somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাৎবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদানের জন্য ১ম ও সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বীর শ্রেষ্ঠ পদক। গুরুত্বের ক্রমানুসারে বীরত্বের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের অন্যান্য সামরিক পদক হল - বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী যোদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর শ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয়েছে।


১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের একটি অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর শ্রেষ্ঠ পদক প্রাপ্ত সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের তালিকাঃ
০১। ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী,
০২। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী,
০৩। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,
০৪। সিপাহী, মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,
০৫। ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ রাইফেলস,
০৬। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, বাংলাদেশ রাইফেলস,
০৭। সিপাহী মোঃ হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক প্রাপ্ত বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ অন্যতম। তাঁর অপরিসীম বীরত্ব,সাহসীকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাৎবার্ষিকী আজ।৮ তারিখ মুন্সি আব্দুর রউফের জীবনে অনেক ঘটনাবহুল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে তাঁর জন্ম হলেও এই একই দিন ছিলো তাঁর শাহাদৎবরণের দিন। এই দিনেই তিনি যোগদান করেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ। অনেক ঘটনা বহুল ৮ তারিখ আজ। আজ এই বীর শ্রেষ্ঠের শাহা'ৎ দিবস। শাহাদৎ দিবসে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।


মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে আব্দুর রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন আব্দুর রউফ। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। আব্দুর রউফ ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।


১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে মুন্সি আব্দুর রউফ পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য বুড়িঘাটে অবস্থান নেন। ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩" মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে। গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমণের ফলে শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়। হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। এক পর্যায়ে মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। শহীদ হলেন ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ তার জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে গেছেন তার প্রায় ১৫০ জন সহযোদ্ধার জীবন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বহু সৈন্যকে হতাহত করেছেন।


(রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের পাশে এই কবরে মহান এই বীর চিরশায়িত আছেন)
চির রুদ্রের প্রতীক এই বীরকে সমাহিত করা হয়েছিলো রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে। ১৯৯৬ সালে রাঙামাটিবাসী প্রথম জানতে পারে, এ চিরসবুজ পাহাড়ের মাঝেই ঘুমিয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ। ঐ সময় দয়ালন চন্দ্র চাকমা নামে এক আদিবাসী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধিস্থল শনাক্ত করেন। শনাক্ত করার পর তাঁর সমাধিস্থলটি সরকার নতুনভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে।


(রাঙামাটিতে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর স্মৃতি ভাস্কর্য )
রাঙামাটি শহরের প্রবেশ মুখ মানিকছড়ি এলাকায় রাস্তার সংলগ্ন জায়গায় নির্মিত হয়েছে বীর শ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতি ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে সিপাহী মুন্সি আব্দুর রউফকে অনারারি ল্যান্স নায়েক পদে মরোণোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে। ' ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের জন্মস্থান ফরিদপুরের সালামতপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে রউফনগর। এ গ্রামেই ১৭ নভেম্বর ২০০৭ ইং তারিখে স্থাপন করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর। বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দেওয়া ৫২ শতাংশ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি পরিষদের মাধ্যমে এলাকাবাসীর দেওয়া ৪৮ শতাংশ, মোট এক একর জায়গায় ওপর এই গ্রন্থাগার ও জাদুঘর।


স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বীর শ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মু্ন্সি আব্দুর রউফের অবদানের কথা।শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাৎবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:২৫
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×