somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ৭

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :









‘বাবার ছোটফুফু উধাও হয়েছিলেন। উনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ দাদীদের দিকে তাকিয়ে স’দাদা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘জানি না কত শতাব্দী আগে আমাদের গ্রামে এক আচাভুয়া রূপের ধুচুনি জন্মেছিল। প্যাঁচা, বেঢপা এত বিদঘুটে ছিল যে, ভয়ে কেউ ওর দিকে তাকাত না। ছায়া দেখলে শজারুর কাটার মত ঠাস ঠাস করে গায়ের রোম খাড়া হত। ওর কুতনু থেকে মড়া সাপের পচা গন্ধ বেরোত। বেঘোরে মরার ডরে কেউ ওর বাড়ির আশেপাশে যেত না। বিয়ের বয়স হলে তুকতাক করে জিন সাধন করেছিল, কিন্তু বাসররাতে বরের মুখ দেখে চোখবোজে যমের বাড়ি চলে গিয়েছিল। সেই থেকে শতাব্দীর শুরুতে জিন ফিরে আসে। এক পরী তাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু সে ওকে সহ্য করতে পারে না।’
সরসীর দাদী উদ্বেজিত হয়ে বললেন, ‘এসব শুনাচ্ছেন কেন?’
‘আমার ভয় হচ্ছে, তাই শুনালাম। বিশ্বাস হলে বিশ্বাস করো, অবিশ্বাস হলে বিশ্বাস করার জন্য মিনতি করব না।’ বলে স’দাদা কাঁধ বাঁকালে আয়মানের দাদা গম্ভীরকণ্ঠে বললেন, ‘যা বলেছিস সত্য, কিন্তু গত শতাব্দীতে আমাদের গ্রামের কেউ উধাও হয়নি এবং এ শতাব্দী প্রায় শেষ হয়েছে।’
‘গত শতাব্দীতে পাশের গায়ের একজন বিদিশা হয়ে আমাদের গ্রামে এসে উধাও হয়েছিল। এ শতাব্দী এখনো শেষ হয়নি, বছর বাকি আছে।’
‘টক্কর দিয়ে তোর সাথে কথা কাটাকাটি করতে চাই না। যা বলার খুলে বল।’
‘শুনেছিলাম প্রতি শতাব্দীতে আমাদের গ্রামের এক যুবক পাগল হয় এবং এক যুবতী উধাও হয়। আজ পর্যন্ত যুবক পাগল হয়নি এবং যুবতী উধাও হয়নি।’ বলে স’দাদা সামনে তাকালে আয়মানের দাদা বিরক্তোক্তি করে বললেন, ‘প্রতিদিন যুবতীরা উধাও হচ্ছে এবং দিনে তিন চারটা যুবক পাগল হচ্ছে দেখেও আগড়বাগড় বকছিস কেন?’
‘ভাইজান, যারা উধাও হয়েছে ওরা নাগরের হাত ধরে পালিয়েছে এবং যারা পাগল হচ্ছে ওরা মাদকাসক্ত।’
‘তোর হয়েছেটা কী?’
‘ভাইজান, আয়মান এবং সরসীর জন্য আমার ভয় হচ্ছে। আমার মন বলছে, এই শতাব্দীতে আয়মান পাগল হবে এবং সরসী উধাও হবে।’
‘যা! সট করে চা বানিয়ে দৌড়ে নিয়ে আয়।’ ধমক দিয়ে সরসীর দাদীর দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে আ’দাদা বললেন, ‘তোমাদের মন কী বলছে?’
‘ভাইজান, আমার কলিজা কাঁপতে শুরু করেছে।’
‘আয়মানকে ডাক দাও! সবার কলিজার দুরদুরানি বন্ধ করবে।’ মুখ বিকৃত করে সামনে তাকিয়ে বিরক্তসুরে আ’দা বললেন, ‘পান খেয়ে কানে চুন লাগিয়ে পরিকথা শুনাবার জন্য যতসব গণ্ডমূর্খ আমার উঠানে এসে এককাট্টা হয়েছে, কেচ্ছা করে গুলতানি মারার জন্য।’
এমন সময় বিদ্যুদ্বেগে কিছু একটা উড়ে গেলে আ’দাদী ভয়বিহ্বলকণ্ঠে বললেন, ‘ও আল্লাহ গো! ওটা কী ছিল?’
‘কই! আমি তো কিছু দেখিনি।’ আয়মানের দাদা জবাব দিলে আ’দাদী উনার পাশে যেয়ে বললেন, ‘ভয়ে আমার গা ছমছম করছে। ভিতরে চলুন।’
‘তোমরা কী শুরু করেছ?’
‘আমার নাতি কোথায়? দয়া করে কেউ আয়মানকে ডাকো। আয়মান! দৌড়ে দাদীর উরে আয়।’ আ’দাদী অস্থির হয়ে হাত ঝেড়ে উঠানে যেয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন। আয়মান ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘কী হয়েছে দাদীজান?’
‘আমার কলিজার টুকরা আমার উরে আয়।’ বলে দাদী অশ্রুবর্ষণ করে দু হাত প্রসারিত করলে দাদীর হাত ধরে কপাল কুঁচকে আয়মান বলল, ‘কী হয়েছে দাদীজান, আপনার সাথে লেগেছে নাকি?’
‘ভিতরে চল, তোর কোঠায় যেয়ে আরাম করে বসে অগাচণ্ডীর সাথে ঠাট্টাইয়ার্কি করব। চল!’ বলে কারো দিকে না তাকিয়ে আয়মানকে নিয়ে তার কামরায় প্রবেশ করলে সরসী লাফ দিয়ে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে আঙুল নাচিয়ে বলল, ‘কানার মত আরেক দিন ঢিল মারলে তোমার কল্লা ফাটাব মনে থাকে যেন।’
‘দৌড়ে তোর বাড়ি যা।’ বলে আয়মান রেগে ব্যোম হয়ে হাত এবং মাথা দিয়ে ইশারা করলে সরসী চোখ পাকিয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘না গেলে কী করবে?’
‘দাঁড়া!’ খোঁজাখুঁজি করে বেতের গল্লা হাতে নিয়ে আয়মান তেড়ে বলল, ‘বাড়ি মেরে তোর নরম কোমর ভাঙ্গব। যা! বাড়ি যা।’
‘আমাকে দেখলে তোমার মাথা গরম হয় কেন?’ বলে সরসী ধপাস করে বিছানায় বসে।
‘তোর রূপাগুন দেখলে দপ করে গোসাঘরে আগুন জ্বলে। তোর গায়ের গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়। আমি তোকে সহ্য করতে পারি না।’
‘আয়মান ভাই! এসব কী বলছ?’ বলে সরসী বিছানা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগুলে আয়মান দাত কটমট করে বলল, ‘আমার বগলে আসলে কল্লা ফাটাব।’
সরসী হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘ভয়দ ভাষায় কথা বলে বার বার বিত্রস্ত করো কেন?’
‘তোকে কাঁদতে দেখলে আমার হাসি পায়। কিছু করবি?’
‘জুতসই করতে পারলে তোমাকে আমি নাস্তানাবুদ করব। আমার কথা মনে থাকে যেন।’
‘তোর এত সাহস! আজ তোকে জানে মেরে ফেলব।’ বলে আয়মান চোখ পাকিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকায়। তার হাবভাব দেখে অন্যরা ভয়ে জড়সড় হয়ে বেড়ার সাথে ঠেকা খেয়ে আর পিছাতে পারছেন না। তাদের মরণদশা দেখে আয়মান শরীর কাঁপিয়ে হেসে বলল, ‘আমাকে এত ভয় পাও কেন?’
অন্যরা কাঁধ ঝুলিয়ে যে যেখানে ছিলেন ওখানে বসে হাঁফাতে লাগলেন। সরসীর দাদী এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে এক সেরী পাথর পেয়ে দাঁত কটমট করে তার দিকে ছুড়ে বললেন, ‘আমার সম্মুখ থেকে দূর হ!’
আয়মান পাথর লুফে চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘পুঁয়ে পাওয়ার মত আরেকদিন ঢিল মারলে, ঢেলা লুফে তোমার টেরা চোখে মারব মনে তাকে যেন।’
‘আচ্ছা মনে থাকবে। এখন বল কী খেয়ে মোটা পেট ভরেছিস?’

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×