ পর্যন্ত।আমাদের আর মা পাওয়া হয়নি তাই,পেয়েছি -ভাবী। যাকে শুধু ভাবতেই থাকিব..!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×