বেশ ক'দিন আগে বিতর্ক কাদা ছোড়াছুড়ির এক পর্যায়ে কোরানের সংকলন এবং সংরক্ষন নিয়ে কিছু আলোচনা হলো। কিভাবে এই কাজটা সম্পন্ন হলো এ বিষয়ে খানিকটা জানানো এই সময়ে নিজের গরজে। অনেক ইসলামমনস্ক মানুষের আনাগোনা এখানে যারা এই গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে না জেনেই শুধুমাত্র অন্ধ বিশ্বাসে দাবি করছেন কোরানের একটা নোক্তাও অদল বদল হয় নি, আদতে কি হয়েছিলো এটা বড় একটা গবেষনার বিষয়। আমি যতটুকু খুঁজে পেয়েছি তার ভিত্তিতে বলবো। আমাকে মহাইসলামবিশেষজ্ঞ ভাবার কোনো কারন নেই, আমার এই সব বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এমন কি যদি প্রমানিত হয় অবশেষে কোরান সংকলন হবার সময় কিছু নিয়মের সংযোজন হয়েছে বা কিছু আয়াতের বদলি আয়াত এসেছে আমার বিন্দু মাত্র সমস্যা হবে না এটা মেনে নিতে।
আমি কেবল পড়া শুরু করেছি এ বিষয়ে তাই ধারাবাহিক ভাবে লিখতে হবে বিষয়টা।
এটা সূচনার আগের প্রাককথন, ভুমিকার ভুমিকা বলা যায়।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস কোরান সংকলনের:
মুহাম্মদ অন্যসব কেতাবপ্রাপ্ত নবীদের মতো তার উপর নাজেলকৃত কেতাবের বিশুদ্ধতা নষ্ট হোক এমনটা চান নি, তাই তিনি কোনো আয়াত নাজেল হলে তা সঙ্গ ীদের মুখস্ত করাতেন, সুযোগ থাকলে সেটা লিখে রাখতেন। এভাবেই তার জীবদ্দশায় কোরানের প্রাথমিক সংকলনের কাজ শুরু হয়।
632 খ্রিস্টাব্দে তার মৃতু্য হয় এটা ঐতিহাসিক সত্য, এর আগে এক সময় ফাতেমার সাথে তার কথোপকথনের সময় তার বক্তব্য ছিলো- প্রতি রোজার সময় জিব্রাইল 1 বার করে তার সাথে সম্পুর্ন কোরানটাই তেলাওয়াত করতো। একবার জিব্রাইল এবং একবার মুহাম্মদ এমনটাই রীতি ছিলো কিন্তু সেবার পর পর 2 বার সমস্ত কোরানের তেলাওয়াত করানো হয়,এটাকেই টার আশুমৃতু্যর একটা নিদর্শন ধরে নেন তিনি।
এরপর মৃতু্যপরবর্তি সময়ে ইয়ামামার যুদ্ধে প্রচুর পরিমান হাফিজ মৃতু্য বরন করলে আবুবকর যায়েদ কে দায়িত্ব দেন কোরানের আয়াতগুলোকে সংরক্ষনের ব্যাবস্থা করার জন্য। তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় নির্ভুল কোরানের বানী যেখানেই পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সংকলন করার জন্য। জায়েদ এই বিশাল কাজ হাতে নেন এবং খেটে খুটে একটা সংকলন তৈড়ি করেন, কিন্তু মুহাম্মদপরবর্তি সময়ে বিভিন্ন সাহাবারাও কোরানের কিছউ অংশ নিজেদের মতো সংকলন করেছিলেন, এর মধ্যে একজন হচ্ছে সেলিম।
যাই হোক যায়েদ কোরানের সংকলন করে সেটা জমা দেন আবু বকরের কাছে, আবু বকরের মৃতু্যর পর সেটা যায় উমরের দখলে এবং উমরের মৃতু্যর পর সেটা যায় হাফসার দখলে। দখলে বলাটা ভুল হবে, বলা উচিত ছিলো হেফাজতে। যাই হোক এর পর উসমান খলিফা হওয়ার সময় কোনো সিরিয়ার আশে পাশে কোনো এক যুদ্ধে 2 দল মুসলিমের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়, কার কোরান অধিক বেশী পরিশুদ্ধ এ নিয়ে।
এ বিষয়ক গোলোযোগ নিরসনে তদন্ত করে দেখা যায়। বেশ কয়েকটা কোরানের সংকলন আছে, সব কটাই প্রামান্য। মানে এমন লোকদের দ্্বারা করা যারা বেশ প্রসিদ্ধ হাফেজ। প্রথম প্রশ্ন আসে এখানেই- সবগুলো প্রসিদ্ধ হাফেজের সংকলনের মধ্যে কেনো বিভেদ থাকবে? একই বই একই মানুষের দ্্বারা প্রচারিত? উসমান এর সমাধান বের করেন এভাবে
কোরাইশের আরবি জবানে কোরানের আয়াতগুলো নাজেল হয়েছিলো, যায়েদ একজন হাফেজ যার আরবি ুচ্চারন সবচেয়ে বিশুদ্ধ সুতরাং তার সংকলিত কোরানকে প্রামান্য ধরে কোরানের অনুলিপি তৈরি হবে।
সেই মতো শুরু হয় সংকলনের কাজ।
হাফসার হেফাজতে থাকা কোরানের সংকলন নিয়ে আসা হয়। এবং ওটার অনেকগুলো অনুলিপি তৈরি করে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো হয়। এবং প্রদেশগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয় এটাই কোরানের কতৃপক্ষকতৃক অনুমোদিত অনুলিপি, এটাকেই প্রামান্য মান্য করিয়া বাকি সব অনুলিপি ধ্বংস করে ফেলা হোক।
গল্পের শুরু এখানে না, এর পরের গল্প হলো আমরা এখন কোরানের যেই অনুলিপির প্রতিলিপি তৈরি করছি সেটার সূচনা 800 খ্রিস্টাব্দের। উসমানের কোরান সংকলনের 100 বছর পরের । এই 100 বছরের ইতিহাসে কোনো দউষন ঘটেছে কি না এটার কোনো ঐতিহাসিক প্রমান নেই। যদি দুষন ঘটেও থাকে সেটাকে প্রমান করার মতো কোনো তথ্য নেই তেমন করে। আবার অপ্রমান করার মতোও তথ্য নেই।
সংযোজন বিয়োজন, আয়াতের শব্দবিবর্তন, আয়াতের সম্পুর্ন বদল এমন কিছু কিছউ দোষ ছিলোই সবগুলো সংকলনের। এগুলোর মধ্যে কোনটা আসল এটা নির্ধারন করা মুশকিল/
100 বছরের অন্ধকারের সাথে এই যে উচ্চারন বিভেদের বিষয়টা এসবই কোরানের আয়াতে বেশকিছু ভ্রান্তি এনেছে এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আয়াতের সম্পুর্ন অর্থই বদলে দিয়েছে। এসব মানবিকভুল।
যদিও এই দাবি আছে এটা আল্লাহ কতৃক নাজেলকৃত কেতাব এবং আল্লাহই এর সংরক্ষন করবে, হাদিসের বরাত দিয়ে বলা যায় এমনটাও হতে পারে কোরানের কিছু কিছু আয়াত সম্পুর্ন বিলীন হয়ে গেছে, এই আশংকাই প্রথমত আবু বকর কে কোরান সংকলনের জন্য বাধ্য করে।
কথা হলো ইয়ামুমের যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া আয়াতগুলো কি কোরানে এসেছিলো?
উত্তর আমি জানি না, এটা পড়াশেষ করে বলতে পারবো।
আসলে কি শাসকগন নিজের মতও কোরানের সংযোজন বিয়োজন করেছেন? সম্ভবনা আছে।
সবচেয়ে জটিল বিষয় হলো কোরানের একটা বিশল অংশ নাজেল হয়েছিলো মুহাম্মদের অসুস্থতার সময়। সেগুলো কি যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত হয়েছিলো??
এটা সত্য যে কোরানের সবগুলো আয়াত মুহাম্মদের কাছে ছিলো না লিখিত আখারে, এজন্যই যায়েদকে অনেক মানুষের সাথে কথা বলতে হয়েছে, অনেকর সাথে কথা বলে পুংখানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে যায়েদ তখন পর্যন্ত প্রাপ্ত কোরানের আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ করেন। সর্বশেষ লিপিবদ্ধ আয়াত আসে উসমানের ঘোষনার দিনে।
এসব নিয়েই লিখা হবে ধাপে ধাপে,
দেখা যাক কোরান সংকলনের ইতিহাস কি বলে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




