somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ৪

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







‘তোর কপালে অনেক কিছু লেখা আছে বুঝতে পেরে আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম, তোকে দিয়ে ভূত তাড়াব।’
‘কী?’
‘হ্যাঁ! তাকে বলেছিলাম তক্কেতক্কে থেকে তুই তুকতাক শিখেছিস। চিন্তার কারণ নেই, নিতান্ত ভয়ে ভ্রমান্ধ হলে আমরা ভূতপেত্নী দেখি।’
‘নিত্যান্দে দিন ফুরালে রাতদুপুরে ডরের ঠেলা টের পাবি।’
‘ঠিকাছে! এখন নিতাই ভূতের গল্প বল, ডরভয় দূর হবে।’
‘আচ্ছা। বলছি শোন, কবে ঘটেছিল জানি না। তবে আমার মনে আছে হয়ত শো বছর আগের কথা হবে। বিত্রস্ত করার জন্য আমার এক জ্ঞাতিদাদা আমাকে বলেছিলেন। উনি নাকি উনার এক দাদার কাছ থেকে সত্য ঘটনা শুনেছিলেন, পরে উনি সাজিয়ে গুছিয়ে থোড়া রস লাগিয়েছিলেন। গালগল্প শুনে আমি ডরে আড়ষ্ট হয়েছিলাম। যে যাই বলুক ভাই ভূত আমি ডরাই। তো কী হয়েছিল? এক দুপুরে, মানে যখন ভূতরা উঠানে মাঠে দৌড়া দৌড়ি করে তখন। দাদা ধারিতে বসে বট গাছের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, যা আমার জন্য ঠাণ্ডা চা নিয়ে আয় আজ তোকে ভূতের গল্প শুনাব। ঠাণ্ডা চা বলার কারণ, দুপুর বেলা চা’র কথা বললে কপালে ঝাড়ু পড়ে তা উনি জানেন তাই ঠাণ্ডা চা বলেছিলেন। আমি থরহরি করে বলেছিলাম, দাদা গো ঠাণ্ডা চা আনতে গেলে আমি ঠাণ্ডা হয়ে যাব। পাকঘরের চুল্লির পাড়ে আপনার ভাবী বসে আছেন। দাদা বলেছিলেন, তাইলে বাদ দে। এখন আমি চা চাই ঝাড়ুর বাড়ি নয়। শোন! তোর নানার বাড়ি চল। তোকে দেখলে তোর নানি খুশি হয়ে আমাকে চা বানিয়ে দেবেন। আমি বলেছিলাম, নানিজান তো আমাদের বাড়ি। এখন গেলে নানির সতিন আপনার এবং আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে ল্যাংড়া বানাবেন। দাদা বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, দূর ছাই! আমি এখন গরম চা কোথাই পাই? আমি গবেটের মত হেসে বলেছিলাম, এক কাজ করুন, খালিবাড়ি চলে যান। ওই বাড়িতে ভূতনীরা চা বেচে। আপনার বউর নামে বাকি লেখিয়ে খেয়ে আসুন। আমি আপনার সাথে যাব না। আমি ভূত ডরাই। দাদা চিন্তিত হয়ে বলেছিলেন, তুই এক কাজ কর, আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আয়। আমি কিয়ৎ ধেয়ান চিন্তা করে বলেছিলাম, দাদা, আপনি এক কাজ করুন, পূবপাড়ে গিয়ে ছোট চাচার চাচিশাশুড়ির ধারিতে বসে চার কথা বললে উনি আপনাকে অট্টগরম চা দিয়ে দেবেন। এমন সময় আমাদের সামনে দাদার নানি আবির্ভূত হয়েছিলেন। মা গো নানি গো বলে পড়ি কি মরি করে আমি ভোঁ দৌড়ে পাক ঘরে চলে গিয়েছিলাম। চোখের সামনে প্রেত্নী দেখে দাদা চোখ বুজে এলিয়ে পড়েছিলেন। উনাকে ভূতে ধরেছে ভেবে হুজুরকে খবর দেওয়া হয়। হুজুর এসে আম গাছের ডাল ভেঙ্গে পানিতে চুবিয়ে ভূত ঝেড়েছিলেন। দাদীজান ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু উনার বউর কান্নাকাটি দেখে দাদীজানের মন গলে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়েছিল।’
‘দাদাকে নিশ্চয় ভূতে জেঁতেছিল?’
‘তা তো সবাই জানে। আমরা কোথায় যাচ্ছি তা কি তুই জানিস?’ বলে বন্ধু আমার দিকে তাকায়। এমন সময় ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থামে এবং ঝাঁগুড়-গুড় শব্দ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। বিকট শব্দে দুজন বিত্রস্ত হই। পশ্চিম দিগন্তে দৃশ্যমান শুক্রগ্রহ এবং সামনে কালেবিধ্বস্ত বাড়ি দেখে বুঝতে বাকি ছিল না আমরা যে ভূতের কবলে পড়েছি। অবস্থান জানার জন্য দিগ্দর্শনযন্ত্রের দিকে তাকিয়ে বন্ধু বলেছিল, ‘পূবে যাওয়ার কথা ছিল। দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পশ্চিমে এসেছিস কেন?’
‘অহো! আমি তো সরসীর সাথে দেখা করার মানসে বেরিয়েছিলাম। ঔ সামনে ওর বাড়ি। আমার সাথে চল ওর সাথে পরিচয় কিরিয়ে দেব।’
‘আকাঙ্ক্ষাশূন্য আক্ষেপে সমস্যা সমাধান হবে না। আমরা এখনো কোথায় তা কি তুই জানিস?’
‘আকস্মিক দুর্ঘটনায় বিভ্রান্ত হয়ে আমরা বিভ্রাটে পড়েছি মাত্র। চিন্তা করিস না, ভ্রান্ত পথে দিগ্ভ্রান্ত হলে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না।’
‘মানসিক চাঞ্চল্যে মন প্রায় বিমূঢ় আর তুই আমাকে অভয় দিচ্ছিস। মাথা তুলে সামনে তাকা, বিমণ্ডিত মায়াবির বিধুবদন দেখে মনের ভ্রম দূর হবে।’
সামনে তাকিয়ে আমার চিত্তবৈকল্য হয় এবং জপতপ করে দুজন ভয়ে নিদ্রাক্লিষ্ট হই। ভোরে পাখপাখালির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে গহনবন থেকে বেরিয়ে পাশের শহরে প্রবেশ করে নাস্তা খেয়ে রেস্তোরাঁয় ফিরলে বন্ধু বিদ্রুপ হেসে বলেছিল, ‘ভাববাচ্যে ভূতের গল্প লিখবি না?’
তার কথা শুনে মনে সংশয় জাগে। অসংশয়িত হওয়ার জন্য শব্দকোষ খুলে বসি। রহস্যউপন্যাস, রোমাঞ্চকাহিনী, পুরাকাহিনী। মননশীলরচনা, গুরুগম্ভীর রচনা, জ্ঞানগর্ভরচনা, হাস্যরসাত্মক রচনা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা। নকশা, কেচ্ছা। কথাপ্রবন্ধ, লোককথা, রূপকথা, উপকথা, পরীকথা, ইতিকথা, ব্রতকথা। আত্মজীবনী, আদ্যলীলা, লোকসাহিত্য অথবা জীবনীসাহিত্য। শব্দকোষে এত শব্দ দেখে আমি নিঃশর্তে নিঃশব্দ হই। খেই হারিয়ে চিন্তার সায়রে থই পাই না। রাক্ষসখোক্কস অথবা দত্যিদানোর গল্প অনেক শুনেছি। রাক্ষসরা উর বললে দূর যায় আর দূর বললে উরে থাকে। বরাবর বারোটায় ভূতপ্রেত্নীর সাথে কেউ দেখা করতে চায় না জেনে পুরাণ কথা পুনরায় লিখে নামের আগে নকুলে লাগাতে চাই না। সমন্বয়সাধনে আমি স্বকপোলকল্পিত গল্প লিখতে চাই। সমস্যা হল, সামঞ্জস্যসাধন ল্যাংড়ার হাতে লাঠি নয়। কোঁদাকুঁদি করলে কুঁদরুবন থেকে কুঁদুলি তেড়ে আসবে, আর বেশি কোঁতাকুঁতি করলে কুঁজড়া হতে হবে। মহা সমস্যায় পড়ে জেলিয়ার হাতে কুঁড়াজালি দেখে আমি আলিসাকুঁড়ের মত কল্পনাপ্রবণ হয়ে হাঁটছিলাম।
ভাদ্রের দুপুর। ঝাঁঝাঁ রোদের প্রখর তপনতাপে ভাপ উঠে মাটি তামার মত তাতাচ্ছে। সূর্য বরাবর মাথার উপর আসার সাথে সাথে রৌদ্রাভাবে আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পরিবেশ ঝঞ্ঝাসমাকুল হয়। ঘনঘন বিজলি চমকে কড়কড় কড়াৎ শব্দে বাজ ফেটে ভূমিকম্পবলয় থেকে খপুষ্পরা বেরিয়ে অপচ্ছায়ার মত অস্পষ্টালোকে লুকালে, শুরু হয় ধাধসপুরে বারবেলা।
অবিশ্বাস্য ভাবে ভূতাত্মাদের আবির্ভাবে ভূতাবিষ্ট লোকজনের অসংগত এবং অবান্তর ব্যবহারে পরিপার্শ্বে ক্রমবিপর্যয় দেখা দেয়। আরশোলা পাখির মত উড়ে, নেংটি ইঁদুররা নির্ভয়ে দৌড়ে। বন্যকুকুর এবং নেকড়েরা বনগহন থেকে বেরিয়ে আসে। স্কুল কলেজ ছুটি হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের মনে পালাই ভাব। কেউ তড়বড় করছে, কেউ তরতর করে হাঁটছে, কেউ একছুটে বাড়ি পৌঁছেছে। কলেজের সামনে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার দোনোমনো শুরু করে। কলেজের বাগানে এক জোড়া শ্যামা আধার খাওয়ায় ব্যস্ত। হঠাৎ অলোক থেকে ফস করে দাঁড়কাক উড়ে এসে একটাকে ছোঁ মেরে ধরতে চায়। ছোবল থেকে ফসকে আড়ংবাড়ং করে উড়ে অন্যটার সামনে দিয়ে গেলে দুটা মিলে কাককে ধাওয়া করে বাতাসে হাপিশ হয়।পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অস্থিরতা অনুভব করে পেশিবহুল ওজস্বী যুবক ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিল, ‘জিন অজিন কালাজিন গজাজিন।’
এমন সময় বিধুবদনা চিকনবরণী কলেজ থেকে বেরিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে, ‘আয়মান ভাই! আয়মান ভাই! তুমি কোথায়?’
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×