somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরমাত্মীয় পৃষ্টা ১৮-১৯

১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃষ্টা ১৪-১৭

‘জানিস?’
‘না বললে জানব কেমনে?’
‘বুদ্ধিশূন্যতায় মাথামোটা হয়ে তুই ভুলেছিস, দাদিজান দাদাজানের দশ বছরের ছোট ছিলেন।’
‘দূর, তোর বুদ্ধিশুদ্ধির প্রভাবে আমার বুদ্ধিনাশ হয়েছে।’ বলে আরমান অশ্রু মুছে দাঁড়িয়ে মাতিনের পিঠে হাত বুলায়। এমন সময় আরমানের মা এবং স্ত্রী বেরোলে গল্প করে বাড়ি যায় এবং বাছবিচার করে ছেলের নাম আব্দুর রাহীম রাখে এবং সবাই সম্মত হলে আকিকা করে। কয়েক মাস পর মাতিনের সাথে দেখা করে আরমান বলল, ‘আজ আমি সিলেট চলে যাব। গ্রামে থাকলে আরেক বিয়ে করতে হবে।’
‘বুদ্ধিমানের মত সিদ্ধান্ত করেছিস। যা, আল্লাহ তোর সহায় হবেন। খবরদার, কটূকথা বলে খোঁটা দিয়ে ভাবীর মনে কষ্ট দিস না। মনে রাখিস, নারী অবলা হলেও স্ত্রী অর্ধাঙ্গিনী। সন্তান আল্লাহর দান, প্রতিদান নয়। আল্লাহ যাকে চান তাকে অগণন দান করেন।’
‘উপদেশের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আল্লাহ তোকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।’ বলে আরমান হাত মিলিয়ে চলে যায় এবং গার্হস্থ্যে মাতিন ব্যস্ত হলে তরস্তে ষোলো বছর গত হয়। অতীত বৃত্তান্তে ব্যথিত হওয়ার ফুরসত নেই। জমিজিরাতের জের ধরে মামলামোকদ্দমা করে আত্মীয়রা অনাত্মীয় হয়। প্রতিপত্তিশালী হওয়ার জন্য মানুষ মারমুখো এবং মরিয়া। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ছেলে ভাতিজার জন্য মাতিন চিন্তিত হয়। ভাতিজারা শান্তশিষ্ট হলেও তার ছেলে ডানপিটে হয়েছে। ডাগরডোগর মেয়েরা তার সাথে মারামারি করে না। গেছোমেয়েদের সাথে সে দূরত্ব বজায় রাখে। ছেলেদের সাথে হাতাহাতি হলেও বাড়িতে নালিশ আসে না, নিজে পঞ্চায়েত ডেকে সালিশে সমস্যার সমাধান করে। ছোট দাদির সাথে তার বনিবনা হয় না। তাকে দেখলে উনি ভিরমি খেয়ে পড়েন এবং তার বিষম ওঠে। সায়ংকালে পুকুরঘাটে উনাকে দেখে ঢেলা হাতে নিয়ে দাঁত কটমট করে রাহীম বলল, ‘দিনমান ফ্যাচ-ফ্যাচ ফ্যাচাং না করলে বুড়ির ভাত হজম হয় না। আজ বুড়িকে হজমির গুলি গিলাব।’
মা বেরিয়ে তাকে দেখে বড় চাচিকে ডেকে ব্যস্তকণ্ঠে বললেন, ‘ভাবী গো, আপনার দেবপুতকে ধমক দাও নইলে অমঙ্গল হবে।’
চড় চাচি বেরিয়ে হেঁকে বললেন, ‘রাহীম দৌড়ে আয়, বাড়িতে নালিশ এসেছে।’
জলে ঢিল মেরে দৌড়ে চাচির পাশে যেয়ে ব্যস্তকণ্ঠে রাহীম বলল, ‘খামোখা নাশিল নিয়ে কে এসেছে?’
‘দৌড়ে পড়াঘরে যায়।’ বলে মা চোখ পাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করেন। রাহীম কাঁধ ঝুলিয়ে হেঁটে পড়াঘরে যায় এবং রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। পরদিন ভোরে মা’র সাথে ছোটবোন কামরায় প্রবেশ করে। কাঁথা দিয়ে মাথা ঢেকে কাঁচুমাচু হয়ে রাহীম বলল, ‘আমাকে অলস করার জন্য নিদারুণ মাঘ কেন যে ফাল্গুনের অগ্রজ হয়েছে?’
জানালা খুলে তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রাগের ভান করে মা বললেন, ‘রাহীম ওঠ।’
গড়িমসি করে উঠে বসে আড়মোড়া দিয়ে চোখ রগড়ে রাহীম বলল, ‘আম্মা, আলিসা কুঁড়ের রাজা মাঘমাস এত আলিসা কেন?’
তার মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে মা বললেন, ‘আমি আলিসা নয় বলে পুকুরে গোসল করলে মাঘের আলসেমি দূর হয়। যা, গোসল করে আয়।’
‘মাঘ আসলে বাঘ কাঁন্দে, ঠাণ্ডা লাগে আম্মা গো। ও মাই গো।’ বলে রাহীম শিউরে টাল বাহানা করে বিছানা থেকে নামে। তোয়ালি হাতে নিয়ে আলিসা কুঁড়ের রাজার মত ঢিমেতালে হেঁটে পুকুরঘাটে যেয়ে তফন তোয়ালি গাছের ডালে রাখে। অপলকদৃষ্টে জলের দিকে ঝপাং করে পড়ে কয়েক ডুব দিয়ে তফন গেঞ্জি পিন্ধে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পাকঘরে যায়। তার দিকে তাকিয়ে দাদি বললেন, ‘দুপুরে নানা নানী আসবেন, কী রান্না করব?’
‘আবার চলে যাবেন নাকি?’
‘একবার বিদেশী হলে দেশী হওয়া যায় না।’
‘জীবনেও আমি বিদেশ যাব না।’ বলে রাহীম মা’র দিকে তাকিয়ে আঁচলে অশ্রু মুছতে দেখে কপাল কুঁচকে বলল, ‘আম্মা, কী হয়েছে?’
‘কিছু হয়নি। নাস্তা খা।’ বলে মা কাজে ব্যস্ত হন। সে নাস্তা খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে খালিবাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কোকিলার ডাক শুনে কাকের বাসা খুঁজতে শুরু করে। বাউণ্ডুলের মত হেঁটে ঠাঠাপড়া রোদে রৌদ্রস্নান করে ঘর্মাক্ত শরীর শুকাবার জন্য গাছের ডালে বসে পাকা বড়ুই চিবিয়ে ঠ্যাং নাড়ে। দেহলিতে বসা নবযুবতী নরুন দিয়ে নখ কাটছিল। তাকে দেখে আমতা আমতা করে কাতর দৃষ্টে তাকিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে হাত পাতে। ঠোঁট উলটিয়ে বুড়ো-আঙুল নেড়ে লাফ দিয়ে গাছ থেকে নেমে দাঁত বার করে হাসে। যুবতী আবার মিনতি করলে মুখ ভেংচি দিতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে টুনটুনি দেখে গুলতি দিয়ে ঢিল মেরে মাথা দুলিয়ে হাঁটতে শুরু করে। যুবতী ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, ‘ওরে আলাই, গাছে উঠে কয়েকটা বড়ুই পেড়ে দে, তোর জন্য দোয়া করব।’
রাহীম মাথা নাড়লে যুবতী বলল, ‘তোকে চাটনি বানিয়ে দেব। বৈশাখ মাসে চুকা আম দিয়ে মিঠা আমশী বানিয়ে দেব। ভূতের ভায়রা, দয়া করে কয়েকটা চুকা বড়ুই দিয়ে যা।’
‘গাছের নিচে কাঁটা আছে, পায়ে ফুটলে ল্যাংড়া হব।’ বলে রাহীম আরেকটা বড়ুই মুখে দেয়। যুবতী হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘আমারে কয়টা বড়ুই দিয়ে যা নইলে তোর পেটে কিড়া হবে।’
‘কিরা খেয়ে বলছি, বড়ুই চিবালে ফোকলা দাঁত খসে পড়বে।’ বলে রাহীম ধীরে ধীরে হেঁটে খালিবাড়ি যেয়ে বাঁশ কেটে মনোযোগ দিয়ে পিঁজরার জন্য ফলা বানায়। যথেষ্ট হলে এককাট্টা করে নিম্নকণ্ঠে কথা বলে হাঁটে, ‘হিজলতলে বাগুরা পাতাতে হবে। বেটা শিয়াল পণ্ডিত, মোরগা দেখেছ তুমি বাগুরা দেখনি।’
এমন সময় বাঁশঝাড় থেকে শিয়াল বেরোতে চেয়ে তাকে দেখে পিছায়।
‘লোমালিকার দুলাভাই শালামৃগ দাঁড়া, আজ তোকে যমেরবাড়ি পাঠাব।’ বলে রাহীম পলকে ঢিল হাতে নিয়ে ছুড়ে মারে। লেজ গুটিয়ে শিয়াল দৌড়ে পালালে রেগে কশকশ করে বাড়ি যেয়ে নানা নানীকে দেখে তার মন বেজার হয়। শান্তকণ্ঠে নানা বললেন, ‘কোথায় ছিলে? সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।’
‘আবার বিদেশ যাচ্ছেন কেন?’
‘দিনে তিন বার ফোন করে ওরা কান্নাকাটি করে। শোন, লেখাপড়া করার জন্য তোর ছোট খালা তোকে লন্ডন নিতে চায়। তোর মতামত জেনে জানাবার জন্য বলেছে।’
‘আমি লন্ডন যাব না।’ রাহীম রাগান্বিতকণ্ঠে বললে তার বাবা কপাল কুঁচকে তাকান কিছু বলেন না। নানী অশ্রু মুছে ম্লান হেসে বললেন, ‘তোর মাকে দেখে রাখিস। কবে আসব আমি জানি না। নানীর জন্য দোয়া করিস। দুটানে পড়েছি রে ভাই।’
‘লন্ডন যাওয়ার কুবুদ্ধি কোন ল্যাংড়া আপনাকে দিয়েছিল?’ বলে রাহীম নানীর চোখের জল মুছে দেয়। নানী তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লে সবাই আবেগপ্রবণ হন। দাদি যেয়ে নানীকে সান্ত্বনা দিয়ে ভিতরে নিয়ে যান। তাকে পাশে ডেকে দুহাতে বাজু ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরকণ্ঠে নানা বললেন, ‘জানি না কবে আর তোর সাথে কুস্তি করব।’

এই বই দুই খন্ডে আমাজনে প্রকাশ করেছি
Poromatthio: Volume 1 (Bengali) Paperback – 21 Jun 2016
by Mohammed Abdulhaque (Author)
Product details
Paperback: 596 pages
First edition (21 Jun. 2016)
Language: Bengali
ISBN-10: 1534824596
ISBN-13: 978-1534824591
Product Dimensions: 12.7 x 3.4 x 20.3 cm
এক সাথে পড়তে চাইলে আমাজন থেকে কিনতে পারবেন
অথবা অনলাইন পড়তে চাইলে আমার সাইটে আছে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৪
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×