somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“বেঁচে থাকো সামু-কোটি প্রাণের বিশুদ্ধ প্রেরণার মুগ্ধতায়-সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” ...।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বড় যদি হতে চাও, ছোট হও আগে। বোধের ভোরে এই ছিল বাবার মুখ থেকে শুনা, জীবনের প্রথম পাঠ। সারা জীবন তাই, ওস্তাদ নয়- বিশুদ্ধ শিষ্য হতে চেয়েছি এবং সেটা সব চাওয়াতেই। এমবিএ করেছি- হিসাব বিজ্ঞানে। অর্থনীতির বিরামহীন ছুটে চলায়, লাভ-ক্ষতির হিসেব নিপুণভাবে মেলানোর কৌশলটা, দক্ষতার সাথেই রপ্ত করেছি। কর্পোরেট কাঁচের ঝলমলে দুনিয়ায়, রঙিন হৃদয়গুলো তবু- দুর্বোধ্যই রয়ে গেছে আমার কাছে। যে হৃদয়ে বাসকরে শালিকের মন, কৃষ্ণচূড়ার ডাক কি করে উপেক্ষা করে সে ? হয়তো সে কারনে কর্পোরেট আবাস, স্থায়িত্বের মায়াডোরে বাঁধতে পারেনি আমাকে।

কাব্যের তৃষ্ণা আমার রক্তের উত্তরাধিকার হলেও, কমই করেছি তার চর্চা। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় জীবনের প্রথম কবিতা লিখে কানমলা খেয়েছিলাম মেঝুআপার কাছে। মুক্তি নামে সমবয়েসি খালার উদ্দেশ্যে প্রেম নিবেদনের উপলক্ষ্য ছিল সে কবিতার বিষয়বস্তু।
“আমার প্রেমের ফুলের আবাদ
পাপড়ি মেলে তোর বুকে,
মনের কোনে ভয়ের শাসন-
লুকিয়ে খোঁজে মুক্তিকে।"

তারপর থেকে কাব্য চর্চায় নিষিদ্ধের খড়গ নেমে এলো আমার উপর। সেভেনে পড়ার সময় স্কুলে বর্ষাকে উপজীব্য করে দেয়ালিকা প্রকাশের জন্য ছাত্রদের কাছে কবিতা আহ্বান করা হলে, তাতে নির্বাচিত হয় “বর্ষা” শিরোনামে আমার লিখা দ্বিতীয় কবিতা,

“ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঐ এলো বর্ষা,
মাঠ-ঘাট,ফসলের নেই কোন ভরসা।
হুড়োহুড়ি তাড়াতাড়ি, হাঁটুরেরা ছুটছে,
মাঝি তার নৌকার পাল খানি তুলছে।
কাঁকগুলো ডালে বসে, অকারনে ডাকছে
শালিকেরা উঠোনের জমা জলে ভিসছে …”

সেটাই ছিল কাব্যচর্চায় আমার প্রথম এবং সর্বশেষ স্বীকৃতি। এরপরও এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক কবিতা লিখেছি দুটো ডায়েরী ভর্তি, কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। ইচ্ছা ছিল পরিক্ষার পর বই আকারে প্রকাশের। তা আর সুযোগ হয়নি। নটরডেম কলেজে পড়া দুই বছর, মেসে থেকে পড়াকালীন বাবার কষ্টার্জিত টাকার সর্বোচ্চ সদব্যবহারের তাগিদ থেকে-পড়াশুনার চাপে একদিনও কবিতা লিখিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় যে মেয়ের প্রেমে গভীর মগ্ন ছিলাম, তাকে দেওয়া ওয়াদা পালন করতে গিয়ে, রাতে পড়াশেষে প্রতিরাতে তার জন্য একটা করে চিঠি লিখতাম, তাই আর কবিতা লিখার সময় হতো না। অবশ্য প্রতিটি চিঠির পরনেই ছিল কবিতার জামা-কাপড়। সেগুলি বন্ধুদের কাছে ছিল- খুবই জনপ্রিয়।বন্ধুদের অনুরোধেই সেগুলি প্রত্যেকটা ফটোকপি করে রাখতাম। মাঝে মধ্যে সেগুলি থেকে আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ পত্রিকায় পাঠাতাম-প্রকাশও হতো- প্রায়ই।

কর্মজীবন শুরু করেছি ঢাকায়- বেসরকারি চাকুরী দিয়ে। আমার প্রক্সি দেওয়া লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের, তখনকার এক প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের সভাপতি বিসিএস(পুলিশ) ক্যাডারে চাকুরী পেলেও-আমি পাইনি। বিস্তৃত কাজের চাপে লিখালিখি সুযোগ কম পেলেও- বিরতি দেই নি। বই প্রকাশ করতে চেয়েছি- সুযোগ যে পাইনি তা নয়, কিন্তু প্রকাশকের শর্তের দেয়াল টপকাতে না পারার ব্যর্থতায় আমার লিখারা তাই আর ছাপার অক্ষরে সাঁজতে পারেনি কোনদিন। নিজস্ব উদ্যোগে প্রকাশ করবো সে সামর্থ্যও আমার আদর্শ আমাকে পেতে দেয়নি। যে মাইনে পাই- তা দিয়ে ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় থেকে, দু’সন্তানের(ছেলে এ বছর অষ্টম, মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ) পড়ালেখার আর মোটামুটিভাবে যাপিত ব্যয় মিটিয়ে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে দু’সন্তানের নামে মাসে এক হাজার টাকার দুটি ডিপিএস আর কোরবানির খরচ মেটানো ছাড়া আর কিছুই করার সাধ্য হয় না। ফেসবুক আমল, অবশেষে আমার কবিতার ছাপার অক্ষরে সাঁজার সুযোগ পেলো। ২০১২ তে আমার আইটি সহকর্মী কাল- ভদ্রে আমার কণ্ঠে আবৃত্তি শুনে ও কবিতা লিখার হাত আছে জেনে- আমার নাম, ছবি দিয়ে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিলো। সেখানে নিয়মিত কবিতা পোষ্ট করার তাগিদ দিতে থাকলো। আর আমি নিয়মিত সেখানে কবিতা চর্চা করতে লাগলাম।

এ বছর এপ্রিলে একদিন বন্ধুর পরামর্শে, ফেসবুকে আমার কবিতার লাইন লিখে সার্চ দিয়ে আমার বুকটা বেদনায় হাহাকার করে উঠলো। সে বেদনা নিজ সন্তানকে এতিমখানায় পালিত হতে দেখার কষ্টকেও হার মানায়। দেখি আমার বেশীরভাগ কবিতাই বিভিন্নজন তাদের নিজেদের নামে, তাদের টাইম লাইনে মহা-সমারোহে প্রকাশ করেছে। তারপর রাগে দুঃখে ফেসবুকে কবিতা পোস্ট করিনা। আমার নিত্য ভাবনারাও আর কবিতার আশ্রয় পায় না। এ বছর আগস্টে ফেবু আইডি খুলে দেওয়া সেই সহকর্মী সেটা জেনে সামুর গুণ-কীর্তন, পাঠকপ্রিয়তাসহ নানাবিধ স্বাতন্ত্র্যতা অবহিত করে সামুতে আইডি খুলতে উদ্ধুত করলেন। সেই থেকে সামুর সাথে পথচলা, স্বপ্নদেখা আমার অকবিতাগুলোর কবিতা হয়ে উঠার। চার মাস দু’সপ্তাহ হয়েছে সে বয়স। সামুর এই ব্যস্ত সড়কে- অসংখ্যগুণীর ভীড়ে প্রথম সহানুভুতির হাত, গভীর মমতায় আমার কবিতার কাঁধ ছুঁয়েছিল-সেটা প্রিয় প্রামানিক ভাইয়ের। দ্বিতীয় যে হাত, আমাকে এ পথে সঠিকভাবে হাঁটার কৌশলটা শিখিয়েছিল, তিনি আপন ভাই না হয়েও আমার চিরআপন ভাইয়ের স্থায়ী আসনে ঠাই নিয়েছেন, প্রিয় দাদাভাই সুমন কর । তৃতীয় যে হাত আমার চৈতন্যের গভীরে প্রেরণার উফশী জাতের বীজ বুনেছে-উৎসাহ উজ্জীবনার মায়াবী ইন্দ্রজালে সেটা প্রিয় আপুমনি শায়মা’পুর হাত, মায়ের ছেঁড়া আঁচল মোহের আচ্ছাদনে। আমৃত্যু স্যালুট- সেই প্রিয় তিন হাতকে।।

এরপর বিশুদ্ধ আন্তরিকতায় একে একে শ্রদ্ধাভাজন কাল্পনিক_ভালোবাসা ,জুন আপু জেন রসি ভাইয়া, রূপক বিধৌত সাধু দাদাভাই, গেম চেঞ্জার ভাই, কান্ডারি অথর্ব ভাই, স্পর্শিয়া আপুমনি, মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাই, নাবিক সিনবাদ ভাই, সেলিম আনোয়ার ভাই, রিকি আপু , হাসান মাহবুব ভাই, দাদাভাই দীপংকর চন্দ, রেজওয়ানা আলী তনিমা আপু’নি, মাহবুবুল আজাদ ভাই, কথাকথিকেথিকথন ভাইয়া, অগ্নি সারথি ভাই, আরণ্যক রাখাল ভাই, আরজুপনি আপু;নি, ফেরদৌসা রুহী আপু, উপন্যাসের ছেঁড়া পাতা , ভ্রমরের ডানা, রুদ্র জাহেদ, গুলশান কিবরীয়া আপুমনি, ভিটামিন সি, হৃদছায়া, রক্তিম দিগন্ত, নেক্সাস ভাইয়া, কামরুন নাহার বীথি আপু, রোদেলা আপু, শতদ্রু একটি নদী... ভাই, আমি ময়ূরাক্ষী, গিয়াস উদ্দিন লিটন মিতা, সাহসী সন্তান ভাই, আহমেদ জী এস ভাই, আলোরিকা আপু, অন্ধবিন্দু ভাইয়া, দর্পণ দা, আমিনুর রহমান ভাই, আমি মিন্টু, শুভ্র বিকেল, সুলতানা রহমান আপু, দৃষ্টিসীমানা, তুষার কাব্য, ইকবালবিডি০৯, শামছুল ইসলাম ভাই, কল্লোল পথিক, উল্টা দূরবীন, তিমিরবিলাসী, জনম দাসী আপু, অপর্ণা মম্ময় দিদি, খায়রুল আহসান ভাই, রাজিয়া সুলতানা আপু, মানবী, দিশেহারা রাজপুত্র, তামান্না তাবাসসুম আপু, ধমনী ভাইয়া , গুরুর শিষ্য, মেহেদী হাসান শীষ ভাই, দেবজ্যোতিকাজল দাদা, শাহরিয়ার কবীর ভাই, বিদ্রোহী ভৃগু, লালূ ভাই, আমি মাধবীলতা, তিমিরবিলাসী, ইমিনা, নাজমুল হাসান মজুমদার ভাই, shahadath hossain ফুলফোটে, আজাদ মোল্লা, নীলসাধু, কাবিল ভাই, আত্মবিশ্বাসী লেখক, ডানাভাঙ্গা চিল, বনমহুয়া, নীল কপোট্রন, মোঃ-আনারুল ইসলামভাই, সৈয়দ জায়েদ আহমদ , কি করি আজ ভেবে না পাই, বিপরীত বাক ,নব ভাস্কর, আবিদ ভাই ,সালমাহ্যাপী ,অজন্তা তাজরীন সামুর সকল সহ ব্লগার কলা-কুশলী,পাঠক সবার ভালোবাসার স্নিগ্ধ পরশ-আমার কবিতার আজকের এই স্বীকৃতি- আমার জীবনে যা প্রথম।
তাই সামুর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। প্রথম পিতা হওয়ার মুগ্ধতার মতোই আমার প্রাণের বীণায় অনুরণিত হবে আমৃত্যু, পাথেয় হয়ে পথ দেখাবে আমার কবিতার পথচলায়- প্রতিটি শব্দমালায়।

এ সম্মান দেখিয়ে সামু আমার প্রতি যে আস্থা রাখলো, বিশুদ্ধ সৃষ্টির নিরন্তর সাধনায়, তার সৌন্দর্যকে ধারন করবো সত্ত্বার গভীরে-কৃতজ্ঞ ভালোবাসায়…তোমার আঁচল ছায়ায়-সবচেয়ে ছোট হয়ে থেকে যাবো বিমূর্ত সুন্দরের তৃষ্ণায়।
“বেঁচে থাকো সামু-কোটি প্রাণের বিশুদ্ধ প্রেরণার মুগ্ধতায়-সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” ...।

ছবিঃ নেট থেকে...।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×