হুমায়ুন ফরীদি, বাংলাদেশের অন্যতম কালজয়ী অভিনেতা। মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরিদি নিজস্ব একটি অভিনয়-ধারা তৈরী করতে পেরেছিলেন যা তাঁকে সময়ের কোলে অনন্য করে রেখেছে। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম সংগঠক এবং অভিনেতা। গ্রাম থিয়েটারেরও সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। প্রখ্যাত মঞ্চ,টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন আজ। তিনটি মাধ্যমে সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ১৯৫২ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তাঁর জন্য আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা
হুমায়ুন ফরীদি ২৯ মে ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারী কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনান্তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্য উৎসবে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মূলতঃ এ উৎসবের মাধ্যমেই তিনি নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমে অনেক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯০-এর দশকে হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরীদির দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি। বাংলাদেশের নাট্য ও সিনেমা জগতে তিনি অসাধারণ ও অবিসংবাদিত চরিত্রে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে 'কানকাটা রমজান' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। যে সব নাটকে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি লাভ করেন তন্মধ্যেঃ
মঞ্চঃ ১। কিত্তনখোলা, ২। মুন্তাসির ফ্যান্টাসি, ৩। কিরামত মঙ্গল, ৪। ধূর্ত উই
টিভিঃ ১। নিখোঁজ সংবাদ, ২। হঠাৎ একদিন, ৩। পাথর সময়, ৪। সংশপ্তক, ৫। সমূদ্রে গাংচিল, ৭। কাছের মানুষ, ৮। মোহনা, ৯। নীল নকশাল সন্ধানে, ১০। দূরবীন দিয়ে দেখুন, ১১। ভাঙ্গনের শব্দ শুনি, ১২। কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সমূহঃ ১। সন্ত্রাস, ২। দহন, ৩। লড়াকু, ৪। দিনমজুর, ৫। বীর পুরুষ, ৬। বিশ্ব প্রেমিক, ৭। আজকের হিটলার, ৮। মায়ের অধিকার, ৯। বিদ্রোহী চারিদিকে, ১০। মনে পড়ে তোমাকে, ১১। ব্যাচেলর, ১২। জয়যাত্রা, ১৩। শ্যামল ছায়া ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরীদি দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০'র দশকে। 'দেবযানী' নামের তাঁর এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে। পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে তিনি বিয়ে করলেও ২০০৮ সালে তাঁদের মধ্যেকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ।
কৌতুক প্রিয় হুমাযূন ফরীদি অভিনয়ে ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক ও পেশাদার। কোন চরিত্র চিত্রনে তাঁর পেশাদারীত্ব দেশের শিল্পী মহলে এখনো কিংবদন্তিসম। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বহুমাত্রিক অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শক হ্রদয়ে স্থায়ী আসন নিশ্চিত করেছেন। মাটি ও মানুষের সাথে ছিলো তাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক। দেশের সংকটে-সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাতারে, যুক্ত হয়েছেন প্রতিবাদী মিছিলে। 'শিল্পের জন্য শিল্প' নয় ববং মানুষের সাথে তাঁর সকল কর্মকে সম্পৃক্ত করেছেন আজীবন। নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন এবং ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
কিংবদন্তি এই মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের যাদুকরী অভিনেতা ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন। আজ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর জন্য আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





