somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ৬

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :









‘নিশ্চয়! এই তোরা কে কোথায় আসিছ দৌড়ে আয়।’ কাজের লোককে ডেকে দাদী সরসীর হাত ধরলেন। সরসীর মা বাবা দাদা দাদী এসে ওকে রক্তাক্ত দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। বাবা ওকে বাহুতে তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে অসহায়ের মত বললেন, ‘কেউ গাড়ি নিয়ে আসো। আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে।’
আয়মানের বাবা গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেবেন এমন সময় ডাক্তার নিয়ে আয়মান এসে ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘সবাই সরে ডাক্তারকে দেখতে দাও।’
ডাক্তার দ্রুত সরসীর পাশে যেয়ে ব্যাণ্ডেজ দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘ভয়ে বুক শুকিয়ে অজ্ঞান হয়েছে। চিন্তার কারণ নেই। ক্ষত বেশি গাঢ় নয়। পাতলা চামড়া ফেটে রক্ত বেরিয়েছে মাত্র। এখন বিছানায় শুয়ালে এন্টিস্যাপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দেব।’
‘ডাক্তারসাহেব, হাসপাতালে নিয়ে এক্সরে স্ক্যান করলে ভালো হবে।’
‘প্রয়োজন নেই। দুয়েক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।’ ডাক্তার মৃদু হেসে বললে সরসীর দিকে তাকিয়ে বাবা ঠোঁট কাঁপিয়ে বললেন, ‘ডাক্তার কিছু করুন আমার মেয়ের কষ্ট হচ্ছে।’
‘আমি ভালো করে দেখেছি। আঁচড়ে কেটে রক্ত বেরিয়েছিল। আপনি চাইলে সাথে নিয়ে যাব, এতে আমার লাভ হবে।’ সরসীর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাক্তার মৃদুহেসে বললেন, ‘তোমার বাবা তোমাকে বেশি আদর করেন তাই না মা?’
‘আম্মাও আমাকে বেশি আদর করেন। সবাই আমাকে আদর করেন। শুধু ঔ বনমানুষ আমাকে দুই চোখে দেখতে পারে না।’ বলে সরসী দাঁত কটমট করে তাকায়। আয়মানের দিকে তাকিয়ে ওর বাবা বললেন, ‘বনমানুষ তোমাকে আমাদের চেয়ে বেশি আদর করে তাই ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে এসেছে। আমরা আনতে পারতাম না।’
‘আমাকে দেখলে গরম তাওয়ায় কল্লা কাটা কৈ মাছের মত ছ্যাঁত করে উঠে কেন?’ বলে সরসী মুখ বিকৃত করলে আয়মান দাঁত কটমট করে বলল, ‘চাচাজান! আছাড় দিয়ে নামান। ধমাৎ করে মাটিতে পড়লে মজা টের পাবে।’
তার কথা শুনে ডাক্তার সরসীর বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মেয়েকে বিছানায় শুয়ালে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দেব।’
‘আমার কষ্ট হচ্ছে না। আপনি বেঁধে দিন।’
রক্ত পরিষ্কার করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে ব্যাগ থেকে কিছু ট্যাবলেট ক্যাপসুল বার করে আয়মানের বাবার হাতে দিতে দিতে ডাক্তার বললেন, ‘কী করবেন জলদি বলুন আমার হাতে সময় নেই।’
সরসীকে নামিয়ে বাম হাতে ওকে বুকের সাথে এঁটে ধরে ডান হাতে ডাক্তারের হাতে টাকা দিতে দিতে স’বাবা বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব, আমার মেয়ে ঠিকঠাক আছে তো?’
‘চিন্তার কারণ নেই। রক্ত দেখে সন্ত্রস্ত হয়েছিল। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। চাইলে আমার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে পারবেন। বেড একটা খালি করে দেব।’ সরসীর মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে ডাক্তার বললেন, ‘বনমানুষ গিয়েছিল তাই এসেছিলাম। নইলে হাতি দিয়ে টানিয়ে আনতে পারতে না।’
‘সবাই এত ভয় পাও কেন?’
‘মা গো, চোখ পাকালে দুরদুর করে কলিজা কাঁপে। বেশি চেতালে জানে মেরে ফেলবে।’ আয়মানের দিকে তাকিয়ে কপটহেসে ডাক্তার বললেন, ‘বাবা, আমি এখন যেতে পারব?’
‘জি, প্রয়োজন হলে আবার যাব।’
‘ফোন করলেই ছুটে আসব, তোমাকে কষ্ট করতে হবে না রে বাবা।’ বলে ডাক্তার কপটহেসে গাড়িতে উঠে বসলে তার বাবা চালিয়ে চলে গেলেন। সরসীর মা কাতর হয়ে বললেন, ‘ভাবী, সরসীকে নিয়ে আপনার কামরায় যেতে পারব?’
আয়মানের মা মাথা নেড়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘বাড়ি তো সরসীর, আমাকে মিনতি করছিস কেন?’
‘ধন্যবাদ ভাবী। এই যে! সরসীকে নিয়ে ভাবীর কামরায় চলুন?’ স’বাবার দিকে তাকিয়ে স’মা বললেন। বাবা ওকে বাহুতে তুলতে চাইলে সরসী বায়না ধরে গাল ফুলিয়ে বলল, ‘আয়মান ভাইর কোঠায় ঘুমাতে চাই। আমি এখন হাঁটতে পারব না।’
আয়মান হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, ‘ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছ না কেন? জখমে ঘা হলে ছটফট করে মরবে তো।’
‘ঠসা কানার মত ঠাস করে ঢিল মেরে আমার সুন্দর-মুন্দর কপাল ফাটিয়েছ। আজ আমি তোমার কামরায় ঘুমাব। ঘুমালে কী করবে?’ বলে সরসী অধরদংশন করে মাথা দিয়ে ইশারা করে।
‘আমার কিছু ছুঁলে তোর হাত পা ভাঙ্গব মনে রাখিস!’ গর্জিয়ে বলে রেগে গজগজ করে আয়মান চলে যায়। মা বাবা দু হাত ধরে সরসীকে আয়মানের কামরায় নিয়ে গেলে সবাই মিলে সেবায় ব্যস্ত হলেন। যেন মহারানী। দাদীরা হাত টিপছেন, কাজের মেয়েরা পা টিপাচ্ছে। মা মাথা আঁচড়িয়ে দিচ্ছেন। বাবারা এক কোণে বসে খোশগল্প করছেন। দাদারা বারান্দায় বসে হাসাহাসি করছেন। বিকালের চা খেয়ে সবাই একটু শিথিল হয়ে আরাম করে বসেছেন। সরসীও ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়মান সে তার কাজে মহাব্যস্ত। রাতে আরামে ঘুমাবার জন্য কাজের ছেলেকে নিয়ে বটগাছে মাচা বানাচ্ছে। সায়ংকালে ঘুম থেকে উঠে সরসী বিছানায় বসে আড়মোড়া দিয়ে চোখ মেলে সবাইকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে বুকে থু থু দিয়ে কপটহেসে বলল, ‘আপনারা এখানে কী করছেন?’
আ’দাদী উদগ্রীবকণ্ঠে বললেন, ‘এখন কেমন বোধ করছিস?’
মাথায় হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে ক্লিষ্টকণ্ঠে সরসী বলল, ‘ইস! মাথায় এত ব্যথা হচ্ছে কেন?’
ওর মা ব্যস্তকণ্ঠে বললেন, ‘বেশি ব্যথা হচ্ছে নাকি?’
‘জি, ব্যথায় মাথা টনটন করছে।’ বলে চারপাশে তাকিয়ে সরসী অবাককণ্ঠে বলল, ‘ওঃ-অ্যাঁও! কামরাটা কার গো?’
আ’দাদী মৃদু হেসে বললে, ‘তোর আয়মান ভাইর।’
‘বনমানুষটা এখন কোথায়?’ চ্যাটাং করে বলে সরসী দাঁত কটমট করলে আ’দাদী ধীরে ধীরে হেঁটে এসে বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করেছিলে?’
‘খামোখা পথ হারিয়ে জংলায় ঢুকে বনমানুষের মত ঘোরাঘুরি করে। ডরের চোটে শিয়ালরা দেশান্তরী হয়েছে জানের মায়ায়। শঙ্কিল এত ভয়ঙ্কর!’
‘কী করেছিলে তা তো বললি না।’
‘বনভোজন করার জন্য গিয়েছিলাম। শিকে পুড়ে নাদুসনুদুস ঘুঘু একা খেতে দেখে মিনতি করে বলেছিলাম, ও আয়মান ভাই! আমাকে আধখান রান দেবে? শুনে ঢিল মেরেছিলেন, আমার ডাগর নয়ন কানা করার জন্য।’
‘সত্য ঘটনা বলছিস না কেন?’
‘আপনারা সবাই জানেন ইদানীং আমি দুঃস্বপ্ন দেখে ত্রস্তা হয়ে চিঁক চিৎকার করে জাগি। আজ আমি দুঃস্বপ্ন দেখিনি।’ গম্ভীরকণ্ঠে বলে সরসী দেয়ালের দিকে তাকালে আ’দাদী অধীরতা কণ্ঠে বললেন, ‘বুঝিয়ে বল।’
‘তন্দ্রাবিষ্ট হলে কিম্ভূতকিমাকার আমাকে ধাওয়া করে এবং আমার নিকটবর্তী হলে বীরের মত আয়মান ভাই আবির্ভূত হয়ে দাদুর মত আমাকে বুকে জড়িয়ে মাথা পিঠে হাত বুলিয়ে অভয় দেন।’ ঘাড় বাঁকিয়ে আ’দাদীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দুঃস্বপ্নে যখন ডরের চোটে হন্যের মত দৌড়ি, তখন একমাত্র আয়মান ভাই আমাকে বাজুতে টেনে বুক ফুলিয়ে অশিবের সাথে হাতাহাতি করেন। আপনারা সবাই, আমাকে বাঁচাও বাঁচাও জপেন। তাই লাই দিয়ে আমি আমার আয়মান ভাইর সাথে ভাব জমাতে চাই।’
সরসীর কথা শুনে দাদীরা চিন্তত হলেন। কথা না বলে কামরা থেকে বেরিয়ে দাদার পাশে যেয়ে স’দাদী চিন্তিতকণ্ঠে বললেন, ‘সরসীও দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।’
‘ঝাড়ফুঁক ছুমন্তরে উপরিভার নামবে না। জলপড়া অথবা তেলপড়ায় এ বেমার কমবে না। তুকতাক করে বাইলের ঝাড়ু দিয়ে ঝেড়েও ভর নামানো যাবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।’ বলে স’দাদা আ’দাদার দিকে তাকালে আ’দাদ জানতে চাইলেন, ‘এ সব কী বলছিস?’

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৫৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×