somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ভারতীয় বিজ্ঞাপন আগ্রাসনঃ কারো যেন কোন মাথা ব্যথা নেই!

১৮ ই মে, ২০১২ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ আর ভারত - এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক সবসময়ই বিতর্কিতঃ এ কথা আমরা সবাই জানি। ভারত মুখে বাংলাদেশকে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বললেও বাস্তবে বাংলাদেশের প্রতি তার আচরণ যথেষ্ট বৈরিতাপূর্ণ যা বিএসএফের দ্বারা সীমান্তে প্রতিনিয়তই নিষ্পাপ বাংলাদেশী হত্যা, বাংলাদেশে অবাধে ভারতীয় মিডিয়ার অনুপ্রবেশ সত্ত্বেও ভারতে বাংলাদেশী মিডিয়ার প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়া ও দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মাধ্যমেই প্রমাণিত। আর এসব সমস্যার সমাধান না হতে হতেই আরেকটি ভারতীয় আগ্রাসনের মুখোমুখী বাংলাদেশ যে ব্যাপারে এ পর্যন্ত কারো তেমন সরব ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। আর তা হল বাংলাদেশে অবাধে ভারতীয় বিজ্ঞাপনের প্রবেশ।

এখন বাংলাদেশের যে কোন টিভি চ্যানেল খুললেই বাংলাদেশী বিজ্ঞাপনের চেয়ে বাংলায় ডাবিং করা ভারতীয় বিজ্ঞাপনই চোখে পড়বে যার কোন যৌক্তিকতা নেই। বিশেষ করে আমাদের দেশে কার্যক্রম চালানো ইউনিলিভার বাংলাদেশ আদতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের ভূমিকা পালন করছে আর তাদের ব্র্যান্ডগুলোর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞাপন আমদানি করে যাচ্ছে যা অবাধে আমাদের টিভি চ্যানেলে প্রচারও হচ্ছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বিটিভি সহ অন্য চ্যানেলগুলোতে যখন লাক্সের বিজ্ঞাপনে ক্যাটরিনা কাইফ, ঐশ্বরিয়া রায়, প্রিয়াংকা চোপড়া, পেপসোডেন্টের বিজ্ঞাপনে শাহরুখ খান, হুইল ওয়াশিং পাউডারের বিজ্ঞাপনে প্রাচী দেসাই ও সালমান খান, রেক্সোনার বিজ্ঞাপনে আসিন, হারপিক ও ক্লোজ আপের বিজ্ঞাপনে ভারতীয় মডেল, ভ্যাসলিন মেনের বিজ্ঞাপনে শাহিদ কাপুর, মেসওয়াকের বিজ্ঞাপনে বিপাশা বসু আর বোরো প্লাসের বিজ্ঞাপনে অমিতাভ বচ্চন ও কারিনা কাপুরকে দেখতে হয় তখন মনে হতেই পারে আপনি বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল দেখছেন নাকি ভারতের কোন চ্যানেল দেখছেন যা সত্যিই দুঃখজনক। শুধু টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচারই নয়, এখন রাস্তাঘাটে বের হলেই এসব বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে ভারতীয় তারকাদের দেখা যায় যা অগ্রহণযোগ্য।

কেন বাংলাদেশে থেকে আমরা আমাদের মিডিয়াতে ভারতীয় বিজ্ঞাপন দেখব, কেন আমাদের রাস্তাঘাটে ভারতীর মডেলদের ছবি শোভা পাবে যেখানে ভারত কখনই আমাদের মিডিয়াকে গ্রহণ করেনি? আমাদের দেশে কি ভাল বিজ্ঞাপন হয় না নাকি ভাল মডেল নেই? আগে তো লাক্স, হুইল, পেপসোডেন্ট এগুলোর বিজ্ঞাপন আমাদের দেশেই নির্মিত হত আমাদের দেশীয় মডেলদের দিয়ে যা যথেষ্ট ভাল মানের ছিল। আমার যতটুকু মনে পড়ে সর্বশেষ বাংলাদেশী পূর্ণাঙ্গ লাক্স মডেল ছিলেন অপি করিম, এরপরে আমাদের ভারতপ্রেমী ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্রতি বছর লাক্স তারকা প্রতিযোগিতা করিয়ে আসলেও বিজয়ীদের দিয়ে কখনো পূর্ণাঙ্গ লাক্স বিজ্ঞাপন বানায়নি। যদিও ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রচুর টাকা রয়েছে তারপরেও তারা কেন নতুন দেশীয় বিজ্ঞাপন নির্মাণ না করে ভারতীয় বিজ্ঞাপন এদেশে চালিয়ে দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার কর্তৃপক্ষের। ইউনিলিভার তো পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কাতেও রয়েছে, ওখানে তো ভারতীর লাক্স বা হুইল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় না। ঔসব দেশে ওদের নিজেরদের মডেলদের দিয়ে ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে তা প্রচার করা হয়, তবে সেই একি প্রথা কেন বাংলাদেশে মানা হয় না? গলদটা কোথায়? আরো একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজনঃ এয়ারটেল বাংলাদেশ যখন দেশে কার্যক্রম শুরু করে, ওদের প্রথম দুইটি বিজ্ঞাপন (এয়ারটেল ভালবাসার টানে পাশে আনে এবং এয়ারটেল লাইভ) ভারতীয় মডেলদের দিয়ে করা ছিল এবং শুটিংও ভারতে করা হয়েছিল যদিও পরে এয়ারটেল বাংলাদেশ এখন দেশীয় মডেলদের দিয়েই বিজ্ঞাপন বানাচ্ছে।

আমার মতে বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ভাল বিজ্ঞাপন নির্মিত হচ্ছে এবং এসব তথাকথিত মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা উচিত আমাদের দেশীয় মডেলদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানোর জন্য যাতে তারা আর বাংলাদেশে ভারতীয় বিজ্ঞাপন আমদানি না করতে পারে। এক্ষেত্রে ম্যারিকো বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ম্যারিকো কিন্তু ভারতেও রয়েছে কিন্তু ম্যারিকো বাংলাদেশ ওদের পণ্যের জন্য ভারতীয় বিজ্ঞাপন আমদানি না করে বরং দেশীয় মডেলদের দিয়েই বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে প্রচার করে থাকে যার উদাহরণ হল প্যারাসুটের গর্জিয়াস সারাদিন বিজ্ঞাপনটি এবং সম্প্রতি হাসিনের করা নিহার ন্যাচারলসের বিজ্ঞাপনটি (ভারতে নিহার ন্যাচারলস এর বিজ্ঞাপনের মডেল হলেন বিদ্যা বালান)। ইউনিলিভার বাংলাদেশেরও উচিত এই পথ অনুসরণ করে গুটিকয়েক প্রতিভা সন্ধানের প্রতিযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশীয় মিডিয়া বিকাশে বিশেষ করে বিজ্ঞাপন জগতে কার্যকর ভূমিকা রাখা। এবং অন্যান্য যেসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে যেমন ডাবর বাংলাদেশ, গদরেজ বাংলাদেশ, বোরো প্লাস ইত্যাদি - এসব প্রতিষ্ঠানকেও বাংলাদেশে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে দেশীয় মডেলদের দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা নিয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা সরকারের প্রণয়ন করা উচিত। কারণ তা না হলে দেখা যাবে এক সময় বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন আর প্রচার হবে না, শুধু ভারতীয় বিজ্ঞাপনই প্রচার হবে।

আর যেযব বাংলাদেশী আছেন যারা ভারতীয় মিডিয়া ও তারকাদের অন্ধ ভক্ত, যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকায় বসে শাহরুখ খানের নাচ আর ক্যাটরিনা কাইফের শিলা কি জাওয়ানি নাচ দেখতে পিছপা হন না -তাদেরকে বলছি আপনাদের ভারতীয় মিডিয়া প্রীতি কমান, আপনাদের ভারতীয় মিডিয়া প্রীতি আছে বলেই ইউনিলিভার বাংলাদেশ ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলো এদেশে প্রচার করে যাচ্ছে কারণ তারা জানে এদেশের অধিকাংশ মানুষ ভারতীয় তরকাদের করা বিজ্ঞাপন সাদরেই গ্রহণ করবে কিন্তু এতে যে দেশীয় বিজ্ঞাপন শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে যেন কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।

আমি এ ব্যাপারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আসুন আমরা যেভাবে ভারতীয় বিএসএফ দ্বারা নিরহ বাংলাদেশীদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছি ঠিক একই ভাবে দেশীয় মিডিয়াকে রক্ষা করতে আমরা ভারতীয় মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন বর্জন করতে সোচ্চার হই।

এ বিষয়ে আপনার কি মত তা নিচে মন্তব্য আকারে জানাতে ভুলবেন না। তবে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য হলে তা মুছে ফেলা হবে। শুধুমাত্র আপনার সুচিন্তিত মতামতই কাম্য। আর এই পোস্টে কোন বানান ভুল হয়ে থাকলে তা অনাকাংখিত এবং তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করা হল।

সবাইকে এই ব্লগ পোস্টটি পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

শারিফ শাব্বির
ইমেইলঃ [email protected]
ফেইসবুকঃ http://facebook.com/sharif.shabbir
টুইটারঃ http://twitter.com/shabbir365
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১২ রাত ১১:২৩
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×